সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: গত ৫ই অক্টোবর ২০২৫, রবিবার অনুষ্ঠিত হলো ল্যাকেম্বা মুসল্লার বার্ষিক বনভোজন। সিডনির গিল্ডফোর্ড এলাকার মনোরম ক্যাম্পবেলহিল পাইওনিয়ার রিজার্ভে আয়োজিত এই পিকনিকটি সম্পূর্ণভাবে সফল, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়।
সকাল ৯টা থেকেই ল্যাকেম্বা মুসল্লার নিয়মিত নামাজি মুসল্লিরা পরিবার-পরিজনসহ পিকনিক স্পটে এসে জড়ো হতে থাকেন। প্রকৃতির মনোরম আবহাওয়া, হাসিখুশি মুখ আর পরিপাটি আয়োজন যেন পুরো এলাকাকে উৎসবের আবহে ভরিয়ে তোলে।
আয়োজকদের নিখুঁত পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় সকালের চা-বিস্কুট থেকে শুরু করে চার কোর্স লাঞ্চ পর্যন্ত সব আয়োজন ছিল চমৎকারভাবে সম্পন্ন। দুপুরের খাবারের আয়োজন ছিল সত্যিই বিলাসবহুল ঘ্রাণে ও স্বাদে ছিল এক অনন্য আবেদন। মেনুতে ছিল: স্ম্যাশড বিফ কাবাব, ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি পোলাও, ক্রিমি চিকেন রোস্ট, ওয়াগিউ বিফ রেজালা, প্রথাগত বোরহানি, বিশেষ মিক্সড সালাদ এবং মজাদার ডেজার্ট।
দিনভর শিশু-কিশোর ও নারীদের নানা খেলাধুলা, কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা, কুইজসহ এক প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি হয়। ছোটদের উৎসাহ আর অভিভাবকদের আনন্দে হাসি-উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল পুরো পিকনিক স্পট।
অনুষ্ঠানের সাহসী এমসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ল্যাকেম্বা মুসল্লার নিয়মিত মুসল্লি জহির। কোরআন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন প্রফেসর ড. ইউসুফ ও প্রবাসী সমাজের প্রিয় মুখ মাওলানা হিরু আজাদ।
দক্ষ ও পরিশ্রমী আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন ড. এনামুল হোসেন, তাজুল ইসলাম, আব্দুল করিম, মাহমুদ বাবু, মোর্শেদ, মনিরুজ্জামান, রায়হান প্রমুখ। সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে ছিলেন ল্যাকেম্বা মুসল্লার সক্রিয় সদস্য আরিফ খান।
ছেলেদের পুরস্কার তুলে দেন প্রফেসর ইউসুফ, মাওলানা আজাদ ও আব্দুল লতিফ। মহিলাদের সেকশন পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন আহলে আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামীম এবং Aayat Yousuf
মহিলাদের খেলায় : বালিশ খেলায় প্রথম আহলিয়া মোর্শেদ, দ্বিতীয় আহলিয়া জহির। প্রথম গ্রুপে চেয়ার খেলায় প্রথম আহলিয়া মাসুদ, দ্বিতীয় আহলিয়া আরিফ। দ্বিতীয় গ্রুপে প্রথম আহলিয়া ইউসুফ, দ্বিতীয় আহলিয়া মুশফিক। সুই-সুতা খেলায় প্রথম আহলিয়া রুহুল আমিন, দ্বিতীয় আহলিয়া মাসুদ (২ বার)।
পুরুষদের ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন জহির, দ্বিতীয় হন তামওয়ার্থ মসজিদের ইমাম ও প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
বয়স অনুযায়ী খেলাগুলো ভাগ করা হয়:
ছেলেদের “A” গ্রুপ (১২+), “B” গ্রুপ (৯-১১), “C” গ্রুপ (৬-৮) এবং মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই ক্যাটাগরি। মিনি গ্রুপে ছিল ৫ বছরের নিচের শিশুরা।
মোট ৭৮ জন ছেলে-মেয়ে, ৪০ জন মহিলা এবং ৫০ জন পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। সর্বমোট ১৮১টি পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া, “উত্তম পোশাক” ক্যাটাগরিতেও ছিল বিশেষ পুরস্কার।
কোরআন প্রতিযোগিতার ফলাফল নিম্নরূপ :
গ্রুপ A: প্রথম — Muaz, দ্বিতীয় — হাফিজ Jubayer
গ্রুপ B: প্রথম — Muhammad Khan, দ্বিতীয় — Abu Bakar Karim
গ্রুপ C: প্রথম — Yousuf Khan, দ্বিতীয় — Abdullah Sharif
সবার সুবিধার্থে আয়োজকরা পূর্বেই কয়েকটি নির্দেশনা পাঠিয়েছিলেন, যেমন—
* রান্না ও সার্ভিস পরিচালনা করবে স্বেচ্ছাসেবীরা, তাই ধৈর্যের সঙ্গে সহযোগিতা করা।
* পরিবার প্রতি অন্তত একটি ভাঁজ করা চেয়ার আনতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
* জায়নামাজ, টেবিল ও ছাতা আনলে সুবিধা হবে।
* সকালের নাস্তা হিসেবে থাকবে চা ও বিস্কুট।
* সকাল ৯:৩০ এর মধ্যে সবাইকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়।
* শিশুদের খেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়।
* আপনার আশেপাশে পরিষ্কার রাখুন এবং অন্যকেও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন।
দিনব্যাপী এই পিকনিক শুধু বিনোদন নয়, বরং মুসল্লিদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। ইসলামী সংস্কৃতির আলোকে এমন সামাজিক আয়োজন প্রবাসে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা দেয়, এবং সুস্থ বিনোদনের সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।





অনুষ্ঠানের আংশিক ভিডিও দেখার জন্য ক্লিক করুন