728 x 90

বর্ষায় বাংলাদেশ: নাদিরা বেগম

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শুষ্কপ্রায় প্রকৃতিকে সজীবতার ভিন্ন মাত্রা দিতে ষড়ঋতুর পরিক্রমায় প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে বর্ষা ঋতু। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশ হিমালয়ের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত বলে, এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পরই বর্ষার অবস্থান। আষাঢ়– শ্রাবণ মাস বর্ষার লীলাখেলার প্রশস্থ সময়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বর্ষাকাল এ দুমাসের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। কালবৈশাখীর

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শুষ্কপ্রায় প্রকৃতিকে সজীবতার ভিন্ন মাত্রা দিতে ষড়ঋতুর পরিক্রমায় প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে বর্ষা ঋতু। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশ হিমালয়ের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত বলে, এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পরই বর্ষার অবস্থান। আষাঢ়– শ্রাবণ মাস বর্ষার লীলাখেলার প্রশস্থ সময়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বর্ষাকাল এ দুমাসের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। কালবৈশাখীর গুরুগর্জনে তার আগমনবার্তা সূচিত হয়। আর ভরা ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন পর্যন্ত রূপের পসরা সাজিয়ে সে অবস্থান করে।

সংগীতের তালে রুমুঝুম ছন্দে বর্ষা আসে আকাশে মেঘের গুরুগুরু গর্জনে, বিদ্যুতের নিশান উড়িয়ে অশান্ত বৃষ্টির শব্দে তার আগমনি বার্তা। তার সুশীতল স্পর্শে প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়। গ্রীস্মের তীব্র দাব দহের যন্ত্রনা থেকে মানুষের মুক্তি। বর্ষার অবিরল বারিধারায় নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট সব পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় গ্রামগুলোকে তরুলতা সমাচ্ছন্ন দ্বীপের আকার ধারণ করে। বনে বনে ফুটে জুঁই, কেয়া, কদম ইত্যাদি সুরভিত ফুল। রূপ-রস, বর্ণ-গন্ধ আর অপূর্ব ।

ধূলি-মলিন বিবর্ণতার অবসান হয়। সর্বত্রই শ্যামল সবুজের নয়ন নন্দন সমারোহ। বর্ষাকালে পল্লির মাঠ-ঘাটে জল থইথই করে। বিস্তৃত পানিতে একাকার মাঠের প্রান্তদেশে বাড়িগুলো পানির ওপর ভাসতে থাকে। বর্ষার বারিধারা নদীতে যে প্লাবন সৃষ্টি করে তাতে সমগ্র পথ-ঘাট, বন-প্রান্তর ভরে যায়। বাংলাদেশ সাজে এক অপরূপ সাজে। এ সময় বনে বনে ফোটে জুঁই, কেয়া, কদম ইত্যাদি সুরভিত ফুল।

কবির ভাষায়-

“গুরু গুরু ডাকে দেয়া; ফুটিছে কদম কেয়া

ময়ূর পেখম তুলে সুখে তান ধরছে

বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে অঝোর ধারায়।

রুপের রানী বর্ষার অপ্রসন্ন, অভিমানী দৃষ্টিতে ঘরে ঘরে অন্তহীন দুঃখের আঁধার হাহাকার। বর্ষা একদিকে যেমন গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ, অন্যদিকে সে-ই আবার দরিদ্র পল্লিবাসীর দুঃখের কারণ। সারা দিন ঝম ঝম বৃষ্টি ঝড়ো বাতাস রাস্তা ঘাট কর্দমাক্ত ঘরে বন্দী জীবন।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে

তিল ঠাই আর নাহি রে

ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।”

এসময় অনবরত বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নদীগুলোতে সর্বনাশা বান ডেকে কৃষকের সব আবাদি ফসল এবং গবাদি পশু কেড়ে নিয়ে যায়। বাড়িঘর ডুবে যায়, কিংবা অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় পানির ওপর ভাসতে থাকে। পায়ে হেঁটে চলাচল করা এসময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ডিঙি নৌকা কিংবা কলার ভেলাই হয় পারাপার কিংবা যাতায়াতের একমাত্র বাহন। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। গ্রামের বহু লোক এসময় অনাহার কিংবা অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপ অত্যধিক বেড়ে যায়। এ সময় ডায়রিয়া এবং আমাশয়ে বহু লোকের মৃত্যর করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে এ সময় বহু লোক সর্বশান্ত হয়ে যায়। মানুষের দুঃখ দুর্দশার সীমা থাকেনা।

 

বর্ষার স্নিগ্ধ-সজল মায়াঙ্গনে যুগে যুগে কবি-হৃদয় উদ্বেল হয়েছে। বর্ষাকে সে জানিয়েছে স্বাগত অভিবাদন। বর্ষা বাঙালির মনভূমিকে করে সরস এবং কাব্যময়। বর্ষার মেঘমেদুর আবহাওয়া, বৃষ্টির অবিরল ধারা, টাপুরটুপুর মানুষের মনকে প্রভাবিত করে।

কবিগুরু মানবমনে বর্ষার প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাই বলেছেন-

“এমন দিনে তারে বলা যায়,

এমন ঘন ঘনোঘোর বরিষায়।”

বর্যায় বাংলাদেশ রূপ-বৈচিত্র্যে তুলনাহীন। বর্ষাকাল বাঙালির প্রাণের ঋতু। ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শে তা সজীব। কারণেই এদেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা। বাংলাদেশের এ যে অপরূপ প্রাকৃতিক নিসর্গতা বর্ষারই অবদান। বর্ষা তাই, আমাদের কাছে চির আদরের প্রিয় ঋতু।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising