728 x 90

ভালোবাসার এই প্রহরে: ফারজানা ইয়াসমিন 

  ইদানীং অদ্ভুত আচরণ করে শিহাব। একটু কিছু হলেই চটে যায়। একটা কল এলেই বাঁকা চোখে তাকায়। এমনতো ছিল না। আজ আমার কলিগ নীতু ফোন করেছে। ওর মোবাইলে টাকা নেই। তাই হাসবেন্ডের মোবাইল থেকে করেছে। এর আগেও দিয়েছে। তাই নাম ওর হাসবেন্ডের নাম সালাম ভাই দিয়ে সেইভ করা। শিহাব আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, -কে

 

ইদানীং অদ্ভুত আচরণ করে শিহাব। একটু কিছু হলেই চটে যায়। একটা কল এলেই বাঁকা চোখে তাকায়। এমনতো ছিল না। আজ আমার কলিগ নীতু ফোন করেছে। ওর মোবাইলে টাকা নেই। তাই হাসবেন্ডের মোবাইল থেকে করেছে। এর আগেও দিয়েছে। তাই নাম ওর হাসবেন্ডের নাম সালাম ভাই দিয়ে সেইভ করা। শিহাব আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

-কে কল করেছে?

-আমার কলিগ।

-কেমন সম্পর্ক তার সাথে?

হঠাৎ মনে হলো মজা করি।

-জীবন মরণ সম্পর্ক। মনে করো তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।

-শিহাবের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।

ওকে শান্ত করতে বললাম, রাগ হচ্ছো কেন? বললাম, কলিগ। তারপর তোমার এমন প্রশ্ন করা ঠিক হয়েছে কী? তাই বললাম।

-যেভাবে হেসে হেসে কথা বলছিলে। তাতে তো অনেক কিছুই মনে হয়।

-তার সাথে রাগ করার কোনো কারণ নেই। তাই হেসে কথা বললাম।

ওকে আর কিছুই বললাম না। আসলে বলতে ইচ্ছা করছে না। তার সাথে ছয় বছরের সংসার। এখনো যদি চিন্তে না পারে তাহলে যাই বলি বিশ্বাস করবে না। সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলেই হতো। কথাগুলো খুব বাজে লাগলো।

ইদানীং শিহাবের কথা ও ব্যবহারে কষ্ট লাগে। সেদিন অফিস থেকে পিকনিকের আয়োজন করলো। টাকাও দিয়েছি। হঠাৎ দেখি পিকনিকের আগের দিন রাতে সে অসুস্থ হয়ে গেল। পেটে ব্যাথা। তাকে রেখে যেতে মন চাইলো না। আমার শাশুড়ি মা-ও বললেন, -হেনা যেও না। হঠাৎ শরীর বেশি খারাপ হলে তখন কী করবো আমি?

আমিও গেলাম না। হঠাৎ দেখি বিকাল থেকে সে সুস্থ। কেন যেন মনে হলো ইচ্ছা করে এমন করেছে। অথচ আমি শিহাবকে ছাড়া কারো দিকে তাকাই না পর্যন্ত। ওর চেয়ে সুন্দর কাউকে মনে হয় না আমার। কেউ সুন্দর হলেও সে তো আমার না।আমি আমার মানুষকে নিয়ে সুখী।

শিহাবের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেছে। চা খেতে ইচ্ছা করছে। ভাবলাম আম্মাকেও জিজ্ঞেস করি। যেয়ে দেখি আম্মা নিজে চা বানিয়ে নিয়ে আসছেন। আমার হাতে চা দিয়ে বললেন, সবাই ঘুমিয়েছে?

-জি আম্মা।

-চলো বারান্দায় গিয়ে দু’জন বসি। আজ আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে।

-আপনি কী করে জানলেন আমি চা বানাবো? আমি তো আপনার কাছে জানতে আসছিলাম আপনিও চা খাবেন কিনা।

-সন্ধ্যা থেকে তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে। আর মন অস্থির হলে তুমি চা খাও। তাই নিয়ে এলাম। সবসময় তো তুমিই বানাও। তোমার মন ভালো না। চিনির বদলে ভুলে লবণও দিতে পারো।

এবার আর না হেসে পারলাম না। সত্যি একদিন এমন হয়েছিল। এখনো মনে হলে হাসি আসে। এজন্য আমার মন খারাপ দেখলে আম্মা আমাকে রান্না করতে দেয় না। বলে, থাক তুমি আরাম করো। মাঝে মাঝে আমিও রান্না করি। এক হাতের রান্না সবসময় ভালো লাগে না।

বুঝতে পারি আম্মা ইচ্ছা করে এমন করেন। আমার নিজের মা-ও এতোটা বুঝতো না আমাকে। অসম্ভব ভালো ভাগ্য ভালো আমার। না হলে এমন শাশুড়ি এখন দেখা যায় না। আমার অনেক কলিগ বলে, তাদের সংসারে মনোমালিন্য ও অশান্তির কথা। কিন্তু এদিক থেকে আমার অনেক শান্তি।

আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে তোমার? মন খারাপ? শিহাব কিছু বলেছে?

–আম্মা ইদানীং শিহাব আমাকে সন্দেহ করে। কেউ ফোন করলে অদ্ভুত আচরণ করে। কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার সাথে অফিসের কলিগদের সাধারণ সম্পর্ক। এক সাথে কাজ করতে গেলে কিছু কথা তো বলতেই হয়।

তারপর আম্মাকে সবকিছু খুলে বললাম। আম্মা আমার কথা শুনে বললেন, -জগতটা মেয়ে মানুষের জন্য অনেক কঠিন মা। তোমার শশুর মারা যাওয়ার পর আমার দেবর মানে তোমার চাচা শ্বশুর নিজাম মাঝে মাঝে আসতো আমার খবর নিতে। আমি যখন বিয়ে করে আসি ও তখন মাত্র আট বছরের। আমি গোসল করিয়ে দিয়েছি। মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে তোমার শ্বশুর ঢাকায় গেলে ও তো আমার কাছেই থাকতো। চোখের সামনে বড় হয়েছে। অথচ আমার বড় ছেলে আবিদ তার শাশুড়ি ও বউয়ের কথা শুনে একদিন বলল, -তোমার কাছে চাচা এতো আসে কেন? আব্বা থাকতে তো এতো আসতো না? এও বলেছিল, আমি নাকি তার সাথে তোমার দাদা শশুরের বাড়িতে যাই। বাসে গেলে এলাকার পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে কথা তো বলতেই হয়। এটাও দোষ হলো আমার। বউ বলেছে যতটা কষ্ট পাইনি। তার চেয়ে বেশি কষ্ট আমার নিজের পেটের ছেলে বলাতে লেগেছিল।

আবিদকে সেদিন বলেছিলাম, তোমাদের এতো বড় করলাম কোনদিন আমার বাজে কিছু দেখেছো? কে কী বলল তা নিয়ে নিজের মা’কে সন্দেহ করতে তোমার বিবেকে বাঁধল না? পরে অবশ্য আবিদ ক্ষমা চেয়েছিল। কিন্তু আবিদের বউ আজও মাফ চয়নি। এটা আমার কাছে কষ্ট লেগেছে। এই হলো আমাদের পরিবার আর সমাজ। আসলে আমি এমন বিষয় আগেও দেখেছি। আম্মাকে যখন স্মার্ট ফোন কিনে দেয় শিহাব তখন আম্মার অনেক সুবিধা হয় আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলতে। একা থাকে সারাদিন বোনদের সাথে ভাই ভাবিদের সাথে কথা বলে। খুব ভালো লাগে তার মুখের হাসি। ভিডিও কলে কতকিছু দেখায়। সবাইকে দেখতে পায়। তাদের সময় তো এতকিছু ছিল না। আমাদের ছেলে সিয়ামও দাদীর সাথে ভিডিও কলে সবাইকে দেখে। কথা বলে সবার সাথে। অনেককে তো চিনতোই না- এখন সবাইকে চেনে।

একদিন আমার ছোট দেবর হাসিব এসে বলল, আম্মা তোমার সাথে এতো মানুষের কী কথা? এতো কথা বলার কী দরকার? নানান মানুষের সাথে কথা বলো তুমি। আমি দেখার আগেই অনেকের নাম ব্লক লিস্টে ফেলেছে।

আম্মা যখন আমাকে বলল, আমার মাথা গরম হয়ে গেল। কত বড় সাহস, মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে। আমি হলে সহ্য করতে পারতাম না। সেদিন ভালো মতো বকে দিয়েছিলাম হাসিবকে। আম্মার সাথে এভাবে আর একদিন কথা বললে ওর খবর আছে। আম্মা ছোট বাচ্চা না যে, তাকে বলে দিতে হবে কার সাথে কথা বললেন উনি। মাঝে মাঝে আব্বার পরিচিত বা বন্ধুরা ফোন করে খোঁজ খবর নেয় এটা দোষের কিছু নয়। একটা মানুষের নিজস্ব কিছু থাকতে পারে না? এই বয়সেও আম্মাকে তার নিজের ছেলেদের কাছে এসব কথা শুনতে হয়; ভাবতেই কষ্ট লাগে।

আম্মাকে বললাম, সত্যি বলেছেন আম্মা; আমাদের সমাজে মেয়ে মানুষের আলাদা জীবন থাকে না। আমরা মানুষের সাথে কথা বললেই যেন মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।

আম্মকে আামকে বললেন, যাও ঘুমাও আমি এক সময় শিহাবের সাথে কথা বলবো। আমি অবশ্য আম্মাকে নিষেধ করলাম- দরকার নেই এক কথার থেকে আবার কয় কথা হয়।

তার পরেরদিন আমার মিটিং থাকার জন্য আসতে দেরী হয়েছে বলে অফিসের বস আমাকে আর আমার কলিগ নীতুকে গাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিয়ে যান। বসের বাসায় যাওয়ার রাস্তা এদিক দিয়েই। রাত হয়েছে বলে একা ছাড়লেন না। আর নীতু প্রেগন্যান্ট, তাই এতটুকু দায়িত্ব সহকারে করেছেন। শিহাব আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। নীতুর বাসা আমার বাসার বেশ আগেই। তাই ও নেমে গেছে আগেই। আমাকে একা বসের সাথে দেখে শিহাব কী ভাবলো জানি না, বাসায় আসার সাথে সাথে ঘরে নিয়ে গিয়ে যা বলল, তা শুনে আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। এতো নোংরা কথা আমি কখনো শুনিনি। তার ধারণা বসের সাথে আমার কিছু আছে। আমি মিটিংয়ের কথা বলে ঘুরতে গেছি। এতো রাগ হলো যে, হাতে মোবাইল ছিল ওটাই ছুঁড়ে মারলাম। ছিটকে পড়ে ভেঙে গেল। ঘর থেকে বের হয়ে ছাঁদে গেলাম। দমবন্ধ হয়ে আসছিল।

সবকিছু আম্মা দরজার বাহিরে থেকে শুনছিলেন। আম্মা শিহাবকে বললেন, তুমি যা করলে তা কী ভালো হলো? হেনা কেমন তা তুমি জানো আর বস নামিয়ে দিয়ে গেল। কারণ তার মিটিং ছিল। এতো রাতে একা আসা ঠিক হতো না। তোমার তো বসের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আর বউ চাকরি করে। দশজন মানুষের সাথে ওঠা বসা তার। কথা তো সবার সাথে বলতে হয়। তুমি ব্যবসা করো মাঝে মাঝে মাঝরাতে ফোন আসে। কই হেনা তো তোমাকে কিছু বলে না। তোমাকে তো মেয়ে কাস্টমারও ফোন করে রাতে বউমা কিছু বলে না কারণ সে জানে এটা তোমার কাজ। সে যদি বুঝতে পারে তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়? তুমি পুরুষ বলে তোমার কোনো দোষ নেই? সেদিন ঐ নম্বর থেকে বউমার কলিগ নীতু ফোন করেছিল। ওটা ওর হাসবেন্ডের মোবাইল। মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। ঢাকায় কেউ নেই। মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলে। কোনো সমস্যা হলে কথা বলে। ওরা আগে রাজশাহীতে ছিল। ঢাকায় নতুন তাই কিছু চিনে না। তুমি সোজাসুজি জিজ্ঞেস করতে পারতে। তা না করে উল্টোপাল্টা কথা বলেছো নীতুকে। এভাবে জীবন নষ্ট হয়। সংসার ধ্বংস হয়ে যায়। তোমাদের এতদিনের সংসার। বিশ্বাস এতো কম থাকলে টিকবে না বাবা। তোমাদের একটা ছেলেও আছে। সে কী শিখছে তোমাদের কাছে থেকে? অফিসে গেলে একটা মেয়ের মাথায় তার সংসার আর বাচ্চা ঘুরে। আজেবাজে কথা মনে করার সময় কোথায়? তোমার কী মনে হয়, তোমার বউকে বসিয়ে বসিয়ে টাকা দেয়?

শিহাব তার ভুল বুঝতে পারছে। সত্যিই এমন করা ঠিক হয়নি। আসলে এসব হতো না। অফিসের একজন কলিগ তার বউ নিয়ে যা-তা কথা বলে মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। শিহাব মনে হয় আমাকে খুঁজতে যাচ্ছিল। এমন সময় নীতুর হাসবেন্ড শিহাবের মোবাইলে ফোন করে বলে, -ভাইয়া আমি নীতুর হাসবেন্ড। হেনা আপাকে মোবাইলে পাচ্ছি না। নীতুর শরীর খুব খারাপ। ওর পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। আমি নীতুকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি, আপুকে একটু আসতে বলেন। আমাদের এখানে কেউ নেই। আপু সব জানে। মনে হয়, লেবার পেইন উঠেছে।

শিহাব ফোন নিয়ে দৌড়ে ছাঁদে এসে বলল, তাড়াতাড়ি চলো নীতুর হাসবেন্ড ফোন করেছে। নীতুকে নিয়ে হসপিটালে গেছে; তাড়াতাড়ি চলো। ওদের সাথে তো কেউ নেই, যা লাগে বাসা থেকে নিয়ে নেও।

আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, তোমার সাথে কথা নাই। যা-তা কথা বলেছো। এক বাচ্চার মা আমি। তোমার সংসার করি। সমস্ত কিছু তোমার জন্য করি। অথচ কারো সাথে একটু কথা বললে দোষ হয়ে যায়। বস নামিয়ে দিয়ে গেলে তার সাথে সম্পর্ক হয়ে যায়। এতো নোংরা কথা বলতে পারলে তুমি?

শিহাব কান ধরে বলল, প্লিজ ক্ষমা করে দেও। অনেক ভুল করেছি আর এমন হবে না। এখন তাড়াতাড়ি চলো ওরা তো অপেক্ষা করছে, দেরী করা ঠিক হবে না। নীতুর হাসবেন্ডের কথা শুনে মনে হচ্ছিল খুব চিন্তায় আছে। আমার মনে আছে সিয়াম হওয়ার সময় কতটা অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। এক দিকে ভয় অন্য দিকে চিন্তা। চলো তাড়াতাড়ি। বাসায় এসে অনেক বকে দিও। আম্মা অবশ্য এতক্ষণ অনেক বকাবকি করেছে। তুমি দুই একটা কিল দেওয়ার পারমিশন পেতে পারো।

সত্যি অনেক ইচ্ছা করলো ওকে এই সুযোগে কয়টা কিল দেই। তাই কিল দিতে লাগলাম ওর পিঠে। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিও।

আমরা হসপিটালে সারারাত থাকলাম। নীতুর ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। নীতুর হাসবেন্ড তো খুশিতে আত্মহারা। এদিকে মেয়ে কোলে নিয়ে আনন্দে শিহাবের চোখে পানি চলে এসেছে। কারণ শিহাবের মেয়ে খুব পছন্দ। সারারাত আমি আর শিহাব বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে রাখলাম। সকালে যখন নীতুকে কেবিনে দেওয়া হলো নীতু বারবার শিহাব আর আমাকে ধন্যবাদ দিল। নীতুর হাসবেন্ড বলল, এতোখানি তো আপন মানুষও এখন করে না। আমার আর নীতুর বাবা মা চলে আসবে। আপনারা সারারাত কষ্ট করেছেন এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন।

আমি আর শিহাব ইচ্ছা করে রিকশা দিয়ে সকালে ঘুরতে ঘুরতে বাসায় এলাম। রিকশায় আসার সময় শিহাব আমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল, জানো মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল ইস এটা যদি আমাদের মেয়ে হতো? একটা মেয়ে দরকার তাই না?

আমি ওর পেটে খোঁচা দিয়ে বললাম, তাই নাকি?

রিকশা থেকে নেমে শিহাব একটা কৃষ্ণচূড়া কুড়িয়ে এনে আমার খোঁপায় গুঁজে দিল। সকালে রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। মনে হলো এই শহরে শুধু আমি আর শিহাব জেগে আছি ভালোবাসার এই প্রহরে।

সত্যি অনেকদিন পর মনে হলো দু’জনের মাঝে হারিয়ে গেলাম।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising