বাংলাদেশ কেন পাক-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যোগ দেওয়া উচিত

-মোহাম্মদ আলম ফরিদ : ২০২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি Strategic Mutual Defence Agreement স্বাক্ষর করে, যেখানে উল্লেখ আছে যে যেকোনো বাহ্যিক আক্রমণ উভয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যৌথ প্রতিক্রিয়া হতে পারে (AP News, 2025; Gulf News, 2025)। এতে সেনা প্রশিক্ষণ, মহড়া ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়সহ নানা সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করেছেন যে এই সহযোগিতা ভবিষ্যতে পারমাণবিক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে (Washington Post, 2025), যদিও দুই দেশ সেটি অস্বীকার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য এটি কৌশলগতভাবে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল দর্শন হলো “Friendship to all, malice toward none” (BIPSS, 2023), যা বহুমুখী কূটনীতিকে উৎসাহিত করে। একই নীতি ব্যবহার করে বাংলাদেশ এই জোটে যোগদান করতে পারে এবং বহুপাক্ষিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রতিরক্ষা চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বিশাল হলেও, পাকিস্তান-সৌদি জোটে যোগ দিলে বাংলাদেশ কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে। এতে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে (The Daily Star, 2024)। এছাড়া, এই জোটে যোগদান বাংলাদেশের আঞ্চলিক কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করবে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে আরও প্রভাবশালী করবে।

অর্থনৈতিক ও শ্রমবাজারের দিক থেকেও এই জোট Bangladesh-এর স্বার্থে হতে পারে। সৌদি আরব বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ উৎস (Bangladesh Bank, 2024)। যৌথ প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সহযোগিতা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে, যা শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিয়ে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল তৈরি করতে পারে।

পারমাণবিক সংবেদনশীলতার আশঙ্কা থাকলেও, বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারে। দেশটি ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নিরাপত্তা নীতির প্রয়োগ করছে (UN Peacekeeping, 2024)। তাই দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের নীতি-বিরোধী নয়, বরং তা দেশের সামরিক দক্ষতা ও আঞ্চলিক কৌশলকে আরও শক্তিশালী করবে।

ভারতীয় আধিপত্য রুখার ক্ষেত্রে এই জোটে যোগদান বাংলাদেশকে কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে। একদিকে ভারতীয় প্রভাব মোকাবিলায় ভারসাম্য রক্ষা হবে, অন্যদিকে বহুপাক্ষিক কূটনীতির অংশ হিসেবে ঢাকা নিজস্ব নীতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে (BIPSS, 2023)। জোটে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবে, যা দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে সুসংহত করবে।

সবশেষে, বাংলাদেশ সামরিক শক্তি, অর্থনীতি ও কূটনীতি মিলিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল প্রয়োগ করতে পারে। চীনের অবকাঠামো বিনিয়োগ, জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংলাপের পাশাপাশি এই প্রতিরক্ষা জোট ঢাকার জন্য একটি কার্যকর সামরিক সমর্থন নিশ্চিত করবে (Washington Post, 2025)।

অতএব বলা যায়, পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বাংলাদেশ যোগদান করলে দেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা, কূটনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সবকটিতেই শক্তিশালী হবে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থে একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *