728 x 90

বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ভাবনা: মীনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় 

  মেধা- বুদ্ধিতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। সুস্থ ও সুন্দর বাঁচার জন্যই সে সমাজ গঠন করেছে। বিজ্ঞান হলো বিশেষভাবে পরীক্ষালব্ধ সত্যজ্ঞানের ভাণ্ডার। পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণ করে সমস্যার সমাধানমূলক প্রয়োগলব্ধ সত্যজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞানই- বিজ্ঞান। সমাজ হলো মানুষ আর তার পরিবেশ নিয়ে কাজ কারবারের সমষ্টি। তাই সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা করা সমাজে সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পরীক্ষণাগারে পরীক্ষালব্ধ স্পষ্ট প্রাপ্ত

 

মেধা- বুদ্ধিতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। সুস্থ ও সুন্দর বাঁচার জন্যই সে সমাজ গঠন করেছে।

বিজ্ঞান হলো বিশেষভাবে পরীক্ষালব্ধ সত্যজ্ঞানের ভাণ্ডার। পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণ করে সমস্যার সমাধানমূলক প্রয়োগলব্ধ সত্যজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞানই- বিজ্ঞান। সমাজ হলো মানুষ আর তার পরিবেশ নিয়ে কাজ কারবারের সমষ্টি। তাই সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা করা সমাজে সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পরীক্ষণাগারে পরীক্ষালব্ধ স্পষ্ট প্রাপ্ত জ্ঞান। কার্য- কারণ সচেতনতায় বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজভাবনা একবিংশ শতকের এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে আবশ্যক।

জীবনবিজ্ঞান জানায় বংশগতি, মানব শরীরের গঠন, রোগের লক্ষণ, কারণ ও ওষুধ, খাদ্যবিধি।

অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিজ্ঞান। মানুষকে অকারণ ডাইন সন্দেহ বিজ্ঞানমনস্কের লজ্জা। কোনো মানুষের আচরণে বৈকল্য লক্ষ হলে বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি মানুষটির শারীরিক অথবা মানসিক যথাযথ চিকিৎসা করবেন। অমূলক ভূত-প্রেতের আক্রমণ ভাবেন না। কারণ ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ সাপেক্ষ। তেমনই ঈশ্বরের চরণামৃত ভরসা করবেন না। ওঝা-গুনিন ডেকে তেল -নুন- জল-পড়া বা ঝাড়ফুঁক তুকতাক করবেন না। সন্দেহের বশবর্তী কাকতালীয় জ্ঞানে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ সভ্যতা চলে না।

জলাবন্ধ করে ঘরবাড়ি তৈরি করলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। বহু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব এই সমাজের বন্ধু। তারা জলে- বনে বাস করে। অযথা গাছ কাটলে পাখি তথা বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটে। কখনো ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হবে। আজকাল শকুন দেখা যায় না। চড়ুই কমে গেছে। পরিবেশে গরম বাড়ছে, বৃষ্টি যথাযথ হচ্ছে না। এ সবই বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করার কুফল। ভৌমজলের অভাব দেখা দেবে ভূ-বিজ্ঞানীদের এই সতর্কবাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মানুষ পানীয় জল অপচয় করছে। পলিপ্যাক ফেলে মাটি দূষণ ঘটাচ্ছে। সাধু সাবধান। এখনো উপায় আছে।

একসময় গৌরী বা বাল্যবিবাহের চল ছিল, বিজ্ঞান মেনে এখন আঠারো বছরের আগে কন্যার বিয়ে নিষিদ্ধ। পথেঘাটে নোংরা আবর্জনা থুতু ফেললে বা ধূমপান করলে পরিবেশ দূষণের ফলে রোগ ছড়ায়। পরিচ্ছন্ন থাকা আর পরিবেশ সুন্দর রাখা -এই মানবিক দায়িত্ব শেখায় বিজ্ঞান।

জাতি- ধর্ম- বর্ণ- কর্ম- মানুষের পরিচয় নয়; আচরণেই মনুষ্যত্বের বিকাশ। মৃতব্যক্তির চোখ দানে অন্ধব্যক্তিকে দৃষ্টিদান করানোয় বৈজ্ঞানিকজ্ঞান তথা মানব ধর্মেরই প্রকাশ।

অনর্থক শূচী-অশূচীবাঈ ছেড়ে প্রকৃত কার্য-কারণ সম্পর্ক বিষয়ে সচেতনতা বর্তমান সমাজের সকল মানুষের আবশ্যক। মানব কল্যাণের জন্যই ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। ধর্মীয় নিগড়ে বেঁধে মানুষকে তার বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায় বা মহাপাপ। মহিলা আর পুরুষ বৈষম্য করে কারোকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে, অন্যকে খাওয়া- পরার থেকে বঞ্চিত করাও সভ্য সমাজের রীতিনীতি নয়।

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নিজে থাকবে আর সমাজকেও রাখবে। অযৌক্তিক নিয়ম-কানুন চাপানোই অবৈজ্ঞানিক। নিষ্ঠা ভালো। বিজ্ঞাননিষ্ঠ জীবন সুস্থ সুন্দর বাঁচতে সহায়ক। খাওয়ার আগে ও পরে হাতমুখ ধোওয়া আবশ্যক। যেখানে সেখানে থুতু ফেলবে না। সমাজের সকলের ভালো মন্দ বোধ থাকবে। বিজ্ঞান শিক্ষা সর্বস্তরের মানুষের জন্য প্রয়োজন।

মানুষ সামাজিক জীব। সে কি করবে আর কি করবে না -সেই সম্পর্কে তার নিজের সুষ্ঠু সুস্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। সমাজ তথা নিজের মঙ্গলের জন্য বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে সকলকেই। পানীয়জল দূষণ করবে না। বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসার। ধনী- দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি নারী-পুরুষের বিজ্ঞান শিক্ষা থাকলে তবেই না বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ভাবনা সচল হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দেশে স্থানাভাব আর্থিক অবস্থাও সঙ্গীন। বিষয়টি ভাববার। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণেই সমাজের মঙ্গল। সন্তানের অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়াও অনুচিত।

বহুপরিবারেই মহিলারা নিজেদের খাওয়ার ব্যাপারে অবহেলা করেন। এটা বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। মহিলাদের শরীরের গঠন অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরিপুষ্ট খাদ্য যথাসময়ে প্রয়োজন। এই বিষয়টিতেও সমাজের প্রতিটি মানুষকেই যত্নশীল হতে হবে। মায়েরাই পরিবারকে স্নেহ-মমতায় বেঁধে রাখেন।

মেশিন যেমন তেল- জল ছাড়া অচল, মানুষের শরীরও তেমন। তাই, অযথা উপোস করে শরীরকে কষ্ট দিয়ে দুর্বল হওয়া অনুচিত। নিয়মিত খাদ্যগ্রহণ, ব্যায়াম, প্রাণায়াম দেহ সুস্থ সুন্দর করে। তাই অতিরিক্ত খাওয়ায় যেমন দেহের ক্ষতি, একদম না খেলেও শরীরে রোগ ধরবে। বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন কতোটা খাবো। কোন খাদ্য খাবো। এজন্য মাঝে মধ্যে রক্ত পরীক্ষায় জানা আবশ্যক দেহের ক্লোসটেরল, সুগার, থাইরউয়েড, ইউরিক অ্যাসিডের অবস্থান। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের নিদানে খেতে হবে। কত ক্যালোরী শর্করা, ভিটামিন, স্নেহ (চর্বি), লবণ, জল সমস্ত ঠিকঠাক পরিমানে খেতে হবে। নইলেই ব্যক্তি অবিসিটি অর্থাৎ অত্যাধিক মোটা, বা খাদ্যাভাবে রোগা হবার বিপত্তি।

যুক্তিনির্ভর প্রমাণ সাপেক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ভাবনার সুফল সর্বদাই পরিলক্ষিত। মান- সম্মানে হুঁশিয়ার প্রতিটি মানুষ বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক প্রাণী হোন! এটাই যুগের চাহিদা।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising