ফারুক আমিন : বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্প্রতি কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। গত ১৪ আগষ্ট ২০২৩ তারিখ সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যার পর ঢাকার পিজি হাসপাতালে তার মৃত্যুর খবর সারাবিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিভিন্ন দেশের ইসলামী মনোভাবাপন্ন মানুষদের মাঝে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী কয়েকদিনে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য দেশের মতো
ফারুক আমিন : বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্প্রতি কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। গত ১৪ আগষ্ট ২০২৩ তারিখ সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যার পর ঢাকার পিজি হাসপাতালে তার মৃত্যুর খবর সারাবিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিভিন্ন দেশের ইসলামী মনোভাবাপন্ন মানুষদের মাঝে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী কয়েকদিনে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও মাওলানা সাঈদীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বেশ কয়েকটি গায়েবানা জানাযা এবং দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াত নেতা হিসেবে তথাকথিত আন্তর্জাাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ২০১৩ সালে মাওলানা সাঈদীকে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কিন্তু এই সাজা দেয়ার পর সারা দেশের মানুষ রাজপথে নেমে প্রতিবাদী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে সময় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে দেশ জুড়ে দেড়শ থেকে দুইশ মানুষ নিহত হয়।
জামায়াতের অন্য নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিচারিক হত্যা সম্পন্ন করলেও মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে সরকার পরাজয় স্বীকার করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা দেয়।
বিরাশি বছর বয়স্ক মাওলানা সাঈদীকে তার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বেশ সুস্থ দেখা যায়। নিকটজনদের ভাষ্যমতে তাকে সুস্থ অবস্থাতেই মেডিক্যাল চেকআপের কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে সরকারী ভাষ্যে বলা হয়েছে তিনি হার্ট এটাক করার কারণে হাসপাতালে আনা হয়। আগে থেকেই হৃদরোগের রোগী মাওলানা সাঈদীকে প্রথমে একটি সাধারন মানের হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে পিজি হাসপাতালে আনা হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত এ ধরণের এবং এই বয়সী একজন রোগীকে যে চিকিৎসা দেয়ার কথা তা না দিয়ে বরং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষের ধারণা হলো চলমান রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিপুল জনপ্রিয়তাসম্পন্ন মাওলানা সাঈদীকে হয়তো পরিকল্পিত বিষপ্রয়োগেও হত্যা করা হতে পারে। এই ধরণের কাজের ইতিহাস রয়েছে রাশিয়া এবং ইসরাইলের মতো দেশগুলোর, এবং এই দুটি দেশের সাথে বর্তমান সরকারী দল আওয়ামী লীগের সখ্যতার বিষয়টিও সুবিদিত।
সাঈদীর মৃত্যুর পর ঢাকায় জড়ো হওয়া লাখ লাখ ভক্ত অনুরাগীর উপর সাঁজোয়া যান চালিয়ে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে তাঁর মৃতদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশের তত্ত্বাবধানে দ্রুত জানাযা সম্পন্ন করাতে তাঁর পুত্র শামীম সাঈদী উপস্থিত হয়ে জানাযায় অংশ নিতে পারেননি।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝেও মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর খবর বিপুল আলোড়ন তুলে। পরদিন মঙ্গলবার, ১৫ আগষ্ট ২০২৩ মাগরিবের পর সিডনি’র বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বার বুলেভার্ডে তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত এক গায়েবানা জানাযায় বিপুল সংখ্যক শোকাহত প্রবাসী অংশগ্রহণ করেন। মাওলানা ফেরদৌস আহমেদের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত এ জানাযার পর স্থানীয় লাকেম্বা ইসলামিক সেন্টারে একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া মাহফিলও অনুষ্ঠিত হয়।
একই সময়ে ওয়েস্টার্ন সিডনির সেন্ট মেরিস এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশীদের মাঝে সুপরিচিত সেন্ট মেরিস মসজিদে মাওলানা আবু হোরায়রার ইমামতিতে আরেকটি গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
এ দু’টি তাৎক্ষণিক গায়েবানা জানাযার খবর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লে আরো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী মাওলানা সাঈদীর জন্য জানাযায় অংশ নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরদিন ১৬ আগষ্ট সিডনির অন্যতম প্রধান মসজিদ পাঞ্চবোল মসজিদেও মাগরিবের নামাজের পর আরেকটি গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার আরমাডেল মসজিদ এবং মেলবোর্ন সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিগুলোর উদ্যোগে বেশ কয়েকটি স্বতঃষ্ফুর্ত গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা সাঈদীকে শেষ বিদায় ও দোয়া কামনায় আয়োজিত এসব জানাযায় সব দলের ও মতের মানুষদের শোকাহত উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *