প্রকৌশলী আতিকুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ, কোরআনের মুজেজা বা ‘মিরাকল অব কোরআন’ নিয়ে গবেষণার চেষ্টা করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। আমার ইসলামীক স্টাডিজের থিসিস ছিল ‘মিরাকল অব কোরআন’ এর উপর।
কোরআনের যে মুজেজাটি ইতিপূর্বে সামনে আসেনি তা গত পরশু প্রথম দৃষ্টিগোচর হলো, সুবহানাল্লাহ। আমার বিশ্বাস অনেকেই ঘটনাটি জানেন কিন্তু মুজেজার বিষয়টি তাদের মাথায় আসেনি। কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ইনশাআল্লাহ।
সুরা লাহাব একটি মক্কি সুরা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীন প্রচারের প্রথম দিকে সুরা খানা নাজিল হয়েছিল। কিভাবে নাজিল এবং কখন নাজিল হয়েছিল তা নীচের হাদীসখানা থেকে জেনে নেই।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাত্হা প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন এবং পর্বতে উঠে يَا صَبَاحَاهْ বলে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন। কুরাইশরা তাঁর কাছে জমায়েত হল। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, শত্র“ সৈন্যরা সকালে বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে কি তোমরা আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেবে? তারা সকলেই বলল, হাঁ, আমরা বিশ্বাস করব। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সাবধান করছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তুমি কি এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তোমার ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সূরাহ লাহাব অবতীর্ণ করলেন, ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ এবং উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে, তার গলায় পাকান দড়ি। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৯৭২]
এবার লক্ষ্য করুন। আবু লাহাব ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৭৪-৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করে। তার মৃত্যু হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের ১৫ বছর পরে। দীর্ঘ পনের বছরে প্রায় এক লক্ষ মানুষ হেদায়েত পেলো কিন্তু আবু লাহাব হেদায়েত পেলো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণপ্রিয় চাচা হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীও হেদায়েত পেলো আবু লাহাব হেদায়েত পেলোনা। উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে কাফের কোরাইশদের নেতৃত্বদানকারী খালিদ ইবনে ওয়ালিদ হেদায়েত পেলো আবু লাহাব হেদায়েত পেলোনা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরও এক চাচা আব্বাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু হেদায়েত পেলেন কিন্তু তার আপন চাচা আবু লাহাব কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো।
যদি আবু লাহাব তার জীবন সায়াহ্নে এসে হেদায়েত পেয়ে যেত তাহলে কোরআন মিথ্যা প্রমাণিত হতো (নাউজুবিল্লাহ)। উপরুক্ত ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কোরআন আল্লাহ তা’আলার কিতাব। মানুষ রচিত কোন গ্রন্থ নয়। উল্লেখিত ঘটনা থেকে আমরা আরও একটি বিষয়ের প্রমান পাই তা হলো হেদায়েত মহান আল্লাহর হাতে। তিনি কাউকে গোমরাহী করতে চাইলে সে কক্ষনো হেদায়েত পায়না। তিনি কারো জন্য জাহান্নামের ফয়সালা করে দিলে, সে কখনো হেদায়েত পায়না। কোরআনের ভাষায় (অনুবাদ):
ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ এবং উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে, তার গলায় পাকান দড়ি। (সূরা লাহাব, আয়াত ১-৫)
কোরআনে আবু লাহাবের ন্যায় আরও এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে হলো আবু ওয়ালিদ। সেও হেদায়েত পায়নি। আল্লাহ তা’আলা তার সম্পর্কে বলেন (অনুবাদ):
অচিরেই আমি এ কাফিরকে আগুনের একটি স্তরে প্রবিষ্ট করবো। যা হলো “সাক্বার”। সে এর শাস্তি পোহাবে। (সূরা মুদাসসির, আয়াত ২৬)।
সূরা মুদাস্সির মক্কায় অবতীর্ণ সূরা। নবুওয়তের খুব শুরুর দিকের নাজিলকৃত সুরা।