728 x 90

গনি মিয়ার উন্নয়ন বিলাস

গনি মিয়া এখন উন্নত জীবনের অধিকারী। সে এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হয়েছে। চোখে উন্নয়নের রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়ায়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সব জায়গায় শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পায়। কিন্তু এই জনপদে কত মানুষ যে কষ্টে আছে তা গনি মিয়ার চোখে পড়েনা। না পড়ারই  কথা। গনি মিয়াদের ভাষায় এখন উনারা স্বর্গে বসবাস করছে। আর

গনি মিয়া এখন উন্নত জীবনের অধিকারী। সে এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হয়েছে। চোখে উন্নয়নের রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়ায়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সব জায়গায় শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পায়। কিন্তু এই জনপদে কত মানুষ যে কষ্টে আছে তা গনি মিয়ার চোখে পড়েনা। না পড়ারই  কথা। গনি মিয়াদের ভাষায় এখন উনারা স্বর্গে বসবাস করছে। আর ডাইনিং টেবিলে আরাম করে বসে মুরগীর রান চিব্বাছে। সারাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধি, ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কোন কিছুতেই গনি মিয়াদের কিছু যায় আসে না। কারণ সরকারি দলে থেকে সরকারের কৃপায় এই আওয়ামী চাটার দলেরা লুটপাট করে যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে সেটা তো তাড়াতাড়ি ফুরুবে না। তাই গনি মিয়াদের আর ঠেকায় কে? সাধারণ নাগরিক না খেয়ে মরুক তাতে গনি মিয়াদের কিছুই মালুম নেই। উনাদের কাছে অর্থনীতি চাঙ্গা। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন রূপ।

গনি মিয়াদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আশংকাজনক ভাবে কমে গেলেও তাদের মুখে উন্নয়নের বাগাড়ম্বী। ডলার সংকটে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে। বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৮০ ভাগ চলে গ্যাস দিয়ে, এছাড়া ডিজেল ও কয়লা দিয়ে। আর এসব জ্বালানির বেশিরভাগ অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নিজস্ব জ্বালানির উৎস বিবেচনা না করেই চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন প্রাইভেট বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, যা দেশের জন্য বোঝা হয়েছে (বিবিসি, ১৫ নভেম্বর ২০২০)। চাহিদা নেই তবুও  একের পর এক বিদ্যুৎ কারখানার অনুমোধন দিয়েছে সরকার, যার অধিকাংশ অলস পড়ে আছে (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, প্রথম আলো)।

উল্লেখ্য যে,  সরকার ঘনিষ্ঠ গনি মিয়াদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং বিনা দরপত্রে দেওয়া এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে; কেন দেয়া হয়েছে ইত্যাদি প্রশ্ন যাতে কেউ করতে না পারে এজন্য ইন্ডেমিনিটি আইন করা হয়েছে।  কিন্তু চাহিদা নেই, উৎপাদন নেই, বিদ্যুৎ বিক্রি নেই,  কারখানা বানিয়ে তারা বসে থাকবে? তারা সরকারের কাছে অর্থ নেয় ক্যাপাসিটি চার্জ বা সক্ষমতার জন্য। অর্থ এই যে, প্রাইভেট কারখানা গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ক্যাপাচিটি চার্জ নিতে থাকে সরকারের কাছে। আরোও অবাক বিষয় হচ্ছে, এসব ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ডলারে বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। এভাবে গনি মিয়ারা ডলারের ঝুলি খালি করে ফেলেছে।

অন্যদিকে সারাবিশ্ব যখন নবায়ন যোগ্য জ্বালানির দিকে ছুটছে, বাংলাদেশ তখনও গ্যাস, কয়লা, তেলের উপর নির্ভরশীল বিদ্যুৎ কারখানা তৈরিতে ব্যস্ত। বিদেশী অনুদান বা ঋণ নিয়ে নির্মান চলছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মাতাড়বাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান শেষ না হতেই জাপান পিছু টান দিয়েছে (২৩ জুন ২০২২ প্রথম আলো)। কারণ কয়লাভিত্তিক কোন কিছুতেই জাপান সহায়তা করতে পারবেনা, এটা জাপানের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত। এখানে অর্থের অলস বিনিয়োগ হয়েছে। অধিকন্তু, রামপাল যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে সেটা আজও উৎপাদনে যেতে পারেনি (১৫ জানুয়ারি ২০২২ প্রথম আলো)। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে রামপাল চালু করলেও কয়লার মজুদ না থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকার বলে করোনার কারণে বিভিন্ন কাজে ব্যাঘাত, এজন্য সম্ভব হচ্ছেনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কয়লা কোথায় থেকে আসবে? অনেক বলবেন দেশে কয়লা আছেনা? অবশ্যই আছে। কিন্তু উত্তোলনের আগ্রহ নেই। বিশাল মজুদ থাকা সত্বেও কয়লা আমদানিতে আগ্রহী বাংলাদেশ (২৫ জানুয়ারি ২০২২, আমাদের সময়)।   এত কয়লা মজুদ থাকার পরও  আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো  অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে আগ্রহী সবাই। এলএনজি, জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের জ্বালানি আমদানিতে গনি মিয়াদের আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। এ কারণেই দেশের খনিজসম্পদ উত্তোলন ও তার সঠিক ব্যবস্থাপনায় চরম অবহেলা দৃশ্যমান। আমদানিতে গনি মিয়ায়দের  লাভ আছে। এতেকরে ওভার ইনভয়েসিং এর আড়ালে অর্থ পাচারের সুবিধা হয়। তবে এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে সামনে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জ্বালানি সংকটে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশ । ইতিমধ্যেই তীব্র লোড শেডিং এর কবলে দেশ।

একসময় যে গ্যাসের উপর বাংলাদেশ ভাসত বলে মনে করা হতো এখন সেই গ্যাসও গনি মিয়ারা  আমদানী করে বিদেশ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাচিটি চার্জ, ডলার সঙ্কট  সব মিলিয়ে বিশাল অংকের খরচ মেটাতে পারছেনা সরকার। তবুও ধান্দাবাজ গনি মিয়ারা  সরকারকে টেকসই সল্যুশন না দিয়ে আমদানি করার কুইক সল্যুশন দিয়ে নিজের পকেট ভরবে।  যত আমদানি হবে তত একটি পুঁজিবাদী শ্রেণির বিশাল লাভ। তারা আমদানির এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা করবে বিশাল মুনাফা পকেটে নিবে। সাধারণ জনগণ মুলা খাক। অধিকন্তু, ২০১৭ সালে ভারতের আদানির সাথেই বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে  বাংলাদেশ। মেয়াদ ২০৪৭ সাল পর্যন্ত। ১৬৩ পৃষ্ঠার এই চুক্তিটি গোপনীয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি  বলেছেন চুক্তির বিষয়টি প্রাইভেট, এ বিষয়টি প্রকাশ  করা যাবে না (মানবজমিন, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩: আদানির সঙ্গে আলোচনা ‘প্রাইভেট’, প্রকাশ্যে আনা যাবে না)। দেশের অর্থ খরচ করে অন্য দেশের সাথে কি চুক্তি হবে সেটি জনগণ তথা দেশের মালিকগণ জানতে পারবেনা! ব্যাপারটি বিস্ময়কর! আসলে আদানির সাথে চুক্তিতে এমন কিছু শর্ত আছে যা দেশের জন্য ক্ষতিকর! তাই এটা প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। ওয়াশিংটন পোষ্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই চুক্তিতে কয়লার মূল্যের কোন সিলিং বা সীমাবদ্ধতা নেই (The Washington Post, February 7, 2023: Bangladesh seeks new terms for Adani coal electricity deal)। অর্থাৎ আদানি বিদ্যুৎ ইচ্ছেমত কয়লার দাম চাইতে পারে (চুক্তির শর্তঃ স্ক্রিন শট)। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গনি মিয়ারা এসব চুক্তি সই করার সময় চোখ কোথায় রাখে! কিংবা দেখেও ইচ্ছা করেই দেশকে বিক্রি করে দিয়ে আসে কিভাবে! ইতিমধ্যেই আদানি বিদ্যুৎ কয়লার দাম হাঁকিয়েছে ৪০০ ডলার প্রতি টন যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার দাম পড়ছে ২৫০ ডলার প্রতি টন (প্রথম আলো, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩: আদানি কয়লার দাম ৬০% বেশি চায়) । 

সুত্রঃ  আদানি ওয়াচ । লিঙ্ক <https://www.adaniwatch.org/is_bangladesh_s_electricity_contract_with_adani_legally_void>

যাহোক, একদিকে বাংলাদেশে চাহিদার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে অলস পরে (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, প্রথম আলো)।  শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। অন্যদিকে আদানিকে সুবিধা দিয়ে এই চুক্তির কারণ কি? এখন বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপচিটি চার্জ হিসেবে  আদানিকে দেয়া হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার যা পদ্মা সেতুর খরচের তিনগুণ (ডেইলি স্টার বাংলা, ৮ জুন ২০২২২ঃ বিদ্যুৎ আসেনি, তবুও ভারতের আদানি গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে ১২১৯ কোটি টাকা’)। উন্নয়ন শুধু বাংলাদেশের গণি মিয়াদের মধ্যেই সীমিত নয়, সীমানা ছাড়িয়ে ভারতেও যাচ্ছে। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিলেও আদানি সহ অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ছোট একটি বিনিয়োগ কোম্পানি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর  আদানির সাম্রাজ্যের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই তার ব্যপক সম্পদ কমে গেছে।  এদিকে আদানির সাথে চুক্তি মোতাবেক জ্বালানির আমদানি ও পরিবহন খরচ ক্রেতা দেশই (বাংলাদেশ) বহন করার শর্ত রয়েছে। আদানি এই সুযোগ নিয়ে তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে প্রতি মেট্রিক টন কয়লার যে মূল্য (৪০০ মার্কিন ডলার) ধার্য করেছে, বাংলাদেশ মনে করছে সেটা আন্তর্জাতিক বাজার (২০০ মার্কিন ডলার)  দরের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ফলে গনি মিয়াদের জন্য আদানির গোড্ডার বিদ্যুতের দামে জ্বালানির খরচ একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ পেতে দু’দেশ মিলিয়ে মোট ১৩৪ কিলোমিটার লম্বা ট্রান্সমিশন লাইন নির্মানের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তদুপুরি, পচিম বাংলার কৃষকদের একটি দল ভারতে আদানির  বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মানের উপর মামলা করেছে। সব মিলিয়ে আদানিরম কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে গনি মিয়াদের। অথচ, এই বিশাল অঙ্কের চুক্তি না করে বাংলাদেশ নিজের দেশেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাতে পারত। কিন্তু ভারতকে খুশি রাখতেই গনি মিয়ারা এই প্রকল্পে চুক্তি করেছে বলে অনেকের ধারনা।

ডলার সংকটে গনি মিয়াদের বিপদ সর্বমুখী। উন্নয়নের বাগাড়ম্বী গল্প দিয়ে সংকট লুকানোর চেষ্টা করলেও কোন কিছুতেই আর গোপন রাখা যাচ্ছেনা। এই সংকট এত চরমে যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি বিল ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ-এর কয়েকটি ডেডলাইন মিস করেছে বাংলাদেশ। কয়লা আমদানিও করতে পারছেনা। কয়লার সংকটে ইতিমধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যদিও আবারো চালুর চেষ্টা চলছে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধের দ্বারপ্রান্তে! ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে একের পর এক চাপ পড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও। ঔষুধ  তৈরীর কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছেনা। চাপ বাড়ছে  ঔষুধের মূল্যের উপর। ডলারের অভাবে আটকে পড়ে গেছে রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের। এক বেলা বা একদিন কিংবা পুরো মাস ছোলা না খেয়েও ইফতারি করা সম্ভব কিন্তু চিকিৎসা সামগ্রী না পেলে বা চিকিৎসা না পেলে কিভাবে চলবে? ডলারের অভাবে আমদানি করা যাচ্ছেনা অস্ত্রপচারের জন্য ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সামগ্রী। এরমধ্যে রয়েছে হার্টের ভালভ, পেসমেকার, রিং, হার্টের স্টেন্ট ও অক্সিজেনেটরসহ বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট । এর ফলে  হার্ট সার্জারি, বাইপাস সার্জারি, নিউরোসার্জারি, কিডনি সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্জারিগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে (দি বিজনেজ স্টান্ডার্ড, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩,ঋণপত্র সমস্যায় তীব্র হচ্ছে অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম সংকট) । বাংলাদেশে ৭০% মেডিকেল সামগ্রী আসে বিদেশ থেকে। আগে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট-এ  প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ জন রোগীর হার্টের বাইপাস সার্জারি, ওপেন হার্ট সার্জারি, ভালভ রিপ্লেসমেন্টসহ বিভিন্ন অপারেশন করা হতো। কিন্তু অক্সিজেনেটরের অভাবে গত জুলাই মাস ২০২২ থেকে প্রতি মাসে মাত্র ২০-৩০ জন রোগীর অপারেশন হচ্ছে। শুধু এখানেই শেষ নয় ডলারের অপ্রতুলতার জন্য বিদেশ আমদানি করা যাচ্ছেনা ব্লাড ব্যাগ। রক্তদাতার সংখ্যা পর্যাপ্ত থাকলেও ব্লাড ব্যাগের অভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন কাজ ব্যহত হচ্ছে। এতে করে জীবন রক্ষাকারী জরুরি অপারেশন গুলোও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে  রক্তের অভাবে (দি বিজনেজ স্টান্ডার্ড, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, এলসি খুলতে না পারায় বাজারে ব্লাড ব্যাগের সংকট)। উল্লেখ্যযে, ব্লাড ব্যাগের ১০০% ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। 

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর হলেও এখনো বাংলাদেশের  অর্থনীতি আমদানি নির্ভর। সুই থেকে শুরু করে সবই আমদানি করতে হয় গনি মিয়াদের। অথচ, আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশীয় উৎপাদককে উৎসাহিত করা যেত। উদাহরণ হিসেবে আসি ব্লাড ব্যাগের কথায়। ব্লাড যদি আমদানি না করে দেশেই উৎপাদন করা যেতো। আমার মনে হয়না যে এই প্রযুক্তি কিনতে অনেক অনেক বিলিয়ন ডলার লাগত। যেখানে যেখানে গনি মিয়ারা বিদেশী ঋণ নিয়ে একের পর এক মেঘা প্রকল্প করে উন্নয়নের ফানুস উড়াচ্ছে সেখানে সামান্য কিছু ডলার খরচ করে এরকম এরকম প্রযুক্তি অবশ্যই দেশে আনা যেত। অবশ্য এতে গনি মিয়াদের কিছু যায় আসেনা। কারণ তারা তো তাদের উল্টো পথে দুর্গন্ধ-যুক্ত বায়ু বের হলেও সেটা ফিক্সড করতে যাবে সিঙ্গাপুর। দেশে ব্লাড ব্যাগ থাকল কিনা, মেডিকেল সামগ্রী থাকল কিনা, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ থাকল কিনা তাতে তাদের কি আসে যায়! ভুক্তভোগী দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আর এই প্রান্তিক জনগণের কথা চিন্তা কে করে? কারণ এদের কোন মূল্য নেই। ভোট নামক যে ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার আছে- সেটাও নেই এদের। তাই এরা বেঁচে থাকল নাকি মরে গেল সেটা দেখার দরকার নেই স্মার্ট গনি মিয়াদের।

বাংলাদেশের অবস্থা যখন এরকম তখন গনি মিয়াদের মুখে প্রায়ই শোনা যায় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সব দোষ শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উপর! এক্ষেত্রে গনি মিয়াদের কোন দোষ নেই। বছরের পর বছরের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অব্যবস্থাপনা কথা তারা স্বীকার করতেই চায়না। সেই সাথে আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিং করে এবং অন্যন্য অনেক পন্থায় গনি মিয়াদের  ডলার পাচারের কথা একেবারেই স্বীকার করতে রাজি নন তারা। এছাড়াও বছরের পর বছর তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কথা বেমালুম অস্বীকার করেন গনি মিয়ারা (দিনকাল, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ঃ অর্থনীতির ভুল নীতি ও দুর্বল পরিকল্পনার মাশুল দিচ্ছে দেশ)। কারণ স্মার্ট গনি মিয়াদের সমস্যা নেই। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব গনি মিয়াদের এখন অবৈধ অর্থের পাহাড়। তারা সুখ আহ্লাদেই আছে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন স্মার্ট গনি মিয়ারা। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ইত্যাদি কস্মেটিক উন্নয়নের ভোগ বিলাসের ছবি ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে চেক ইন দেয় “ফিলিং ওয়ান্ডারফুল উইথ–”। আর এদের এই অলিক সুখেই যেন এখন বাস্তবতা। অন্যদিকে আন-স্মার্ট গনি মিয়ারা প্রান্তিক বা নিম্ন/মধ্যবিত্ত শ্রেণী। যাদের ইতিমিধ্যেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে!। কিন্তু যেহেতু তারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেনা কিংবা ফেসবুক ব্যবহার করেনা তাই “বড়ই কষ্টে আছিরে আইজুদ্দিন” এরকম ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়েনা। এভাবেই স্মার্ট গনি মিয়াদের স্মার্টনেসের চাপে চাপ পড়ে পিষ্ট আন-স্মার্ট গনি মিয়ারা। তারা নীরবে কষ্টের জল ফেলছে চোখে, আর স্বপ্ন দেখে মুক্তির।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising