728 x 90

হৃদয়ের টানে নয়

  সামসুল ইসলাম টুকু: শ্রদ্ধা্, স্নে্হ , ভালবাসা ,মমতা , উদারতা ,ক্ষমা প্রভৃতি চাইলেই পাওয়া যায়না ।কারণ এসব কিছুর সাথে সম্পর্ক রয়েছে অর্থ ক্ষমতা ও স্বার্থের। এসব উপাদান যাদের হাতে উপরের অনুভূতি গুলো তাদেরই দখলে । কথাগুলো কাঠখোট্টা মনে হলেও আসলে নির্ভেজাল সত্য ।সমাজে শ্রদ্ধা কারা পায়? ক্ষমতাবান সমাজপতি যাদের মানুষ শ্রদ্ধা করে।   সমাজ সেবকরা

 

সামসুল ইসলাম টুকু: শ্রদ্ধা্, স্নে্হ , ভালবাসা ,মমতা , উদারতা ,ক্ষমা প্রভৃতি চাইলেই পাওয়া যায়না ।কারণ এসব কিছুর সাথে সম্পর্ক রয়েছে অর্থ ক্ষমতা ও স্বার্থের। এসব উপাদান যাদের হাতে উপরের অনুভূতি গুলো তাদেরই দখলে । কথাগুলো কাঠখোট্টা মনে হলেও আসলে নির্ভেজাল সত্য ।সমাজে শ্রদ্ধা কারা পায়? ক্ষমতাবান সমাজপতি যাদের মানুষ শ্রদ্ধা করে।   সমাজ সেবকরা শ্রদ্ধার পাত্র।বিদ্বান ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা পান । প্রশাসনিক ক্ষমতায় বসে আছেন যারা , তারাও শ্রদ্ধা পান ।কোটিপতিরাও শ্রদ্ধা পান । তবে শ্রদ্ধা বস্তুটি কে কি ভাবে প্রদর্শন করেন । ভয়ে না ভক্তিতে , তোষামোদ করার জন্য না উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ,সম্মান মিশ্রিত না কপটতা মিশ্রিত তা একটু গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করলেই বোঝা যায় । যার উদ্দেশে করা হয় তিনিও বোঝেন ।শ্রদ্ধা ছাড়াও অন্যান্য কোমল অনুভূতি, প্রেম , ভালবাসা ,উদারতা ,ক্ষমা প্রাত্যেকটি ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য । আর বলা যায় এসব অনুভূতি এককভাবে প্রদর্শিত হয়না । হয় উভয় পক্ষের আদান প্রদানের ভিত্তিতেই ।বিনিময় কম বেশী হতে পারে , তবে বিনিময় থাকতেই হবে ।শ্রদ্ধা চাইলে স্নেহ দিতে হবে । ভালবাসা চাইলে ভালবাসতে হবে । উদারতা পেতে চাইলে সহ্যশীল হতে হবে ।ক্ষমা পেতে চাইলে নত হতে হবে । এ ধরনের বিনিময় না থাকলে কোমল অনুভূতি নির্বাসিত হয় । সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে ।একবিংশ শতাব্দীতে এই বিনিময় কমে গেছে । সংঘাত বেড়ে গেছে ।এর পেছনে যে কারণটি কাজ করছে তা হলো সমাজ ব্যাপী ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য ।এ বৈষম্য শুধু সমাজে নয় , পরিবারেও দেখা দিয়েছে । বৈষম্য নতুন কথা নয় ।যুগে যুগে ছিল । আছে , থাকবে ।কিন্তু মাত্রাগত পার্থক্য প্রবল হয়েছে । আগে একান্নবর্তী পরিবার ছিল । পরিবারের প্রধানের দাপট ছিল ।সেই সুবাদে সুযোগ সুবিধা বেশি গ্রহণ করতো । তারপরেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি ছিল দায়িত্ববোধ । তখন অভাব থকলেও চাহিদা ছিল কম । পরস্পরের প্রতি ছিল সহমর্মিতা । তাই একসূত্রে গাঁথা ছিল পারিবারিক জীবন । এখন যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি চাহিদাও বেড়েছে । সেইসাথে বেড়েছে অধিকার সচেতনতা স্বার্থান্ধতা ।ক্রমে ক্রমে পরিবারের বন্ধন আলগা হয়েছে , বিচ্ছিনতা বেড়েছে । সহানুভূতি সহমর্মিতা ,দায়িত্ববোধ নির্বাসিত হয়েছে । এসব পরিবর্তনের জন্য ওই অর্থ সম্পদই দায়ী । বাবা মা ও ছেলেমেয়েদের সম্পর্কটাও আর্থিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল । জন্মদাতার লালন পালন ভালবাসা এবং জন্মদাত্রীর দশমাস দশদিন গর্ভধারণের যন্ত্রণাকে আজ স্বার্থ বলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় । তাদের যে হৃদয়ের টান ও মহিমাকে নিঃস্বার্থ বলে বিবেচিত করা হয়না । অর্থের উপর নির্ভর করে সম্পর্কের উষ্ণতা ওশীতলতা ।গরীব মা-বাবার সন্তান বড় কর্মকর্তা হলে মা-বাবার পরিচয় হয় সার্ভেন্ট অথবা বৃদ্ধাশ্রমে । এছাড়া দাদাদাদী,নানানানী, চাচাচাচী মামামআমী, খালাখালু,ফুফাফুফুর সাথে সম্পর্ক থাকে অর্থের বিচারদণ্ডে । গরীব আত্মীয় সম্মান মর্যাদা কোনোটাই পায়না । আপন ভাই বোনের ক্ষেত্রেও একই মানদণ্ডে বিচার হয় । তাই স্নেহ ভালবাসার মত যতগুলি কোমল অনুভূতি আছে সেগুলোর ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে সমাজ জীবনে ও পারিবারিক জীবনে ।এ সব অনভূতিগুলো অনুভব করার জায়গাটি অর্থবান্ধব হয়ে উঠেছে ।অনুভূতির বিনিময় আবার সবার সাথে সবার হয়না । এখানেও প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে শ্রেণি তথা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি । নিশ্চয়ই ধনীর দুলাল গরিবের দুলালীকে ভালবাসা দেবেনা । যদি দেয় তবে জানতে হবে গরিবের দুলালীটি অপরূপা । তারপরেও সন্দেহ থাকবে সে ভালবাসা নিছক আবেগ না দেহ সম্ভোগের শঠতা । সমানে সমান না হলে উদারতা দেখানো যায়না । যেটা হয়, সেটা উদারতার অবয়বে আসলে অনুকম্পা । যদি অসহায় বা দুর্বলের পক্ষ থেকে সেই উদারতা প্রদর্শন করা হয় সেটা হবে উদারতা রূপী নিরুপায়তা ।যেভাবেই ব্যাখ্যা করা যাকনা কেন ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শ্রেণি ভিত্তিক সমাজে এসব কোমল অনুভূতি ক্ষমতাবানদের একচেটিয়া দখলে । তারাই উদারতা দেখাতে পারে , দানশীল মহানুভব হতে পারে , শ্রদ্ধা সম্মানের পাত্র তারাই হতে পারে ।স্নেহ ভালবাসা লালন পালন সব তারাই করে । রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় আমার তথা গরিবের কতটুকু অধিকার প্রাপ্য এবং দেবার ক্ষমতা কতটুকু তা কালো অক্ষরেই সীমাবদ্ধ । বাস্তবে নয় । এক্ষেত্রে চিরক্ষমতাশীন বা আমলাদের কথাই ধরা যাক । সেখানে ন্যায্য দাবি নিয়ে যদি উপস্থিত হন এবং ঋজু সোজা করে বলেন কাজটি করে দিতে হবে । তাহলেই হয়েছে । আপনি বেয়াদব । ভদ্রতা শেখেননি । আপনার কাজ হবেনা । আপনাকে অবনত মস্তকে গিয়ে কুর্নিশ করতে হবে । আপনার ন্যায্য দাবি জানানোর ফাঁকে ফাঁকে স্যার হুজুর বলতে হবে । অপরপক্ষ থেকে পালটা অনুভূতি প্রকাশ না করলেও । কিন্তু তারপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে আপনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন অব্যাহত থাকবে কি আপনি স্বাধীন দেশের স্বাধীনচেতা নাগরিক হিসেবে ? এ হিসেবটা আমলাদের অজানা থাকার কথা নয় ।তবুও ওইটুকু পেলেই খুশী হন । ওইটুকু পাবার জন্য লোকারন্যেও বলতে সংকোচ বোধ করেন না । তাতে অনুভূতিটুকু শ্রদ্ধার সাথেই জানাক অথবা ভয়ে ঘৃণার এবং শঠতার সাথেই জানাক ।স্যার বলতেই হবে  । সালাম দিতে হবে । যদি অপর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষণের ইচ্ছে না থাকে তবুও । তাই এসব কোমল অনুভূতি প্রকাশের ব্যাপারটি আসলে আনুষ্ঠানিক্তা মাত্র । এতে হৃদয়ের টান নেই ।

সামসুল ইসলাম টুকু

লেখক-সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising