আল্লাহর সমীপে ক্ষমা প্রার্থণা

হাফেজ মাওলানা ডা. ইমাম হোসাইন ইকবাল : ‎‎মহান আল্লাহর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা‎‎য় মুমিনগণের অন্তরে সদাসক্রিয় অবস্থায় বিরাজমান হয় এবং মাগফিরাত কামনা বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মুমিনগণ অন্তরে অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করে। দেহ-মনের যাবতীয় যাতনা নিবারনে একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ও দোয়ার কার্যকারিতা অপরিসীম। দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ, শান্তি এবং সফলতায় ক্ষমার বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না। তাই মানুষের জীবন পরিচালনার  সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ক্ষমা প্রার্থনার যে অনন্য বর্ণনা করেছেন তার কিছু এখানে পেশ করলাম আমরা যেন সতর্ক ও সচেতন হতে সহায়ক হয়।

এক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতের তাফসির গুলো পড়ে নিলে আরো বুঝতে সুবিধা হবে। যে বিষয় আমি কম বুঝি যাঁরা ভালো বুঝেন ( আলেম) তাদের একজন বা একাধিক জনের কাছে জেনে নিতে চেষ্টা করবো। দুনিয়ায় সফলতা অর্জনের জন্য আমরা কতো চেষ্টা সাধনা করি, কিন্তু পরকাল যে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই সেই অনন্ত জীবনের সফলতাই মূলত আসল বা মহা সফলতা, আর পৃথিবীতে জীবিতাবস্থায়ই এই অসীম সফলতার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ পরকাল হতে পৃথিবীতে ফিরে আসার আমাদের কারোরই কোনো সুযোগ নেই। তাই এখনই সময় নিজেকে সংশোধন ও পরিমার্জনের,আর তা কুরআন -সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনায়ই একমাত্র সম্ভব, বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানে তাকওয়াপূর্ণ জীবন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করুন। রহমাত,মাগফিরাত ও নাজাতের পূর্ণতা অর্জনে যেন আমরা ধন্য হতে পারি এই কামনা করি। একে অপরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়ের অনুশীলন,  সংশোধন ও পরিমার্জনের পথে সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করি। নিম্নে কুরআন – হাদীসের বক্তব্য তুলে ধরা হলো :-

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের মহান রব দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে এসে বলতে থাকেনঃ ওহে কে আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো, কে আছো আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিবো, কে আছো আমার নিকট  ক্ষমা   প্রার্থনা  করবে, আমি তাকে  ক্ষমা  করে দিবো।  (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৩৩)

‎আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর প্রতি রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমিই রাজাধিরাজ। আমার নিকট  প্রার্থনা কারী কে আছে, আমি তার  প্রার্থনা  কবুল করব। আমার নিকট আবেদনকারী কে আছে, আমি তার আবেদন পূর্ণ করব। কবুল করব। আমার কাছে  ক্ষমা   প্রার্থনা কারী কে আছে, আমি তাকে  ক্ষমা  করব। সকাল আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের এভাবে আহবান করতে থাকেন। (সহীহ্ ইবনু মাজাহ-১৩৬৬)

উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা  ক্ষমা   প্রার্থনা  করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দু’আ করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২২১)

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেনঃ “(হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট  ক্ষমা   প্রার্থনা  করছি”।(সহীহ ইবনু মজাহ-৩০০)

কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহ:) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন ‘হায় যন্ত্রণায় আমার মাথা গেল’। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য  ক্ষমা   প্রার্থনা  করব, তোমার জন্য দু’আ করব। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হায় আফসোস, আল্লাহর শপথ। আমার ধারণা আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর তা হলে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য স্ত্রীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পারবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং আমি আমার মাথা গেল বলার অধিক যোগ্য। আমি তো ইচ্ছে করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলামঃ আবূ বকর (রাঃ) ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাব এবং অসীয়ত করে যাব, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্খাকারীদের কোন আকাঙ্খা করার অবকাশ না থাকে। তারপর ভাবলাম। আল্লাহ (আবূ বাক্‌র ছাড়া অন্যের খলীফা হওয়া) তা অপছন্দ করবেন, মু’মিনগণ তা বর্জন করবেন। কিংবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা প্রতিহত করবেন এবং মু’মিনগণ তা অপছন্দ করবেন।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৬৬)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ জাহল বলেছিল, “হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে  মর্মন্তুদ শাস্তি দাও।” তখনই অবতীর্ণ হল      “আর আল্লাহ্ তো এরূপ নন যে, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন অথচ আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন এবং আল্লাহ্ এমনও নন যে, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন অথচ তারা  ক্ষমা   প্রার্থনা  করবে। আর তাদের এমন কী আছে যে জন্য আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দেবেন না, অথচ তারা মাসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করে? আর তারা সে মাসজিদের তত্ত্বাবধায়কও নয়। তার তত্ত্বাবধায়ক তো মুত্তাকীরা ব্যতীত আর কেউ নয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না” (সূরাহ আনফাল ৮/৩৩-৩৪)।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৬৪৮

ইব্‌নু মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, যখন আবূ তালিবের মুমূর্ষ অবস্থা তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট গেলেন। আবূ জাহলও তার নিকট উপবিষ্ট ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, (আরবী) কলেমাটি একবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবূ জাহাল ও ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবূ তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি আপনার জন্য  ক্ষমা  চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়। এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হলঃ নবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা  ক্ষমা   প্রার্থনা  করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী –  (আত-তাওবাহ ১১৩)। আরো নাযিল হলঃ আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না- (আল-কাসাস ৫৬)। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮৮৪)

‎আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মায়ের ক্ববরের নিকট এসে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথীরাও কাঁদলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আমার মহান প্রভুর নিকট আমার মায়ের জন্য  ক্ষমা   প্রার্থনা র অনুমতি চেয়েছি; কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। অতঃপর ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আমাকে তার অনুমতি দেয়া হয়। সুতরাং তোমরা ক্ববর যিয়ারত করো। কারণ তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২৩৪)

কাইস ইবনু কাসীর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাদীনা হতে দামিশকে (অবস্থানরত) আবু দারদা (রাঃ)-এর নিকট এলো। তিনি প্রশ্ন করলেন, ভাই! তুমি কি প্রয়োজনে এসেছো? সে বলল, একটি হাদীসের জন্য এসেছি। আমি জানতে পারলাম যে, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সেই হাদীস বর্ণনা করছেন। তিনি আবারো প্রশ্ন করলেন, তুমি অন্য কোন প্রয়োজনে আসনি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কোন ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসনি? সে বলল, না; সে আরো বলল, আমি শুধুমাত্র সেই হাদীসটির খোঁজেই এসেছি। এবার তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ‘ইল্‌ম লাভের উদ্দেশ্যে যে লোক পথ চলে আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাকে জান্নাতের পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইল্‌ম অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল প্রাণী (আল্লাহ তা‘আলার নিকট) আলিমদের জন্য  ক্ষমা   প্রার্থনা  করে, এমনকি পানির জগতের মাছসমূহও। সমস্ত নক্ষত্ররাজির উপর পূর্ণিমার চাঁদের যে প্রাধান্য, ঠিক তেমনি (মূর্খ) ‘আবিদগণের উপর আলিমদের মর্যাদা বিদ্যমান। অবশ্যই আলিমগণ নাবীদের ওয়ারিস। আর নাবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি, বরং তাঁরা রেখে গেছেন মীরাস হিসেবে ‘ইল্‌ম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইল্‌ম লাভ করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।(সহীহ ইবনু মা-জাহ :২২৩)

তারপর তোমরা সে স্থান থেকে ফিরে এসো, যেখান থেকে অন্য (হজ্জ পালনকারী) ব্যক্তিরা ফিরে আসে, (নিজেদের ভুল ত্রান্তির জন্যে) আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (গুনাহ খাতা) মাফ করে দেন, তিনি বড়োই দয়ালু।(আল-বাক্বারা,আয়াত:১৯৯)

যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি ; সুতরাং তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব হতে রক্ষা কর ;

তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, ইবাদতগোযার, (আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে) অর্থ ব্যয়কারী এবং সাহরীর সময় ক্ষমা প্রার্থনাকারী।(আলে ইমরান,আয়াত :১৬-১৭)

এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনওভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আল্লাহ ছাড়া আর কেইবা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না।(আলে ইমরান-১৩৫)

আমি প্রত্যেক রাসূলকে কেবল এ লক্ষ্যেই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর হুকুমে তাঁর আনুগত্য করা হবে। তারা যখন তাদের নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল, তখন যদি তারা তোমার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও তাদের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করত, তবে তারা আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পেত।(আন নিসা-৬৪)

তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বড়ো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আন্-নিসা:১০৬)

যে ব্যক্তি গুনাহের কাজ করে অথবা (গুনাহ করে) নিজের ওপর অবিচার করে, অতপর (এ জন্যে যখন) সে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, (তখন) সে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাকে পরম ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু হিসেবে পাবে।(আন্-নিসা:১১০)

তারপরও কি তারা ক্ষমার জন্য আল্লাহর দিকে রুজু করবে না এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আল মায়িদাহ-৭৪)

অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (সূরা আনফাল,আয়াত:৩৩)

তুমি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর বা তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা; তুমি সত্তর বার তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ্ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা এইজন্যে যে, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে। আল্লাহ্ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা,আয়াত :৮০)

আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মু’মিনদের জন্যে সংগত নয় যখন তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী। (সূরা তাওবা,আয়াত :১১৩)

ইব্রাহীম তার পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে ; তারপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহ্ র শত্রু তখন ইব্রাহীম তার সম্পর্ক ছিন্ন করল। ইব্রাহীম তো কোমল হৃদয় ও সহনশীল। (সূরা তাওবা,আয়াত :১১৪)

আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদ,আয়াত:০৩)

হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, এরপর তাঁর দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের জন্যে প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ (সূরা হুদ,আয়াত :৫২)

সামুদ (জাতির) কাছে (নবী) ছি লো তাদেরই (এক) ভাই সালেহ। সে (তাদের) বললো, হে (আমার) জাতি, তোমরা সবাই (একান্তভাবে) আল্লাহর এবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই, তিনি তোমাদের (এ) যমীন থেকেই পয়দা করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদের বসবাস করিয়েছেন, অতঃপর (কৃতজ্ঞতাস্বরূপ) তোমরা তাঁর কাছে গুনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে, অতঃপর (তাওবা করে) তাঁর দিকেই ফিরে এসো, অবশ্যই আমার মালিক (প্রত্যেকের) একান্ত নিকটবর্তী এবং (প্রত্যেক ব্যক্তির) ডাকের তিনি জবাব দেন।  (সূরা হুদ,আয়াত:৬১)

তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর; আমার প্রতিপালক তো পরম দয়ালু, প্রেমময়।’ (সূরা হুদ,আয়াত:৯০)

হে ইউসুফ, তুমি (এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা) ছেড়ে দাও এবং (হে নারী,) তুমি তোমার অপরাধের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো, কেননা তুমিই হচ্ছো (আসল) অপরাধী। (সূরা ইউসুফ,আয়াত:২৯)

তারা বললো, হে আমাদের পিতা (আমরা অপরাধ করেছি), তুমি (আল্লাহর কাছে) আমাদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো, সত্যিই আমরা বড় গুনাহগার!

সে বললো, অচিরেই আমি তোমাদের (গুনাহ মার্জনার) জন্যে আমার মালিকের কাছে দোয়া করবো, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।  (সূরা ইউসুফ,আয়াত:৯৭,৯৮)

হেদায়াত যখন মানুষের সামনে এসে গেলো তখন ঈমান আনা ও (গুনাহের জন্যে) তাদের মালিকের কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে তাদের কোন জিনিস বিরত রাখছে, তারা (সম্ভবত) পূর্ববর্তী মানুষদের অবস্থা তাদের কাছে এসে পৌঁছানোর কিংবা (আমার) আযাব তাদের সামনে এসে হাযির হবার অপেক্ষা করছে। (আল-কাহাফ:৫৫)

ইব্রাহীম বলল, ‘তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব, নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা মারইয়াম,আয়াত:৪৭)

মু’মিন তো তারাই যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলে ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তারা অনুমতি ব্যতীত সরে পড়ে না; যারা তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাহিরে যাবার জন্যে তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিও এবং তাদের জন্যে আল্লাহ্ র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আননূর, আয়াত:৬২)

সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে

চাইছো ? কেন তোমরা আল্লাহ্ র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছো না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার ?’ (সূরা নমল,আয়াত:৪৬)

(বিবাদের বিবরণ শুনে) সে বললো, এ ব্যক্তি তোমার দুটি তার দুম্বাগুলোর সাথে যুক্ত করার দাবী করে তােমার ওপর যুলুম করেছে; (আসলে) যৌথ (বিষয় আশয়ের) অংশীদাররা অনেকেই একে অন্যের ওপর (এভাবে) যুলুম করে, (যুলুম) করে না কেবল সে সকল লোকেরা, যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, (যদিও) এদের সংখ্যা নিতান্ত কম; দাউদ বুঝতে পারলো, (তাকে পরিশুদ্ধ করার জন্যে এ কাহিনী দ্বারা এতোক্ষণ ধরে) আমি তাকে পরীক্ষা করছিলাম, (মুল ঘটনা বুঝতে পেরে) অতঃপর সে তার মালিকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো এবং (সে) পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়লা এবং সে (আমার দিকে) ফিরে এলো।(সূরা সোয়াদ,আয়াত:২৪)

যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা মুমিন,আয়াত:০৭)

(হে নবী,) তুমি বলো, আমি তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু আমার ওপর (এ মর্মে) ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব (হে মানুষ), তোমরা তাঁর এবাদাতের দিকেই সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আর দুর্ভোগ্য তো মাশরেকদের জন্যে নির্ধারিত হয়েই আছে, (হা-মীম-আস-সাজদাহ(ফুসসিলাত),আয়াত:৬)

(আল্লাহ তায়ালার ভয়ে) আসমানসমুহ তাদের উপরিভাগ থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিলাে, (এ সময়) ফেরেশতারা তাদের মহান মালিকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা করতে থাকে, তারা দুনিয়াবাসীদের জন্যেও (তখন) আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করে; তোমরা জেনে রেখা, আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আশ-শূরা,আয়াত:৫)

সুতরাং জেনে রাখ, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্যে। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯)

যে সকল মরুবাসী পশ্চাতে রয়ে গেছে তারা তোমাকে বলবে, ‘আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে, অতএব আমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ এরা মুখে তা বলে যা এদের অন্তরে নেই। এদেরকে বল, ‘আল্লাহ্ তোমাদের কারও কোন ক্ষতি কিংবা মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করলে কে তাঁকে নিবৃত্ত করতে পারে ? বস্তুত তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ্ সম্যক অবহিত। (সূরা ফাতহ্,আয়াত:১১)

তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহ্ র পরিবর্তে যার ‘ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্যে ; যদি না তোমরা এক আল্লাহ্তে ঈমান আন।’ তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইব্রাহীমের উক্তি : ‘আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব; এবং তোমার ব্যাপারে আল্লাহ্ র নিকট আমি কোন অধিকার রাখি না।’ ইব্রাহীম ও তার অনুসারিগণ বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা তোমারই ওপর নির্ভর করেছি, তোমারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট। (সূরা মুমতাহিনাহ,আয়াত:০৪)

হে নবী! মু’মিন নারীগণ যখন তোমার নিকট এসে বায়‘আত করে এই মর্মে যে, তারা আল্লাহ্ র সঙ্গে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তান হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাইবে না এবং সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করবে না তখন তাদের বায়‘আত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্যে আল্লাহ্ র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  (সূরা মুমতাহিনাহ,আয়াত:১২)

যখন এদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস, আল্লাহ্ র রাসূল তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন,’ তখন এরা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি এদেরকে দেখতে পাও, এরা দম্ভভরে ফিরে যায়।

তুমি এদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর, উভয়ই এদের জন্যে সমান। আল্লাহ্ এদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মুনাফিকুন,আয়াত:৫-৬)

পরন্তু (বার বার) আমি তাদের বলেছি, (অহমিকা বাদ দিয়ে) তােমরা তােমাদের মালিকের দুয়ারে নিজেদের অপরাধের জন্যে) ক্ষমা প্রার্থনা করাে; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, (সূরা নূহ:১০)

(হে নবী,) তোমার মালিক (একথা) জানেন, তুমি এবং তোমার সাথে তোমার সাথীদের এক দল (এবাদতের জন্যে কখনো) রাতের দুই তৃতীয়াংশ, (কখনো) অর্ধেক অংশ, আবার (কখনো) এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে থাকো; (মূলত) রাত দিনের এ হিসাব তো আল্লাহ তা’আলাই ঠিক করে রাখেন; তিনি (এও) জানেন, তোমরা এর সঠিক হিসাব করতে সক্ষম হবে না, তাই আল্লাহ তা’আলা (এ ব্যাপারে) তােমাদের ওপর ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন, অতএব (এখন থেকে) কোরআনের যে পরিমাণ অংশ তেলাওয়াত করা তোমাদের জন্যে সহজ, ততোটুই তোমরা তেলাওয়াত করো; আল্লাহ তা’আলা তােমাদের অবস্থা জানেন, তোমাদের ভেতর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, আবার পরবর্তী কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) সন্ধানের উদ্দেশে সফরে বের হতে পারে, আবার একদল লোকে আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিয়োজিত হবে, তাই (এ পরিপ্রেক্ষিতে) তা থেকে যেটুকু অংশ পড়া তোমাদের জন্যে সহজ সেটুকুই তোমরা পড়ো; তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো, (মাল সম্পদের) যাকাত আদায় করো এবং (দান করার মাধ্যমে) আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো; (মনে রাখবে,) যা কিছু ভালো উত্তম কাজ তোমরা আগেভাগেই নিজেদের জন্যে আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে রাখবে, তাই তোমরা আল্লাহর কাছে (সংরক্ষিত দেখতে) পাবে, পুরস্কার ও এর বর্ধিত পরিমাণ হিসেবে তা হবে অতি উত্তম, তারপর (নিজেদের গুনাহ খাতার জন্যে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা অতীব দয়ালু ও অধিক ক্ষমাশীল।(আল-মুজ্জাম্মিল:২০)

তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো তওবা কবুলকারী।(সূরা নাসর,আয়াত :০৩)

‎ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি : ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেলে তার জানাযা আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আবেদন করা হয়। তিনি সেখানে যেতে শুরু করলেন। তিনি জানাযার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে আমি ঘুরে গিয়ে তাঁর বুক বরাবর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলার দুশমন ইবনু উবাইর জানাযা কি আপনি আদায় করবেন, যে অমুক দিন এই কথা বলেছে, অমুক দিন এই কথা বলেছে? এভাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে ‘উমার (রাঃ) বলতে লাগলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  মুচকি হাসি দিতে থাকলেন। এমনকি আমি যখন তাঁকে অনেক কিছু বললাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ হে ‘উমার! আমার সামনে হতে সরে যাও। আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। কাজেই আমি (জানাযা আদায়ের) এখতিয়ার গ্রহণ করেছি। আমাকে বলা হয়েছে (আয়াতের অর্থ) :  “তুমি এদের জন্য  ক্ষমা   প্রার্থনা  কর বা না কর, এমনকি তুমি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য  ক্ষমা   প্রার্থনা  কর, তবুও আল্লাহ তা’আলা তাদের কখনো  ক্ষমা  করবেন না”-(সূরা আত্‌-তাওবাহ্ ৮০)। আমি যদি জানতাম তাদের জন্য সত্তর  বারের বেশি  ক্ষমা   প্রার্থনা  করলে আল্লাহ তা’আলা তাদের  ক্ষমা  করে দিবেন, তাহলে আমি তাই করতাম। ‘উমার (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  তার জানাযা আদায় করলেন এবং তার জানাযার সাথে গেলেন। তিনি তার ক্ববরের সামনে দাঁড়ান এবং সকল কাজ শেষ করেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে আমার দুঃসাহসিকতায় আশ্চর্যবোধ হল। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ! কিছুক্ষণ পরেই এ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ) : “তাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তুমি কখনো তাদের জানাযা আদায় করবে না এবং তার ক্ববরের পাশে কখনো দাঁড়াবে না। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী অবস্থায় এদের মৃত্যু হয়েছে’ (সূরা আত-তাওবাহ্‌ ৮৪)। ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর কোন মুনাফিক্বের জানাযা আদায় করেননি এবং এদের ক্ববরের পাশেও দাঁড়াননি।

(সহীহ : আহকা-মুল জানা-য়িয (৯৩, ৯৫)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *