সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : সিডনিতে মুসলমানদের বাৎসরিক সর্ববৃহৎ দ্বীনি জমায়েত বা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২,২৩,২৪ এবং ২৫ তারিখ ফজরের নামাজের পর হিদায়েতের বয়ান শেষে বিশেষ দু’আর মাধ্যমে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মসজিদ আল নূর সাউথ গ্রেনভিলে অনুষ্ঠিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রাণের ইজতিমা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ক্যানাডা, ইংল্যান্ড থেকে বেশ কিছু দ্বীনের জামাত এসেছে দাওয়াতের কাজ
সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : সিডনিতে মুসলমানদের বাৎসরিক সর্ববৃহৎ দ্বীনি জমায়েত বা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২,২৩,২৪ এবং ২৫ তারিখ ফজরের নামাজের পর হিদায়েতের বয়ান শেষে বিশেষ দু’আর মাধ্যমে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মসজিদ আল নূর সাউথ গ্রেনভিলে অনুষ্ঠিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রাণের ইজতিমা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ক্যানাডা, ইংল্যান্ড থেকে বেশ কিছু দ্বীনের জামাত এসেছে দাওয়াতের কাজ নিয়ে।
শুক্রবার আসর নামাজের পর বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। বিকেল থেকেই মানুষের সমাগম হতে থাকে। হাজারো মুসল্লির বিশাল বড় মসজিদের হলরুম উপচিয়ে পরে। মসজিদের বাইরে হাজারো লোকের জন্য বিশাল তাবু স্থাপন করেন আয়োজকরা। বেশ কিছু অতিরিক্ত শৌচাগার বসানো হয়েছে, তাছাড়া ওযুর জন্যে এবার আলাদা করে বেশ কিছু কল বসানো হয়েছে।
তাবলীগ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ বাল্লেগ থেকে। যার শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো, প্রচার করা, প্রসার করা ইত্যাদি। আমাদের প্রিয় নবী (স.) বলেন, “আমার পক্ষ হতে একটিমাত্র বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।” প্রতিটি নবী ও রাসূলকে একটি প্রধান কাজ দিয়ে এ দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে -সেটা হচ্ছে দাওয়াতের কাজ। এ নবীওয়ালা কাজের বরকতে সমগ্র বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আল্লাহ পাকের অতি পছন্দনীয় এবং হ্যান্ড পিক ব্যক্তিদেরকে দিয়ে আল্লাহ্পাক দাওয়াতের কাজ করিয়েছেন। আমাদের শেষ নবীর পর যেহেতু কোনো নবী আর আসবেননা অথচ মানুষ আসতে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। এদেরকে কে দাওয়াত দিবে ?
অমুসলমানদেরকে কালিমার দাওয়াত আর মুসলমানদেরকে নেক আ’মলের দাওয়াত। বিশ্বের প্রতিটি দেশে এ হক্কের কাজ আল্লাহ্পাক প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমগ্র বিশ্বে মুসলমান সমাজ দাওয়াতের কাজে ধাবিত হচ্ছেন। সমগ্র বিশ্বেই ইজতিমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঈমানী দায়িত্ব ও দাওয়াতের কাজের প্রচার -প্রসার ঘটানোর জন্যই এ ইজতেমার আয়োজন করা হয় সমগ্র বিশ্বে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বা প্রদেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে এ ইজতিমা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
নিজের জীবনে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কিভাবে আসবে এবং প্রতিটি মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে কিভাবে বেহেস্তে যেতে পারে, এ ফিকির নিয়ে জামাত এলাকা থেকে এলাকায়,গ্রাম থেকে গ্রামে, জেলা থেকে জেলায়, দেশ থেকে দেশান্তরে মুসাফিরের মতো সফর করে থাকেন। চল্লিশ দিন, চার মাস বা এক বছর (আলেমদের জন্য) সাহাবাদের মতো ঘুরে ঘুরে দ্বীন প্রচার করেন। পার্থক্য এতুটুকুই, সাহাবীরা দাওয়াত দিয়েছেন অমুসলমানদেরকে আর এখন দাওয়াত দেয়া হচ্ছে মুসলমানদেরকে।
কারন, মুসলমানদের অবস্থা অতি শোচনীয়। মুসলমানরা দ্বীন থেকে দূরে সরে নানা শিরীকি, বেদাতি কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। বেশিরভাগ মুসলমান নামাজ পড়েন না। ছোট একটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। আপনার বাসায় বা আপনি যখন কোনো অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন, আপনিসহ কত জন নামাজ পড়েন ? আগত মেহমানদের ভিতর কত পার্সেন্ট নামাজ পড়েন ? বেশিরভাগ লোকই বিভিন্ন অজুহাতে নামাজ বর্জন করেন। অথচ এক ওয়াক্ত নামাজে বর্জনের কারনে তাকে হয়তোবা লক্ষ লক্ষ বছর আগুনে জ্বলতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সহি শুদ্ধ ভাবে নামাজ কায়েম করার তৌফিক দান করুন (আমিন)।
ইজতেমা থেকে সর্বমোট ৪৪টি জামাত বের হয়েছে সমগ্র অস্ট্রেলিয়াতে দ্বীন প্রচার ও প্রসারের জন্য। অস্ট্রেলিয়র বাইরে অর্থাৎ চারটি দেশে ভিন্ন চারটি জামাত যাবে একই নিয়তে। আল্লাহ্পাক প্রতিটি জামাতকে কবুল করুন (আমিন)।
উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে তাবলিগ জামাতের পুনরায় শুভ সূচনা হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও সাধক হজরত মাওলানা ইলিয়াস আখতার কান্ধলভি (১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি.) দাওয়াতে তাবলিগ জামাতের পুনর্জাগরণ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এক জনবিরল নীরব অঞ্চল ‘মেওয়াত। চারিত্রিক বিপর্যস্ত ধর্মকর্মহীন, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন নামেমাত্র মুসলমান ‘মেও জনগোষ্ঠীকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন ও কালেমার দাওয়াতি মর্ম শিক্ষাদান এবং বিভ্রান্তির কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে হজরত মাওলানা ইলিয়াস (র.) তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন।
১৩৪৫ হিজরিতে দ্বিতীয় হজ্জ্ব থেকে ফিরে এসে তিনি দাওয়াতের কাজ জোরালো ভাবে শুরু করেন। জনসাধারণের মধ্যে কালেমা ও নামাজের দাওয়াত দিতে থাকেন। দ্বীনের জামাত বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে দাওয়াত দেন। এভাবে তিনি গ্রামে গ্রামে সৎ কাজ করার জন্য জামাত তথা দল তৈরি করে দিতেন। পবিত্র কোরান এবং হাদিস শরীফের মজ্জা থেকে ,সাহাবা (রা:) আজমাঈনদের পদাঙ্ক অনুসরন ও অনুকরণ করে এ দাওয়াতের কাজ অতি দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে।
১৩৫২ হিজরিতে তৃতীয় হজ্জ্ব পালনের পর তিনি বুঝতে পারলেন যে গরিব মেওয়াতি কৃষকদের পক্ষে দ্বীন শেখার জন্য সময় বের করা কষ্টকর। ঘরসংসার ছেড়ে মাদ্রাসায় দ্বীন শেখাও অসম্ভব। ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে সামগ্রিক জীবন পাল্টে দেওয়া বা জাহেলি বিশ্বাসকে পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। তাই ক্ষুদ্র দল বা ছোট ছোট জামাত আকারে ইলমি ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোয় গিয়ে সময় কাটানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন এবং ধর্মীয় পরিবেশে তালিম দিতে আরম্ভ করলেন। সেসব ধর্মীয় মজলিসে ওলামা-মাশায়েখদের ওয়াজ-নসিহতের পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনের নিয়মনীতি বাতলে দেওয়া হতো। মানুষ দ্বীনদার পরহেজগার লোকদের জীবনযাপন, কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চালচলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।
একই সময়ে সিডনির ল্যাকেম্বায় আরেকটি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বীনের তাকাজা পূরণ করার জন্য বেশ কিছু জামাত আল্লাহর রাস্তায় মেহনত করার লক্ষে বের হয়। আল্লাহ্পাক সকলের মেহনতকে কবুল ও মনজুর করেন (আমীন)।
আগামী ২,৩,৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে। দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত ‘বিশ্ব ইজতেমাকে’ বলা হয়। সমগ্র বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বিভিন্ন বর্ণের ধার্মিক মুসলমানরা এ ইজতিমায় অংশ নেয় বা নিবে।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *