728 x 90

হজ্জ

ডা. ইমাম হোসাইন (ব্রুনাই দারুস সালাম থেকে): আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, এবং মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা করে  দাও ; তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীনকায় উষ্ট্রের পিঠে,  তারা আসবে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। : (সূরা হাজ্জ, আয়াত :২৭) হজ্জ্ব ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদাত। প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যাক্তির জীবনে

ডা. ইমাম হোসাইন (ব্রুনাই দারুস সালাম থেকে): আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, এবং মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা করে  দাও ; তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীনকায় উষ্ট্রের পিঠে,  তারা আসবে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। : (সূরা হাজ্জ, আয়াত :২৭)

হজ্জ্ব ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদাত। প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যাক্তির জীবনে একবার হজ্জ্ব আদায় করে এ ফরজ কর্ম সম্পাদন করতে হয়। হজ্জের আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায়  হজ্জের মাসে নির্ধারিত দিনসমূহে নির্ধারিতে পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ শরীফ ও নির্দিষ্ট স্থানসমূহ যিয়ারত ও বিশেষ কার্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করাকে হজ্জ বলা হয়।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজীলত:

সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ.) বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ আদায় করেছেন। এরপর হযরত নূহ ( আ.) সহ অন্যান্য সকল নবী – রাসূলগণ সকলেই বায়তুল্লাহ শরীফ  যিয়ারত ও তাওয়াফ করেছেন।

জাহিলিয়্যাতের যুগেও লোকেরা বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত ও তাওয়াফ করতো। কিন্তু তারা নিজেদের  মনগড়া পদ্ধতি ব্যবহারে তা কলংকিত করে। ইসলাম এসব কল্পিত পদ্ধতি চিরতরে অপসারণ করে হজ্জকে ফরয বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্যে পরিণত করে হজ্জ পালনে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন,

মানুষের  মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে,  আল্লাহর উদ্দেশ্য ঐ ঘরের হজ্জ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সূরা ইমরান, আয়াত – ৯৭)

হজ্জের ফরযিয়াত অস্বীকার করা কুফরী।জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। বিশুদ্ধ মতে, হজ্জ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করা অবশ্য কর্তব্য।

হজ্জ হলো এমন ইবাদত যা পালনে শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন হয়।

হজ্জের ফযিলত বর্ননায় বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা.)  হতে বর্ণিত আছে যে, একদা নবী (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি ? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। প্রশ্ন করা হলো তারপর কোনটি ?  তিনি উত্তর দিলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পূনরায় তাঁকে প্রশ্ন করা হলো এরপর কোনটি ? উত্তরে তিনি বললেন, হজ্জে মাবরুর বা মাকবুল হজ্জ।

অন্য হাদীসে আছে, মাকবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।

অপর এক হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.)  হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)  ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করল, হজ্জের কার্যাবলী আদায়কালে স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকল ও গুনাহের কাজ করলো না, সে মাতৃগর্ভ হতে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। ( বুখারী,মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সা.)  আরো ইরশাদ করেন, বাহ্যিক কোন কারণ, যালিম শাসক কিংবা অসুস্থতা হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক না হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি হজ্জ আদায় না করে মারা যায়,তবে সে ইয়াহুদী  হয়ে মৃত্যুবরন করুক কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরন করুক  ( তাতে কিছু আসে যায়না)।  বুখারী,মুসলিম।

হজ্জের সময়:

হজ্জ মুসলিম উম্মাহর এক বৃহত্তম বিশ্ব ইসলামী সম্মিলন। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর অভিন্ন  সংস্কৃতির শান- শওকতের বহিঃপ্রকাশ হয়। হজ্জ এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, এর বাহিরে হজ্জ আদায় করা জায়িয নয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ  তা’আলা ইরশাদ করেন,

” হজ্জের মাস সমূহ সুবিদিত। ” (সূরা বাকারা, আয়াত-১৯৭)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী (র.) বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বলেন, হজ্জের মাসসমূহ হচ্ছে  শাওয়াল, জিলক্বদ ও যিলহজ্বের প্রথম ১০ দিন।

তাফসীরে মাযহারীতে আছে, হজ্জের মাস শাওয়াল হতে শুরু হওয়ার অর্থ হচ্ছে এর পূর্বে ইহরাম বাঁধা জায়িয নয়। কোন কোন ইমামের মতে, শাওয়ালের পূর্বে হজ্জের  ইহরাম বাঁধলে হজ্জ আদায়ই হবে না। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.) এর মতে, অবশ্য হজ্জ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাকরুহ হবে।

 

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ:

মুসলমান হওয়া, বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া,  সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া, আজাদ বা স্বাধীন হওয়া,  হজ্জ পালনে দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা,  হজ্জের সময় হওয়া,  হজ্জ যাত্রাপথের নিরাপত্তা থাকা, বিধর্মী শত্রু রাষ্ট্রের নও-মুসলিমের পক্ষে হজ্জ ফরজ হওয়ার জ্ঞান থাকা।

 

হজ্জের আহকাম:

হজ্জের ফরয ৩ টি। যথা :

১. ইহরাম বাঁধা বা আনুষ্ঠানিক ভাবে হজ্জের নিয়্যাত করা।

২. আরাফাতে অবস্থান (উকূফ), ৯ই যিলহজ্জের সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ১০ই জিলহজ্জের ফযরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় কিছুক্ষণের জন্য হলেও।

৩. তাওয়াফে যিয়ারত,  ১০ই জিলহজ্জের ভোর থেকে ১২-ই জিলহজ্জ পর্যন্ত যে কোন দিন কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা।

এ তিনটি ফরযের একটিও যদি ছুটে যায়, তাহলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে এবং পরবর্তী বছরে তার কাযা আদায় করা ফরজ হয়ে যাবে।

 

হজ্জের ওয়াজিব সমূহ:

১. মিকাতের আগেই ইহরাম বাঁধা।

২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে উকূফ বা অবস্থান করা।

৩. কিরান বা তামাত্তু হজ্জ আদায়কারী কুরবানী আদায় করা এবং তা রমী ও মাথা মুণ্ডানোর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা।

৪. সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করা এবং সাফা থেকে সাঈ শুরু করা।

৫. মুযদালিফায় উকূফ বা অবস্থান করা।

৬. তাওয়াফে যিয়ারত আইয়্যামে নহরের মধ্যে সম্পাদন করা।

৭. রমী বা শয়তানকে কংকর মারা।

৮. মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা। আগে রমী পরে মাথা মুন্ডানো।

৯. মিকাতের বাইরের লোকদের জন্য- তাওয়াফে সদর বা বিদায়ী তাওয়াফ করা।

এগুলোর কোন একটি ছুটে গেলে হজ্জ হয়ে যাবে তবে দম দিতে হবে।  অর্থাৎ কাফফারা স্বরূপ কুরবানী দিতে হবে। এছাড়া হজ্জের অন্যান্য কার্যাদি সুন্নাত, মুস্তাহাব বা হজ্জের আদব পর্যায়ে।

পরিশেষে বলবো আমরা একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয় বিষয় গুলো সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য। অনুরুপ ভাবে হজ্জের ফরয,ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি যাবতীয় হজ্জের মাসয়ালা-মাসায়েল ও কার্যাবলীর সুস্পষ্ট জ্ঞান আহরণ করে হজ্জে মাবরুরের জন্য আন্তরিক সাধনা ও আল্লাহর দরবারে দোয়া করা।

হজ্জ পরবর্তী তাকওয়া সমৃদ্ধ গোনাহ মুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পরিবার ও প্রতিবেশীকে অনুপ্রাণিত করা। বিশেষত : অধীনস্থ মানুষের অধিকার, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের অধিকার বিষয়ে একান্তই সতর্কতা অবলম্বন করা। এমন অন্যায়, অপরাধ, অপকর্ম ও পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা, কেহ যেন আমাকে কেন্দ্র করে  ‘ হাজী সাহেব ‘ হয়ে এমন জুলুম করেছে ইত্যাদি বলে পবিত্র হজ্জ কে নিয়ে মন্তব্যের সুযোগ না পায়,এ বিষয়ে আন্তরিক যত্নশীল হওয়া এবং পরকালের প্রস্তুতি সম্পন্নকরণে সর্বাত্মক আত্ম- নিয়োগ করতে হবে ।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising