728 x 90

ভুরাজনীতির মায়াজালে বাংলাদেশ

  ড. মোঃ নুরুল আমিন: দীর্ধ ৯ মাসের এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিলো বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হলেও মুক্তিযুদ্ধের পুর্বাপর আন্তর্জাতিক কূটনীতির শীতল যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা খুবই কম। পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ আচরণ এবং শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো। সেই সাথে ভারতের সহায়তাকে খুবই আলোচনা করা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের

 

ড. মোঃ নুরুল আমিন: দীর্ধ ৯ মাসের এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিলো বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হলেও মুক্তিযুদ্ধের পুর্বাপর আন্তর্জাতিক কূটনীতির শীতল যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা খুবই কম। পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ আচরণ এবং শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো। সেই সাথে ভারতের সহায়তাকে খুবই আলোচনা করা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌ বহর পাঠানোর ইতিহাস সবার মুখে মুখে । এছাড়াও চীন কেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘ কয়েকবছর সময় নিয়েছে? এসব প্রেক্ষাপটের পিছনে কি ছিল কারণ? গণতন্ত্রপন্থি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই চেয়েছিলো বা এখনো চায় সমাজতন্ত্রপন্থি রাশিয়া এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে। সেই উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে উপর সাহায্য- সহযোগিতার হাত বাড়ায়। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই পাকিস্তানের সামরিক এবং স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে সমর্থন দেয় আমেরিকা। ১৯৫৮ সালে আমেরিকার মদদপুষ্ট হয়েই ক্ষমতা গ্রহণ করেন আইয়ুব খান। সেই সাথে আমেরিকা ভারতের সাথেও গড়ে তোলে বন্দুত্বপুর্ন সম্পর্ক। উদ্দেশ্য ছিলো পাশের চীনের বলয়ে যাতে এই দেশগুলো না যায়। এমনই এক সময় চীন ও ভারতের মধ্যে ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ বাঁধে। আমেরিকা চেয়েছিলো পাকিস্তান যেন এই যুদ্ধে ভারতের পক্ষে বা চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু আইয়ুব খান এতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে আমেরিকা আইয়ুব খানের প্রতি নাকোশ হয়। এছাড়াও আইয়ুব খান আস্তে আস্তে রাশিয়া ও চীনের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার শুরু করে। এতে আমেরিকা ক্ষেপে যায় এবং পরিকল্পনা করে আইয়ুব খানকে বিতাড়িতে করতে। আইয়ুব খানকে বিতাড়িত করতে দুই ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, যথাঃ সামরিক এবং রাজনৈতিক। এখানে উল্লেখ্যযে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কতৃক উত্তাপিত ৬ দফা দাবীও ছিলো এই রাজনৈতিক চাপের অংশ (বইঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে  র এবং সিআইএ, লেখকঃ মাসুদুল হক)। এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবের  ৬ দফা দাবী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই দেয়া। এর উদ্দেশ্য ছিলো আইয়ুব খানকে রাজনৈতিক চাপে ফেলা। এই সাথে  পাশে নেয় ভারতকে । ভারতকে দিয়ে সামরিক চাপ দিতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ভারত- পাকিস্তান সীমান্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পরে ১৯৬৫ সালে। এটা ছিলো আইয়ুব খানের প্রতি আমেরিকার সামরিক চাপ।  দীর্ঘ দিন চলা এই কূটনৈতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পুর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতার যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ভারত এবার সামরিক হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশকে বা পুর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রাখে। আসলে আমেরিকা চেয়েছিলো পাকিস্তানকে অখণ্ড রেখে আইয়ুব খানের পতন। অন্যদিকে ভারত চেয়েছিলো দুটোই- আইয়ুব খানের পতন এবং পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুর্বল করে দেয়া। তাই আমেরিকা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রাখতে পাকিস্তানের পক্ষে ৭ম নৌবহর পাঠিয়েছিলো। শুধু তাই নয় চীনকে এবার ভারতের সীমান্তে সৈন্য পাঠাতে বলে আমেরিকা (বইঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন ভূমিকার গোপন দলিল লেখকঃ আসিফ রশিদ)। যে চীনকে প্রতিহত করতে আমেরিকা পাকিস্তানকে বলেছিলো ভারতের পক্ষে যুদ্ধে করতে। এবার সেই চীনকে উল্টো ভারতের বিরুদ্ধে বা পাকিস্তানের পক্ষে যেতে বলছে সেই আমেরিকা। এটাই কূটনীতির মায়াজাল। অবশেষে, স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এই চাওয়া ছিলো বাংলাদেশের জনগণের। বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার সাথে ভারতের কৌশল মিলে যায়।  এখানে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করে আমেরিকা কিন্তু ভারত সুযোগ বুঝে স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। কূটনীতির এই হুক্কা সাজায় আমেরিকা, টান দেয় আমেরিকা, তবে সুখ টান দেয় ভারত। তবে, এখন কূটনীতির মায়াজালে সেই ভারত আবারো আমেরিকার সাথে চীনকে প্রতিহত করতে নেমেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে জাপানে আণবিক বোমা ফেলেছিলো আমেরিকা। সেই জাপান এবং এবং আমেরিকা একই দলে। যে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় অস্ট্রেলিয়াকে দখল করে নিয়েছিলো সেই অস্ট্রেলিয়াও এখন জাপানের সাথে।

চীন ও রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল এখন আমেরিকা ছেড়ে দেয়নি। বরং এখন আরো শক্তিশালী ভাবে নেমেছে। সামরিক ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য বিস্তারে  চীন এবং রাশিয়া যাতে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে এজন্য গঠন করেছে কোয়াড। এই কোয়াডের সদস্য দেশ গুলো হচ্ছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান। বাংলাদেশকেও এই দলে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির অংশ হিসেবে। কারণ ভুরাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান এখানে অনেক গুরুতপুর্ন। এই গুরুত্ব বুঝতে হলে আমাদের চীনের ইন্দো প্যাসিফিক এলাকার কর্মকাণ্ড বুঝতে হবে। সুমাত্রা দ্বীপের পাশ দিয়ে চলা মাল্লাকা প্রণালী সমুদ্র পথ হিসেবে অনেক গুরুত্বপুর্ন। এই প্রণালী দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখের বেশী বাণিজ্যিক জাহাজ চলে। সারাবিশ্বের মোট বাণিজ্যের ২৫ ভাগই চলে এই পথ দিয়ে। তাই এই পথ চীনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীন সর্বদাই সচেষ্ট। তাই পুর্ব চীন সাগরে সামরিক ঘাটি, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মান সহ নিজেদের আনাগোনা বাড়িয়েছে চীন। আর এই সমুদ্র পথের পাশে থাকা দেশগুলোকেও বন্ধুত্বের বন্ধনের আবদ্ধ করতে চায় চীন। আসলে বন্ধুত্বের অন্তরালে চীন চায় তার পথ পরিষ্কার রাখতে। শ্রীলঙ্কাকে চীন পর্যাপ্ত লোন দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এখন সেই লোনের ভারে জর্জরিত। অন্যদিকে লাওস আর কোনদিনও চীনের লোন পরিশোধ করতে পারবেনা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকেও পাশে রাখতে চায় চীন। বাংলাদেশকের চীনের লোনের ভাঁড়ে আক্রান্ত করতে আগ্রহী চীন। আর এই জন্য চীনা লোনের চলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বা মেঘা প্রকল্প। কিন্তু কোয়াডের দেশগুলো চীনের আধিপত্য দমনে সদা জাগ্রত। তাই মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, তাইওয়ানকে নিয়েও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত আমেরিকা। কিন্তু চীন যদি কোন কারণে মালাক্কা প্রণালী হাতছাড়া করে তবে উপায় কি? তাই চীন বিকল্প পথ তৈরিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের উপর দিয়ে সিল্ক রোডের মাধ্যমে করাচী বন্দর ব্যবহার, একই ভাবে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে বন্দর নির্মানের মাধ্যমে এই পথ ব্যবহার। থাইল্যান্ডকেও এই রাস্তায় যুক্ত করে থাইল্যান্ডের বন্দর ব্যবহার। আর বাংলাদেশকে যুক্ত করতে পারলে আরো শক্তিশালী হয় চীন। সেই উদ্দেশ্যে সোনাদিয়ায় বন্দর করতে চেয়েছিলও চীন। আর যখনই বাংলাদেশ আমেরিকা বা ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখনই চীনের কাছ থেকে হুমকি আসে। এরকম খবর প্রায়ই পত্রিকায় দেখবেন। যেমন সম্প্রতি চীন বলছে চীন বাংলাদেশের সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মানা হবেনা (মানব জমিন ৭ মে ২০২৩ঃ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মানা হবে না: রাষ্ট্রদূত)।

যাহোক, একদিকে যেমন চীনের চাপ অন্যদিকে কোয়াডের দেশগুলোর চাপ। বিশেষকরে আমেরিকার চাপ বড়। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশী সাহায্যকারী দেশ আমেরিকা। করোনাকালিন সময়ে সবচেয়ে বেশী বিনামূল্যে টিকা দেয় আমেরিকা। আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স আসে বেশী। বাংলাদেশের গার্মেন্টসের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। তাই আমেরিকা পাশে না থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি থুবড়ে পড়বে। এই সুযোগে আমেরিকাও চাপ দেয়। সুষ্ঠ নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রশ্নে আমেরিকার চাপ অব্যাহত। বাংলাদেশ সরকারও জানে এই চাপের পরিণতি। তাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে বলেছেন, ‘আমেরিকা চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারে।’ আর যেকোনভাবে সাজানো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। তাই পচিমাদের চাপ থেকে বাচতে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ (আনন্দবাজার পত্রিকা ১০ মে ২০২৩ঃপশ্চিমি চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ)। বিনিময়ে ভারতকে একের পর এক রেল লাইন, সড়কপথ,  ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর সহ দেয়া হয়েছে নদী পথে চলা প্রমথতরীর পথ। আরো অনেক কিছু দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকার বাসনা ক্ষমতাসীনদের। ক্ষমতায় থাকার এই ইচ্ছায় সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১৫০ জনের একটি দল নিয়ে ব্যক্তিগত বিমানে ১৫ দিন ব্যাপী জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করে। জাপান ভ্রমণের প্রাক্কালে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে দেয়া হয়ে ভারত-জাপানকে। জাপানের অর্থে নির্মিত হবে বন্দর, ব্যবহার  করবে ভারত। জাপান সফরের পুর্বে ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এছাড়া জাপান ও আমেরিকার সাথে অনেক বাণিজ্যিক চুক্তিও হয়। অধিকন্তু, আমেরিকার এক্সন মোবিল কোম্পানিকে বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এর মাধ্যমে আসলে কোয়াডের দেশগুলোকে বঙ্গোপসাগর এলাকায় বিচরণের সুযোগ দেয়া হয়। ইতিপুর্বে এই এলাকায় ভারতে ২০ টি  রাডারের বিষয় উল্লেখ করেছি পুর্বের কোন লেখায়। এভাবে ভারত, জাপান, আমেরিকাকে সুযোগ করে দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের সরকার যদি জোড়করে ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা থেকে  সরে এসে এসব দেশের সাথে কোন চুক্তিতে দরাদরি করতো তবে বাংলাদেশ আরো লাভবান হতো। এতে বাংলাদেশ হয়তো অনেক  সুবিধা নিতে পারতো।  কিন্তু তারা সব কিছু দিয়ে হলেই একটিই চায় যে তাদের নিরবিচ্ছিন্ন ক্ষমতা। এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে কোয়াডের বলয়ে। অন্যদিকে চীনকে সোনাদিয়া বন্দর আর দেয়া হচ্ছেনা। কিন্তু চীন কি চুপ থাকবে? চীনের হুমকি ধামকি বরাবরই চলমান। যদিও বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলে আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক রাখতে তৎপর। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ কি পেরেছে মাতারবাড়ি বন্দরকে চীন, জাপান ও ভারতকে একসাথে দিতে? না পারেনি। সবকিছু মিলে তিন মুখী এক কূটনৈতিক চাপে বাংলাদেশ।

অধিকন্তু, পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ। এই সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহৎ দেশ গুলো সাহায্য চায়। এখানেও সমস্যা জটিল। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে সেই এলাকায় সমুদ্র বন্দর নির্মান করছে চীন। তাই চীনের সহায়তা পেয়েই মায়ানমার রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করেছে। এখন সেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চীন ও আমেরিকা দু দেশেই সাহায্য করতে চায়। তবে ধরন ভিন্ন। মায়ানমারের বর্তমান সামরিক জান্তা সরকার দেশে ব্যপক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই সামরিক জান্তাকে সমর্থন করে চীন। চীনের মধ্যস্থতায় সামরিক সরকার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে চায়। কিন্তু তাদের মতে এই সংখ্যা ৭০/৮০ হাজারের বেশী নয়। অথচ, এই সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশী। অন্যদিকে মায়ানমারের সামরিক সরকারের পতনের জন্য বিদ্রোহ করছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভঃমেন্ট (এন ইউ জি)। এই এন ইউ জি কে সমর্থন  করে আমেরিকা। সেই সাথে যদি সামরিক শাসকের পতন ঘটিয়ে এন ইউ জি কে ক্ষমতায় বসাতে পারে তবে আমেরিকা সবগুলো রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাবে মায়ানমারে। আমেরিকার এই ইচ্ছায় রাজি এন ইউ জি সরকারও। এর পিছনে কারণ হিসেবে হয়তো তারা আমেরিকার সাহায্য প্রার্থি সামরিক সরকারের পতন করাতে। এখন আমেরিকা যদি সামরিক সরকারের পতন ঘটাতে এন ইউ জি কে সমর্থন দিয়ে একটি যুদ্ধ করে কিংবা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র তৈরিতে যুদ্ধ করে তবে আমেরিকা বাংলাদেশকে পাশে চাইবে। আর আমেরিকার এই প্রক্সি যুদ্ধের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মায়ানমারকে চীনের প্রভাব থেকে মুক্ত করা। এই কৌশলে আমেরিকা বাংলাদেশের ভূমি, বা বিমান বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে বাংলাদেশ কি করবে? আমেরিকাকে কি সুযোগ দিবে নিজের ভূমি ব্যবহার করে মায়ামারে যুদ্ধ করতে কিংবা চীনের প্রভাব রোধ করতে? এদিকে যে চীনের কাছ থেকে বিশাল অংকের লোন নিয়ে মেঘা প্রকল্প দিয়ে দেশবাসীকে ভুলিয়ে রাখতে চাচ্ছে সেই চীনের ভূমিকা কি হবে? চীনের হুমকি ধামকি শুধু মৌখিকভাবেই থাকবে নাকি কোন এক প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে বাংলাদেশকে। এতোসব এখন বিবেচনা না করা হলেও অদূর ভবিষ্যতে এরকম যুদ্ধ বেধেও যেতে পারে। শুধুমাত্র ক্ষমতা থাকার নিমিত্তে উন্নয়ন বা ক্ষমতায় থাকার নিমিত্তে কূটনৈতিক সম্পর্ক করে এরকম একটি ভুরাজনৈতিক মায়াজালে বাংলাদেশক জড়ানো কি উচিৎ?

আফসোস স্বাধীনতার এই ৫২ বছর পরেও বাংগালীর মেরুদণ্ড শক্ত হয়নি বরং ক্ষয় হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার প্রতিনিধি দল জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য সফরে কার সাথে দেখা করল, কি কি আলাপ হলো, কি চুক্তি হলো ইত্যাদি নিয়ে ছবি, খবর এ মেতেছে দেশ। আওয়ামী লীগের ফেসবুকাররা বুঝাতে চাচ্ছেন সব দেশ ম্যানেজ। তাই যেন তেন একটি নির্বাচন দিয়ে আবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এদিকে বি এন পি বা বিরোধী দলের ফেসবুকাররা ভাবছে, হায়রে! গেল! এবারো নির্বাচনটা সুষ্ঠ হচ্ছেনা। সব দেশ আর মনে হয় আর সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়না! তাই তারাও দু একটি খবর হাজির করছে এবং প্রমান করতে চাচ্ছে আসলেই ঐসব দেশ সুষ্ঠ নির্বাচন চায়। এখানেই আফসোস! বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কিনা সেটাও ঠিক করে দিবে অন্য দেশ! আর ঐসব দেশকে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে বন্দর, রাস্তা, ব্যবসা ইত্যাদির সুযোগ দিলে যেনতেন একটি সাজানো নির্বাচন দেয়া যায়, বারবার ক্ষমতায় থাকাযায়- এমন একটি ভাবনাও করে বাংগালী!  হায়রে হতভাগা বাংগালী! এত উন্নয়নের গল্প। অথচ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা সেটাও নির্ধারণ করে দিবে অন্য কেউ। নির্বাচন তো নিরপেক্ষ হতেই হয়, এটাই স্বাভাবিক। ঐসব দেশে তো নির্বাচনের ২ বছর আগে থেকে আলোচনা হয়না যে নির্বাচন কেমন হবে? অন্য দেশ গিয়ে তো বলেনা যে তোমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন দাও। অথচ একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ এখনো তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকে ঐসব মোড়ল দেশের দিকে। কেউ থাকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশায়! কেউ তাকিয়ে থাকে সাজানো নির্বাচনের আশায়!  এভাবে ভুরাজনীতির এক জটিল মায়াজালে দেশকে ফেলে দেয়। এই মায়াজাল থেকে কবে যে বেরিয়ে বাঙ্গালী জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেই প্রতীক্ষায় থাকে দেশপ্রেমিক জনগণ।

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising