728 x 90

ঈদুল আযহা ও  কুরবানী

ড. ইমাম হোসেন (ব্রনাই): প্রতি বছর মুসলমানদের জন্য দুটি ঈদের আনন্দ ও ত্যাগ তাঁদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুরম্য স্বকীয় মর্যাদায় উদ্দীপ্ত এবং অনুপ্রাণিত করে। আলহামদুলিল্লাহ। তন্মধ্যে সম্মুখপানে রয়েছে ফরজ বিধান পবিত্র হজ্জ পালন , ঈদুল আযহা ও কুরবানী। ঈদুল আযহা ইবরাহীম (আঃ), বিবি হাজেরা ও ইসমাঈলের পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। ইবরাহীম (আঃ)-কে আল-কুরআনে মুসলিম জাতির

ড. ইমাম হোসেন (ব্রনাই): প্রতি বছর মুসলমানদের জন্য দুটি ঈদের আনন্দ ও ত্যাগ তাঁদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুরম্য স্বকীয় মর্যাদায় উদ্দীপ্ত এবং অনুপ্রাণিত করে। আলহামদুলিল্লাহ। তন্মধ্যে সম্মুখপানে রয়েছে ফরজ বিধান পবিত্র হজ্জ পালন , ঈদুল আযহা ও কুরবানী। ঈদুল আযহা ইবরাহীম (আঃ), বিবি হাজেরা ও ইসমাঈলের পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। ইবরাহীম (আঃ)-কে আল-কুরআনে মুসলিম জাতির পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে (হজ্জ ৭৮)। এ পরিবারটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য ত্যাগের মহত্তম আদর্শ। তাই ঈদুল আযহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি ইবরাহীমী সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে। কুরবানীর স্মৃতিবাহী যিলহজ্জ মাসে হজ্জ উপলক্ষে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় ইবরাহীম (আঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদীনায়। তাঁরা ইবরাহীমী আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন। হজ্জ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ। যা প্রতি বছরই আমাদেরকে তাওহীদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। আমরা নিবিড়ভাবে অনুভব করি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। ঈদের উৎসব একটি সামাজিক উৎসব, সমষ্টিগতভাবে আনন্দের অধিকারগত উৎসব। ঈদুল আযহা উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কুরবানী। কুরবানী হ’ল চিত্তশুদ্ধির এবং পবিত্রতার মাধ্যম। এটি সামাজিক রীতি হ’লেও আল্লাহর জন্যই এ রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। তিনিই একমাত্র বিধাতা প্রতিমুহূর্তেই যার করুণা লাভের জন্য মানুষ প্রত্যাশী। আমাদের বিত্ত, সংসার এবং সমাজ তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত এবং কুরবানী হচ্ছে সেই নিবেদনের একটি প্রতীক।

কুরবানির পরিচয় : ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র কুরবানি। ইসলাম ধর্মে কুরবানির দিনকে ঈদুল আযহাও বলা হয়।  কুরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, সান্নিধ্য অর্জন করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়-নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবেহ করাই হলো কুরবানি।যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘কতিপয় সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কুরবানি কী?  রাসূলুল্লাহ  (সা.) বললেন, তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত।’ সাহাবারা বললেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ-৩১২৭)।

* কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত : কুরবানি হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা মহান নিদর্শন। কুরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন-‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর।’ (সূরা কাউসার, আয়াত-২)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,  রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে’। (ইবনে মাজাহ-৩১২৩)। যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী। কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ, আয়াত-৩৭)।

* শরিয়তে কুরবানির বিধান : ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর মতে কুরবানি ওয়াজিব। তাদের দলিল হলো-আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু জবেহ কর।’ (সূরা কাওসার, আয়াত-২)। সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন সাধারণত ফরজ বা ওয়াজিব হয়ে থাকে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে’। অত্র হাদিসের ভাষ্যেও কুরবানি ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। তবে ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে কুরবানি করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

কুরবানির নেসাব ও তার মেয়াদ : কুরবানির নেসাব হলো হাজাতে আসলিয়া তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি ব্যতিরেকে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার মূল্য বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া। প্রকাশ থাকে যে, যাকাতের নেসাব যা, কুরবানির নেসাবও তা। তবে কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত বিষয় রয়েছে। তা হলো- অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য অতিরিক্ত আসবাবপত্র, সৌখিন মালপত্র, খোরাকি বাদে অতিরিক্ত জায়গা-জমি, খালিঘর বা ভাড়া ঘর (যার ভাড়ার ওপর জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এসব কিছুর মূল্য কুরবানির নেসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/২৯২)। যাকাত ও কুরবানির নেসাবের সময়সীমা নিয়েও পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো-যাকাতের নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত; কিন্তু কুরবানির নেসাব পূর্ণ এক বছর ঘুরে আসা শর্ত নয়। কেবল জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিনের যে কোনো একদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে শামি)।

কুরবানির পশু জবেহর সময় : কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। কুরবানির পশু জবেহ করার সময় হলো ৩ দিন-জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এটাই ওলামায়ে কেরামের কাছে সর্বোত্তম মত হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে। এ সময়ের আগে যেমন কুরবানি আদায় হবে না, তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসাবে আদায় করলে ভিন্ন কথা। যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের আগে কুরবানির পশু জবেহ করা হয়, তাহলে কুরবানি আদায় হবে না। কিন্তু যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় বা ব্যবস্থা নেই, সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজর নামাজের পরও কুরবানি করা বৈধ হবে। (কুদুরি) আর কুরবানির শেষ সময় হলো জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।

কুরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম : কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা। তবে পশু জবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্তত নিুোক্ত দুটি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুবা কুরবানির পশু জবেহ বিশুদ্ধ হবে না। বিষয় দুটি হলো- ১) জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। তবে ‘বিসমিল্লাহ’-এর সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করে নেওয়া মুস্তাহাব। ইচ্ছাকৃতভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা পরিত্যাগ করলে জবেহকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তবে তা খাওয়া বৈধ। কোনো ব্যক্তি যদি জবেহ করার সময় জবেহকারীর ছুরি চালানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে, তবে তাকেও ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে; নতুবা জবেহ শুদ্ধ হবে না। ২) জবেহ করার সময় কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটা জরুরি। কমপক্ষে তিনটি রগ যদি কাটা হয়, তবে কুরবানি বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি রগ কাটা হয়, তখন কুরবানি বিশুদ্ধ হবে না। (হিদায়া)।

* কুরবানির গোশতের হুকুম : কুরবানির গোশত কুরবানিদাতা ও তার পরিবারের সদস্যরা খেতে পারবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’। (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৮)। ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব। কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েজ নেই। কারণ তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত বস্তু। তবে চামড়া বিক্রি করা যেতে পারে, কিন্তু টাকা গরিবদের দান করতে হবে। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানির গোশত দেওয়া জায়েজ নয়। যেহেতু সেটিও এক ধরনের বিনিময় যা ক্রয়-বিক্রয়ের মতো। তার পারিশ্রমিক আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে। হাদিসে এসেছে-‘আর তা প্রস্তুতকরণে তা থেকে কিছু দেওয়া হবে না’। (সহিহ বুখারি-১৭১৬)। তবে দান বা উপহার হিসাবে কসাইকে কিছু দিলে তা নাজায়েজ হবে না। ইবরাহীম (আঃ) সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন, হয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ ঘোষিত মানবজাতির ইমাম। তিনি মানবজাতির আদর্শ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয় কর তাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (মুমতাহিনা ৪-৬)।আদম (আঃ)-এর সময় থেকেই চলে আসা কুরবানীর প্রথা পরবর্তীকালের সকল নবী-রাসূল, তাঁদের উম্মত আল্লাহর নামে, কেবল তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করে গেছেন। এ কুরবানী কেবল পশু কুরবানী নয়। নিজের পশুত্ব, নিজের ক্ষুদ্রতা, নীচতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহংকার ত্যাগের কুরবানী। নিজের ছালাত, কুরবানী, জীবন-মরণ ও বিষয়-আশয় সব কিছুই কেবল আল্লাহর নামে, শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য চূড়ান্তভাবে নিয়োগ ও ত্যাগের মানস এবং বাস্তবে সেসব আমল করাই হচ্ছে প্রকৃত কুরবানী। এই কুরবানীর পশু যবেহ থেকে শুরু করে নিজের পশুত্ব যবেহ বা বিসর্জন এবং জিহাদ-কিতালের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় শাহাদতবরণ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। এই কুরবানী মানুষের তামান্না, নিয়ত, প্রস্ত্ততি, গভীরতম প্রতিশ্রুতি থেকে আরম্ভ করে তার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন পর্যন্ত সম্প্রসারিত। ঈদুল আযহার সময়, হজ্জ পালনকালে মুসলিমের পশু কুরবানী উপরোক্ত সমগ্র জীবন ও সম্পদের কুরবানীর তাওহীদী নির্দেশের অঙ্গীভূত এবং তা একই সঙ্গে আল-কুরআনে আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত মানব জাতির ইমাম ইবরাহীম (আঃ)-এর পুত্র কুরবানীর চরম পরীক্ষা প্রদান ও আদর্শ চেতনার প্রতীকী রূপ।কুরবানীর পশুর গলায় ছুরি দেওয়ার পূর্বে নিজেদের মধ্যে লুক্কায়িত পশুত্বের গলায় ছুরি দিতে হবে। মহান আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণকারী ও আত্মত্যাগী হ’তে হবে। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন বা মুত্তাকী হ’তে হবে। আমাদের ছালাত, কুরবানী, জীবন-মরণ সবকিছু আল্লাহর জন্যই উৎসর্গ হৌক, ঈদুল আযহায় বিধাতার নিকট এই থাকুক প্রার্থনা।

“ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন

ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণকেতু লক্ষ্য ঐ তোরণ

আজি আল্লাহর নামে জান কোরবানে

ঈদের পূত বোধন।

ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন।” – কাজী নজরুল ইসলাম

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising