728 x 90

ইনটেলিজেন্স-ডিজাইন থিওরী: আল্লাহর অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: শুরুতেই পাঠকের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন। শিল্পী ছাড়া শিল্পকর্ম অথবা চিত্রকর ছাড়া একটি চিত্র কি সম্ভব? স্থপতি ছাড়া স্থাপত্য, ভাস্কর ছাড়া ভাস্কর্য বা ডিজাইনার ছাড়া কোন ডিজাইন কি সম্ভব? বুদ্ধিমত্তা বা ইনটেলিজেন্স ছাড়া কি ডিজাইন সম্ভব? উদাহরণস্বরুপ, ধরুন আপনার সুন্দর-সুষম ও সুবিন্যস্ত দেহের ডিজাইন ও এর আভ্যন্তরীণ অগণিত ফাংশন ও প্রোগ্রামের

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: শুরুতেই পাঠকের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন। শিল্পী ছাড়া শিল্পকর্ম অথবা চিত্রকর ছাড়া একটি চিত্র কি সম্ভব? স্থপতি ছাড়া স্থাপত্য, ভাস্কর ছাড়া ভাস্কর্য বা ডিজাইনার ছাড়া কোন ডিজাইন কি সম্ভব? বুদ্ধিমত্তা বা ইনটেলিজেন্স ছাড়া কি ডিজাইন সম্ভব? উদাহরণস্বরুপ, ধরুন আপনার সুন্দর-সুষম ও সুবিন্যস্ত দেহের ডিজাইন ও এর আভ্যন্তরীণ অগণিত ফাংশন ও প্রোগ্রামের কথা। এটা কি ডিজাইনার বা প্রোগ্রামার ছাড়া এমনি এমনি হয়ে গেছে? সহজ, সোজাসাপটা উত্তর, কস্মিনকালেও না। কেউ কেউ বা বলবেন, এগুলো কোন পশ্ন হলো। মাথা খারাপ নাকি?  কিন্তু বাস্তবে আমরা আম জনতা, এমনটি অনেক ঝানু ঝানু বিজ্ঞানীরাও এখানে এসে বিভ্রান্ত হন। গেঁয়ো ভাষায় বলতে গেলে ধরা খান। এ সময় আমাদের বুদ্ধিটা কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যায়, মরিচা পড়ে যায় ক্ষুরধার মগজের মাথায়। চোখে ছানি পড়া রোগীর মতো আমরা আর সত্য কিছুই দেখতে পাই না । অনেক  বিজ্ঞানী (তবে সবাই নয়) এই কাল্পনিক মতবাদে বিশ্বাসী যে বিশ্ব-ব্রমান্ডের সকল ডিজাইন, আকার-আকৃতি ও গঠণপ্রকৃতি কাকতালীয়ভাবে দৈবচয়ন বা র‌্যানডাম প্রক্রিয়ায় অকস্মাৎ হয়ে গেছে। কেউ কেউ একটু আগ বাড়িয়ে বলেন, লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি বছর ধরে ঘুরতে ঘুরতে নাকি প্রাণীজতের সকল আকার বা ডিজাইন গুলো নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়ে গেছে। নিজে নিজেই সৃষ্টি হওয়া বা তৈরি হওয়া, এ আবার কেমন উদ্ভট কথা? স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি, ডিজাইনার ছাড়া ডিজাইন; পাঠক বলবেন, এটা কি কোন গাঁজাখোরি কথা!

বাস্তব উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। পাঠক, একটু আপনার দেহের দিকে লক্ষ্য করুন। বলুনতো আপনার দেহে কতটি গ্রন্থি, অস্থি, অঙ্গ-প্রতঙ্গ আছে? কোষের সংখ্যা, জীনের সংখ্যা না হয় নাই জিজ্ঞাস করলাম। আমরা আম জনতা তো দূরের কথা; বিজ্ঞানী, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, তারাও সঠিকভাবে বলতে পারবেন না এগুলোর সঠিক সংখ্যা কতো। তাদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর মতভেদ। আমাদের দেহে প্রধান প্রধান  অঙ্গের মধ্যে রয়েছে হাত, পা, চোখ, কান, নাক, মাথা, হৃৎপিন্ড, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, শ্বসন তন্ত্র, পরিপাক তন্ত্র, রেচন তন্ত্র, পরিবহন তন্ত্র, রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র, জনন তন্ত্র, আরও নাম না জানা অনেক অঙ্গ-প্রতঙ্গ। প্রত্যেকটি অঙ্গ এবং তন্ত্রের মধ্যে আবার রয়েছে অসংখ্য প্রতঙ্গ বা শাখা-প্রশাখা। ধরা যাক চোখের কথা। এর মধ্যে আছে কয়েক ডর্জন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যেমন, চোখের পর্দা, ভুরু, চোখের মনি, আলো-প্রবেশ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র,  কর্নিয়া, লেন্স, চোখের গোল চেম্বার, অপটিক নার্ভ, রেটিনা বা ছবির পর্দা, নেগেটিভ ছবির ধারক, ছবি ব্রেনে পাঠানোর নার্ভ বা কেবল, ছবি প্রসেসের জন্য সিপিইউ বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা ব্রেন, নেগেটিভ ছবি থেকে পজিটিভ ছবি বানানোর যন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো সাধারণ কোন জিনিস নয়, যেন এক একটা ফ্যাক্টরি। ফ্যাক্টরি বললেও কম বলা হবে। কারণ দুনিয়ার যে কোন ফ্যাক্টরি থেকে তা হাজারো গুণ জটিল এবং স্পর্শকাতর। তবে এ সমস্ত  ফ্যাক্টরি গুলো খুবই সু-শৃঙ্খলভাবে  নিপুণতারসাথে চলছে। কোথাও কোন গড়মিল নেই।

পাঠক,  হিসেব সহজের জন্য ধরে নিলাম আমাদের দেহে ১০টি প্রধান অঙ্গ বা তন্ত্র এবং প্রত্যেকটির আবার ১০ টি করে প্রতঙ্গ আছে। অর্থাৎ ১০ × ১০ বা ১০০টি  অঙ্গ-প্রতঙ্গ আছে। এসমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো যখন আমাদের দেহে মায়ের পেটে সেট করা হচ্ছে তখন তা সুনিপুণভাবেই হচ্ছে। নিখুতভাবে অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো একটির পর একটি সাজানো হচ্ছে। কোনরুপ কাকতালীয়তা বা এলোমেলোভাব নেই।  ডারউইন ও তার অনুসারী বিজ্ঞানীদের মতে যদি এগুলো দৈবচয়ন বা র‌্যানডন প্রক্রিয়ায় হতো, তাহলে মিলিয়ন কেন, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরেও তা সম্ভব হতো না। তবুও যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো প্রাকৃতিকভাবে, কোনরুপ বুদ্ধিমত্তা বা ইনটেলিজেন্সের পূর্ব হস্তক্ষেপ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে এবং  সুবিন্যস্তভাবে পরপর জোড়া লেগে যাচ্ছে। তাহলে আসুন আমরা পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের মাধ্যমে এটার সম্ভাবনা যাচাই করি। জেনে রাখা ভালো, বৈজ্ঞানিক যেকোন তথ্য গ্রহণ করতে হলে তার সম্ভাবনার ব্যাপারে আমাদের ন্যূনতম ৯৫% নিশ্চিত হতে হবে, অর্থাৎ ৫% ভূল ছাড় দেওয়া যাবে। এখন আসা যাক আসল সম্ভাবনা টেস্টে।  হিসেব সরলীকরণের জন্য আমরা ধরে নিয়েছিলাম আমাদের দেহে ১০০ টি বিভিন্ন আকার ও ডিজাইনের অঙ্গ-প্রতঙ্গ আছে। পরিসংখ্যানের পারমুটেশন বা বিন্যাস সূত্র অনুযায়ী এই ১০০ টি অঙ্গকে আমরা প্রায় ৯দ্ধ১০১৫৭ ( ৯ সংখ্যার পর ১৫৭ টি শুন্য বসাতে হবে) ভাবে সাজাতে পারি। অর্থাৎ অঙ্গ-প্রতঙ্গ গুলো ঠিক আমাদের দেহে যেভাবে সাজানো আছে সেভাবে পাওয়ার সম্ভাবনা ০.০০০০০০০০…..০০০১% (পয়েন্টের পর ১৫৫ টি শুন্য)।  অর্থাৎ দৈবচয়ন বা র‌্যানডন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের বর্তমান গঠন পাওয়া একেবারেই অসম্ভব। এক হিসেব মতে আমাদের দেহে ২০৯ টি অস্থি বা হাড় এবং ৩৬০ টি গ্রন্থি আছে। এখন আমরা চিন্তা করি এই ২০৯ টি হাড় এবং ৩৬০ টি গ্রন্থিকে কতভাবে সাজানো যায়, এবং আমাদের দেহে যেভাবে সাজানো আছে সেভাবে পাওয়ার সম্ভবনা কত । পাশে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর থাকলে একটু কষ্ট করে বিনাস বাটনে চাপ দিন। এই রেজাল্টই আমাদেরকে বলবে যে, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পার হলেও দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বা র‌্যানডনভাবে দেহের বর্তমান গঠন পাওয়া সম্ভবপর নয়। আসলে, দৈবচয়ন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণাগুলো নেহায়েত কাল্পনিক এবং মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

এটাই ধ্রুব সত্য যে, কোন ডিজাইনই ডিজাইনার ছাড়া সম্ভব নয়? আর ডিজাইন করতে হলে বা ছবি অঙ্কন করতে হলে অবশ্যই বুদ্ধিমত্তা বা ইনটেলিজেন্স প্রয়োজন হবে। একেই বলে ডিজাইন-ইনটেলিজেন্স থিওরী। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানব-সৃষ্ট বস্তু, চাই তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, তার পিছনে কেউ কেউ না নির্মাণকারী বা প্রণেতা আছে। কিন্তু প্রাকৃতিক হাজারো আকার এবং জিজাইনের যে সকল জীব আমরা দেখি তার কি কোন সৃজনকর্তা নেই? হরেক রকম ফুল, ফুলের সুবাস, ফুলের জিজাইন এগুলো কি খামাখা খামখিয়ালিভাবেই হয়ে গেছে? এখানে কেন আমরা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করি। কেন আমাদের ঘিলু এই সময় কাজ করে না? কেন আমরা জ্ঞানপাপী হয়ে যায়? কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে খুব বেশি মগজের দরকার হয় না। তাহলে কি এক শ্রেণীর বিজ্ঞানী গো-ধরে আছে যে, কোন ভাবেই তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করবে না? কথায় বলে, ১০টি তৃষ্ণার্ত ঘোড়াকে একজনে পানি পান করাতে পারে, কিন্তু ১০ জনে মিলেও একটি অপিপাসীত ঘোড়াকে পানি পান করাতে পারে না।  সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করলে অসুবিধাটা কোথায়? এতে কি বিজ্ঞানশাস্ত্র অচল হয়ে যাবে, কিংবা বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব মাঠে মারা যাবে? কখনই নয়। হাজারো প্রথিতযশা বিজ্ঞানী আছে যারা সৃজনকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। বরং তারা নাস্তিক মতবাদের প্রতিবাদ করেছে এবং এই তত্ত্বের প্রবক্তা যে, প্রকৃতির জটিল ডিজাইন কোনভাবেই বুদ্ধিমত্তা বা ইনটেলিজেন্স ছাড়া সম্ভব নয়। আর এই ডিজাইনার হলেন মহান রব্বুল আলামীন যিনি আল কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনিই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন এবং মধ্যকার সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে।

(লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্ট-ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, সিডনী)

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising