সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলাদেশের সদ্য বিতাড়িত পতিত স্বৈরাচারী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিডনির রকডেল এলাকায় একটি ছোট আকৃতির ফাংশন সেন্টারের ছোট হলরুমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশগ্রহণ করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা যাবত ভাষণ প্রদান করেন।
২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন উপস্থিতির সামনে দীর্ঘ সময় যাবত শেখ হাসিনার এই ভাষণ প্রবাসীদের মাঝে কিছুটা হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি এবং কৌতুকের উদ্রেক করেছে। পাশাপাশি অনেক রাজনীতিসচেতন মানুষরা মনে করছেন, নিজেকে এই অপমানকর পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া আসলে তার নিজের অপশাসনেরই পরিণতি এবং প্রতীক।
শেখ হাসিনার অনলাইনে অংশগ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় বাংলাদেশের কাছে রকডেলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান ও তাতে শেখ হাসিনার বক্তৃতা একটি হাসির ঘটনা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নানা ছলে বলে কৌশলে, অত্যাচার নির্যাতন ও নির্বাচন জালিয়াতির মাধ্যমে হলেও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদে দীর্ঘদিন থাকা একজন ব্যক্তি এবং বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মতো দীর্ঘ সময়ের কার্যক্রম সম্পন্ন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান যখন নিজের গুরুত্ব এবং অবস্থান অনুধাবন করতে পারেন না তখনই কেবলমাত্র দুই ডজন মানুষের সামনে দুই ঘণ্টা বক্তৃতা দিতে পারেন, এমনটাই মনে করছেন বেশিরভাগ মানুষ।
নৈতিক দৃঢ়তা থাকলে যেখানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে না পালিয়ে বরং জনগণের সামনে দাঁড়াতো, এখনও বাংলাদেশে না ফিরে তিনি তার পৃষ্ঠপোষক দেশ ইন্ডিয়ায় বসে পর্দার আড়াল থেকে মুখ না দেখিয়ে ঘসেটি বেগম সুলভ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন, ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের মাঝে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রচুর প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে, এই সমস্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গুটিকয় অগুরুত্বপূর্ণ মানুষের একটি গ্রুপ, যা এমন কি অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ আওয়ামী লীগের গ্রুপগুলোরও একটি নয়, এদের সাথে তার দীর্ঘক্ষণ আলোচনা বরং তার জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং অবস্থান নিয়েও নতুন অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের জবরদখলমূলক শাসনকাল বাংলাদেশে প্রচুর গুম,বিচারবহির্ভূত হত্যা ও খুনের ঘটনা, রাহাজানি ও সন্ত্রাস, লাগামছাড়া দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের মতো ঘটনার জন্ম দিয়েছিলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, একটি স্বাধীন এবং প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে না।
শেখ হাসিনা দুই ঘণ্টা যাবত অনলাইনে বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং তার সম্মুখে সিডনিতে খুবই অল্প সংখ্যক হাতেগোণা দর্শকের উপস্থিতি, এই পরিস্থিতি তার নেতৃত্বের অবস্থা এবং তার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। বিশেষত তার একক শাসনকালে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্বের অভাব এবং নাগরিকদের অধিকারের প্রতি উদাসীনতা, এই ঘটনার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে।
সবমিলে এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বর্তমানে, যেখানে তিনি তার শাসনের ফলাফল হিসেবে তার নিজস্ব নেতৃত্বের জন্য এমন নিম্নমানের সমর্থন পাচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে তার জন্য ও তার দলের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এও জানাচ্ছেন যে, শেখ হাসিনা এবং তার শাসনব্যবস্থা যেন “লজ্জা” শব্দের সাথে পরিচিত নয়। দুর্নীতি, মুক্ত মত প্রকাশের দমন, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শ্বাসরোধ করার মতো আচরণের অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে এই ঘটনাটি তার কাছে তেমন কোন মানসিক দাগ ফেলবে না। নিজেদের জন্য অবমাননাকর এই পরিস্থিতি বুঝার মানসিক সক্ষমতাও সম্ভবত তাদের নেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার রকডেল বক্তৃতা রাজনৈতিক দিক থেকে যে হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের জন্য একটি ইতিবাচক চিত্র নয়। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও রাজনীতি চর্চা প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারী ও অপরাধীদেরকে যথাযথ শাস্তি দিয়ে এবং নিজেদের এই কলঙ্কজনক ইতিহাসের জন্য অনুতপ্ত হয়ে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যদি নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নেয় এবং সম্ভবপর সকল সংশোধনমূলক ব্যবস্থার গ্রহণ করে, সম্ভবত তাই হবে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক। যত দিন যাচ্ছে ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার মতো খুনী ও দুর্নীতিবাজের কোন স্থান হবে না। তাকে হয়তো এরকম হাতে গোনা কয়েক ডজন মানুষকে নিয়ে অন্ধকার হলরুমে মৃতপ্রায় বৈঠক করেই অতীতের দুর্বিনীতি ক্ষমতাচারের স্মৃতিচারণ করে বাকি দিনগুলো কাটাতে হবে।