728 x 90

ট্রেন্স থেকে ফিরে এসে: রউফ আরিফ

  (ধারাবাহিক উপন্যাস) এক রাত্রে রোজি আরমানকে বলল, বাবু তো এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। আমিও একটা চাকরির চেষ্টা করি না। -তুমি কিভাবে চাকরি করবে? বাবুকে সামলাবে কে? -প্রয়োজনে একটা কাজের বেটি রেখে দিলেই হবে। -তোমার কোনো কাজেই আমি কোনোদিন বাধা দিইনি। আজও দেবো না। দেখ চেষ্টা করে। তবে একটা শর্ত থাকবে। -কি শর্ত? -চাকরি

 

(ধারাবাহিক উপন্যাস)

এক রাত্রে রোজি আরমানকে বলল, বাবু তো এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। আমিও একটা চাকরির চেষ্টা করি না।

-তুমি কিভাবে চাকরি করবে? বাবুকে সামলাবে কে?

-প্রয়োজনে একটা কাজের বেটি রেখে দিলেই হবে।

-তোমার কোনো কাজেই আমি কোনোদিন বাধা দিইনি। আজও দেবো না। দেখ চেষ্টা করে। তবে একটা শর্ত থাকবে।

-কি শর্ত?

-চাকরি করতে গিয়ে যদি আমার ছেলের কষ্ট হয়, তাহলে কিন্তু বিনা ওজর আপত্তিতে চাকরি ছাড়তে হবে।

রোজি হাসল। মাঝে মাঝে তুমি এমন ছেলে মানুষের মতো কথা বলো না। ছেলে কি তোমার একার। ছেলের প্রতি কি আমার দরদ নেই?

আরমান আর কোনো কথা বলল না। চুপ মেরে গেলো। রোজি বুঝল, চাকরি করতে দিতে আরমানের মন mvয় দিচ্ছে না। তারপরও সে দরখাস্ত করে যেতে লাগল। অল্পদিনের মধ্যে সে একটা চাকরি পেয়েও গেলো। সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরি। যে স্কুলে সে জয়েন করল, সে স্কুলটা ছিল মেয়েদের স্কুল এবং কাছেই। বাসা থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। এটাই ছিল রোজির জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা।

বেতন সামান্য হলেও সরকারী চাকরি। তাছাড়া যেহেতু সে স্কুল টিচার, সেহেতু দু’একটা ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে পারত। সবকিছু মিলিয়ে সে আরমানের মাস্তুল ভাঙ্গা সংসারে মোটামুটি হাল ধরে রাখার চেষ্টা করল।

কিন্তু সময় ছিল বৈরী। আরমান এইভাবে ধুকে ধুকে বেঁচে থাকতে চাইল না। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি ধরেছিল। মৃত্যু তাকে কোলে টেনে নেয়নি বিধায় সে এখনো এই পৃথিবীর জলহাওয়ায় চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। অথচ সে দেখল, যাদের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছিল, তারাই এখন দেশের শাসক শ্রেণী। প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের জায়গা নেই বললেই চলে।

আরমান এটাকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছিল না। দেশের প্রতি, নিজের প্রতি, নিজের অক্ষমতার প্রতি, একটা প্রচন্ড আক্রোশ আরমানকে দিশেহারা করে দিলো। তেজি ঘোড়ার মতো, ঘাড়তেড়া যুবকের মতো, সে ফুসে উঠলো। না। হারবো না।

সবদিক বিবেচনা করে তাই সে ঠান্ডা মাথায় নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে দেশের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ল। যেহেতু ছাত্রনেতা হিসাবে তার একটা বিশেষ পরিচিতি ছিল, সেই পরিচিতির সোপানে পা রেখে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করলো।

না। চলার পথে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে ব্যারিকেড দিতে পারেনি। কারণ, বর্তমান রাজনীতির ধরণ ধারণ বুঝতে তার দেরি হয়নি। ফলে, সহযাত্রীদের সহজেই পেছনে ফেলে তরতর করে এগোচ্ছিল সে।

তার এই উচ্চাশার পেছনে ছুটতে গিয়ে আরমান রোজির কাছ থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছিল। রোজি বুঝতে পারছিল আরমান বদলে যাচ্ছে। অর্থ আর খ্যাতি তাকে বদলে দিচ্ছে। রোজি চেষ্টা করল তাকে লাগাম পরাতে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কিন্তু পারলো না। পারবে কি করে। টাকার লোভ আর ক্ষমতার নেশা তো ক্যান্সারের মতো। যাকে একবার ধরে তার আর নিস্তার থাকে না।

ইদানীং অনেক রাতে যখন আরমান বাসায় ফেরে তখন তার পা টলে, কথা জড়িয়ে যায়। মদের গন্ধে রোজির গা গুলিয়ে ওঠে। একদিন রোজি সহ্য করতে না পেরে রুখে দাঁড়ায়। ছি! তোমার লজ্জা করে না। রাতে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরছ। তুমি কি বুঝতে পারছ, দিন দিন তুমি পাতালে নেমে যাচ্ছ।

আরমান রোজির মুখের দিকে পিটপিট করে চেয়ে বলে, রাগ কোরো না প্লিজ। সবাই মিলে এমন ভাবে ধরলো। একটু না খেয়ে পারলাম না। তোমাকে কথা দিচ্ছি, আর কখনো খাবো না।

রোজি আর কথা বলতে পারে না। আরমান যখন সামনে থাকে না, তখন রোজি অনেক কথা গুছিয়ে রাখে, আর মনে মনে ভাবে, আজ একহাত দেখে নেবে। কিন্তু আরমানের মুখোমুখি হলেই তার সমস্ত আস্ফালন থেমে যায়। গোছানো কথাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও তাদের আর স্বস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে না।

দুজনের দূরত্ব শুধু বাড়তেই থাকে। রোজি মুখবুজে অনেককিছু সহ্য করে। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ চলে সারাক্ষণ। ভাবে আরমানকে আর কোনোদিন কিছু বলবে না। কি লাভ বলে! যে মানুষ জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে- অন্যে তার ঘুম ভাঙ্গাবে কি করে। ছেলে আর চাকরিকে পুঁজি করে কোনোমতে কেটে যেতে থাকে রোজি অলঙ্কারহীন একঘেয়ে দিনগুলো।

রোজির নির্লিপ্ত আচরণ আরমানকে আহত করে। অভিমানী করে। কারণ, দু’জনের ফিলোসফি দু’রকম। আরমান ভেবে পায় না রোজি কেন তার ওপরে এইরকম স্টিমরোলার চালাচ্ছে। আমি যা কিছু করছি, সব তার সুখের জন্য করছি। আমি বড় হতে চাই। আমি এতবড় হতে চাই সবাই আমাকে এক ডাকে চিনবে, জানবে, মান্য করবে। শ্রদ্ধা সমীহ করবে। এতে রোজির সমস্যা কোথায়! আদর্শগত দ্বন্দ্ব? বোগাস। আদর্শের বুলি কপচে ঘরে বসে থাকলে আমি কিছুই করতে পারবো না। দেশের যে অবস্থা তাতে, সহজ সরল পথে দু’বেলা দু’মুঠো শাকান্ন যোগাড় করা দূরহ।

আরমান ড্রয়িংরুমে বসে এইসব ভাবতে ভাবতে উঠে গেলো। বেডরুমের দরোজায় উকি দিয়ে দেখল রোজি জয়কে ঘুম পাড়াচ্ছে। এখন রাত এগারোটা। আরমান বেডরুমে না ঢুকে আবার ড্রয়িংরুমে এসে বসলো। ঠোটে সিগারেট জ্বলছে, কিন্তু সে নিজের মধ্যে এতই নিমগ্ন যে সিগারেটে টান দেবার কথাও ভুলে গেছে।

কতক্ষণ এইভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে ছিল তা সে বলতে পারবে না। জানালার পাশে ঝুলে পড়া বকুল শাখায় বৃষ্টি পড়ার শব্দে আরমান চিরকাল রোমাঞ্চিত হয়। ছেলেবেলায় আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হলে তারা দল বেধে ব্যাঙ দেখতে বের হোতো। ওদের বাসার অদূরে একটা মজা ডোবা ছিল। ঘাস আর কচুড়ি পানায় ভরা থাকত। বর্ষাকালে ঘন বর্ষণ শুরু হলে অল্প পানিতে ব্যাঙেরা বেরিয়ে আসত। গালফুলিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করত। তাই দেখে রোজি আনন্দে খলবল করে উঠত।

কত ভালো ছিল সেই দিনগুলো। কত সুন্দর, নিষ্পাপ ছিল রোজি। ফ্রকপরা ছোট্ট মেয়েটা কেমন ডাগর ডাগর চোখে তার দিকে চেয়ে থাকত। সেই চোখে চোখ রেখে আরমান সবকিছু ভুলে যেত।

ড্রয়িংরুমে বসে আরমান যখন ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে ব্যাস্ত, ঠিক একই সময়ে রোজি ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বেডরুমের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টিপড়া দেখছে। মাঝে মাঝে ড্রয়িংরুমে বসা আরমানের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর ভাবছে, কেমন ওলট পালট হয়ে গেলো সব। ওইতো নির্বিকার মানুষটা বসে আছে। যাকে জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই দেখে আসছে। অথচ আজকাল কেন যেন মনে হয়, লোকটাকে সে কখনোই দেখেনি। সে যেন এক অজানা জগতের বাসিন্দা, হঠাৎ করেই তার জীবনে এসে পড়েছে।

অথচ এইতো বছর দু’য়েক আগে যখন সে কোলকাতায় মামাবাড়িতে ছিল, তখন রোজি এখানে একা একা মা বাবা সমাজ সংসারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অস্তিত্বের লড়াই। তখন তো নিজেকে এমন নিঃসঙ্গ মনে হয়নি। তখন তো ওই মানুষটাকে ঘিরেই ছিল তার মায়াবি স্বপ্নের জগত। সকল শক্তির উৎস। এত স্বল্প সময় সংসার জীবনে এসে আরমানের কাছে এই সংসার এত পানসে হয়ে গেলো কি করে?

মনের সুখ পাখিটা মরে গেলো কি করে? সত্যিই কি মরে গেছে? রোজি আবারও আড় চোখে আরমানের দিকে চেয়ে দেখে। ঠোটে ধরা সিগারেটের টুকরোটা পুড়তে পুড়তে প্রায় ঠোট স্পর্শ করতে চলেছে। আরমানের কোনো নড়াচড়া নেই। অনেকক্ষণ থেকে রোজি তা লক্ষ্য করছে। তাহলে কি বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে?

রোজি পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়। আরমানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। না। আরমান জেগে নেই। আরমানকে এই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়তে দেখে রোজির মায়া লাগে। সে বুঝতে পারে আসলে মানুষটা সুস্থ নেই। ভেতরে ভেতরে মানুষটা ভীষণ ক্লান্ত। ক্ষমতা আর অর্থের নেশা মানুষটাকে এমন এক স্তরে নিয়ে গেছে, যেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতেও পারছে না, আবার সেই সোনার হরিণ ধরতেও পারছে না। মাঝখানে পড়ে তীলে তীলে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

আরমানের ঠোট থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা আস্তে করে খুলে নেয়। কাধ ধরে আস্তে করে নাড়া দেয়। এই — এই শুনছো।

আরমান জেগে ওঠে। চোখ মেলে চায়। রোজিকে সামনে দেখে কেমন যেন সিটিয়ে যায়। রোজি জিজ্ঞাসা করে, কি ব্যাপার, মুখে জ্বলন্ত সিগারেট, এদিকে দেখছি ঘুমে অচেতন। আরেকটু হলে তো ঠোটে ছ্যাকা লাগত, অথবা জামা কাপড় পুড়ত।

আরমান ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থেকে বলে, তাতে কি এমন ক্ষতি হোতো। তোমার কোনো ক্ষতি লোকসান হোতো বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।

-যারা নিজের বউকে ভালোবাসে না তারাই এইরকম কথা বলে।

-দোষ শুধু আমার। তোমার কোনো দোষত্রুটি নেই?

রোজি থমকায়। বাঁকা চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ঝাঝালো কণ্ঠে বলে, হট ডু ইউ মিন?

-তুমি তো কচি খুকি নও যে আমার কথা বুঝবে না।

রোজির বুকের মাঝে থিরথির করে কেঁপে ওঠে। আরমনের কণ্ঠে এ কোন সুর? আরমানের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হবে রোজি স্বপ্নেও ভাবেনি। মেজাজটা একেবারে খিচড়ে যায় রোজির। সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, যা বলবে স্পষ্ট করে বল। ন্যাকামি মাখা কথা আমি বুঝি না।

-আমার কথা না বুঝলেও ওই ছোকরা মাষ্টারের সাথে তো বেশ ন্যাকামি পাকামি ঢলামি করতে পারো।

রোজির গায়ে যেন আগুন ধরে যায়। কার কথা বলছ তুমি? সাব্বির? সাব্বিরকে তুমি চেন না?

-আগে চিনতাম না। দায়ে পড়ে চিনতে হচ্ছে।

-আরমান তুমি কি বলছ তা কি তুমি বুঝতে পারছ? বুঝতে পারছ তুমি কোথায় আঘাত করছ?

আরমানের নেশার মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফলে, স্বাভাবিক আচরণ করা তার জন্য সহজ ছিল না। রোজির কথার সঠিক উত্তর না দিয়ে বাঁকা হাসিতে ফেটে পড়ে বলল, থাক। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। তুমি ভাবো তোমার কুকীর্তির কথা কেউ জানে না। সবাই জানে।

রোজি আর কথা বলতে পারে না। ওর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়। ছি ছি ছি! এ কি বলল আরমান? এই তার ভালোবাসার মানুষ? এই রকম একটা মানুষের জন্য সে এত কষ্ট করেছে? বাবা মা ভাই বোন সমাজ সংসারের বিরুদ্ধে এই লোকটার জন্য লড়াই করেছে?

এই প্রতিদান পাওয়ার জন্য! ছি ছি ছি! এমন কথা শোনার আগে আমার মৃত্যু হলো না কেন। রোজি আর আরমানের সামনে দাঁড়ায় না। পাশের ঘরে চলে যায়। দরোজা বন্ধ করে দেয়। আর খোলে না।

আরমান এঘরে আস্ফালন করে। দেখে নেবো। আমিও দেখে নেবো। শালা কত বড় মাগিবাজ, দেখে নেবো আমি। শালা আমার বউয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে। আমার বউকে নিয়ে ফুর্তি করবে শালা’-

রোজি পাশের ঘরে বসে সব শোনে। এই রকম অশ্লীল বাক্য শুনে রোজির শুধু বাক রোধ হয় না, মনে হতে থাকে এই আরমান যেন তার পরিচিত আরমান নয়।

সাব্বির শুধু তার কলিগ নয়। তার কাজিন। আপন খালাতো ভাই। ওরা তুলনা মুলক গরিব। পারিবারিক ভাবে তাই একটু দূরত্ব আছে ঠিকই, তাই বলে তো রক্তের সম্পর্ক মুছে যেতে পারে না। একই স্কুলে চাকরি করার সুবাদে তাদের সম্পর্কটা একটু গাঢ়ই বলা যায়। তাই বলে তাকে নিয়ে আরমান এরকম বাজে মন্তব্য করতে পারে না। নিজের বউয়ের ওপরে যার আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। তার সাথে তো ঘর সংসার করা সম্ভব নয়।

রোজি বিছানায় শুতে পারে না। তার সারা অঙ্গ জ্বলতে থাকে। মাথায় রক্ত উঠে যায়। লায়ার। ভন্ড। নিজে যেমন দিন দিন নরকের কীটে পরিনত হচ্ছে, অন্য সকলকেও তেমনি ভাবতে শুরু করেছে।

এভাবেই বিনিদ্র রজনী কেটে যায় রোজির।

রোজি ঘরের দরোজা খোলে না। ফলে, আরমান ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে নেশার ঘোরে আস্ফালন করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হয় দু’জনের দু’ভাবে। আরমানের নেশা কেটে গেছে। তবে মাথাটা ভার হয়ে আছে। রাতের ঘটনা তার স্মৃতিপটে তেমন রেখাপাত করেনি। আবছা আবছা মনে পড়ছে, রাতে তারা কথা কাটাকাটি করেছিল। রোজি রাগ করে ঘরে খিল দিয়েছিল। আর খোলেনি।

আরমান ভাবতে থাকে, কাজটা মোটেও ঠিক করেনি রোজি। স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া ঝাটি কোন সংসারে না হয়। তাই বলে স্ত্রী তার স্বামীকে ঘরে ঢুকতে না দিয়ে সারারাত বাইরে রাখে এমন নজির সে কোথাও দেখেনি। এসব ভেবে আরমানের মনটা বিষাদে ভরে যায়। রোজির প্রতি, সংসারের প্রতি প্রচন্ড একটা আক্রোশ ভেতরে ভেতরে নিরবে মাথা খোড়ে। সাকালের নাস্তার অপেক্ষা না করে আরমান বেরিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরবে কিচ্ছু বলে যায় না।

রোজি থমথমে মুখে নিরবে সকালের সমস্ত কাজ সারে। রান্না শেষে নিজে খেয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যদি আরমান ফিরে আসে, তাহলে তাকে খেতে দিয়ে স্কুলে যাবে। কিন্তু যখন আরমান নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে এলো না, তখন আরমানের জন্য টেবিলের ওপরে খাবার গুছিয়ে রেখে স্কুলে যায়। স্কুলে গিয়েও রোজি কাজে মন বসাতে পারে না। মাঝে মাঝেই তার দু’চোখ ভরে কান্না আসে। আরমান তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করছে। এটা সে কি করে পারলো? তাদের এতবছরের প্রেম ভালোবাসা, এত বছরের বোঝাপড়া, এত অল্প সময়ে সামান্য সন্দেহের পলকা হাওয়ায় তছনছ হয়ে গেলো!

ক্লাসে সে বারবার অন্য মনস্ক হয়ে পড়লো। অকারণে বাচ্চাদের ধমক দিলো। যা সে কোনো দিনই করে না। ছেলেমেয়েরা রোজি ম্যাডামকে খুবই পছন্দ করে। কারণ, তিনি খুব ভালো পড়ান। ভালো ব্যাবহার করেন। কখনো রাগ করেন না। সেই রোজি আপার ধমক খেয়ে তারা অবাক হলো। বোকা বোকা চোখে চেয়ে থেকে অবশেষে ভ্যাক করে কেঁদে ফেলল। (চলবে…)

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising