ফারুক আমিন: সম্প্রতি কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রাজস্বাক্ষী থেকে মত পরিবর্তন করা এবং পরবর্তীতে গুমের শিকার হওয়া স্বাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে নিয়ে ফেইসবুকে লেখার কারণে আমেরিকার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত প্রাক্তন এক বুয়েট ছাত্রের মাকে খুলনার খালিশপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ফারুক আমিন: সম্প্রতি কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রাজস্বাক্ষী থেকে মত পরিবর্তন করা এবং পরবর্তীতে গুমের শিকার হওয়া স্বাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে নিয়ে ফেইসবুকে লেখার কারণে আমেরিকার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত প্রাক্তন এক বুয়েট ছাত্রের মাকে খুলনার খালিশপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের আদেশে প্রতিবেশী দুই তরুণ সহ এই বৃদ্ধা নারীকে গ্রেফতার পর পুলিশ দাবী করেছে এই তিনজনকে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের কারণে আটক করা হয়েছে।
গত ১৪ আগষ্ট মাওলানা সাঈদীর ইন্তেকালের পর পিরোজপুরে হওয়া জানাযায় সুখরঞ্জন বালীর উপস্থিতি ও বক্তব্য সারাদেশে আলোড়ন তুলে। এই ঘটনা নিয়ে ১৮ আগষ্ট তারিখে তানযিলুর রহমান নামের একজন প্রাক্তণ বুয়েট ছাত্র, যিনি বর্তমানে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি অধ্যয়ন করছেন, একটি স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, “সুখরঞ্জন বালিকে আমি সাঈদীর সাহেবের মামলা চলাকালীন সময়ে ২০১৩-১৪ সালের দিকে ইউটিউব ভিডিওতে দেখেছি। একদম সহজ সরল গ্রামের কারো সাতেপাঁচে না থাকা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ বুঝা যায় তাকে। অন্যদের মতো সুখরঞ্জন বালি সরকারি চাপে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারতেন, কিংবা কোন কিছু না বলে চুপ থাকতে পারতেন। সেখানে এত রিস্ক নিয়ে সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষী দিতে যাওয়ার হিম্মত তিনি কিভাবে দেখালেন, এটা আমাকে বরাবরই আশ্চর্য করে।”
একই ফেইসবুক পোস্টে তানযিল আরো লিখেন, “এখানে লক্ষণীয় একটা ব্যাপার মিডিয়ার ভূমিকা। আমি গত তিন দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলাম এত বড় একটা ঘটনা মিডিয়া কিভাবে কভার করে। আশ্চর্যের বিষয় এই ঘটনায় কোন বড় পত্রিকায় নিউজ হয় নি, কোন টেলিভিশন প্রতিবেদন করে নি। পিরোজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাড়েরহাট ইউনিয়নের সহজ সরল স্বল্পশিক্ষিত সুখরঞ্জন বালির হিম্মতের কাছে পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং মিডিয়া পরাজিত হলো। এত এত লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে বানানো যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনাল এবং শাহবাগীদের লুঙ্গি তিনি একাই খুলে দিলেন! ও হ্যা, আরো একটা কাজ তিনি করেছেন। বিবেক, বোধ-বুদ্ধি কোথাও বন্ধক রেখে এসেছেন কিনা সেটা যাচাইয়ের সুযোগও আপনাকে করে দিয়েছেন।”
ফেইসবুকে তানযিলের লেখা এই পোস্টটি বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। হাজার হাজার রিএকশন এবং শেয়ারের কারণে এটি প্রচুর সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছায়। একজন রাজনীতি সচেতন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি ফেইসবুকে মাঝে মাঝেই বাংলাদেশ নিয়ে লেখালেখি করেন। তার এই লেখালেখির বিষয়টি স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা নজরে রেখেছিলো। সুখরঞ্জন বালীকে নিয়ে সাম্প্রতিক পোস্টটির পর যুবলীগের পান্ডারা তার বাড়িতে হামলা করে।
ষাট বছর বয়স্কা তানযিলের মা আনিসা সিদ্দীকা এই হামলার প্রতিবাদ করলে যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা খালিশপুর থানা পুলিশকে ডেকে এনে তানযিলের মা’কে গ্রেফতার করার আদেশ দেয়। এ সময় পুলিশকে প্রকৃত ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য প্রতিবেশী দুই তরুণ এগিয়ে আসলে চব্বিশ বছর বয়সী রকিবুল ইসলাম এবং ঊনিশ বছর বয়সী তামিম ইকবালকেও পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। কোন ওয়ারেন্ট কিংবা অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করা এই তিনজনকে পরদিন পুলিশ নাশকতার পরিকল্পনা ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার দেখায়। এ সময় তাদের সামনের টেবিলে কিছু বই, পাসপোর্ট এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট রেখে তোলা ছবি খুলনা পুলিশের ফেইসবুকে প্রকাশ করা হয়।
পুত্রের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের শাস্তি দিতে বৃদ্ধা মাকে গ্রেফতারের এই ঘটনা বাংলাদেশী অনলাইন ব্যবহারকারীদের মাঝে প্রচন্ড আলোড়ন তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকেই এ ঘটনাকে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন কর্তৃক বিদেশে অবস্থান করা ভিন্নমতাবলম্বীদের পরিবারের সদস্যদেরকে শাস্তি দেয়ার পদ্ধতি শেখ হাসিনার সরকার অবলম্বন করেছে বলে তুলনা করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এ ধরণের কাজ এটিই প্রথম নয়, বরং এ ধরণের অসংখ্য ঘটনার পাশাপাশি সম্প্রতি নির্বাসনে থাকা জনপ্রিয় সাংবাদিক কনক সরওয়ারের ছোট বোনকে গ্রেফতারের ঘটনাও অনেকে উল্লেখ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সচেতন বাংলাদেশী নাগরিকরা দলমত নির্বিশেষে এই কলংকজনক ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
একজন মেধাবী ও প্রবাসী শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক মতপ্রকাশের অপরাধে তার বৃদ্ধা মাকে গ্রেফতারের এ ঘটনাটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিদেশী দূতাবাসগুলোর নজরে এসেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (বিএএল তথা বাল) মাঠপর্যায়ের দুর্বৃত্তদল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ঘটা এই জঘন্য ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে গুম. বিচারবহির্ভূত হত্যা, ও বিরোধী মত দমনের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার বাল সরকারের কপালে মানবাধিকার লংঘনের আরেকটি তিলক যোগ হলো।
ছবি সৌজন্যে: তানযিলুর রহমানের ফেইসবুক একাউন্ট এবং খুলনা মেট্রোপলিটান পুলিশের ফেইসবুক পেইজ।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *