সামসুল ইসলাম টুকু: জন্ম থেকে শুনে আসছি, যার সৃষ্টি আছে তার ধ্বংস অনিবার্য। এই মতকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু ধ্বংস কবে হবে তার নাগাল পাই না। তবে খুব সহজে হবে এমনটাও বিশ্বাস করি না। তার পূর্বে পৃথিবীটা অসুস্থ হবে, ক্রমশ তা বৃদ্ধি পাবে এবং এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে, সেখান থেকে ফিরে আসার কোন সুযোগ থাকবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীকে ঘিরে যে সৌর জগৎ আছে সেগুলো নির্দিষ্ট গতিতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। এটাই তাদের স্বাভাবিক গতি। যখনই সৌর জগতের কোন অংশ কক্ষচ্যুত বা নির্দিষ্ট গতি পরিবর্তন করবে তখনই লন্ডভন্ড হয়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীটা। এটা হচ্ছে আকস্মিক পরিবর্তন বা মহাজাগতিক পরিবর্তন। কিন্তু সেটা কতদিন, কতমাস বা কতবছর পরে ঘটবে তা জানা যায় না। অন্যদিকে পার্থিব পরিবর্তন বা ধীর পরিবর্তনের মাধ্যমেও পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে। যেমন পৃথিবীর বয়সের কারণে, ক্রমশ ক্ষয় হবার কারণে, বন্যা, খরা, ঝড়, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে। এছাড়াও রয়েছে মনুষ্য সৃষ্ট অত্যাচার। পৃথিবীর আলো, বাতাস, পানি, গাছপালার অপব্যবহার, পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার, কীট নাশকের ব্যবহার, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, ওজন স্তর দুর্বল হয়ে পৃথিবীর উপর তীব্র সূর্য রশ্মির আক্রমণ। আক্রমণ এসব প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী প্রতিদিন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এই অযোগ্যতা কখন আক্রমণ পর্যায়ে পৌছাবে, আর কখন পৃথিবী ধ্বংস হবে সেটা কেউ বলতে পারে না।
ধর্মগুরুরা বলেন, পৃথিবী ধ্বংস হবার পূর্বে বেশ কিছু আলামত দেখা যাবে। যেমন- মানীর মান থাকবে না, ঘাট অঘাট হবে, স্নেহ ভালবাসা উঠে যাবে, কোন কিছুর বরকত থাকবে না, খাদ্যের সুগন্ধ থাকবে না, মসজিদে নামাজি থাকবে না, সত্য মিথ্যার ব্যবধান থাকবে না। এসব আলামত এখন দৃশ্যমান, হয়তো কম বেশি হতে পারে। তবে আলামতগুলো খুব দ্রুত গতিতে স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আলামতগুলো কবে কানায় কানায় পূর্ণ হবে, আর কবে পৃথিবী ধ্বংস হবে তার সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে কিছু লিফলেট দেখা যায়, যাতে লেখা থাকে কোন পীর সাহেব স্বপ্নে নবীজীকে (সাঃ) দেখেছেন, কথা বলেছেন, নবীজী (সাঃ) তাঁকে বলেছেন পৃথিবীর মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দাও কেয়ামত অতি সন্নিকটে। শেষে লেখা থাকে যিনি এই লিফলেটটি পাবেন তিনি তা ১ হাজার কপি ছাপিয়ে বিলি করবেন। এতে তিনি প্রচুর সোয়াব পাবেন এবং অবহেলা করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উল্লেখিত এই কেয়ামত-ই বা কতদিন পরে সংঘটিত হবে সেটাও বলা যায়না। ধর্মগুরুরা বলে থাকেন, কেয়ামত হবার আগে আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের সূচনা হবে। মিথ্যা, প্রতারণা, ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ, হত্যাসহ অন্যায়ে ভরে যাবে দুনিয়াটা। এগুলো হবে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কারো মধ্যে ঈমান থাকবে না। বর্তমানে এসব অন্যায় হচ্ছে নির্বিঘ্নে। নবীজী (সাঃ) আসার পূর্বের সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা হতো। তখন আরবরা এতই বর্বর ছিল যে, তাদের পরিবারে কোন মেয়ে সন্তান জন্ম হলে জীবন্ত মাটিতে পুতে দিত। আগের আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের চেয়ে বর্তমান যুগের আইয়ামে জাহেলিয়া কি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি? পৃথিবী ধ্বংস হবার মাত্রায় পৌঁছায়নি? নাকি এর চেয়ে বেশি হতে হবে? কেউ কেউ বলেন আইয়ামে জাহেলিয়াতের দেখেছেন কি, আরো দেখবেন। এখানেও পৃথিবী ধ্বংসের নাগাল পাওয়া গেল না।
ম্যালথাসবাদের সূত্রে পড়েছিলাম জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে পৃথিবী ভারসাম্যহীন হলে প্রকৃতি এর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। খরা, ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছাস, মহামারি, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এসব দূর্যোগ মোকাবিলার কৌশল আবিষ্কার করেছেন। প্লেগ, ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, এইডস, ক্যান্সার প্রভৃতি মহামারির সফল প্রতিরোধ করেছে বিজ্ঞানীদের নব নব আবিষ্কার। ফলে রীতিমত জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটেছে। পৃথিবী ধ্বংসের জন্য এই বিস্ফোরণ যথেষ্ট নয় কি? তাহলে ম্যালথাসবাদের সূত্র কি কার্যকর হচ্ছে না? কোরআনে বলা হয়েছে, কোন দেশ বা জাতি যখন ভীষণ পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন সেখানে আল্লাহর গজব নাজিল হয়। এজন্য আল্লাহ ইতোপূর্বে বহু দেশ জাতি ও কওমকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন গজব নাজিল করে। এখনতো ছোট বড় সবাই পাপাচারে লিপ্ত, এখন এরা পাপ কাজের জন্য ধর্মকেও ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয় ধর্ম যে একটি আদর্শ এবং জীবন বিধান সেটাকেও মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করছে সমান তালে। প্রমাণের আগামী প্রজন্মের কাছে ধর্মের প্রমাণের মূল্য না থাকে। এমনই ভয়ানক পর্যায়ে পৌচেছে দুনিয়ার সংখ্যাধিক্য মানুষ। এর পরও কি আল্লার গজব নাজিল হওয়ার সময় আসেনি? পৃথিবীর কোন দেশে অথবা বাংলাদেশে? পাপাচার কি এখনও সেই মাত্রায় পৌছায়নি। যেমনটা এর আগে আল্লাহর গজব নাজিলের পূর্বে হয়েছিল।
পাপাচার আর মিথ্যাচার দেখতে দেখতে আমি অস্থির হয়ে উঠেছি। তাই এমন পৃথিবীর ধ্বংস কামনা করছি। আপনারা নিশ্চই বলবেন লোকটি নিছক বোকা। পৃথিবী ধ্বংস হলে কি হবে এ লোকটা বোঝে না। আমি বুঝেই বলছি, পৃথিবী ধ্বংসের সাথে সাথে আমিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। তার পরও ধ্বংসের কামনা করি কায়মনে। এবার বলবেন লোকটি উন্মাদ। বলতেই পারেন। কারণ এই পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে। মিথ্যা, অন্যায়, প্রতারণা, খুন, ধর্ষণ, আপনার মনে রেখাপাত করে না। নিত্য দিনের স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নেন। অথবা এসব অন্যায় কাজগুলো দেখেও দেখেন না অথবা বিরোধিতা করে ফল পাওয়া যাবে না বলে চুপ থাকেন। সৌন্দর্যে ভরা এ পৃথিবীকে আমিও ভালবাসি। কিন্তু মানুষের এসব অন্যায়কে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারি না। মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, সহজ হতে পারি না, অপরাধীকে ঘৃণা করি, দূরত্ব বজায় রাখি, দুর্বল ঈমানদারের মত। এবার হয়তো বলবেন আপনি সমাজের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার মত লোক নন। সত্যি আমি ভারসাম্যহীন একটা মানুষ বর্তমান পৃথিবীর মত। সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায় পাশাপাশি চলতে চলতে এখন পৃথিবী এমন একটা পর্যায়ে পৌঁচেছে যে, সত্য ও ন্যায় পৃথিবী থেকে নির্বাসিত হয়ে গেছে এবং মিথ্যা ও অন্যায় পৃথিবীর বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। মিথ্যা ও অন্যায়ের ভারে ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে পৃথিবী। এই ভারসাম্যহীনতা থেকে ফিরে আসার মত কোন আলো দেখতে পাচ্ছি না। এ অবস্থা থেকে সমগ্র মানবজাতির মুক্তি আছে বলেও বিশ্বাস করি না। এবার আমাকে বলবেন, হতাশ নৈরাশ্যবাদী। সত্যিই তাই।
ইসলাম ধর্ম বলছে, ইসলাম ধর্মই শেষ ধর্ম। এরপর আর কোন ধর্ম আসবে না। এবং হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-ই শেষ নবী। এর পরে কোন নবী আসবে না। প্রায় সাড়ে ১৪‘শ বছর আগে আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে নবীজী (সাঃ) এসেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন কাফের ও বিধর্মীদের বিরুদ্ধে এবং ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আরবের মাটিতে তথা সারা বিশ্বে। কিন্তু বর্তমান আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের অবসানের জন্য কোন নবী ও ধর্ম আসবে না। তাহলে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা অন্যায়ে ভারসাম্যহীন হয়ে থাকবে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত। প্রায় ১‘শ বছর পূর্বে অর্থনৈতিকভাবে ও শ্রেণীগতভাবে ভারসাম্যহীন রাশিয়ার জার তন্ত্রকে অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে উচ্ছেদ করেছিলেন মহামতি লেলিন এবং প্রায় ৭০ বছর আগে নেশাখোর চীনা জাতিকে সচেতন করে সামন্ত তন্ত্রের বিরুদ্ধে বিপ্লব করে ভারসাম্য এনেছিলেন কমরেড মাও সেতুং। এ দু’টি দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সাম্যবাদী ধারার প্রবর্তন করেছিলেন উল্লেখিত দুই নেতা। চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন মাও সেতুং। কিন্তু তারপরে দীর্ঘ ৭০ বছরের মধ্যে আর কোন দেশে কমিউনিস্ট দর্শনের দর্শন পাওয়া যায় না। বরং রাশিয়া ও চীন দুটি দেশই ধনবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সুতরাং নতুন করে কোন দেশে কমিউনিস্ট দর্শনের বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না অন্তত নিকট ভবিষ্যতে।
পৃথিবীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনের পুনরুত্থান একটি কঠিন ব্যাপার এবং নতুন কোন দর্শনের আবির্ভাব অসম্ভব। সর্বোপরি ইসলাম ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকা ও তার দোসররা খড়গ হস্ত। গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে মূলত কোন দর্শনের বিপ্লব প্রতিহত করার জন্য বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিদমন কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে আমেরিকা। তৃতীয় বিশ্বের অনুগত দেশগুলোকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের আওতায় এনে চুক্তি সম্পাদন করছে। ওই দেশগুলোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কিভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করতে হয়। সরকার বিরোধী যে কোন আন্দোলন করার জন্য তা প্রয়োগ করা হচ্ছে দেশে দেশে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়া যে দেশ আমেরিকার অন্যায় কাজের বিরোধিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাসহ ড্রোন হামলা করে গণহত্যা করছে। যার বহু দৃষ্টান্ত আছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ভেটো দানকারী পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিয়েছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র তৈরি করবে এবং প্রয়োজনে বিক্রি করবে। কিন্তু অন্য কোন দেশ তার আত্মরক্ষার জন্যও তা করতে পারবে না। তারপরেও এ পরাশক্তিগুলো তাদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ও অস্ত্র বিক্রি করা নিয়ে, আরবের তেল নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে, সমুদ্র দখল নিয়ে, নিজেদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না তা বলা যায় না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তারা নিজেরাও রেহাই পাবে না এই ভয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাও হতে পারে। তা হলে ধ্বংশটা কবে হবে?
আমাদের দেশের বিপুল জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্য মানুষই নৈতিকভাবে দুর্বল। যার পেছনে আছে আমাদের দেশের অসুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক চর্চা। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য বোঝে না। বুঝলেও সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ গ্রহণ করে না। বরং অন্যায়কে সমর্থন করে। তাই মিথ্যা ও অন্যায়ের এতো বাড়াবাড়ি। একে অতিক্রম করে সত্যের পথে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হয়ে গেছে। সচেতন মানুষ আছে। তারা দেখছে শুনছে আর চুপ করে থাকছে। কেউ প্রতিবাদী হচ্ছে না অথবা হতে পারছে না। ফলে ভীরু কাপুরুষ ও আমার মত দুর্বল ঈমানদারের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিদ্রোহী ও বিপ্লবীদের সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে নগন্য। কারণ তারা পেছন ফিরে দেখে কেউ নেই। বরং নিরুৎসাহিত করার লোক আছে প্রচুর। যে কারণে মানুষ বেশি করে নৈতিকতা হারাচ্ছে প্রতিদিন। এই চুপ করে থাকা বা অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারাটাও একটা বড় ধরনের নৈতিক ভারসাম্যহীনতা। যার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। এই অসুস্থ নৈতিকতা বিবর্জিত প্রতিবাদহীন সমাজের ধ্বংস কামনা ছাড়া আর কি বা করা যেতে পারে? আর এই সুযোগে নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষগুলো ভাল মানুষদের ঠকানোর জন্য সুন্দর সুন্দর কৌশল আয়ত্ত করেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাট বাজারে পকেটমার ধরা পড়লে যখন গণপিটুনি শুরু হয় তখন জনতার মাঝে পকেট মারের সহযোগী উদয় হয়। তারা পকেটমারকে দু-চার থাপ্পড় দিয়ে মারমুখি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলে শালাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আর মারবেন না। এভাবে পকেট মারকে রক্ষা করে। এখন হুবহু তেমনই হচ্ছে আমাদের সমাজে। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক দল তথা জনসাধারণ এগিয়ে না এসে এগিয়ে আসছে উটকো পড়া সংগঠন। এদের কাজ দুর্নীতি বন্ধ করা নয়, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার জনগণকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখা। বিপ্লব করার জন্য সাধারণ মানুষ যখন প্রস্তুত হয়, তখন বিপ্লবী সেজে প্রতি বিপ্লবী সংশোধনবাদী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা নেতৃত্বে চলে আসে এবং জনসাধারণকে আশাহত করে। ধর্ম রক্ষার জন্য প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষ সামনে এগিয়ে যায় তখন ভণ্ড ধর্মান্ধদের দল বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। যেন ধর্মের মূলমন্ত্র তাদের কাছে না পৌঁছায়। চোর, দুর্নীতিবাজ, খুনি, ধর্ষক, প্রতারক, হাতে নাতে ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। যেন অন্যায়কারীকে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া যায়। রাষ্ট্রের কোন বিশেষ শক্তি যখন পর্যায়ক্রমে ও গুরুতর অন্যায়ের মুখোমুখি হয় তখন রাষ্ট্র তথা ক্ষমতাসীনরা তাদের বাঁচানোর জন্য তৈরি করে দায়মুক্তি আইন। এমন অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এসব কত যে কুৎসিত ও কদর্য তা ভাবা যায় না। এগুলোর চেয়েও কদর্য ঘটনা ঘটছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে। তারপরেও এ রাজনৈতিক ভণ্ডরা বলে রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। সীমাহীন এই কুৎসিত ও কদর্য রূপ দেখতে দেখতে আমি অস্থির ও অসহায় হয়ে গেছি। বলবেন কোটি কোটি মানুষ আছে এ দেশে, তারা তো কদর্য মনে করে না, অস্থির হয়না। কারণ তাদের অনুভূতি দুর্বল। তারা মনে করে এমনটা হতেই পারে, ভালমন্দ নিয়েই তো পৃথিবী, এই মানব সমাজ। এমন মনোভাবের সাধারণ মানুষ হলেই ভাল থাকতে পারতাম, শন্তিতে থাকতে পারতাম, অস্থির হতাম না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিবেক নামক অদৃশ্য শক্তিটা আমার এতই প্রবল যে খারাপ কিছু দেখলেই আমার অনভূতিকে তীক্ষ্ণ ভাবে নাড়া দেয়। এ পর্যন্ত থাকলেও ভাল থাকতাম, যদি প্রতিকারের চিন্তা মাথায় না আসতো অথবা প্রতিকার করতে পারতাম। কিন্তু প্রতিকার করতে পারিনা বলে সেটা আমার হৃদয়ে বাজে হাতুড়ি পেটার মত, শরীরে তাপ বেড়ে যায়, দেহে কাপুনী সৃষ্টি হয়। দাঁতে দাঁত চেপে রাখি। অন্যায় দেখবো আর প্রতিকার করতে পারবোনা তাহলে বেঁচে থেকে লাভ কি? তখনই সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ জানাই, হয় আমাকে প্রতিকারের শক্তি দাও না হয় মৃত্যু দাও, না হয় দুনিয়াটাকে ধ্বংস করে দাও। অন্যায় দাপটের সাথে চলতে পারে না। আমার মত অনেক মানুষ আছে তাদেরও এমন অনুভুতি হয়। মানুষের ও সমাজের কদর্য রূপ দেখে তাদেরও পৃথিবীর প্রতি অনীহা এসেছে। ধর্ম ও দর্শনের প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নব প্রজন্ম আমার সাথে একমত হবে না। কারণ পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ ভোগ করার অনেক বাকি আছে তোমাদের। তাই সবাই তোমরা ছুটে চলেছো ভারসাম্যহীন সংখ্যায়, ভারসাম্যহীন সমাজের দুয়ারে ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে। ধর্ম ও দর্শনের ধারণা তোমাদের কাছে খুবই ক্ষীণ। ব্যক্তি ও স্বার্থচিন্তা তোমাদের কাছে এখন অনেক বড় এবং সেটাই স্বাভাবিক। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরাই দায়ী। তোমাদের কাছে সত্য ও ন্যায়ের বোধ পৌঁছাতে পারিনি। যেটুকু পৌঁচেছে তারই আলোকে কোটা প্রথা ও নিরাপদ সড়ক এর মতো ন্যায্য আন্দোলন করতে গিয়ে নিশ্চই বুঝতে পেরেছো রাজনীতির রূপ কত কদর্য হতে পারে। তারপরও জুলাইয়ের আন্দোলন দিয়ে অপশক্তিকে পরাজিত করেছো । তারপরেও চলছে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও কমবেশি একই ঘটনা চলছে । এর প্রতিকারের পথ খুঁজছে সবাই । তোমরাই যুব শক্তি। চেষ্টা করে দেখ যদি পৃথিবীটা বদলাতে পারো, পৃথিবীর ধ্বংসটা রদ করতে পারো। ব্যর্থ ও ভগ্ন হৃদয়ে তোমাদের সফলতা কামনা করবো ।
লেখক – সাংবাদিক