সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: সাম্প্রতিক উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, সেইসব নিষ্পাপ শিশু, শিক্ষক, এবং পাইলটের মৃত্যু আজ গোটা জাতিকে শোকের সাগরে ডুবিয়েছে। এই অকাল মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে, আমাদের চোখের কোণে পানি এনে দিয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিহতদের পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মাকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি ও ধৈর্য দান করুন। আমিন।
এই শোকাবহ মুহূর্তে আমাদের দায়িত্ব মানবিক হওয়া, সংবেদনশীল হওয়া। অথচ আমরা দেখছি—সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও দায়িত্বহীন মন্তব্য:
“প্রাগৈতিহাসিক বিমান উড়ালে এমন হবেই”“বিমানটি ৫০ বছরের পুরানো” কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।
F-7 BGI যুদ্ধবিমানটি বাংলাদেশ গ্রহণ করে ২০১৩ সালে, চীনের কাছ থেকে। এটি আধুনিকায়িত সংস্করণ—কোনো ‘পুরানো’ বা ‘জংধরা’ বিমান নয়।
একটি বিমান দুর্ঘটনার পেছনে থাকতে পারে যান্ত্রিক ত্রুটি, মানবিক ভুল, বা আবহাওয়াজনিত সমস্যা। এগুলো তদন্তসাপেক্ষ। গুজব নয়, বরং যাচাই করা তথ্যই হোক আলোচনার ভিত্তি।
প্রশ্ন উঠছেই—কিন্তু উত্তর কে দেবে? যুদ্ধবিমান কীভাবে একটি স্কুলের এত কাছে প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে গেল?
বিমানবাহিনীর নিরাপত্তা প্রটোকল কি যথাযথ ছিল? সিভিলিয়ান এলাকায় ফ্লাইট অপারেশন কতটা নিরাপদ? কেন হাইড্রোলিক ও ইঞ্জিন—দু’টি সিস্টেম একসঙ্গে ফেল করলো? একই সঙ্গে ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক ব্যর্থতা কেন?
গ্রাউন্ড টিমের মেইনটেনেন্স রিপোর্ট কী বলছে? ফ্লাইট রেকর্ডার, সিসিটিভি, কমিউনিকেশন লোগ—সব কি যাচাই করা হচ্ছে? বিমানের ব্ল্যাক বক্স কোথায় ? পাইলট মারা যায় অনেক পরে – সুচিকিৎসার গাফলতি যারা করেছে -তাদের বিচারের আওতায় আন্তে হবে এটি দুর্ঘটনা, না কি নাশকতা—জানতেই হবে- ভারতীয় কেউ গ্রাউন্ড টিমে কাজ করে কিনা। একটি শিশু, একটি শিক্ষিকা, একজন পাইলট—সবার মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাই।
এই প্রশ্নগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন, কারণ এটি এখন শুধু বিমানবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থে জড়িত একটি বড় দুর্ঘটনা। “হাডসনের মিরাকল” বনাম আমাদের দুঃসহ বাস্তবতা !
২০০৯ সালে নিউইয়র্কে হাডসন নদীতে এয়ারবাস এ-৩২০ নামিয়ে ক্যাপ্টেন সালি ১৫৫ জন যাত্রীকে প্রাণে রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এটি অলৌকিক কিছু ছিল না—এটি ছিল প্রস্তুতি, সিস্টেম, এবং সম্মিলিত দায়বদ্ধতার ফলাফল।”
কিন্তু বাংলাদেশে মাইলস্টোন দুর্ঘটনার পরে আমরা কী দেখলাম? উদ্ধারকারীদের গায়ে পানির দাম চেয়ে ক্যান্টিন বন্ধ!অ্যাম্বুলেন্সের রাস্তা আটকে মানুষ ছবি তুলছে ! রাজনৈতিক নেতারা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শো-ডাউন করেছে ! ফায়ার সার্ভিস গলির মুখেই আটকে পড়েছে জনতার ভীড়ে ! এই যেন হাডসনের বিপরীত গল্প—ব্যর্থতা, বিশৃঙ্খলা, আর অমানবিকতার দুঃসহ চিত্র। একটি সাহসী নাম: মাহিরীন চৌধুরী !
অগ্নিদগ্ধ ভবন থেকে নিজেকে না বাঁচিয়ে অন্তত ২০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন মাহিরীন চৌধুরী, একজন শিক্ষিকা। পরে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি, কিন্তু তাঁর পরিচয় ছিল শুধুই ‘একজন শিক্ষক’। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
গুজব, রাজনীতি, চরিত্রহীনতা এত বড় দুর্ঘটনায়: * রিকশা-সিএনজি চালকরা ভাড়া বাড়িয়েছে।
* পুড়ে যাওয়া শিশুর দিকে ক্যামেরা তাক করা হয়েছে।
* উদ্ধার না করে মানুষ ‘শট’ নিতে ব্যস্ত ছিল।
* হাসপাতালের সামনে শোডাউন আর দলীয় প্রচারে মরিয়া নেতারা।
* এটাই আমাদের সামাজিক চরিত্র? হায়রে মানবতা – হায়রে আবেগী বাঙালি !
শেষ কথা
এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করেছে—আমরা প্রস্তুত নই।
না প্রশাসনিকভাবে, না নাগরিকভাবে, না মনুষ্যত্বের মানদণ্ডে।
আমরা আশা করি, তদন্ত হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি হোক। আহতদের সুস্থতা কামনা করি। আল্লাহ এই জাতিকে হেদায়েত দিন, আমাদের চরিত্রে আলো দিন। আমিন।