728 x 90

জুমুআর সালাতের গুরুত্ব ও ফজীলত

ডা. ইমাম হোসাইন: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মাতে মুহাম্মাদীকে ‘জুমু’আর দিবসের নেয়ামত দান করেছেন। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই দিনটি সবচেয়ে সম্মানিত। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মাতগণ এই দিনটি লাভকরতে পারে নি। এই দিনটির মর্যাদায় অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি হাদীস শুনুন:“সূর্যের নিচে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমুআর দিন। এই দিনেই আদমকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন, এইদিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ

ডা. ইমাম হোসাইন: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মাতে মুহাম্মাদীকে ‘জুমু’আর দিবসের নেয়ামত দান করেছেন। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই দিনটি সবচেয়ে সম্মানিত। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মাতগণ এই দিনটি লাভকরতে পারে নি। এই দিনটির মর্যাদায় অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি হাদীস শুনুন:“সূর্যের নিচে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমুআর দিন। এই দিনেই আদমকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন, এইদিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়।”“সকল দিবসের নেতা ও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাময় দিন হলো জুমুআর দিন। এই দিনটিআল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও অধিক মর্যাদাময়। এই দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই দিনে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন। এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে অবতরণ করান। এই দিনেই আল্লাহ আদমকে মৃত্যু দান করেন। এই দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময়ে বান্দা আল্লাহর নিকট যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দিবেন, যদি না সে কোনো হারাম বস্তু চায়। এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।সকল নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা, আকাশ, যমিন, বাতাস, পাহাড়, সমুদ্র প্রত্যেকেই শুক্রবারে সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে।“তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার।… কাজেই, এ দিনে তোমরা আমারউপর বেশি করে দরুদ পাঠ করবে, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” সাহাবীগণবলেন : “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো (কবরের মাটিতে) বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, মিশে যাবেন, কী ভাবেতখন আমাদের দরুদ আপনার নিকট পেশ করা হবে? তিনি বলেন: আমাদের দেহ, নবীদের দেহ ভক্ষণ করা মহান আল্লাহ মাটির জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।এই মহান দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম হলো জুমু’আর সালাত আদায় করা। আল্লাহ বলেন:“হে ঈমানদারগণ, যখন জুমু’আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হবে, তখন তোমরাআল্লাহর যিকর-এর দিকে ধাবিত হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্য পরিত্যাগ করবে। এটিই তোমাদের জন্যউত্তম, যদি তোমরা জানতে পার।”জুমু’আর সালাত আদায় করা মুমিনের অন্যতম ফরয ইবাদত। ইচ্ছাপূর্বক জুমু’আর সালাত ত্যাগ করে এর পরিবর্তে যোহরের সালাত আদায় করাও কঠিন গোনাহের কাজ ও ভয়ঙ্কর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জুমু’আর সালাত পরিত্যাগের অভ্যাস মানুষদের অবশ্যই ছাড়তে হবে। তা না হলে আল্লাহতাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দিবেন এবং এরপর তারা গাফিল বা মুনাফিকে পরিণত হবে।জুমুআর সালাত সুন্দর রূপে আদায় করার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:“যদি কেউ সুন্দর রূপে ওযূ করে, এরপর জুমুআর সালাতে উপস্থিত হয় এবং নীরবেমনোযোগের সাথে (ইমামের খুতবা বা বক্তৃতা) শ্রবণ করে, তবে সে জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত৭ দিন এবং অতিরিক্ত ৩ দিনের মধ্যে কৃত তার সকল (সগীরা) গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যদিকেউ (ইমামের খুতবার সময়) কাঁকর স্পর্শ করে তবে সে জুমুআর সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।’ জুমুআর সালাতে গমনকারী জিহাদে গমনের সাওয়াব লাভ করবেন। তাবে-তাবেয়ীএযিদ ইবনু আবূ মরিয়ম বলেন, আমি একদিন হেটে হেটে জুমুআর সালাতে যাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায়তাবিয়ী আবায়া ইবনু রিফাআহ আমার কাছে এসে বলেন: আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার এপদক্ষেপগুলি আল্লাহর রাস্তায় । আমি সাহাবী আবূ আবস (রা)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:“যদি কারো পদদ্বয় আল্লাহর রাস্তায় ধুলিধসরিত হয় তবে সেই পদদ্বয় জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়।” জুমুআর সালাতে যাওয়ার জন্য অনেক আদব শিক্ষা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ । এগুলিরমধ্যে রয়েছে জুম’আর দিনে গোসল করা, সুগন্ধি মাখা এবং সবচেয়ে ভাল পোশাক পরিধান করা, হেঁটে যাওয়া, সকাল সকাল মসজিদে উপস্থিত হওয়া, মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সুন্নাত-নফল সালাত আদায় করা, মসজিদের মধ্যে আগেই উপস্থিত কোনো মুসল্লীকে কষ্ট না দেওয়া, কারো ঘাঁড়ের উপর দিয়ে না যাওয়া, দুইজনের মাঝে ঠেলে বসে না পড়া, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসা, নীরবে মনোযোগের সাথে ইমামের বক্তৃতা শ্রবণ করা ইত্যাদি। এ বিষয়ে কয়েকটি হাদীস শুনুনঃ“এই দিনটি (শুক্রবার) ঈদের দিন। আল্লাহ তা’লা মুসলমানদের জন্য এই দিনটিকে (সাপ্তাহিক)ঈদের দিন বানিয়েছেন। কাজেই যে জুমুআয় আগমন করবে, সে যেন গোসল করে। আর যদি তারকাছে কোনো সুগন্ধি থাকে তবে সে যেন তা মাখে। আর তোমরা অবশ্যই মেসওয়াক ব্যবহার করবে।’“যদি কেউ জুমুআর দিনে গোসল করে, তার কাছে কোনো সুগন্ধি থাকলে তা মাখে, তারসবচেয়ে ভাল পোশক থেকে পরিধান করে, এরপর মসজিদে গমন করে এবং মসজিদে যেযে তারসাধ্যমত (সুন্নাত নফল) সালাত আদায় করে, কাউকে কষ্ট দেয় না, কারো ঘাড়ের উপর দিয়ে যায় না,দুজনের মাঝে সরিয়ে জায়গা করে না, এরপর নীরবে খুতবা শুনে এবং সালাত আদায় করে, তবে তার এই জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত পাপের মার্জনা হবে।“যদি কেউ জুমআর দিনে উত্তমরূপে গোসল করে, সকাল সকাল মসজিদে গমন করে, বাহনেআরোহন না করে হেটে যায়, ইমামের নিকটবর্তী হয়, মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে এবং কোনো কথা নাবলে তবে তার প্রত্যেক পদক্ষেপে এক বৎসরের নফল সিয়াম ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে।“যদি কেউ জুমাআর দিনে নাপাকীর গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং প্রথম প্রহরেই মসজিদেরাওয়ানা দেয় তবে সে একটি উট কুরবানী দানের তুল্য সাওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় প্রহরে গমন করল সে যেন একটি গরু কুরবানী দিল। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে গমন করল সে যেন একটি শিং ওয়ালা সুন্দর ভেড়া কুরবানী দিল। আর যে চতুর্থ পর্যায়ে গমন করল সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে পঞ্চম পর্যায়ে গমন করল সে যেন একটি ডিম দান করল। আর যখন ইমাম বেরিয়ে আসেন তখন ফিরিশতাগণ তাদের (এই বিশেষ সাওয়াবের দফতর বন্ধ করে) ইমামের আলোচনা শুনতে থাকেন। মুসল্লীগণ যেন মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনেন এবং অন্যদেরকে শুনতে দেন সেজন্য খুতবা চলাকানীন সময়ে সামান্যতম কথা বলা নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। এমনকি কাউকে চুপ করতে নির্দেশ দেওয়াও নিষিদ্ধ। উপরন্তু হাত দিয়ে কিছু নাড়াচাড়া করা, কাঁকর সরান ইত্যাদিও নিষেধ করা হয়েছে। এরূপ করলে জুমুআর সাওয়াব থাকবে না। যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মনোযোগ ও নীরবতার সাথেখুতবা শুনবে সে জুমুআর সাওয়াব ছাড়াও অতিরিক্ত ক্ষমা ও পুরস্কার লাভ করবে বলে বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে। বস্তুত, জুম্মর সালাতের অন্যতম ইবাদত হলো ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা।খুতবার উদ্দেশ্য হলো প্রতি সপ্তাহে মুসল্লীদেরকে প্রয়োজনীওও নসীহত ও দিক নির্দেশনা প্রদান করা।আরবীতে খুতবা অর্থ বক্তৃতা । রাসূলুল্লাহ খুতবাকে “ওয়ায” বলে আখ্যায়িত করে বলেন:“যদি কেউ জুমুআর দিনে গোসল করে, তার স্ত্রীর নিকট সুগন্ধি থাকলে তা মাখে, ভাল পোশাকপরিধান করে, মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে না যায় এবং ওয়াযের সময় কথা না বলে, তবে দুই জুমুআরমধ্যবর্তী সময়ের জন্য পাপের মার্জনা করা হবে। আর যদি কেউ কথা বলে এবং মানুষের ঘাড়ের উপরদিয়ে যায় তবে তার জুমুয়া যোহরে পরিণত হবে (জুমুআর কোনো ফযীলত বা সাওয়াব সে পাবে না ।)  খুতবা ভালভাবে শ্রবণ ও হৃদয়ঙ্গম করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)মুসল্লীদেরকে ইমামেরনিকটবর্তী হয়ে বসতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:“তোমরা জুমুআর খুতবায় উপস্থিত হবে এবং ইমামের নিকটবর্তী হবে। কারণ মানুষ নিয়মিতদূরে বসতে থাকলে সে জান্নাতে প্রবেশ করলেও তাকে জান্নাতে দূবরর্তী ও পশ্চাদপদ রাখা হবে।’খুতবা মনদিয়ে শোনার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) বারংবার নির্দেশ দিয়েছেন সকাল সকালমসজিদে যেতে। এ অর্থের কয়েকটি হাদীস আমরা দেখেছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত সূর্য মধ্যগগণথেকে ঢলে পড়ার সাথে সাথেই জুমুআর সালাতের খুতবা শুরু করতেন। এজন্য বারংবার জুমুআরদিনে  বেলা গড়ার পূর্বেই মসজিদে যেতে বলেছেন। ইলমের ফযীলত আলোচনায় দেখেছিযে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি কোনো ব্যক্তি ভাল কিছু কথা শেখার বা শেখানোর উদ্দেশ্যে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই মসজিদে গমন করে, তবে সে ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ্জের সাওয়াব লাভ করবে।” অন্য হাদীসে আমরা দেখেছি যে, ইমামের আলোচনা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত ফিরিশতাগণ বিশেষ সাওয়াব লিখতে থাকেন। খুতবার উদ্দেশ্য ওয়ায এবং মুসল্লীদের মনে পরিবর্তন আনয়ন করা। এজন্য রাসূলুল্লাহ(সা.)-এর সুন্নাত হলো, খতীব তার খুতবার বক্তব্যের সাথে নিজের আবেগ প্রকাশ করবেন। রাসূলুল্লাহযখন খুতবা দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত, কণ্ঠস্বর উচ্চ হতো, বিষয়বস্তুর সাথে তার কঠিনআবেগ বা ক্রোধ প্রকাশ পেত। তিনি খুতবার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও শাহাদাতাইনের পরে কুরআনও সুন্নাত আঁকড়ে ধরতে এবং বিদ’আত পরিহার করতে নির্দেশ দিতেন। অধিকাংশ সময় তিনি খুতবারমধ্যে কুর্আন কারীমের বিভিন্ন সূরা পাঠ করে ওয়ায করতেন। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব চিন্তা করতে এবংমনগুলিকে আখিরাতমুখি করার জন্য নসীহত করতেন। সমবেত মুসল্লীদেরকে নসীহত করা ছাড়াও খুতবা চলাকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসল্লীদেরমধ্যে কারো সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলতেন ও ব্যক্তিগত আদেশ নিষেধ প্রদান করতেন। একদিন খুতবা চলাকালীন সময়ে একজনকে মুসল্লীদের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে আসতে দেখে তাকে বলেন, তুমি বসে পড়, তুমি তো মানুষদেরকে কষ্ট দিচ্ছ। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদকে মসজিদের দরজার কাছে বসা দেখে তিনি খুতবা থামিয়ে তাকে ডেকে বলেন, তুমি সামনে এস। খুলাফায়ে রাশেদীনও প্রয়োজনে এরূপ করতেন। একদিন উমার (রা) খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময়ে উসমান (রা) মসজিদে প্রবেশ করেন। উমার (রা) খুতবা থামিয়ে বলেন, এ কোন্ সময় হলো? (এত দেরি হলো কেন?) উসমান (রা) বলেন, কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আযান শুনেই বাড়ি এসে ওযূ করেই চলে এসেছি। উমার (রা) বলেন: শুধু ওযূ করে? অথচ আপনি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)  জুমুআর দিনে গোসল করতে বলেছেন। জুমুআর দিনে দুআ কবুলের একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:“জুমুআর দিনের মধ্যে একটি সময় আছে কোনো মুসলিম যদি সে সময়ে আল্লাহর নিকট কিছুপ্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। তিনি বলেন: তা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়।”এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারে বসা থেকে জুমুআর সালাতেশেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মুহূর্তটি থাকে। অন্যান্য বর্ণনায় দেখা যায় যে, জুমুআর দিন আসরের পরে সূর্যাস্তের পূর্বে এ মুহূর্তটি থাকে। রাসূলুল্লাহ খুতবার মধ্যে মাঝে মাঝে দুআ করতেন ।হাযেরীন, জুমুআর দিনের এত ফযীলত দেখে মনের আবেগে ইচ্ছামত ইবাদত বন্দেগি করা।জুমুআর দিনের এত ফযীলত দেখে মনের আবেগে ইচ্ছামত ইবাদত বন্দেগি করা যাবে না; বরং সুন্নাতের নির্দেশনার আলোকে ইবাদত করতে হবে। জুমুআর ফযীলতের দিকে লক্ষ্য রেখে কেউ হয়ত এ দিনে রোযা রাখার বা জুমুআর রাতে খাস করে তাহাজ্জুদ পড়ার বা একটু বেশি করে পড়ার রীতি করতে পারেন। কিন্তু এরূপ করতে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:“তোমরা জুমুআর রাতকে সালাতের জন্য খাস করবে না এবং জুমুআর দিনকে সিয়ামের জন্যখাস করো না … আগে বা পরে রোযা না রেখে শুধু জুমুআর দিনে তোমাদের কেউ রোযা রাখবে না।’ “এদিনের সুন্নাত সম্মত বিশেষ আমলের মধ্যে রয়েছে বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা। এ বিষয়ে একটি হাদীস আমরা শুনেছি। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল জুমুআর দিনে ও রাতে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ বলেন:“যদি কেউ জুমুআর দিনে সূরা কাফ্ফ পাঠ করে তবে তা তার দুই জুমুআর মধ্যবর্তী সময়কেনূরে উদ্ভাসিত করে দেয়। খাস করে জুমুআর দিনে সিয়াম পালনে আপত্তি থাকলেও আগের বা পরের দিনেরসাথে মিলিয়ে বা নিয়মিত তারিখে পড়ে গেলে জুমুআর দিনে সিয়াম পালন করা যায়। এছাড়া এর সাথে অন্যান্য মানবসেবামূলক নেক কর্ম করতে উৎসাহ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেন:“যদি কেউ একদিনে পাঁচটি কর্ম করে তবে তাকে আল্লাহ জান্নাতবাসী হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন:অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাওয়া, মৃত ব্যক্তির জানাযায় শরীক হওয়া, দিবসে সিয়াম পালন করা, জুমুআয় গমন করা এবং দাস মুক্ত করা।”এগুলি সবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে,যে কোনো অসুস্থ মানুষকে এক নজর দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফিরিশতা তার জন্য সারা দিনরাত দুআ  করবেন, কারো জানাযায় শরীক হলে একটি পাহাড় পরিমাণ সাওয়াব এবং দাফন পর্যন্ত থাকলে দুটি পাহাড়পরিমান সওয়াব লাভ হবে। সমাজ থেকে দাসপ্রথা উচ্ছেদের জন্য ইসলামে ক্রীতদাস মুক্ত করাকে অন্যতমইবাদত বলে গণ্য করা হয়। বর্তমানে আইনগতভাবে দাসপ্রথা উচ্ছেদ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকগণদাসদের মতই আচরণ পান। তাদের অর্থনৈতিক বিমুক্তির জন্য অর্থ ব্যয়ও অনুরূপ ইবাদত। আর সিয়াম ওজুমুআর সাওয়াব আমরা জানি। আর যদি এ কর্মগুলি একত্রে একদিনে করা যায় তবে তাঁর জন্য জান্নাতের মহা সুসংবাদ । অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ“তোমাদের মধ্যে আজ কে সিয়ামরত ছিলে? আবু বকর (রা) বলেন: আমি । রাসূলুল্লাহ (*) প্রশ্নকরেন: তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো জানাযায় শরীক হয়েছ? আবু বকর (রা) বলেন: আমি। তিনিপ্রশ্ন করেন: তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করেছ ? আবু বকর (রা) বলেন: আমি ।তিনি আবার প্রশ্ন করেন: আজ তোমাদের কে অসুস্থ কোনো মানুষকে দেখতে গিয়েছ ? আবু বকরবলেন: আমি। তখন রাসূলুল্লাহ বলেন : এই কর্মগুলি যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয়তাহলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতী হবেন। ৩আল্লাহ এ সকল কাজকে আমাদের নিয়মিত অভ্যাস বানিয়ে দিন। আমীন

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising