728 x 90

ডিসেম্বরে কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে?

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসমাবেশগুলো সবার মনযোগ কেড়েছে। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্র অনুযায়ী এই সমাবেশগুলো বানচালের সম্ভাব্য সকর প্রচেষ্টা চালানোর পরও এই সমাবেশগুলো মানুষের ঢলে পরিণত হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে যানবাহন বন্ধ করে দেয়া, মোবাইল কোম্পানীগুলোকে দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া, আওয়ামী গুন্ডা ও পুলিশের যৌথ আক্রমণে হয়রানি ও

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসমাবেশগুলো সবার মনযোগ কেড়েছে। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্র অনুযায়ী এই সমাবেশগুলো বানচালের সম্ভাব্য সকর প্রচেষ্টা চালানোর পরও এই সমাবেশগুলো মানুষের ঢলে পরিণত হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে যানবাহন বন্ধ করে দেয়া, মোবাইল কোম্পানীগুলোকে দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া, আওয়ামী গুন্ডা ও পুলিশের যৌথ আক্রমণে হয়রানি ও গ্রেফতার এমন সমস্ত উপায় অবলম্বন করার পরও মানুষজন শত শত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসছে এবং কয়েকদিন ও রাত সেখানে অবস্থান করছে। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তপনার সামনে নিষ্প্রভ থাকার প্রেক্ষিতে বিএনপির এই নতুন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কৌশল সম্পর্কে তাই জনমনে কৌতুহলের সঞ্চার হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন শহরে সমাবেশের শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর তারিখে রাজধানী ঢাকায় তাদের মহাসমাবেশের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান নেতারা তাদের স্বভাবসুলভ বিভিন্ন ধরণের উল্টাপাল্টা এবং উদ্ভট বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের নার্ভাস হওয়ার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের অগ্রিম ধারণা এবং গুজবের ছড়াছড়ি।

বাংলাদেশে যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার স্বাভাবিক মত প্রকাশের সমস্ত উপায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং ডিজিটাল কালাকানুন প্রয়োগ করে মানুষের মুখ বন্ধ করার সর্বোত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বর্তমানে ইন্টারনেট হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের তথ্য ও মতামত আদান প্রদানের সবচেয়ে প্রধান মাধ্যম। দালালী ও চাটুকারিতার কারণে বাংলাদেশের সমস্ত পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলো এখন মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত এখন ফেইসবুক এবং ইউটিউবের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে ড. তাজ হাশমী, পিনাকী ভট্টাচার্য্য, মাহমুদুর রহমান, কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসেনদের মতো প্রবাসী ও নির্বাসিত বিশ্লেষক এবং সাংবাদিকদের শ্রোতামন্ডলী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাসনে থাকা এই সমস্ত বক্তারাও একই সাথে পুর্বাভাষ দিয়ে যাচ্ছেন ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসন্ন কোন একটি বড় ধরণের পরিবর্তনের।

অন্যদিকে বিএনপি এবং জামায়াতের মতো বাংলাদেশের প্রনিধানযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঢালাও দমন-নিপীড়ন চালিয়ে কোণঠাসা করে রাখার প্রেক্ষিতে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে যে ধরণের একটি বিকল্প ধারার রাজনৈতিক পদ্ধতি আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করে যাচ্ছে, এই ধারার মুখপাত্র হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়াও ডিসেম্বর মাসে পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলছেন। সাবেক আওয়ামী অর্থমন্ত্রী এসএম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া অবশ্য এই বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা, আইএমএফের ঋণ এবং ব্যাংক লুটপাটের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী এক ধরণের আশংকা ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার জন্য সরকার ফরেন রিজার্ভের যে হিসেব দেখিয়েছিলো তা আইএমএফ প্রত্যাখ্যান করে সঠিক হিসাব চাওয়ার পর এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা নিজের মুখেই দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রকাশ করেছিলো এবং দেশবাসীকে নানাভাবে কৃচ্ছতা সাধনের পরামর্শ দিচ্ছিলো। এরই মাঝে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে পণ্য আমদানীর জন্য এলসি খুলতে অপারগ হয়ে পড়ে। পাশপাশি বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের ফরেন কারেন্সি একাউন্ট খোলার উপরও সরকারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামী ব্যাংককে লুটপাট করে ফোকলা করে দেয়ার খবর। ফাঁস হয়ে যাওয়া দলিল দস্তাবেজে দেখা যায় নাম-ঠিকানা যাচাই করা ছাড়াই অস্তিত্বহীন বিভিন প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকটি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা এই ব্যাংকটিকে ২০১৭ সালে ডিজিএফআই সহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে দখল করে নেয়ার পর থেকে সর্বসাধারণের আমানত নিয়ে যথেচ্ছা দুর্নীতি করে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট এস আলম, বেক্সিমকো এবং বসুন্ধরা গ্রুপগুলো পরস্পরের মাঝে দখল নিয়ে কামড়াকামড়ি শুরু করাতে এই দুর্নীতির খবর বের হয়ে আসছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। যারা বাংলাদেশের ফোকলা হয়ে যাওয়া অন্তঃসারশূণ্য ব্যাংকগুলার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানেন তাদের মতে ফাঁস হয়ে যাওয়া খবরগুলো আসলে আইসবার্গের চুড়ার মতো বাস্তবের ভয়াবহ দুর্নীতি ও লুটপাটের সামান্যতম অংশই প্রকাশ করছে।

একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও মুদ্রা ব্যাবস্থার টিকে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো আস্থা। বাংলাদেশে বর্তমানে আস্থার সংকট চরমে পৌছেছে। এই আগুনে বাতাস যোগাচ্ছে সরকারের নতুন নতুন বিভিন্ন ধরণের ব্যার্থতা। চলতি বছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় স্বাভাবিক প্রশ্নপত্র না দিয়ে বরং বোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের সামনে পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তারা এই শিশু-কিশোর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ি থেকে পরীক্ষার উত্তর লেখার জন্য কাগজ নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কাগজ কেনার খরচ নির্বাহ করার সামর্থ্য এখন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী দপ্তরটির নেই। এই নজিরবিহীন ঘটনা দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছে নিকট অতীতে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনার ঠিক আগে সেদেশেও এমনভাবেই কাগজের সংকট হয়েছিলো।

যদিও একদিকে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নানা পর্যায়ের নেতা ও আমলারা সমস্বরে অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলছে, অন্যদিকে তাদের লুটপাট ও লাগামহীন অর্থব্যয় থেমে নেই। এর ভেতরেই তারা পরিকল্পনা করেছে সচিবদের জন্য বিপুল খরচ করে বাড়ি করার। প্রধানমন্ত্রী এর মাঝেই সদলবলে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো কিন্তু শেষ মুহুর্তে জাপান সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাতিল করে দিয়েছে এবং সব সফরসঙ্গীদের ভিসা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে। কথা ছিলো নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বাংলাদেশ সফরে আসবেন। কিন্তু কয়েকদিন আগেই সে সফর বাতিল করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া্।

আগমনী ডিসেম্বরের প্রেক্ষিতে বিদেশী সরকারগুলোর তৎপরতার দিকে তাকালে দেখা যায় সম্প্রতি আরেকটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। জাপানী রাষ্ট্রদূত এক আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় বলেছেন তারা আশা করেন বাংলাদেশে পুলিশের মাধ্যমে রাতের বেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে না। কুটনৈতিক অঙ্গনে জাপান সাধারণত সর্বোচ্চ ভদ্রতা ও কৌশলের পরিচয় দেয়ার জন্য সুবিদিত। সেই দেশটির প্রতিনিধির এমন বক্তব্য পুরো দেশের গালে সজোরে চপেটাঘাতের মতো প্রতিভাত হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে জাপানী রাষ্ট্রদূত এই কথা বলে তাদের সরকারের মনোভাব কৌশলে প্রকাশ করেছেন। জাপানী রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমের সামনে জাপানী রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ‘যা বলার বলেছি’ মার্কা হম্বিতম্বি করার প্রেক্ষিতে জাপানী রাষ্ট্রদূত আবারও বলেন বাংলাদেশের ঐ মন্ত্রীর সাথে তার দেখাই হয়নি। এভাবে উপর্যুপরি অপমান ও মিথ্যাবাদ সাব্যস্ত করার ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সাধারণত দেখা যায় না। তথাপি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু কোন ধরণের কূটনৈতিক ভব্যতা ও নিয়মনীতির ধার ধারে না, তারা তাদের মতো করেই গায়ের জোরে মাঠ দখল করার মতো করে ভৃত্য সাংবাদিকদের সহযোগিতায় নিজেদের বিজয়ের ডংকা বাজিয়েই যাচ্ছে।

বিদেশী কুটনৈতিকদের এই ধরণের মতামত প্রকাশের ঘটনাগুলাও বাংলাদেশের সচেতন মানুষদেরকে চিন্তিত করেছে। অনেকেই মনে করছেন বাইডেন প্রশাসনের মুল গুরুত্ব যেহেতু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উপর, সুতরাং আগে আওয়াম লীগের উপর এই অঞ্চলের মার্কিন আজ্ঞাবহ প্রতিনিধি ভারতের মাধ্যমে আমেরিকার যে আশীর্বাদের ছায়া ছিলো, তাও আগের মতো নেই। গত বছরের ডিসেম্বরের দশ তারিখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র‍্যাব বাহিন এবং এই বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের সাত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো। বছর ঘুরে আবারও ডিসেম্বরের দশ তারিখ আসতে যাচ্ছে। এই দিনে এবার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদের প্রতিনিধিত্বশীল কণ্ঠস্বর হয়ে উঠা রাজনৈতিক দল বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশেরও আয়োজন হতে যাচ্ছে। সুতরাং সব মিলে পুরো দেশের মানুষ উৎকণ্ঠার সাথে অপেক্ষা করছে এই ডিসেম্বরে কি হতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য। বছরের পর বছর ক্ষমতা দখল করে রাখা আওয়ামী লীগ কি এইবার তাদের নিজেদের লুটপাটের ফসল অর্থনৈতিক ব্যর্থতার সামনে পর্যদুস্ত হতে যাচ্ছে? বিএনপি কি পারবে সারা দেশের মানুষকে প্রেরণা জুগিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে? না কি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফখরু-মইনুর মতো আবারও কোন তৃতীয় পক্ষ এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ পাবে? না কি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই রাখবে এবং বর্তমানে চলমান নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে চুয়াত্তুরের মতো প্রকট দুর্ভিক্ষে পরিণত করার জন্য তাদের লুটপাট চালিয়েই যাবে? সময়ই বলে দেবে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising