আতিক শাহরিয়ার রাফি: জিয়াউর রহমানের পরে আবারও এক ব্যক্তি বাংলার মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন – তিনি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তাঁর নেতৃত্বে এবং মানবিক চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ একটি আশাব্যঞ্জক রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জনগণ মনে করছে, ড. ইউনুস একটি বাস্তবিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠছেন।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হচ্ছে, যার মূল পরিকল্পনাই হলো একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই সরকার সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলেও, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ মনে করছেন এ সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য।
ড. ইউনুস তার জীবনের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যেমন দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বার খুলে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি বর্তমানে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কারে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার রমজানের মাসে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে – ড. ইউনুসের প্রশংসা করতে গিয়ে যেন অকারণে অন্য কাউকে দোষারোপ না করি। বর্তমান সরকার একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন পরিচালনার চেষ্টা করছে – এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, তাই তাদের কাছে নির্বাচন দাবি করা কোনো বিরোধিতা নয় বরং গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
বিএনপি ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোও এই সরকারকে সহযোগিতা করছে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে নিয়ে যেতে। অথচ কিছু মিডিয়া তাদের TRP বাড়ানোর লোভে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে মিথ্যা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি ও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্পর্ক বর্তমানে যথেষ্ট ভালো এবং গঠনমূলক।
গত ১৬ বছর ধরে বিএনপি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছে, যখন অনেকেই সুবিধাবাদী ছিল। এখন সেই সুবিধাবাদীরাই বিএনপির সমালোচনা করছে – যুক্তি দেখাচ্ছে, “বিএনপি পারেনি, আমরা ২ সপ্তাহেই পারছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনারা আগে মাঠে নামলেন না কেন? সেই সময়ে তো বিএনপি একা ছিল। আপনাদের উচিত ছিল আরও আগেই আন্দোলনে যোগ দেওয়া। তবে, শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরে সবাই একসাথে রাজপথে নামলো যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না, এই পরিবর্তনের বীজ অনেক আগেই বপন করেছিল বিএনপি। তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলাফল আজ সবাই উপভোগ করছে।
এখন সবার দায়িত্ব দেশকে একসাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। একতা বজায় রাখা উচিত, যেন কেউ — বিশেষ করে আওয়ামী লীগ — আবার কোনো ধরণের অপরাজনীতি করতে না পারে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি নিরপেক্ষ, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জনগণ যাকে ভালো মনে করবে, তাকেই তারা নির্বাচিত করবে – সেটা যে কোনো দল থেকেই হোক না কেন।
তবে, একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, জাতির সংকটকালে ড. ইউনুস যেভাবে এগিয়ে এসেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা সত্যিই অসাধারণ। আমরা চাই ভবিষ্যতে ড. ইউনুস রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন এবং দেশের গঠনমূলক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যান।
বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখে – একটি সুন্দর, সমন্বিত ও গণতান্ত্রিক আগামীর।