728 x 90

রেফারেন্ডাম ও কিছু কথা

  সামসুল ইসলাম টুকু: সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ৬টি রাজ্যে রেফারেন্ডাম ভোটে ‘নো’ ভোটের কাছে “ইয়েস”ভোট পরাজিত হয়েছে। “ইয়েস” এর পক্ষে পড়েছে ৩৯.২% ভোট এবং “নো” এর পক্ষে পড়েছে ৬০.৮% ভোট এবং মোট ভোট গণনা হয়েছে ৮০.৫%।সবচেয়ে বেশি ইয়েস ভোট পড়েছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ৪৪.৯% এবং সবচেয়ে ইয়েস ভোট কম পড়েছে কুইন্সল্যান্ডে ৩১%। ভোটের এই ফলাফল বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ

 

সামসুল ইসলাম টুকু: সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ৬টি রাজ্যে রেফারেন্ডাম ভোটে ‘নো’ ভোটের কাছে “ইয়েস”ভোট পরাজিত হয়েছে। “ইয়েস” এর পক্ষে পড়েছে ৩৯.২% ভোট এবং “নো” এর পক্ষে পড়েছে ৬০.৮% ভোট এবং মোট ভোট গণনা হয়েছে ৮০.৫%।সবচেয়ে বেশি ইয়েস ভোট পড়েছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ৪৪.৯% এবং সবচেয়ে ইয়েস ভোট কম পড়েছে কুইন্সল্যান্ডে ৩১%।

ভোটের এই ফলাফল বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যা নিয়ে আলোচনা করা যায়।প্রথম কথা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ১৯.৫% ভোটার ভোটদানে বিরত থেকেছেন যা অষ্ট্রেলিয়া আইনের রীতিমতো বরখেলাপ। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কি ? অথবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কি যুক্তিযুক্ত হতে পারে। যদি তারা বলেন ভোট না দেওয়াটাও একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সরকারের যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণই হবে পীড়ন মুলক। ভোট না প্রদানের ব্যাপারটিও একটি জনমত হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

অষ্ট্রেলিয়া সংসদে আদিবাসী ও টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসী মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করতে ভয়েস বা কণ্ঠ প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের কাছে উদাত্ত আহবান জানান এমপ্লয়মেন্ট এন্ড প্লেস রিলেশন মন্ত্রী টনি বার্ক  এম পি। তিনি বলেছিলেন অষ্ট্রেলিয়ার সংবিধানে এদেশের আদিবাসী এবং টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসী মানুষদের শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি এবং সংসদে ভয়েস বা কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে তাদের জীবনে প্রত্যক্ষ  ফলাফল সৃষ্টি করে এমন বিষয়গুলোতে তাদের কথা শোনার সুযোগ হবে। কারণ দীর্ঘকাল যাবৎ তারা বেশ শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বিচারের ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতিকে সংশোধন করতে সর্বোত্তম সুযোগ হচ্ছে এই রেফারেন্ডাম। যা অষ্ট্রেলিয়া সমাজকে অধিকতর শক্তিশালী ও  ঐক্যবদ্ধ করবে। পাশাপাশি আদিবাসীদের জীবনকে উন্নত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এক্ষেত্রে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে নতুন ইতিহাস তৈরি এবং ন্যায় নির্ভর ভবিষ্যৎ সম্ভব। টনি বার্ক এমন একটি মানবিক আহবান রাখলেও তা রেফারেন্ডাম ভোটে তার বিপরীত ফল হলো। অষ্ট্রেলিয়াবাসীর ৬০.৮% মানুষ “নো” ভোট দিয়েছে। সেখানকার সামাজিক অবস্থা প্রমাণ করেছে এই বিপুল সংখ্যক সাদা মানুষ আজও মনে মনে বর্ণবৈষম্য লালন করে। এটি সরকারের সদিচ্ছার প্রতি একটি প্রচণ্ড আঘাত। কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে তো রীতিমতো ৬৯% “নো ” ভোট পড়েছে। এই নো ভোটের প্রভাব সমাজে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করবে  তা বলা মুস্কিল এবং অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ কতটা সমুন্নত রাখা যাবে তা প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে।

যে দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভি রুড ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিল পাশ করেন আদিবাসীদের সাথে অতীতের অমানবিক আচরণের জন্য।কোন অনুষ্ঠান করার প্রারম্ভে অঙ্গভঙ্গি করে গান গেয়ে আদিবাসীদের এদেশের প্রথম মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয়। অস্ট্রেলিয়ার একটি রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের সংসদে ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং কোন ধর্মকে অবমাননার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক  ডিস্ক্রিমিনেশন এমেন্ডমেন্ড বিল পাশ করা হয় সেই দেশে আদিবাসী ও টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসীর  সাংবিধানিক ও মানবিক প্রশ্নে ‘নো’ ভোট একটু বিচিত্র ব্যাপারই বটে।অনেকে বলছেন বিষয়টি গণভোটে না দিয়ে সংসদে আইন পাশ করিয়ে নিলেই এই বিভাজনের চিত্রটা বেরিয়ে আসতোনা। বরং পরবর্তী প্রজন্ম বিষয়টিকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবেই মেনে নিত।তবে গণভোট হবার ফলে সাদাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বর্ণবৈষম্য স্পষ্ট হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এই গণভোটের আহবান জানানো হলেও ‘ইয়েস’ ভোটের জন্য প্রচার প্রচারণা তেমন গুরুত্ব পায়নি। বরং ‘নো’ভোটের প্রচারণা লক্ষণীয় ছিল। আগামীতে আদিবাসীদের মানুষ হিসেবে বিচার করার ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ব্যাপী মোটিভেশনাল কর্মসূচি চালাতে হবে।মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে হলে সরকারের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা অতি আবষ্যক।বিশ্বায়নের কথা শুধু মুখে বললেই চলবেনা কর্মক্ষেত্রে প্রমাণ করা জরুরি। সেকুলার হবার দাবীটাও বাস্তবে প্রমাণ করতে হবে। ‘নো’ভোটের কাছে ‘ইয়েস’ ভোটের পরাজয় প্রকারান্তরে সরকারের মানবিক প্রস্তাবের পরাজয়। সেটা যতই গণতান্ত্রিক বলা হোক না কেন।এখানে গণতন্ত্র যেন অমানবিক হয়ে উঠেছে। আদিবাসীদের উপর দীর্ঘ ২০০ বছরের অধিক সময়ের অত্যাচার, নির্যাতন্, হত্যা, অপহরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তো আদিবাসীদের মনে থাকতেই পারে। তারাই বরং সাদাদের বর্জন ঘৃণা করতে পারে। সেখানে সাদাদের নেতিবাচক ভোট হাতে গোনা গুটি কয়েক আদিবাসীদের কিছু মৌলিক অধিকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঞ্চিত করলো। কেউ কেউ বলেন রেফারেন্ডাম মুলত একটা নাটক বিশ্ববাসীর কাছে গণতান্ত্রিক হবার। কিন্তু এর ফলে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে দূরত্ব সৃষ্টি হলো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একটি দেশের কিছু মানুষ বা গোষ্ঠী অশিক্ষিত ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত থাকুক তা সরকারের জন্যই অসম্মানের। নিকট ভবিষ্যতে এই দূরত্ব দূর করতে হলে প্রয়াত  কেভিন রুডের মত উদারমনা বলিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীর দরকার।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising