সুপ্রভাত সিডনি ডেস্ক : গত দশ বছরেরও বেশি সময় যাবত অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী বিষয়ক নীতিমালা আন্তর্জাতিকভাবে ও আভ্যন্তরীণভাবেও অমানবিক হিসেবে নিন্দিত ছিলো। বিশেষ করে নৌকায় করে আসা প্রায় ঊনিশ হাজারের মতো শরণার্থী দেশটিতে এবং অন্যান্য দেশের ডিটেনশন সেন্টারে নানা অধিকারবিহীন মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। সম্প্রতি আলবানিজি সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপে শেষপর্যন্ত অসহায় এ শরণার্থীরা কিছুটা আশার
সুপ্রভাত সিডনি ডেস্ক :
গত দশ বছরেরও বেশি সময় যাবত অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী বিষয়ক নীতিমালা আন্তর্জাতিকভাবে ও আভ্যন্তরীণভাবেও অমানবিক হিসেবে নিন্দিত ছিলো। বিশেষ করে নৌকায় করে আসা প্রায় ঊনিশ হাজারের মতো শরণার্থী দেশটিতে এবং অন্যান্য দেশের ডিটেনশন সেন্টারে নানা অধিকারবিহীন মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। সম্প্রতি আলবানিজি সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপে শেষপর্যন্ত অসহায় এ শরণার্থীরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী এন্থনি আলবানিজির সরকার টেম্পরারি প্রটেকশন ভিসা (টিপিএস) এবং সেইফ হেভেন এন্টারপ্রাইজ ভিসা (এসহেইচইভি) এর অধীনে থাকা বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থীদের জন্য কিছু নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে।
বছরের পর বছর ঝুলন্ত এবং উপায়হীন ভাবে বসবাস করা এই শরণার্থীদের জন্য কোন স্বাস্থ্যসেবা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার সুযোগ নেই। এ শরণার্থীদের পরিবারে সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়ার কিংবা তাদের বাচ্চাদের কোন শিক্ষা পাওয়ার সুযোগও নেই। এদের অনেকেই এখন পারমানেন্ট ভিসার আবেদন করার সুযোগ পেতে পারেন।
ইমিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী এন্ড্রু জাইলস ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩ তারিখে মিনিস্টারিয়াল ডাইরেকশন নাম্বার ৮০ কে বাতিল ঘোষণা করেছেন। এই ডাইরেকশনের অধীনে এতোদিন নৌকায় করে আসা শরণার্থীদের জন্য তাদের পরিবারে সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পুরোপুরি রহিত ছিলো। ২০১৩ সালে তৎকালীন ইমিগ্রেশন মিনিস্টার স্কট মরিসন মিনিস্টারিয়াল ডাইরেকশন নাম্বার ৬২ জারি করেন। শরণার্থীদের জন্য বিরুপ ও প্রতিকূল এই ডাইরেকশনকে লিবারেল সরকারগুলো বিভিন্ন সময় নতুনভাবে জারি করেছিলো।
সম্প্রতি ঘোষিত নীতিমালার অধীনে যদিও ঊনিশ হাজার শরণার্থী কিছুটা সুবিধা পেতে যাচ্ছে, তথাপি এখনো প্রায় বারো হাজার শরণার্থী অন্যান্য শ্রেণীতে বঞ্চিত অবস্থায় রয়ে গেছে। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারীর পর নৌকায় করে আসা কোন শরণার্থী, টিপিভি ও এসহেইচইভি আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়া প্রায় আড়াই হাজার শরণার্থী এদের মাঝে রয়েছেন।
যদিও আলবানিজি সরকার অনেক শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী ভিসার আবেদনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তথাপি দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা অমানবিক ‘টেম্পরারি প্রটেকশন’ পদ্ধতি পুরোপুরি বিলুপ্ত করার কোন ঘোষণা ও নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রত্যাশা করে শরণার্থী বিষয়ক নীতিমালাকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে পূণঃমূল্যায়ন এবং গঠন করবে প্রধানমন্ত্রী এন্থনি আলবানিজির নেতৃত্বাধীন এই সরকার।
বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থীদের মাঝে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক শরনার্থী রয়েছেন, যাদের কথা অনেক সময়েই অস্ট্রেলিয়ান-বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকে খেয়াল রাখেন না। আবার অন্যদিকে কমিউনিটির কিছু মানবাধিকার সচেতন মানুষ এই শরণার্থী ভাই-বোনদেরকে সাহায্য করার জন্য নানা প্রচেষ্টা করেছেন। বিগত সময়গুলোতে সুপ্রভাত সিডনি বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য মানবিক ও সামাজিক সহায়তা দেয়ার জন্য সর্বোত প্রচেষ্টা করে এসেছে যা অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বাংলাভাষী একমাত্র কমিউনিটি পত্রিকা হিসেবে সবসময়েই অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে। শরণার্থী ভাই-বোনদের প্রতি সুপ্রভাত সিডনির সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য পরামর্শ হলো মিষ্টি ও ফাঁপা বুলিতে প্রতারিত না হয়ে শুধুমাত্র যোগ্য, পেশাদার ও অস্ট্রেলিয়ার যথাযথ লাইসেন্সধারী ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যে কোন পরামর্শ নেয়ার চেষ্টা করা। এছাড়াও এদেশে বেশ কিছু আইনী ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে যারা শুধুমাত্র মানবিক কারণে শরণার্থীদেরকে বিভিন্ন আইনী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সুপ্রভাত সিডনি এ ধরণের সংগঠনগুলোর সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশী শরণার্থীদেরকে সহায়তা করতে সব ধরণের প্রচেষ্টা করে।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *