728 x 90

রোজা রেখেও আমাদের জীবনে কোন পরিবর্তন আসে না কেন?

মুজাম্মেল হোসেন, (অটোয়া): রমজান মাস নতুন কিছু নয়, বছরের পর বছর ধরে তা আমাদের মাঝে আসছে। এ মাসে আল কোরআন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ, খতমের পর খতম চলছে। প্রত্যেক রমজানে রোজা রাখা ছাড়াও আমরা নানা ধরনের এবাদাত বন্দেগী করি এবং রাতগুলোও পার করি এবাদতের মধ্য দিয়ে। এতকিছু করার পরও আমরা সেখানেই  থেকে যাই

মুজাম্মেল হোসেন, (অটোয়া): রমজান মাস নতুন কিছু নয়, বছরের পর বছর ধরে তা আমাদের মাঝে আসছে। এ মাসে আল কোরআন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ, খতমের পর খতম চলছে। প্রত্যেক রমজানে রোজা রাখা ছাড়াও আমরা নানা ধরনের এবাদাত বন্দেগী করি এবং রাতগুলোও পার করি এবাদতের মধ্য দিয়ে। এতকিছু করার পরও আমরা সেখানেই  থেকে যাই যেখানে আগে ছিলাম। কোন অগ্রগতি নেই, ভাবনাও নেই।  রোজা রেখেও আমাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে না। আমরা তাই করি আগে যা করতাম, তাই শুনি আগে যা শুনতাম এবং এখনো তাই বুঝি আগে যা বুঝতাম।  তাহলে আমাদের মধ্যে রোজার প্রভাব কোথায়? আমরা রমজানের আগে যেভাবে তাকওয়া বিহীন ছিলাম রোজার পরেও তেমনই থেকে যাই, বরং রোজার পরে হয়ে যাই আরো উদ্ধত্ব।  কারন রোজার মাসে তো আমাদের সব গুণাহ মাফ হয়ে গেছে! অথচ পবিত্র রমজানের পরশে না আমাদের ব্যাক্তিগত আচরন পরিবর্তন হয়, আর না আমাদের স্বভাব চরিত্র উন্নত হয়, না আমাদের মধ্য থেকে নফসের দাসত্ব ও হীনমন্যতা ও পরাধীনতার মেঘ সরে যায় আর না আমাদের নৈতিকতার মান উন্নত হয়। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?

এর মূল কারণ হচ্ছে,  সুচিন্তিত ও সচেতন প্রচেষ্টা ছাড়াই আমরা প্রতি বছর রোজা রাখি।  রোজা থেকে কোন কল্যাণ লাভের টার্গেট আমাদের থাকে না।  থাকলেও তা এক ধরনের ‘কল্পিত তাকওয়ার’ বৃত্তেই আবদ্ধ থাকে। ফলে প্রতি বছর রমজানের যে বিপুল পরিমান কল্যান লাভ করা সম্ভব আমরা তা অর্জন করতে পারি না। হয় আমরা এই সচেতন প্রচেষ্টা থেকে বঞ্চিত, নতুবা এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ও উদাসীন।

বিশ্বনবী (সা) নানাভাবে রোযার আসল উদ্দেশ্যের দিকে ইংগিত করেছেন এবং বুঝিয়েছেন যে, উদ্দেশ্য না জেনে এক মাস ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকায়  কোনই সার্থকতা নেই। তিনি বলেছেন:

 منْ لَّمْ يَدْعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِه فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِيْ اَنْ يَّدْعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَه

অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা (কোরআন সূন্নাহ পরিপন্থী সকল প্রকার কর্মকান্ড, চিন্তা, দর্শন, কাজ, সংশ্রব, মতবাদ, ধ্যান, ধারনা, তৎপরতা, তত্ত্ব ও তথ্য) পরিত্যাগ করবে না তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।

আমরা কি জীবন থেকে মিথ্যা কর্মকান্ড পরিত্যাগ করেছি? মূলত ইসলাম পরিপন্থী সকল কর্মকান্ডই আল্লাহর কাছে মিথ্যা বলে চিহ্নিত।  নিজ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো প্রতিষ্ঠায় আমাদের ভুমিকা কোথায়? বন্ধু স্বজনদের কাছে ইসলামের আহবান পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি আন্তরিক? সমাজে ইসলামের আহবান ছড়িয়ে দিতে আমরা কি কোন ভুমিকা রাখছি? নাচ গান নাটক সিনেমা দেখার মত হারাম কাজগুলো কি আমরা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি? সমাজের জালিম শক্তির সাথে আমরা কি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পেরেছি?

আমরা আল্লাহকে আমাদের রব বলে ঘোষনা করি, মুহাম্মাদকে (সঃ) আমাদের রাসূল হিসাবে স্বীকার করি এবং কোরআনকে আল্লাহপাকের গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বাস করি; তবুও এসব ঘোষণা, স্বীকৃতি এবং বিশ্বাস আমাদের কি আদেশ নির্দেশ দেয় এ সব বোঝার চেষ্টা করি না এবং তা মানি না। বুঝতেও পারি না যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) নির্দেশিত ফরজ ও ওয়াজিবকে পাশ কাটিয়ে সূন্নত ও নফলের দিকে অধিক ঝুকে পড়া কোনভাবেই রাসূলের প্রতি ভালবাসা নয় বরং এক ধরনের বিদ্রুপ ছাড়া আর কিছু নয়!

রোজার সত্যিকারের কল্যাণ দুটি জিনিসের উপর নির্ভর করে। প্রথমত, মানুষ নিজের দৃষ্টি ও যুক্তিবিন্যাস এবং বিবেকের নির্ভুল প্রয়োগের সাহায্যে আল্লাহ তায়ালাকে প্রকৃত ও একমাত্র ব্যবস্থাপক, আইন রচয়িতা এবং তাঁর নিকট হতে প্রাপ্ত শিক্ষা ও জীবন বিধানকে সত্যিকারার্থে আল্লাহর বিধান বলে জানতে পারল কিনা। দ্বিতীয়ত এই নিগূঢ় সত্য জেনে নেয়ার পর পথ নির্বাচনের স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ নিজের আন্তরিক ইচ্ছা ও আগ্রহ সহকারে আল্লাহ তায়ালার বাস্তব প্রভুত্ব এবং তাঁর শরীয়তী বিধানের সম্মুখে মাথা নত করলো কিনা।

সংক্ষেপে এ জিনিসের নামই হচ্ছে তাকওয়া।  যা কেবল তারাই অর্জন করতে পারে যারা আল্লাহর এ জমীনে আল্লাহর বিধানকেই বিজয়ী দেখতে চায়।  অন্তরে সেক্যুলার ধারনা আর মগজে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ লালন করে আর যাই হোক কেউ এ তাকওয়া অর্জন করতে পারে না। 

তাকওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত হচ্ছে ইসলামের সঠিক জ্ঞানার্জনের উপর।  এ কারনে আল্লাহপাক জ্ঞানার্জনকে নর-নারী সকলের জন্য ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন।  অথচ এই জ্ঞানান্বেষণ প্রচেষ্টাকে আমরা যেন অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমাদের জানা থাকা উচিৎ ইচ্ছেকৃতভাবে ইসলামী জ্ঞানার্জন থেকে বিরত থাকা কুফরীর শামিল।   

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising