আশরাফ নু’আইম : বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতি শুধু দুইটি রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি একটি গভীর আদর্শিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত সংঘাত। একদিকে আছে একটি মুসলিম রাষ্ট্র—ইরান, যারা বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলনকে নীতিগত ও কার্যকর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রয়েছে ইসরায়েল—যারা মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় ভূমিতে বছরের পর বছর ধরে দখল, হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক রাষ্ট্রই ইসরায়েলের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়েছে, কেউ কেউ নিরব থেকেছে, আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে ইরানের বিরোধিতা করেছে। তারা যুক্তি দেয়—”রাজনৈতিক স্বার্থ”, “সাম্প্রদায়িক পার্থক্য”, বা “আঞ্চলিক নিরাপত্তা”র কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অবস্থানগুলো কুরআনের নির্দেশনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো না। তারা তোমাদের ধ্বংসে কসুর করে না। তারা চায়, তোমরা দুঃখ-কষ্টে পড়ো।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১৮)
এই আয়াতে মুসলিমদেরকে সতর্ক করা হয়েছে এমন কাউকে মিত্র বা নিকটতম সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করতে, যারা তাদের মঙ্গল চায় না এবং অন্তরে শত্রুতা পোষণ করে। বর্তমান বাস্তবতায় ইসরায়েল ও তার মিত্রদের সঙ্গে যেসব মুসলিম রাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতা, গোয়েন্দা বিনিময় এবং কৌশলগত মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলছে, তাদের আচরণ এই আয়াতের পরিপন্থী কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা জরুরি।
ইরানের রাজনৈতিক অবস্থান ও মতাদর্শ নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে ইরানই একমাত্র রাষ্ট্র, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাস্তব ও কৌশলগত প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে। তারা গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নীতিগতভাবে সংযুক্ত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। অথচ এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে অনেক মুসলিম দেশ তাদের বিরোধিতা করছে, এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।
এই লেখায় কোনো পক্ষাবলম্বন নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল মূল্যায়ন। এতে কুরআনের নির্দেশনার আলোকে আমি বিশ্লেষণ করবো: ইনশাআল্লাহ।
কে মিত্র, কে শত্রু—এই সংজ্ঞা ইসলামে কীভাবে নির্ধারিত
জালিমকে সাহায্য না করার বিধান কী
মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান অবস্থান এই নীতির সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ
ইরানের ভূমিকা—সমর্থনযোগ্য না সমালোচনাযোগ্য, যুক্তিসহকারে
মুসলিম ঐক্য ও প্রতিরোধ আন্দোলনের আদর্শিক ভিত্তি
এই আলোচনা কোনো আবেগতাড়িত মত প্রকাশ নয়; বরং কুরআন, হাদীস, ইতিহাস এবং বাস্তবতার আলোকে বর্তমান মুসলিম বিশ্বের ভূরাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে একটি পরিশীলিত ও যুক্তিনির্ভর পর্যালোচনা।
১: কুরআনের নির্দেশনা – বন্ধু ও শত্রু চেনার মৌলনীতি
১.১ ইসলাম কেবল বিশ্বাসের ধর্ম নয়, সম্পর্কবিধির ধর্মও
ইসলাম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্কবিন্যাসের একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি প্রণয়ন করেছে। এতে কেবল ব্যক্তি মুসলমান কিভাবে নামাজ পড়বে বা রোজা রাখবে তা নয়, বরং কাকে বন্ধু বানাতে পারবে, কার সঙ্গে মিত্রতা করা যাবে, কার প্রতি আনুগত্য দেখানো যাবে—এসব বিষয়েও নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক জোট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা চুক্তিগুলো কোনো নিরপেক্ষ কর্ম নয়। বরং মুসলিম জাতির স্বার্থ, মূল্যবোধ ও ঈমানের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর বিশ্লেষণ অপরিহার্য। এ বিষয়েই পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে:
“হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু (بِطَانَةً) হিসেবে গ্রহণ কোরো না। তারা তোমাদের ধ্বংসে কসুর করে না। তারা চায় তোমরা দুঃখ-কষ্টে পড়ো। তাদের মুখ থেকে শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছে, আর তাদের অন্তরে যা লুকানো রয়েছে তা আরও গুরুতর।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১৮)
এই আয়াতটি একটি মৌলিক রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে—বিশ্বাসঘাতক, ইসলামবিরোধী বা মুসলিমদের ক্ষতিসাধনে আগ্রহী শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মুসলমানদের জন্য নৈতিকভাবে বৈধ নয়।
১.২ “বিতানাহ” শব্দের তাৎপর্য এবং রাজনৈতিক প্রয়োগ
আয়াতে ব্যবহৃত “بِطَانَةً” শব্দের শাব্দিক অর্থ—অন্তরের খুব নিকটে স্থান পাওয়া ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। অর্থাৎ এমন কেউ যার সঙ্গে মুসলমানরা কৌশল, পরামর্শ, বা গোপন সিদ্ধান্তে অংশ নেয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি রাষ্ট্রীয় মিত্রতা, যৌথ সামরিক মহড়া, নিরাপত্তা চুক্তি, বা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আজকের মুসলিম বিশ্বে যখন কোনো রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ ড্রোন প্রকল্প, সামরিক চুক্তি বা গোয়েন্দা বিনিময় করে, তখন তা কেবল কূটনৈতিক পদক্ষেপ নয়—বরং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী এক গুরুতর লঙ্ঘন। তারা ‘বিতানাহ’—অর্থাৎ অন্তরঙ্গ বন্ধু—হিসেবে ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতিসাধনকারী শক্তিকে গ্রহণ করছে।
১.৩ কুরআন বলছে: তারা চায় তোমরা দুর্বল হও
একই আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেন:
“…তাদের মুখ থেকে শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছে, আর তাদের অন্তরে যা লুকানো রয়েছে তা আরও গুরুতর।”
এটি একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ। পশ্চিমা ও ইসরায়েলি শক্তিগুলো মুসলিমদের সামনে বন্ধুত্বের মুখোশ পরে, কূটনৈতিক সৌজন্য দেখায়—কিন্তু বাস্তবে তারা মুসলিমদের আর্থিক, সামরিক, ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল রাখতে চায়।
যেসব মুসলিম রাষ্ট্র এই মুখোশ দেখে মুগ্ধ হয় এবং বিশ্বাস করে তারা ‘মিত্র’, তারা আসলে এই আয়াতের সত্যতা অস্বীকার করে বসে।
১.৪ দ্বিতীয় আয়াত: দ্বিমুখিতা ও প্রতারণার ইঙ্গিত
“তোমরা তাদের ভালোবাসো, অথচ তারা তোমাদের ভালোবাসে না।… যখন তারা একান্তে যায়, তখন তোমাদের ওপর রাগে দাঁত কামড়ে ধরে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১৯)
এই আয়াত সরাসরি সেই নীতির সমালোচনা করে, যেটি ‘নিরপেক্ষতা’ বা ‘কৌশলগত সম্পর্ক’-এর নামে ঈমানবিহীনদের ওপর নির্ভর করে। আজকে আমরা দেখছি:
ইসরায়েল মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে
অথচ কিছু মুসলিম রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে প্রযুক্তি চুক্তি করছে
যুদ্ধ চলাকালেও রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বজায় রাখছে
এই দ্বিচারিতার হুঁশিয়ারি অনেক আগে কুরআন দিয়ে রেখেছে।
১.৫ আয়াত ১২০: ধৈর্য, তাকওয়া ও চক্রান্ত প্রতিরোধ
“তোমাদের কোনো কল্যাণ হলে তারা দুঃখিত হয়, আর কোনো অকল্যাণ হলে তারা আনন্দিত হয়। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধরো ও তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তাদের চক্রান্ত কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
এই আয়াত মুসলমানদের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরোধ নীতি শিখিয়ে দেয়: তাকওয়া (আল্লাহভীতি) এবং ধৈর্য (কৌশলী দৃঢ়তা) থাকলে শত্রুর ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না।
এখানেই ইরানের অবস্থানটি কুরআনের আলোকে পর্যালোচনা করার সুযোগ তৈরি হয়। তাদের সামরিক অবরোধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, এবং রাজনৈতিক নিষ্পেষণের মধ্যেও তারা যেভাবে প্রতিরোধে স্থির থেকেছে—তা এই আয়াতের বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
১.৬ ইসলাম কখনো “নিরপেক্ষতা”কে মেনে নেয়নি
যারা বলে “আমরা ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ”, তারা ভুলে যায় যে ইসলাম নির্যাতন ও জুলুমের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার অনুমতি দেয় না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তুমি জালিম হও বা মজলুম—উভয় অবস্থাতেই তোমার ভাইকে সাহায্য করো।” (বুখারি, ২৪৪৪) অর্থাৎ, জালিম হলে তাকে জুলুম থেকে ফেরাও; মজলুম হলে তার পাশে দাঁড়াও।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে গাজা, লেবানন ও পশ্চিম তীরের নিরস্ত্র জনগণ যখন ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার, তখন “নিরপেক্ষ” থাকা মানে হলো জালিমকে প্রশ্রয় দেওয়া।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
কুরআনের ৩:১১৮–১২০ আয়াতসমূহ শুধু নৈতিক দিকনির্দেশনা নয়, বরং মুসলিমদের রাজনৈতিক বোধ তৈরি করার একটি স্পষ্ট রূপরেখা। যেসব মুসলিম রাষ্ট্র আজ ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলছে, তারা কেবল আন্তর্জাতিক আইন নয়—কুরআনের মৌলিক নীতিরও লঙ্ঘন করছে।
ইরানের মতবাদ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো— যারা প্রতিরোধ করছে, তারা আজ মুসলিম উম্মাহর একমাত্র প্রতিরোধ রেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২: জালিমকে সাহায্য না করার ইসলামী বিধান
২.১ কুরআনের নিষেধাজ্ঞা: “জালিমদের দিকে ঝুঁকেও যেয়ো না”
“আর তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, ফলে আগুন তোমাদেরকেও স্পর্শ করে।” (সূরা হুদ, আয়াত ১১৩)
এই আয়াত ইসলামের একটি অত্যন্ত কড়া ও স্পষ্ট রাজনৈতিক নির্দেশনা বহন করে। এখানে “তিলকা” تميلوবা “ঝুঁকে যাওয়া” বলতে বোঝানো হয়েছে—মনোভাবে, নীতিতে, বা রাজনৈতিক অবস্থানে জালিমদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করা।
অর্থাৎ:
জালিমদের সমর্থনে অবস্থান নেওয়া
তাদের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি করা
তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে চুপ থাকা
এমনকি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকাও
—সবই এই আয়াতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে।
আজকে যদি কোনো মুসলিম রাষ্ট্র ইসরায়েলের মতো এক সুস্পষ্ট জালিম রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া, অস্ত্রচুক্তি বা নিরাপত্তা সহযোগিতা করে—তাহলে এটি শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, বরং একটি শরঈ গোনাহ।
২.২ হাদীসের কঠোর সতর্কতা: “জালিমকে সাহায্য করলে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন”
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি কোনো জালিমকে সাহায্য করে, সে জানবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন।” (মুসনাদ আহমাদ: ১২৫৫০)
এই হাদীস অনুযায়ী, জালিমকে কেবল সরাসরি সহায়তা নয়, বরং পরোক্ষ সমর্থন দেওয়াও ধ্বংসের কারণ। উদাহরণস্বরূপ:
কোনো মুসলিম দেশ যদি ইসরায়েলের প্রতি মদদ দেয়
যুদ্ধাপরাধে জড়িত রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়
ফিলিস্তিনের গণহত্যা দেখেও নিরব থাকে
তবে তাদের ওপরও এই হাদীসের ভয়ানক শাস্তির ঘোষণা প্রযোজ্য।
২.৩ ফিলিস্তিনের নিপীড়ক এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা
বর্তমানে ইসরায়েল:
বেসামরিক জনগণের ওপর বিমান হামলা চালায়
হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল ধ্বংস করে
খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা অবরোধ করে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে
এই অবস্থায় যে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের উচিত ছিল:
তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা
অর্থনৈতিক বয়কট ঘোষণা করা
সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিবাদ জানানো
কিন্তু বাস্তবতা হলো:
অনেকে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখছে
কেউ কেউ অস্ত্র বা প্রযুক্তি আমদানি-রপ্তানি করছে
কেউ কেউ আবার গাজায় প্রতিরোধকারীদের “সন্ত্রাসী” বলে অভিহিত করছে
এগুলি জালিমকে সাহায্য করার শামিল।
২.৪ হাদীসের আরেকটি দিক: “নিরবতা মানেই সমর্থন”
রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমরা যদি জুলুম দেখো, তাহলে হাত দিয়ে থামাও। না পারলে মুখ দিয়ে বলো। আর না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো—আর এটি হলো ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।” (মুসলিম: ৪৯)
যদি কেউ হাত বা মুখ দিয়ে প্রতিবাদ না করে, বরং চুপচাপ থাকে— তাহলে অন্তরে ঘৃণা করাটাই তার একমাত্র ঈমানের প্রমাণ।
এখন প্রশ্ন হলো—
যারা জুলুম দেখেও মুখে “উদ্বেগ” ছাড়া আর কিছু বলে না, বা প্রকাশ্যে জালিমদের স্বাগত জানায়—তাদের ঈমান কোন স্তরে আছে?
২.৫ ইসলামী ন্যায়বিচার: মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব
একটি মুসলিম রাষ্ট্র শুধু নিজের জনগণের নিরাপত্তা নয়, বরং উম্মাহর স্বার্থ রক্ষা করাও তাদের দায়িত্ব।
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ.) বলেছেন:
“আল্লাহ একটি ন্যায়পরায়ণ কাফের রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে পারেন, কিন্তু জালিম মুসলিম রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখেন না।”
অর্থাৎ, শুধু নামাজ-রোজা থাকলে হবে না; রাষ্ট্রীয় নীতিতে ন্যায়বিচার, সত্যপন্থা ও জুলুমবিরোধী অবস্থান থাকতে হবে।
২.৬ ইরান প্রশ্নে দ্বিমত বনাম দ্বায়িত্ব
ইরানের নীতি, মতবাদ, বা ইতিহাস নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু যখন তারা জালিম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, তখন তাদের বিরোধিতা না করে, অন্তত তাদের এই ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ।
মতভেদ ও বিরোধিতার দোহাই দিয়ে জালিমের সঙ্গে কৌশলগত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা—এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদনযোগ্য নয়।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে জালিমকে সাহায্য করা বা জুলুমে মৌন সমর্থন দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কুরআনের আয়াত, হাদীসের বাণী, এবং ফিকহের মূলনীতিতে একথা সুস্পষ্ট—
জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ইসলামের মৌলনীতি। জালিমের পাশে দাঁড়ানো মানে ঈমানের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া।
আজ যারা ইসরায়েলের মতো সুস্পষ্ট জালিম রাষ্ট্রের সহযোগী—তারা চায় বা না চায়, তারা কুরআনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে। আর মুসলিম বিশ্ব যদি এই নীতিভ্রষ্ট পথেই চলতে থাকে, তাহলে তা কেবল ফিলিস্তিনের নয়, সমগ্র উম্মাহর পতনের পূর্বাভাস।
৩: মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও দ্বিচারিতা
৩.১ বাস্তবতার স্বরূপ: মুখে মুসলিম, নীতিতে নিরপেক্ষতা
বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র পরিচয়ে মুসলিম, কিন্তু নীতিতে ও কূটনীতিতে স্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থবাদী। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরতা বহু দশক ধরেই চলমান, কিন্তু গাজায় ২০২৩-২০২৪ সালের গণহত্যা বিশ্ববিবেককে যেভাবে নাড়া দিয়েছে, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশ সেই বিবেকের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল মূলত তিন ধরণের:
১. নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তা
২. সামান্য উদ্বেগ বা “সন্তুলিত” বিবৃতি
৩. ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা
এই অবস্থান কুরআনের নির্দেশ, রাসূল (সা.)-এর নীতি ও উম্মাহর আদর্শিক অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৩.২ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ: “Abraham Accords” এর প্রতারক ব্যাখ্যা
২০১৯-২০২০ সালে ইসরায়েল ও কিছু আরব রাষ্ট্র—বিশেষত সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান—”Abraham Accords” নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, দূতাবাস চালু করে, এবং পর্যটন, ব্যবসা ও সামরিক সহযোগিতার দ্বার খুলে দেয়।
এদের দাবি ছিল—“আমরা ফিলিস্তিনের স্বার্থেই এ চুক্তি করছি, যাতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব হয়।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো:
এই চুক্তির পর ফিলিস্তিনের ওপর হামলা ও নিপীড়ন বেড়েছে
কোনো আরব দেশই এরপর আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়নি
বরং ইসরায়েলকে মুসলিম অঞ্চলগুলিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে
এই চুক্তি কুরআনের ৩:১১৮ আয়াতের সরাসরি লঙ্ঘন—
“তারা চায়, তোমরা কষ্ট পাও… তাদের অন্তরের শত্রুতা আরও বড়।”
৩.৩ কূটনৈতিক দ্বিচারিতা: ফিলিস্তিনের জন্য উদ্বেগ, কিন্তু ইসরায়েলের জন্য বিনিয়োগ
কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেখলে দ্বিচারিতার গভীরতা পরিষ্কার হবে:
দেশগাজা ইস্যুতে বক্তব্যবাস্তব কার্যক্রমসৌদি আরব“আমরা উদ্বিগ্ন”ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ চালু, খাশোগি হত্যার পর পশ্চিমা চাপ মোকাবেলায় নরম মনোভাবUAE“সহিংসতা বন্ধ হোক”ইসরায়েলের সঙ্গে ১০+ বাণিজ্য চুক্তি, পর্যটন উন্নয়ন, যৌথ সাইবার প্রকল্পমিসর“ফিলিস্তিনের পাশে আছি”গাজার সীমান্ত আংশিক বন্ধ, প্রতিরোধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবমরক্কো“শান্তি চাই”ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বৃদ্ধি
এইসব দেশে ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রকাশ্যে মমতা দেখালেও, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং পশ্চিমাদের সমর্থন আদায়ই মূল উদ্দেশ্য।
৩.৪ ইরানকে ঘিরে দ্বিমুখী মানদণ্ড
ইরান যদি গাজা বা লেবাননে প্রতিরোধের পক্ষে অবস্থান নেয়, তখন মুসলিম বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ সেটিকে “সন্ত্রাসবাদে উস্কানি”, “আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা” বলে আখ্যা দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো:
যদি একজন মুসলিম রাষ্ট্র জালিম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে সেটা সন্ত্রাস কেন?
আর ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করলে সেটা কৌশলগত সম্পর্ক?
এই দ্বিচারিতা কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং নৈতিকভাবে মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৩.৫ কুরআনের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থানের মূল্যায়ন
যে কোনো মুসলিম নেতৃত্ব যদি কুরআনের এই নির্দেশনাগুলো সামনে রাখে, তাহলে তাদের বুঝতে হবে:
১. কুরআন মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছে জালিমদের দিকে ঝুঁকতেও না (হুদ: ১১৩) ২. কুরআন শত্রু ও মিত্রের স্পষ্ট পার্থক্য করতে বলেছে (আলে ইমরান: ১১৮–১২০) ৩. কুরআন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকে ঈমানের শর্ত বানিয়েছে (نساء: ৭৫)
তাহলে প্রশ্ন হলো, যারা এই নীতিগুলোর বাইরে গিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, চুপ থাকে, বা সুবিধাবাদী অবস্থান নেয়—তাদের অবস্থান ইসলামী নীতির আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য?
৩.৬ মুসলিম জনগণ বনাম মুসলিম নেতৃত্ব: একটি দ্বিধাবিভক্ত বাস্তবতা
বস্তুত, মুসলিম উম্মাহর সাধারণ জনগণ—বিশেষ করে ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার বহু অঞ্চলে—ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষে আন্তরিকভাবে সোচ্চার।
কিন্তু তাদের নেতৃত্ব:
পশ্চিমা শক্তির চাপে নীতিহীন অবস্থান নিচ্ছে
ইসলামী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না
রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নামে কুরআনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করছে
এই দ্বিধাবিভক্ততা ইসলামী জাগরণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
মুসলিম বিশ্বের আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতা একটি গভীর নৈতিক সংকটে পতিত। একদিকে মুখে মুসলমানদের পাশে থাকার ভাষণ, অন্যদিকে জালিমদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এই দ্বিচারিতা ইসলামি নীতি, কুরআনের নির্দেশ এবং উম্মাহর স্বার্থ—তিনটির সঙ্গেই সাংঘর্ষিক।
যদি এই পথ অব্যাহত থাকে, তাহলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, বরং পুরো মুসলিম জাতি এক দীর্ঘকালীন দুর্বলতা ও বিভাজনের শিকার হবে।
এখন প্রশ্ন হলো—আমরা কি কৌশলগত সুবিধার পক্ষে, নাকি কুরআনের নীতির পক্ষে? এই প্রশ্নের উত্তর না দিলে, প্রতিরোধ শুধু গাজা নয়, বরং পুরো উম্মাহ থেকেই বিলুপ্ত হবে।
৪: ইরানের অবস্থান — সমালোচনা ও সমর্থনের ব্যাখ্যা
৪.১ ইসলামিক নেতৃত্বের প্রশ্নে ইরানের অবস্থান
ইরান একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামো ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ নামে পরিচিত। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে তারা নিজেদের “ইসলামের এক বিকল্প নেতৃত্ব কাঠামো” হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে। যদিও সুন্নি মুসলিমদের সঙ্গে বিশ্বাসগত পার্থক্য রয়েছে, তবুও ইরানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—পশ্চিমা আগ্রাসন, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং মার্কিন প্রভাববাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান।
তারা শুধু নীতিগত কথা বলে থেমে থাকেনি; বরং গাজা, লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়ায় বাস্তব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা মুসলিম উম্মাহর নির্যাতিত জনগণের জন্য কিছুটা হলেও শক্তির অনুভূতি জাগিয়েছে।
৪.২ ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইয়েমেন প্রশ্নে ইরানের ভূমিকা
ফিলিস্তিন:
ইরান হলো একমাত্র রাষ্ট্র, যারা গোপনে নয়, প্রকাশ্যে হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে।
ইসরায়েল যদি হামাসের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, তার পেছনে বড় ভূমিকা ইরানের।
লেবানন:
হিজবুল্লাহ—ইরান-সমর্থিত শিয়া প্রতিরোধ আন্দোলন—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সফলভাবে সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
২০০৬ সালের যুদ্ধসহ বেশ কয়েকবার তারা ইসরায়েলকে সামরিকভাবে চাপে ফেলে।
ইয়েমেন:
হুতি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে ইরান সৌদি মিত্রদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা শক্তি গড়ে তুলেছে।
যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত জোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
৪.৩ ইসলামি ঐক্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিধা
তথ্যভিত্তিকভাবে বলতে হয়—ইরানের অনেক কর্মকাণ্ড মুসলিম উম্মাহর পক্ষে হলেও, তাদের মতবাদ ও অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়ে সুন্নি বিশ্বের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে:
শিয়া মতবাদ নিয়ে ইসলামী আক্বীদাগত প্রশ্ন
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করা
ইরাক ও ইয়েমেনে কিছু সহিংস কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা
তবে প্রশ্ন হলো—
এই দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও, যখন ইরান ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় অস্ত্র দেয়, তখন আমরা কী সেই সহায়তাকে অস্বীকার করবো? মতবিরোধের দোহাই দিয়ে আমরা কী জালিমের পাশে দাঁড়াবো?
৪.৪ সমালোচনার চেয়ে বড় বাস্তবতা: ইরান প্রতিরোধের একমাত্র ভরসা?
মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র আজ নিরব বা জালিমের সঙ্গে কৌশলগতভাবে যুক্ত। এমন প্রেক্ষাপটে, ইরান একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যে কাজ মুসলিমদের সম্মিলিতভাবে করার কথা ছিল, তা আজ করছে একটি রাষ্ট্র—যার বিরুদ্ধে আমাদের অনেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে ব্যস্ত।
কুরআন বলে:
“তোমরা ন্যায়বিচারের জন্য সাক্ষ্য দেবে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই হয়।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৩৫)
এই আয়াত অনুযায়ী, আমরা যদি ইরানের ন্যায়ের পক্ষে কোনো ভূমিকা দেখি, তবে তা স্বীকার করাটাই হচ্ছে ইসলামের নীতি।
৪.৫ দ্বিমুখী মানদণ্ডের বিপদ
যুক্তরাষ্ট্র যখন ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তখন মুসলিম নেতৃত্ব নীরব থাকে
আর ইরান যদি গাজায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা দেয়, তখন তারা “সন্ত্রাস” আখ্যা পায়
পশ্চিমা রাষ্ট্রের যুদ্ধ মানে “নিরাপত্তা প্রয়াস” আর ইরানের প্রতিরোধ মানে “উগ্রতা”
এই মানদণ্ড কেবল রাজনৈতিক নয়, ঐক্যবদ্ধ মুসলিম প্রতিরোধের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
৪.৬ ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যায়ন: কাজ মুখ্য, পরিচয় নয়
রাসূল (সা.) বলেন:
“আল্লাহ্ তোমাদের চেহারা বা বংশ দেখে বিচার করবেন না, বরং তোমাদের অন্তর ও কাজ দেখে বিচার করবেন।” (মুসলিম: ২৫৬৪)
আমরা যদি এই হাদীস অনুসরণ করি, তাহলে দেখতে হবে—
কে প্রতিরোধ করছে?
কে সত্যের পাশে আছে?
কে ঈমানী স্পৃহা নিয়ে জুলুমের বিরুদ্ধে লড়ছে?
যদি কোনো রাষ্ট্র ঈমানদারদের কাজ করে, তবে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের আগে তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
ইরান নিখুঁত নয়। তাদের মতবাদ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো—আজ মুসলিম বিশ্বের মধ্যে প্রতিরোধের যে সামান্য স্বর আছে, তার পেছনে ইরানের ভূমিকা অপরিহার্য।
সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু নিজের পক্ষ থেকে কিছু করা—তা অনেক কঠিন।
যদি আমরা প্রতিরোধে অংশ না নিতে পারি, অন্তত যারা অংশ নিচ্ছে—তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়াই ইসলামি দায়িত্ব।
৫: ইসলামী ঐক্য — কুরআনের দৃষ্টিতে আদর্শ মডেল
৫.১ ঐক্য ইসলামি চিন্তার মূল ভিত্তি
ইসলাম একটি ব্যক্তি ও জাতিগত পরিচয়ের ধর্ম—যেখানে ব্যক্তি ঈমানের পাশাপাশি উম্মাহর অংশ। তাই ইসলামে ঐক্য (وَحْدَة) কেবল একটি আবেগ নয়; বরং এটি একটি ঈমানী দায়িত্ব, নৈতিক আদেশ এবং রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।
আল্লাহ বলেন:
“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩)
এই আয়াত নির্দেশ করছে—ঐক্য কেবল সুপারিশ নয়, বরং ফরজ। ‘আল্লাহর রজ্জু’ মানে হল কুরআন, সুন্নাহ, এবং ইসলামের উপর একক নীতিভিত্তিক আনুগত্য।
৫.২ ইতিহাসে ইসলামী ঐক্যের ফলাফল
সলাহউদ্দিন আইউবির ঐক্যনীতি:
তিনি শিয়া-সুন্নি বিভাজন সত্ত্বেও সিরিয়া, মিসর, ইরাককে ঐক্যবদ্ধ করেন
ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রাচীন রূপ—ক্রুসেডার বাহিনীকে পরাজিত করেন
জেরুজালেম পুনরুদ্ধার ঐক্যের বাস্তব প্রতিচ্ছবি
উসমানী খেলাফতের সময়:
নানা ভাষা, বর্ণ, মতপার্থক্য সত্ত্বেও মুসলিমদের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ রাখা হয়
মুসলিম ভূখণ্ড রক্ষা, হজ নিরাপত্তা, ও ফিলিস্তিন নিয়ে স্পষ্ট প্রতিরোধনীতি প্রতিষ্ঠা করে
এই ঐক্য আজ হারিয়ে গেছে, ফলে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়া, ইয়েমেন—সবখানেই মুসলমানরা একা।
৫.৩ বিভাজন কেন ভয়ংকর?
আল্লাহ বলেন:
“তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা স্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিভক্ত হয়ে পড়েছে।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৫)
বর্তমান মুসলিম বিশ্ব:
সুন্নি-শিয়া বিরোধ
আরব-অনারব বিভাজন
প্রগতিশীল-ধার্মিক দ্বন্দ্ব
জাতীয় স্বার্থ বনাম উম্মাহ স্বার্থ দ্বন্দ্ব
এই বিভাজনের কারণে আমাদের মধ্যে ভরসার জায়গা ধ্বংস হয়ে গেছে।
উদাহরণ:
কেউ ইরানকে শুধু শিয়া বলে বর্জন করে
কেউ তুরস্ককে ‘জাতীয়তাবাদী’ বলে বাতিল করে
কেউ কাতারকে ছোট, কেউ পাকিস্তানকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে ঠেলে দেয়
ফলে কেউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এককভাবে দাঁড়াতে পারে না, কেউ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে পারে না।
৫.৪ ঐক্যবিনাশী কারণগুলো
১. সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ (মাযহাব কেন্দ্রিক ঘৃণা) ২. জাতীয়তাবাদ ও দেশভিত্তিক মুসলিম পরিচয় ৩. সাম্রাজ্যবাদী প্রচার (Divide and Rule নীতি) ৪. অন্তর্বিশ্বাসের দুর্বলতা ও তাকওয়ার অভাব
এগুলো আজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথে প্রধান বাধা। ফলে কেউ ইরানের বিরোধিতা করতে গিয়ে ইসরায়েলের সুবিধা করে দেয়, কেউ তুরস্ক বা কাতারের ভূমিকাকেও সন্দেহের চোখে দেখে।
৫.৫ ঐক্য কীভাবে গড়ে উঠতে পারে?
কুরআনের ভিত্তিতে ঐক্যের চারটি স্তম্ভ:
স্তম্ভবর্ণনা১. ঈমানের ভিত্তিতে বন্ধনজাতি, গোষ্ঠী নয়—ঈমান-আক্বিদা কেন্দ্রিক পরিচয় ২. জুলুমের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধশত্রু যত বড়ই হোক, ঐক্য থাকলে প্রতিরোধ সম্ভব ৩. সত্য ভাষণের সাহসভ্রাতৃত্ব মানে ভুলকে চেপে যাওয়া নয়; বরং সংশোধন ৪. নেতৃত্বের স্বচ্ছতানেতৃত্ব নিজ স্বার্থ নয়, উম্মাহর স্বার্থ দেখবে
৫.৬ আজকের বাস্তবতায় ঐক্য কেন জরুরি?
বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব:
বহিরাগত আগ্রাসনের শিকার (ইসরায়েল, ভারত, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ)
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্লান্ত (সৌদি বনাম ইরান, কাতার বনাম আমিরাত)
ফিলিস্তিনে বাস্তব প্রতিরোধ একা হিজবুল্লাহ, হামাস ও কিছু গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর
এই অবস্থায় যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে প্রতিরোধ শক্তি খণ্ডিত হবে, এবং জুলুম আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
ইসলাম কোনো বিভক্ত জাতির ধর্ম নয়। ঈমানীরা একটি উম্মাহ—যাদের দুঃখ, লড়াই, সংগ্রাম এবং বিজয় ভাগাভাগি হওয়া উচিত। যদি মতবিরোধের দোহাই দিয়ে আমরা প্রতিরোধকে দুর্বল করি, তাহলে পরাজয়ের দায় আমাদের সবার ওপর পড়বে।
ঐক্য হলো প্রতিরোধের মূল ভিত্তি। বিভক্তি হলো পরাজয়ের সূচনা।
আজ সময় এসেছে মতবিরোধকে সংযত রেখে, ন্যায়ের পক্ষে এক প্ল্যাটফর্মে আসার।
৬: তাকওয়া ও ধৈর্যই প্রকৃত প্রতিরক্ষা — সূরা আলে ইমরান ১২০-এর বাস্তবতা
৬.১ আয়াতের পাঠ ও তাৎপর্য
“তোমাদের কল্যাণ হলে তারা দুঃখিত হয়, আর অকল্যাণ হলে তারা আনন্দিত হয়। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১২০)
এই আয়াতটি ইসলামি প্রতিরোধ দর্শনের একটি মূল স্তম্ভ তুলে ধরে। শত্রুর ষড়যন্ত্র, কূটচাল, মিডিয়া-প্রপাগান্ডা বা সামরিক আগ্রাসন—সব কিছুর প্রতিকারে কুরআনের দুটি মৌলিক হাতিয়ার হলো:
সবর (ধৈর্য)
তাকওয়া (আল্লাহভীতি ও আত্মসংযম)
৬.২ ধৈর্য মানে চুপ থাকা নয়, দৃঢ় থাকা
ধৈর্য মানে নিস্ক্রিয়তা নয়; বরং পরিস্থিতি বুঝে সঠিক পথে অবিচল থাকা।
নবী মুসা (আ.) ধৈর্য ধারণ করেছিলেন ফেরাউনের জুলুমে, কিন্তু পাল্টা কৌশল নিয়েছিলেন
রাসূল (সা.) মক্কায় চরম নির্যাতনেও ধৈর্য ধরেছিলেন, কিন্তু হিজরতের পর মদীনায় তিনি রণকৌশল গ্রহণ করেন
গাজা, লেবানন, ইয়েমেনে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো সামরিক চাপ, অবরোধ ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ধৈর্য হারায়নি
ধৈর্য মানে পরিস্থিতির উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে অবস্থানে অটল থাকা।
৬.৩ তাকওয়া: নেতৃত্বের প্রথম যোগ্যতা
তাকওয়া কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের বিষয় নয়; বরং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক নীতির মধ্যেও তা জরুরি।
আল্লাহ বলেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব গ্রহণ করবে, তাদের তাকওয়াবান হওয়া আবশ্যক।” (সূরা হুজুরাত: ১৩, ব্যাখ্যায়)
বর্তমানে মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের অনেকেই কৌশল, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক চাপে মাথা নিচু করে নেয়। তাদের সিদ্ধান্তে তাকওয়া নয়, বরং লাভ-লোকসান ও ক্ষমতার হিসাব প্রাধান্য পায়।
ফলে দেখা যায়:
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন
প্রতিরোধকারীদের পাশে দাঁড়ানোর সাহসের অভাব
কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত হলেও বাস্তবতায় তাকওয়ার অনুপস্থিতি
৬.৪ ধৈর্য ও তাকওয়ার ফল: শত্রুর চক্রান্ত ব্যর্থ হয়
আয়াত ১২০-এর শেষাংশ:
“…তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
আজকের বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো:
অর্থনৈতিক অবরোধে জর্জরিত (ইরান, তুরস্ক, ইয়েমেন)
মিডিয়ায় অপপ্রচারের শিকার (হামাস, হিজবুল্লাহ)
সামরিক হুমকির মধ্যে রয়েছে (সিরিয়া, লেবানন, গাজা)
তবুও যারা ধৈর্য ও তাকওয়া নিয়ে টিকে আছে, তারাই এখনো ইসলামী আত্মপরিচয়ের প্রতীক হয়ে বেঁচে আছে।
ইরান বা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ভুল থাকতে পারে, কিন্তু তাদের ধৈর্য ও অবস্থান ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
৬.৫ ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয়—সব স্তরে এই নীতির প্রযোজ্যতা
স্তরধৈর্য ও তাকওয়ার প্রভাবব্যক্তিশত্রুর কটুক্তি, অপমান, হতাশার মধ্যেও ভারসাম্য বজায় রাখাসংগঠনবাহ্যিক চাপ সত্ত্বেও নীতিতে অটল থাকারাষ্ট্রঅর্থনৈতিক চাপ ও কূটনৈতিক একঘরে অবস্থার মধ্যেও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান
এই তিন স্তরেই যদি ধৈর্য ও তাকওয়া বজায় থাকে, তাহলে কোনো বাইরের ষড়যন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
৬.৬ ইসলামের ইতিহাস: ধৈর্যশীলদের বিজয়
বাদর যুদ্ধ: মুসলমানরা ছিল সংখ্যালঘু, কিন্তু ধৈর্য ও তাকওয়ায় জয় লাভ করে
খন্দকের যুদ্ধ: মুসলিমরা বহুগুণ বড় বাহিনীর বিরুদ্ধে খাল খনন করে রক্ষা পায়
সালাহউদ্দিন আইউবি: দীর্ঘ সময় ধরে ক্রুসেডের চাপে থেকেও ধৈর্য হারাননি
এগুলো প্রমাণ করে—ধৈর্য ও তাকওয়া হলো একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী কৌশল, যা আত্মরক্ষা, বিজয় ও নেতৃত্বের ভিত্তি।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়
আজকের মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় অভাব—
অস্ত্র নয়, ধৈর্য
সেনা নয়, তাকওয়া
বন্ধু নয়, বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব
সূরা আলে ইমরান ১২০ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
কৌশল, পরিকল্পনা, প্রযুক্তি—সবই প্রয়োজনীয়; কিন্তু সবকিছুর মূলে থাকা উচিত ধৈর্য ও তাকওয়া।
এগুলোই আমাদের শত্রুর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার মৌলিক শক্তি।
উম্মাহর প্রতি একটি খোলা চিঠি
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ, আপনাদের প্রতি এই চিঠি কোনো রাজনীতি বিশ্লেষকের নয়, কোনো রাষ্ট্রনায়কের নয়, বরং একজন সাধারণ but concerned মুসলিম যুবকের—যিনি উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে কাঁদেন, ভাবেন, কলম চালান।
আজ গাজার শিশুর কান্না যখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত মসজিদের মিনারে প্রতিধ্বনি তুলতে পারে না— তখন প্রশ্ন জাগে: এই চুপ করে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আসলে কোন কুরআন পড়ে?
ইরান নিখুঁত নয়। হামাস, হিজবুল্লাহ বা হুথিরা ভুল করতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা কি জালিমের পাশে? নাকি প্রতিরোধের পাশে? যারা প্রশ্ন তোলে, তারা নিজেরাই কি কিছু করেছে?
যখন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে সই করে, তাদের প্রযুক্তি নেয়, যৌথ সামরিক মহড়া চালায়— তখন সূরা আলে ইমরানের ১১৮–১২০ আয়াত যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
“তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বানিয়ো না… তারা তোমাদের কষ্টে আনন্দিত হয়।”
আমরা বিভক্ত—শিয়া-সুন্নি, আরব-অনারব, পূর্ব-পশ্চিমে। আমরা এতটাই বিভক্ত যে, কেউ যদি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে, আমরা আগে তার মাজহাব খুঁজি! কেউ যদি প্রতিরোধের ডাক দেয়, আমরা আগে তার রাজনৈতিক ইতিহাস বের করি! আর এই ফাঁকে শত্রু—ইসরায়েল—বেবাক আগায়।
আজ উম্মাহর জন্য যা প্রয়োজন—তা হলো স্পষ্টতা।
কে শত্রু, কে মিত্র—এই বিভ্রান্তি দূর করা
ঐক্যের নামে জালিমদের সমর্থন না করা
মতভেদ থাকলেও ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানো
রাষ্ট্রীয় নীতিতে কুরআনকে প্রাধান্য দেওয়া
এই প্রবন্ধ কোনো রাষ্ট্রের পক্ষ নেয়নি, কোনো দলকে প্রশ্রয় দেয়নি। এটি কেবল আয়নার সামনে দাঁড়ানোর আহ্বান দিয়েছে— যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেকে দেখি:
আমরা কি আল্লাহর পক্ষ? না কি শক্তিধরদের ভয়েই চুপ থাকা সুবিধাবাদী?
প্রিয় পাঠক,
এই লেখার শেষে আমি আপনাকে নয়টি প্রশ্ন রেখে যেতে চাই—যা আমাদের বিবেকের সামনে একটি আয়নার মতো দাঁড় করাবে:
আজ যদি রাসূল (সা.) জীবিত থাকতেন, তিনি ইরান, গাজা ও ফিলিস্তিনের কোন পাশে থাকতেন?
আপনি কি একবারও কুরআনের আয়নায় নিজের অবস্থান পরখ করেছেন?
আপনি কি শুধু আবেগ দেখিয়েছেন, না কি জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থানও নিয়েছেন?
আপনি কি বিভেদকে বড় করেছেন, না কি উম্মাহর ঐক্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন?
আপনি কি ধৈর্য ও তাকওয়ার শক্তিকে বিশ্বাস করেন?
আপনি কি সত্যকে সাহস করে বলতে প্রস্তুত, চুক্তি হারানোর ভয়ে নয়?
আপনি কি মনে করেন নিরবতা এক প্রকার সমর্থন?
আপনি কি মনে করেন কেবল ইরান ভুল করে, আর আপনি নিরাপদ?
আপনি কি জেনে বুঝে জালিমের পাশে নীরবভাবে দাঁড়িয়ে আছেন?
এই চিঠির শেষ কথাটি এই:
ইসলাম জালিমের পাশে দাঁড়ানোর ধর্ম নয়। ইসলাম মুখোশধারী বন্ধুদের ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছে। ইসলাম বলে—প্রতিরোধই ঈমানের অংশ।
আজ সময় এসেছে— না দল বেছে, না মত দেখে, বরং ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর।
আজ সময় এসেছে— কুরআনের সঙ্গে নিজের রাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি, প্রতিবাদ ও সমর্থন মিলিয়ে দেখার।
আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত দিন, আমাদের কলমে বরকত দিন, আমাদের বিবেক জাগিয়ে দিন।
ইয়া উম্মাহ—আর দেরি নয়। এখনই সময় জেগে ওঠার।
লেখক
আশরাফ নু’আইম ️, একজন উম্মাহ-চিন্তিত কলমযোদ্ধা