
শিবলী সোহায়েল: আমার দেশ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমানের ফোন এল। বললেন, “তোমাকে ইস্তানবুল আসতে হবে, খুবই জরুরি।”তিনি তখন ফ্যাসিবাদের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ইস্তানবুলে অবস্থান করছেন। সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আয়োজন করা হয়েছে। লন্ডন ও ঢাকা থেকে যোগ দিচ্ছেন আরও কয়েকজন, থাকছেন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও।
সালটা ছিল ২০২২। যেতে হবে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। কিছুদিন ধরে বিশ্বজুড়ে কোভিড-সংক্রান্ত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছে, যদিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তাছাড়া সিডনি থেকে ইস্তানবুললম্বা পথ। শুধু উড়তেই লাগে বিশ বাইশ ঘণ্টা। আমি তখন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার ও প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই নতুন সেমিস্টার শুরু। সেমিস্টার শুরুর আগে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরদের প্রচণ্ড কাজের চাপ থাকে। ছুটি নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু বাংলাদেশে তখন এক ভয়াবহ অবস্থা। ফ্যাসিবাদ পুরোপুরি জেঁকে বসেছে। চারদিকে একটা থমথমে পরিবেশ। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কেবল নির্মম খুনি নয়, একেকটা দানবে পরিণত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো গুম, খুন এবং গ্রেফতারের ভয়ে কার্যত স্থবির। রাজপথে কেউ নেই। ২০১০ সাল থেকে যারা লড়ছেনতাদের কেউ গুম, কেউ গ্রেফতার, কেউ দেশ ছেড়েছেন, কেউবা হতাশ হয়ে নীরব। এই পরিস্থিতিতে যখন মাহমুদুর রহমান সাহেবের ডাক এল, আমি তা উপেক্ষা করতে পারিনি। অনেক কষ্টে ছুটি ম্যানেজ করে রওনা হলাম। প্লেনে বসেই সন্ধ্যা নামা আর ভোর হওয়া দেখলাম। একটি নতুন ভোরের স্বপ্ন নিয়ে ইস্তানবুলে পা রাখলাম।
বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য সময়টা ছিল প্রকট অন্ধকার। টানেলের শেষপ্রান্তেও কোনো আলোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না। চারপাশে ভীতিকর পরিস্থিতি। দেশের মানুষের মুখ প্রায় বন্ধ। যে কোনো আড্ডাতেও লোকজন রাজনৈতিক আলাপ এড়িয়ে চলত। প্রবাসেও আমরা যা কিছু করছিলাম, অধিকাংশই নাম-পরিচয় গোপন রেখেই। কারণ দেশে থাকা স্বজনদের নিরাপত্তার প্রশ্ন ছিল। তবুও থেমে থাকিনি। বিচারিক মঞ্চে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয়ে আমরা বেনামে অনেকগুলো বাংলা ও ইংরেজি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করি। যেমন, যুদ্ধাপরাধ বিচারের নাটক নিয়ে একটি রিয়েলিটি চেক, টাইটেল ছিল- “বাংলাদেশে কি আসলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে?”; একের পর পর এক ব্লগার ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিয়েলিটি চেক – বাংলাদেশে চলমান এই হত্যাকান্ডের “বেনিফিশিয়ারী” কে?; খালেদা জিয়ার ওপর করা অমানবিক অত্যাচারের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে তৈরি করেছিলাম “Is Democracy Dying in Despot’s Detention?” আর গুম নিয়ে ছিল “Abduction and Enforced Disappearance in Bangladesh”। এসবই করতে হয়েছিল পুরোপুরি নামপরিচয় গোপন রেখে।
সাংবাদিকরা আজ যখন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নায়ক সাদিক ক্বায়েমের ছদ্মনাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন বিস্মিত হই। মনে হয়, তারা যেন সেসময়ের ভয়াবহ বাস্তবতা ভুলে গেছে। চারদিকেই ছিল ভয়, নিপীড়ন আর নজরদারি।
দেশের ভেতর থেকে তখন কোন কিছু করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। এই প্রেক্ষাপটেই প্রবাস থেকে যতটা সম্ভব মুক্তির আন্দোলনের রূপরেখা গড়ার লক্ষ্যে মাহমুদুর রহমান সাহেব আমাদেরকে ডেকে পাঠান। সিডনি থেকে যাচ্ছি শুধু আমি। তবে একা নইসামান্য হলেও ইতিহাসের একটি অধ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
২০১০–১১ সাল থেকেই লন্ডন, নিউইয়র্কের মতো সিডনিও হয়ে উঠেছিল প্রবাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। যখন শেখ হাসিনা আদালতের মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নাটক সাজিয়ে রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, তখনই সিডনির হাইড পার্কে শুরু হয় প্রথম প্রতিবাদ। এরপর একে একে সাহারা খাতুনকে ঝাড়ু প্রদর্শন, জামায়াত নেতাদের ফাঁসির প্রতীবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন, শেখ হাসিনার সিডনি সফরের প্রতিবাদে দুইদিনব্যাপী শহরজুড়ে বিক্ষোভ, অস্ট্রেলিয়ার সংসদে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একাধিক মোশন, গুম-খুনের প্রতিবাদ, ফ্যাসিবাদের স্বরূপ তুলে ধরতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ভিডিও ডকুমেন্টারি, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি। সব মিলিয়ে সিডনি হয়ে ওঠে প্রবাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের একটি অন্যতম মুখ্য কেন্দ্র।
ইস্তানবুলে পা দিয়েই শুনিআগামীকাল খুব সকালেই মিটিং শুরু। এই ঐতিহাসিক শহরে এটাই ছিল আমার প্রথম সফর। কিন্তু হোটেল, মিটিং রুম আর জুমার নামাজের জন্য আয়া সোফিয়া ছাড়া সেবার আর কিছুই দেখা হয়নি। যাই হোক, সকালে মিটিংতাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
শেষ রাতের দিকে ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎই মনে হলো বাইরে থেকে একটা সুর ভেসে আসছে। কান পাততেই বুঝলাম, ফজরের আজান। বহুদিন পর মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজান শুনছি। বুক কেঁপে উঠল। এক মুহূর্তে যেন ফিরে গেলাম শৈশবের কোন এক সকালে,যেখানে ভোর মানে ছিল আজান, আব্বার ডাকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে নামাজে দাঁড়ানো।
অষ্ট্রেলিয়ায় তো আর মাইকে আজান শোনা হয় না। তাছাড়াএক যুগ হয়ে গেল, দেশের মাটি ছোঁয়া হয়নি। হঠাৎ এই আজান যেন কানে নয়, সোজা হৃদয়ে প্রবেশ করল। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে জানালার পর্দা সরালাম। কুয়াশাভেজা আকাশ, দূরে কোথাও একটিমাত্র মিনার।সেখান থেকেই ভেসে আসছে সেই ডাক। মনে হচ্ছিল, শুধু নামাজের নয়, এই আহবান যেন আরও বড় কিছুর। যেন কেউ আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—তুমি একা নও, এই অন্ধকারেও আলোর মালিক আছেন।
আজানের প্রতিটি শব্দে বুকের ভেতর একরাশ প্রত্যাশা জমে উঠল। চোখ বন্ধ করে বললাম, আল্লাহ নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। তিনিই জানেন, কোন পথ আমাদের মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে।
সকালে প্রথমদিনের বৈঠকেই দেশের ভয়াবহ বাস্তবতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। চারপাশে ভয়, নিপীড়ন, নির্যাতন, আর অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশ যেন এক বিশাল বন্দিশিবির। মাহমুদুর রহমান সাহেবের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট ও কঠিন: একটি শক্তিশালী গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদের শেকল ভাঙার আর কোনো পথ নেই। জনগণ বোঝে কী ঘটছে। তবু রাজপথে নামার সাহস নেই। কারণ তারা জানে, প্রতিবাদের বিনিময়ে অপেক্ষা করছে গুম, খুন কিংবা জেল। এই শ্বাসরুদ্ধকর নৈঃশব্দ্যের মধ্যেও আমরা খুঁজছিলাম আশার কোন আলো।
২০২১সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে হাসিনার দমন নীতির দাপট কিছুটা থমকে দাঁড়ায়।দেশজুড়ে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়।
উপরে উপরে কিছুটা শান্ত দেখালেও র্যাবের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনাকে আরও নিষ্ঠুর করে তোলে। দেশবাসী না জানলেও শেখ হাসিনার গোয়েন্দারা ঠিকই ধরে ফেলে এর নেপথ্যে ছিলেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের তৎকালীন কর্মকর্তা ও বর্তমানে ‘সাউথ এশিয়ান পলিসিইনিশিয়েটিভ’-এর অন্যতম পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান। শুরু হয় তাঁর উপর হাসিনার নজরদারি, হয়রানি এবং বিদেশি ম্যাগাজিনে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। চলতে থাকে আওয়ামী লীগের কালো অর্থের সহায়তায় আন্তর্জাতিক লবি গ্রুপের চাপ। এক সময় তিনি এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের চাকরি ও হংকংয়ের আবাসস্থল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। কিন্তু ফ্যাসিবাদের শত চাপের মুখেও আশরাফুজ্জামান ভাই এক মুহূর্তের জন্যও পিছু হটেননি।আমি তাঁকে দেখেছি সংকল্পে দৃঢ়, চোখে আগুন, কণ্ঠে বিশ্বাস। এমন মানুষদের কারণেই আমরা এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে পারি, হার না মানার সাহস খুঁজে পাই।
বৈঠকে মাহমুদুর রহমান সাহেবের প্রস্তাবিত গণ-অভ্যুত্থান গড়ে তুলতে দেশের মানুষের ভয়কে জয় করার শক্তি এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বাস্তবতা আরও দৃশ্যমান করার জন্য কিছু কৌশলগত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছিল। দেশের ভেতরে তখনকার পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যভাবে কিছু করা সম্ভব ছিল না, আর প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা উদ্যোগগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। আন্দোলনকে সংগঠিত করতে এবং আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের শক্তি খর্ব করার লক্ষ্যেই আমি তিনটি প্রস্তাব রাখি: ১. প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও মানবাধিকার সংগঠন গঠন। ২. আমাদের কার্যক্রম যেন বিএনপি ও জামায়াতের জন্য সহায়ক হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী নয় এবং ৩. ‘আমার দেশ’ আবার শক্তভাবে চালু করা।
যারা মাহমুদুর রহমান সাহেবের সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা জানেন যেছোট-বড় সবার পরামর্শ ধৈর্য্য ধরে শোনা এবং গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করার এক অসাধারণ গুণ তাঁর আছে। আমার সবগুলো প্রস্তাব তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং গ্রহণ করলেন।
ইস্তানবুল থেকে ফিরেই শুরু হয়ে গেল নতুন অভিযাত্রা। প্রবাস থেকেই মুক্তির লড়াইকে নতুন গতিপথে এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঐ বছর মার্চ মাসেই লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান ভাই আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের কাজে। পাশাপাশি শুরু হলো থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গঠনের কাজ।
জুলাই ২০২২-এ সিডনি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দুটি সংগঠন—South Asian Policy Initiative (SAPI) এবং এর সহযোগী মানবাধিকার সংগঠন Global Voice for Humanity (GVH)। সংগঠন দুটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্বটি আসে আমার কাঁধে। ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পান সিডনি প্রবাসী ড. ফারুক আমিন। পরিচালক ও গবেষক হিসেবে যুক্ত হন সিঙ্গাপুর, হংকং, লন্ডন, আমেরিকা এবং কানাডা প্রবাসী একঝাঁক বিশিষ্টজন। বিশ্বাস, সংকল্প আর ভালোবাসাকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছিল এই উদ্যোগ। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেওদেশের প্রতি দায়বোধটুকুই যেন হয়ে উঠেছিল আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
SAPI (সাপি) গড়ে তোলা হয় একটি গবেষণাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে, যার লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশেরমানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ, কৌশল প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা সৃষ্টি। বাংলাদেশের বাস্তবতা আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরা, ফ্যাসিবাদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং গণতন্ত্রপন্থী কণ্ঠগুলোকে তথ্য ও যুক্তির শক্তিতে সহায়তা করাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে, গ্লোবাল ভয়েস ফর হিউম্যানিটি প্রতিষ্ঠিত হয় নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বরকে আরও মানবিকভাবে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে, যাতে গুম-খুন প্রতিরোধ করা যায় এবং নির্যাতনের শিকার মানুষের জীবনকথা প্রতিধ্বনিত হয় বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে।
এই দুটি প্ল্যাটফর্ম মিলে প্রবাসের আন্দোলন পায় এক নতুন গতি। একদিকে বিশ্লেষণ, অন্যদিকে মানবিক আবেদন; একদিকে গবেষণা ও যুক্তির ভাষা, আরেকদিকে হৃদয়ের স্পর্শ।
প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই সাপির গবেষণা টিম রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি কেস স্টাডি প্রকাশ করে। শিরোনাম—“Bangladesh Awami League: A Case Study of its Militant Politics and Crimes Against Humanity।” এটি ছিল একটি সাহসী প্রয়াস, যেখানে আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই তাদের সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির ইতিহাস তথ্য-প্রমাণসহ বিশ্লেষণধর্মীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয়েছে—রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তা ছাড়াও কীভাবে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল হিসেবেই তারা ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রয়েছে।
গবেষণায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়—শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের মূল অস্ত্র হয়ে ওঠে সন্ত্রাস। দলীয় বাহিনী ও ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে চালানো হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড, জমি দখল, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেওয়ার মতো নানা অপরাধ।
এই কেস স্টাডিতে Rome Statute of the International Criminal Court অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার আলোকে দলটির এসব কার্যকলাপ বিচারযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে আওয়ামী লীগ কেবল রাষ্ট্রক্ষমতার জোরেই নয়, বরং একটি সংগঠন হিসেবেও সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির ধারক ও বাহক।
এই গবেষণা ছিল আমাদের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও দীর্ঘদিনের দমনপীড়নের ইতিহাসকে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সামনে তথ্যনির্ভর ও বিশ্লেষণমূলকভাবে তুলে ধরা, যাতে নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারের জোরালো দাবি গড়ে তোলা যায়।
শুধুমাত্র গবেষণায় সীমাবদ্ধ না থেকে সাপি প্রতিষ্ঠার পরপরই আমরা এক বিশাল কর্মসূচির উদ্যোগ নিই—২০২২ সালের ৩০ আগস্ট, আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে তিনটি মহাদেশে একযোগে আয়োজিত হয় ‘গুম-খুন প্রতিরোধ সমাবেশ’।
লন্ডনের সমাবেশ ছিল প্রাণবন্ত ও গণউপস্থিতিতে ভরপুর। নিউইয়র্কের আয়োজনও ছিল অত্যন্ত সফল ও অংশগ্রহণমূলক। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার সরাসরি সহযোগিতা এবং বিভিন্ন অস্ট্রেলীয় কমিউনিটি ও মানবাধিকার সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে সিডনির সমাবেশটি হয়ে ওঠে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।
এই আয়োজনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া, সাপি ও গ্লোবাল ভয়েস ফর হিউম্যানিটি’র সঙ্গে যৌথভাবে একটি পোস্টার তৈরি করে, যাতে তিনটি সংগঠনের লোগো ব্যবহার করে তারা নিজেরাই প্রচারে অংশ নেয়। অংশগ্রহণ করে প্রায় ১২টি মানবাধিকার ও কমিউনিটি সংগঠন—ভারতীয় কাশ্মীরি, পাঞ্জাবি শিখ, শ্রীলঙ্কান তামিল, রোহিঙ্গা, ওয়েস্ট পাপুয়া (ইন্দোনেশিয়া) সম্প্রদায়সহ আরও অনেকে। উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সিনেটর লি রিয়ানন, বর্তমান সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ, এবং অন্যান্য মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
এই আয়োজনে পূর্ণ সহায়তা করে অস্ট্রেলিয়া বিএনপির একটি ছাড়া সবকটি গ্রুপ, জামায়াতে ইসলামির সমর্থক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সিডনির রাজপথে সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল এক শক্তিশালী বার্তা, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগছে। এই কর্মসূচিগুলোর মূল সুর ছিল একটাই, বাংলাদেশের গুম-খুনের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর নীরবতা ভাঙা। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই প্রবাসী প্রতিরোধ গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে। এই একসাথে এগিয়ে চলার সাহসই ছিল আমাদের বিজয়ের সূচনা।
২০২২-এর গুম প্রতিরোধ দিবসের সফল আয়োজন ছাড়াও, সাপি প্রতিষ্ঠার পর আন্তর্জাতিকভাবে পালিত আরও বেশ কয়েকটি বড় বড় কর্মসূচি সিডনি থেকেই সমন্বয় করা হয়। যেমন, ২০২২ ও ২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ এবং ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট ‘গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিগুলো লন্ডন, নিউইয়র্ক, ফ্রান্স ও কানাডার বিভিন্ন শহরে একযোগে পালিত হয়।
কিংবদন্তি শিল্পী আপেল মাহমুদ এবং জনতার কবিয়াল রাহাত শান্তনুর প্রাণস্পর্শী পরিবেশনায় ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ—‘কালচারাল ভিজিল’। গান, কবিতা, নাটক আর প্রতিরোধের কণ্ঠে সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল প্রবাসের বাতাসও। অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, পিনাকি ভট্টাচার্য, গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা এবং ব্যারিস্টার আরমানের বোন তাহেরা তাসনিম। স্মৃতির যন্ত্রণায় কেঁপে উঠেছিল দর্শক-শ্রোতার হৃদয়, আবার জেগে উঠেছিল ভয়কে না বলার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক নতুন শপথ।
দেশ থেকে হাজার মাইল দূরের এই আয়োজনগুলো ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক অনমনীয় প্রতিবাদ। যা শুধু প্রবাসী কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ করেনি, বরং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতার দিকে ফেরাতে বাধ্য করেছিল।
সভা, সেমিনার, রাউন্ড টেবিল ডিসকাশনের পাশাপাশি আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস ছিল—ইংরেজি ভাষায় ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তব চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরা, যাতে আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা তৈরি হয় এবং নির্যাতিতদের পক্ষে একটি নৈতিক সংহতির ভিত্তি গড়ে ওঠে।
“The Thieves of Dhaka: A Tale of Grand Corruption in Bangladesh” শিরোনামে নির্মিত ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা হয় কীভাবে সরকারঘনিষ্ঠ একটি চক্র রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ও অর্থনীতির শীর্ষস্তরে ভয়াবহ দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এই দুর্বৃত্ত নেটওয়ার্ক কেবল অর্থ লুটপাটেই সীমাবদ্ধ নয়এটি এক ভয়াবহ ক্ষমতার দখলদারি, রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার ও জবাবদিহিহীনতার প্রতিচিত্র।
অন্যদিকে “Enforced Disappearances in Bangladesh: A Shame for Humanity Everywhere” ডকুমেন্টারিতে উন্মোচিত হয় গুমের আতঙ্কময় বাস্তবতা। রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষ, ধ্বংসপ্রায় পরিবার, এবং বিচারের আশায় তাদের নীরব প্রতীক্ষা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সংগঠিত এসব গুম শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক মানবতা সংকট। এই ডকুমেন্টারির প্রতিটি দৃশ্য ও সাক্ষ্য আন্তর্জাতিক বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।
এছাড়া, ‘আমার দেশ’ ও সাপি-র যৌথ উদ্যোগে ভার্চুয়াল ওয়েবিনারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে করা সংবিধানবিরোধী ও দেশবিরোধী চুক্তিগুলো জনসমক্ষে উন্মোচন করা হয়। প্রথম ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয় ৭ আগস্ট ২০২২। শিরোনাম ছিল “Uncovering the Facts: An Investigation on the India–Bangladesh Agreement” । এই ওয়েবিনারের আলোচনায় উঠে আসে, কীভাবে এই চুক্তিগুলো ছিল অস্পষ্ট, অগণতান্ত্রিক এবং সরাসরি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও সংবিধানের পরিপন্থী। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ওয়েবিনার—“River, Border and Market: India–Bangladesh Treaty and the Price of Subservience”, যেখানে আলোচকরা দেখান, ভারত-বাংলাদেশ নদী, সীমান্ত ও বাণিজ্যসংক্রান্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ বারবার উপেক্ষিত হয়েছে। সংসদকে পাশ কাটিয়ে চুক্তিগুলো করার মাধ্যমে সরকার শুধু সংবিধানই নয়, বরং তাদের দেশের প্রতি নেওয়া শপথও ভঙ্গ করেছে।
এই ওয়েবিনারগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল—গণতন্ত্র ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনগণের সচেতনতা গড়ে তোলা। যেখানে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার বিদেশি শক্তির স্বার্থে দেশকে নীরবে বিকিয়ে দিচ্ছে।
এভাবেই প্রবাসে আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে চলতে থাকে আন্তর্জাতিক সংযোগ ও সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াস—বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, রিপোর্ট প্রেরণ ও সংলাপ। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ‘আমার দেশ’-এ প্রকাশিত হয় সাপির সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন।
এর মধ্যেই বিদ্যুৎ চমকের মতো এসে হাজির হয় ২০২৪ সালের সেই কাঙ্ক্ষিত জুলাই। লাখ লাখ আবাবিল নেমে এল পথে পথে। এই নতুন আবাবিলের নাম—জেন-জি। এদের ডানা নেই, কিন্তু কিভাবে দু’হাত প্রসারিত করেও ওড়া যায়, তাই দেখিয়ে দিল আবু সাঈদ। যে গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন নিয়ে ইস্তানবুলবৈঠকের পর থেকে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছিলাম, অবশেষে তা বাস্তব হয়ে ধরা দেয় জুলাইয়ের রাজপথে।
আবু সাঈদের প্রসারিত হাত এতটাই দীর্ঘ ছিল যে, তা শুধু দেশের মানুষকেই নয়জাগিয়ে তোলে প্রবাসীদেরও। গড়ে ওঠে নতুন নতুন ডায়াস্পোরা নেটওয়ার্ক। আন্তর্জাতিক মিডিয়া, মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাপির প্রত্যেক সদস্য এসময় সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল একটাই—ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো মানুষদের পাশে থাকা।
সিডনি থেকে ৩৬ জুলাইয়ের দিকে যাত্রার অসংখ্য গল্পের মাত্র এক ঝলক এখানে তুলে ধরলাম। আরও অনেক গল্প আছে— হাসিনার বিরুদ্ধে জাকি ওমরের আইসিসিতে মামলা দায়েরের গল্প, ফারজানা মাহবুবার জুলাই বিপ্লবে মেয়েদের গল্প, ২০১৩ সালে দেশে গিয়ে শাহবাগ উন্মাদনায় শাপলা ভাসিয়ে ফারুক আমিন কিভাবে সরকারী গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে আবার বেরিয়ে এল সেই গল্প, শাহবাগিদের কালচারাল ফ্যাসিজম রুখে দেওয়ার গল্প, রাহাত শান্তনুর গানের লড়াই– কিছু আনন্দ ও আক্ষেপের গল্প, আমার দেশ বার বার বন্ধ হওয়া এবং অলিউল্লাহ নোমানের সাথে মিন্টো রোডের ডিবি ও ডিজিএফআই-এর সাইবার যুদ্ধের গল্প কিংবা অস্ট্রেলিয়ায়হাসিনার সফরকালে অকল্পনীয় বার্তা নিয়ে রাজপথে ঘুরে বেড়ানো প্রতিবাদী ট্রাকের গল্প।
৩৬ জুলাইয়ের পরও গল্প থেমে নেই। চলছে এখনও। ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে মুজিবের মূর্তি সরানোর গল্প কিংবা স্বাধীন দেশে ফিরে ইউসুফ শামিম ভাইয়ের গ্রেফতার হওয়া এবং ডিজিটাল সিক্যুরিটি এক্ট বিলুপ্ত হওয়ার গল্প।
তবে এই গল্পগুলো সেইসব নায়কদের কাছে কিছুই নয়যারা বুক চিতিয়ে গুলির সামনে দাঁড়িয়েছিল। সেই মায়েদের কাছে তো নয়ইযারা জানতেন, সন্তান হয়ত ফিরবে না তবু পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রাস্তায়। সেই বাবার কাছে নয়যিনি গুলির শব্দ শুনেও বেরিয়ে যেতে যেতে সন্তানদের বলেছিলেন, “আমি আর নাও ফিরতে পারি… নিজেদের খেয়াল রেখো।”
সবকিছু শেষে আমি একটা বিষয় জানি, মনের গভীরে বিশ্বাস করি। প্রবাসে আমাদের এই সামান্য প্রচেষ্টাগুলোআসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিপুল আত্মত্যাগের তুলনায় কিছুই না। তবুও, যদি এই ক্ষুদ্র কাজগুলো আবু সাঈদদের প্রসারিত হাত দুটিতে কোথাও পরোক্ষভাবে শক্তি যুগিয়ে থাকে, যদি ফ্যাসিবাদের গুলির সামনে দাঁড়ানোর সাহস কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে থাকেতাহলেই হয়তো আমাদের রাতজাগাগুলো সফল। প্রবাসের যান্ত্রিক কাজ ও নানা দায়িত্বের মাঝেও সময় বের করে সামান্য কিছু করার চেষ্টাগুলো স্বার্থক।
সিডনি থেকে যখন ইস্তানবুলের উদ্দেশ্যেপ্লেনে উঠেছিলাম, তখন ভাবিনিএই প্লেন আসলে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৩৬শে জুলাইয়ের দিকে, সেই ভোরের দিকে, যার স্বপ্ন নিয়ে আমরা জেগে ছিলাম এতরাত। আল্লাহ সত্যিই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। সব পরিকল্পনা তাঁরই হাতে, আমরা সবাই কেবল যার যার জায়গা থেকে ইতিহাসের এক একটি পাতা উল্টে যাচ্ছি।
(লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী)