728 x 90

নামাজের পর সম্মিলিত দো’য়া

-এম,এ,ইউসুফ শামীম। এক বেঁটে মহিলার গলার হার পড়ে গেলো কলসের ভিতর অতপর সে কলসে হাত দিয়ে শাশুড়িকে ডেকে বললো, আম্মা! আম্মা! কলসের তো তলা নেই। আসলে কলসের তলা আছে কিন্ত তার হাত খাটো হওয়ার কারণে কলসের তলা পায় না, এই হলো মূল বিষয় । আমাদের দেশের নামধারী আহলে হাদীস  শায়েখরা বিভিন্ন মাসআলায় গভীর গবেষণা না

-এম,এ,ইউসুফ শামীম।

এক বেঁটে মহিলার গলার হার পড়ে গেলো কলসের ভিতর অতপর সে কলসে হাত দিয়ে শাশুড়িকে ডেকে বললো, আম্মা! আম্মা! কলসের তো তলা নেই। আসলে কলসের তলা আছে কিন্ত তার হাত খাটো হওয়ার কারণে কলসের তলা পায় না, এই হলো মূল বিষয় ।

আমাদের দেশের নামধারী আহলে হাদীস  শায়েখরা বিভিন্ন মাসআলায় গভীর গবেষণা না করেই এটা হাদীসে নেই,  ওটা হাদীসে নেই সুতরাং এটা বেদআত ওটা বেদআত বলে দিচ্ছে । আসল কথা হলো হাদীসে তো আছে কিন্ত তাদের গবেষণার দৌঁড় সেই পর্যন্ত পৌঁছে না। আর আমাদের কিছু ভাই অন্ধের মত তাদের এই নতুন বাণীগুলো এক বাক্যে মেনে নিচ্ছে ।

ফরয নামাযের পর সম্মেলিত মুনাজাতকে নামধারী আহলে হাদীসরা বেদআত বলে অথচ এর পক্ষে কুরআন সুন্নাহর বহু দলিল রয়েছে কিন্ত তাদের গবেষণার দৌঁড় সেই পর্যন্ত পৌঁছেনি তাই তারা একে বেদআত বলে।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ২২টি জায়গায় দোআ করার হাদিস রয়েছে। এর মধ্যে ফরজ নামাজের পর অন্যতম।

ফরজ নামাজের পর দোআ করা হাদিসের ছয়টি নির্ভরযোগ্য কিতাব অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার মাধ্যমে প্রমাণিত। অন্যদিকে দোআর সময় হাত তোলার কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই, যাতে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোআ করাকে হারাম কিংবা নিষেধ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোআ করার নিয়ম চলে আসছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাফেয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর মতো অগণিত ফকিহ ও মুহাদ্দিস চলে গেছেন। কোনো একজন ইমামও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি। শুধু ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইবনে কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপত্তি জানিয়েছেন। আহলে হাদিসের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানীর অনুকরণে বর্তমানে কিছু লা-মাজহাবি আলেম ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত সম্পর্কে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা শরিয়তের যুক্তিতে কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, যাঁরা ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত করাকে বাধ্যতামূলক মনে করতেন, তাঁরাও ভুলের মধ্যে আছেন। জায়েজ কাজকে বাধ্যতামূলক মনে করাও শরিয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। এতে সন্দেহ নেই।

আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নাজদির উত্থানের আগ পর্যন্ত এবং পেট্রো ডলার পাওয়ার আগ পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাতের আমল জারি ছিল। এমনকি লা-মাজহাবিদের বড় বড় আলেমও তা সমর্থন করেছেন। যেমন সায়্যিদ নাজির হোসাইন, নাওয়াব সিদ্দিক হাসান (ভূপালি), সানাউল্লাহ, হাফেজ আব্দুল্লাহ, মাওলানা মুবারকপুরীর মতো বড় বড় আলেম নামাজের পর হাত তুলে দোআ করাকে বিদ’আত বলেননি। কয়েকজন লোকের ভিন্ন মতের কারণে উম্মতের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি আমলকে বিদ’আত বলা কখনো যুক্তিসংগত হতে পারে না।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই লজ্জাশীল এবং সম্মানী। বান্দা যখন তাঁর কাছে দুই হাত তুলে দোআ করে, তখন তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ ইমাম হাকেম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। লা-মাজহাবিদের আলেম আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় এটিকে সহিহ বলে মেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসটি বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য করেননি। এতে বোঝা গেল, হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ।

 

লা-মাজহাবিদের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানী সহিহ ইবনে মাজাহ ও জয়িফ ইবনে মাজাহ নামে দুটি কিতাব লিখেছেন। এতে এই হাদিসটি সহিহ ইবনে মাজাহয় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

লা-মাজহাবিদের আলেম মাওলানা উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এ হাদিসটিকে সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা যায়, হাদিসটি সবার কাছে সহিহ এবং নির্ভরযোগ্য।

এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দোআর সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ রয়েছে, যা কোনো বিশেষ দোআ কিংবা বিশেষ কার্যকারনের সাথে নির্দিষ্ট বা সম্পৃক্ত নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য বিধায় ফরজ নামাজের পর দোআতেও এটি প্রযোজ্য।

হজরত ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে একটি অধ্যায় লিখেছেন এভাবে- ‘দোয়ার সময় হাত তোলা সম্পর্কীয় হাদিসগুলোর বর্ণনা।’ তিনি এ বিষয়টিকে অধ্যায় নির্ধারণ করাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দোয়ার সময় হাত তোলা ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর কাছে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এতে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেন-হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন (জামেয়ে তিরমিজি ২/১৭৬, আল মুজামুল আওসাত লিত্তাবরানি ৫/১৯৭, হাদিস: ৭০৫৩)।

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাদিসটি হাসান। হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, এ হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে দোয়ার সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ আছে। এতে বোঝা যায়, দোয়ার সময় হাত তোলা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত এবং দোয়ার শেষে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করাও সুন্নাত।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার সময় হাতের তালু ওপর দিকে করো। হাতের তালুর উল্টো দিক করে প্রার্থনা করো না। যখন দোয়া করা শেষ হবে, দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করো (আবু দাউদ ৫৫৩, আদ্দাওয়াতুল কবির লিল বায়হাকি, পৃ. ৩৯)।

ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন এভাবে- হজরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত আবু দাউদ শরিফের উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবি কোনো কোনো আলেম প্রশ্ন তুলেছেন যে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি। সেজন্য হাদিসটি জয়িফ। এ প্রশ্নের উত্তরে লা-মাজহাবদেরই আলেম মাওলানা শামসুল হক আজিমবাদী আবু দাউদ শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আইনুল মাবুদে ওই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন, ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি, সে বর্ণনাকারীর নাম ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর কিতাব তাকরিবুত তাহজিবে ওই বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদিসটি জয়িফ বলার কোনো অবকাশ থাকে না।

লা-মাজহাবিদের কোনো আলেমের কথা অনুযায়ী যদি ওই হাদিসটির সনদ জয়িফও ধরে নেওয়া যায়, তখনো আলোচ্য বিষয়ে হাদিসটি দলিল হওয়ার সম্পূর্ণ উপযোগী। কারণ লা-মাজহাবিদের আলেম হাফেজ আব্দুল্লাহ রওপুরী তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন, ‘শরিয়তের বিধান দুই প্রকার। এক. কোনো কিছুকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া, দুই. অবৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া।’ প্রথম প্রকারের বিধানের জন্য সহিহ ও জয়িফ হাদিস দুটিই প্রযোজ্য। দ্বিতীয় প্রকারের জন্য শুধু সহিহ হাদিসই প্রযোজ্য।

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ এটি একটি জায়েজ কাজ, হারাম কাজ নয়। তাই মাসয়ালাটি প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহিহ ও জয়িফ উভয় প্রকারের হাদিসই প্রযোজ্য। এ ছাড়া তিনি এও মেনে নিয়েছেন, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব আমল (ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস ১/২২-১৯৮৭ ইং)।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’ (আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।

মুহাম্মদ ইবনে আবি ইয়াহইয়া বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু এক ব্যক্তিকে নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেন। ওই ব্যক্তি নামাজ শেষ করার পর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু তাঁকে বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করার আগে দোয়ার জন্য হাত ওঠাতেন না (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)।

এ হাদিসটি হাফেজ ইবনে হায়সাম তাবারানির হাওয়ালায় বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়া রিজালুহুস সেকাত’-এর সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বার এ হাদিসে ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।

আসওয়াদ আমেরি তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেছি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর পাশ ফেরালেন এবং হাত তুলে দোয়া করলেন (এলাউস সুনান ৩/১৬৪, ফাতাওয়ায়ে নজিরিয়া ২৪৫, ২৬৫, ৩৫২)।

হজরত ফজল ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর এই বর্ণনাটি বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, যা থেকে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।

এ হাদিসে প্রমাণিত হয়, নামাজ একাগ্রতা বা খুশুখুজুর সঙ্গে পড়া এবং এরপর দুই হাত তুলে হাতের তালু চেহারার সামনে রেখে দোয়া করা (তিরমিজি, নাসায়ি)।

মুহাদ্দিসিন ও ফকিহদের দীর্ঘ যাচাই ও আলোচনার পর হাদিসটি নির্ভরযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়েছে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাজের পর হাত বিস্তৃত করে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর খোদা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল আলাইহিস সালাম -এরও খোদা, আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমার দোয়া কবুল করুন। কারণ আমি মুখাপেক্ষী, পেরেশান এবং অপারগ। আমাকে দ্বীনের সঙ্গে হেফাজত করুন, গুনাহ থেকে বাঁচান, অভাব দূর করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুই হাতকে খালি ফেরাবেন না (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল্লায়লাতি ৪৮, ৪৯, কানজুল উম্মাল ২/৮৪)। এ হাদিসের দুজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু কথা থাকলেও ইবনে মুইন বলেছেন, হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করায় কোনো সমস্যা নেই। একই মন্তব্য করেছেন ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান। সুতরাং হাদিসটি নির্ভরযোগ্য।

ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব আদ্দাওয়াতে ‘বাবু রাফয়িল ইয়াদায়ি ফিদ দোয়া’য় হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, দোয়ার মধ্যে উভয় হাত এটুকু উঠিয়েছেন, যাতে তাঁর হাতের পাতার শুভ্রভাগ দেখা গিয়েছে।

এ ছাড়া ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু, হজরত আনাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- এ তিনটি হাদিসের আলোকে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, প্রথম হাদিসটি তাঁদের জবাব, যাঁরা বলেন হাত তুলে দোয়া করা শুধু ইসতিস্কার নামাজের জন্যই খাস। দ্বিতীয় হাদিসদ্বয় তাঁদের জবাব, যারা বলেন, ইসতিস্কার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়ায় হাত উঠানো যাবে না (ফতহুল বারি ১১/১১৯)।

এ মাসয়ালার সমর্থনে হজরত ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি ও হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তা থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

এরপর তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এবং খুব পেরেশান ও মলিন বদনে আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ!… তখন সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় (রাফউল ইয়াদাইন ১৮, সহিহ মুসলিম কিতাবুদ দোয়া)।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় বুক পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং দোয়া শেষে হাত মোবারক চেহারায় ফেরাতেন (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/২৪৭)।

নামাজ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত কপালের ওপর ফেরাতেন… (ইবনে সানি ৩৯)।

সিহাহ সিত্তার অনেক হাদিস থেকে এ কথা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দোয়ার সময় হাত উঠিয়েছেন এবং হাত মুখে ফিরিয়েছেন।

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুহাজজাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আল মাজমু’ গ্রন্থে দোয়ার মধ্যে হাত উঠানো এবং হাতের তালু মুখে ফেরানোর ব্যাপারে ৩০ টি হাদিস উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি এর বিধান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব (আল মাজমু ৪৪৮-৪৫০)।

সব শেষে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, যারা এসব হাদিসকে কোনো সময় বা স্থানের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে, তারা বড়ই ভ্রান্তির মধ্যে আছে।

তিনি কিতাবুল আজকারে নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার বিষয়টি জায়েজ বলে উল্লেখ করেছেন। এবং এর প্রমাণে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর বর্ণনা এবং আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হজরত ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর হাদিস উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল আজকার ২৩৫)।

বিষয়টি নিয়ে হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফতহুল বারি ১১/১১৮ এবং বুলুগুল মুরামে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব প্রমাণ করেছেন। এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হলো, হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব এবং নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাও উত্তম কাজ।বর্তমানে লা-মাজহাবি যারা নামাজের পর দোয়া করাকে সরাসরি বিদ’আত বলে হক্কানি উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, তাঁদের বিজ্ঞজনদের এ ব্যাপারে মতামত কী, দেখা যাক।

তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব নজলুল আবরার। তাতে স্পষ্ট লেখা আছে- ‘দোয়াকারী দোয়ার সময় হাত উঠাবে। কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলবে। এটি দোয়ার আদব। কারণ এটি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্বীকৃত।’

এরপর লেখেন, ‘যে দোয়াই হোক, যখনই হোক, চাই তা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে হোক বা অন্য সময়, তাতে হাত তুলে দোয়া করা উত্তম আদব। হাদিসের মর্মবাণী এর প্রমাণ বহন করে। মূলত নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার বিষয়টি নিতান্তই স্বাভাবিক এবং সবার জানা হওয়ায় সে ব্যাপারে ভিন্নভাবে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না’ (নাজলুল আবরার ৩৬)।

মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী তুহফাতুল আহওয়াজিতে লেখেন, ‘নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা জায়েজ।’ (তুহফাতুল আহওয়াজি ২/২০২, ১/২৪৪)।

জামেয়া সালাফিয়া বেনারস থেকে প্রকাশিত ‘আলমুহাদ্দিস’ জুন ১৯৮২ সালে মাওলানা উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী একটি ইস্তিফতার জবাবে লেখেন- ‘ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্বীকৃত বিষয়।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আমাদের মতে ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর বাধ্যবাধকতা ছাড়া ইমাম ও মুক্তাদি হাত উঠিয়ে অনুচ্চস্বরে দোয়া করা জায়েজ। এটি একাকী হোক বা সামষ্টিকভাবে হোক, আমাদের আমলও এটি’ (মুহাদ্দিস, জুন ১৯৮২)।

বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাদাতা, জগৎবরেণ্য মুহাদ্দিস, হাফিয ইবনে হাযার আসকালনী (রহঃ) বলেন, ‘ইবনুল কাইয়িম প্রমুখগণের দাবী সঠিক নয়। কারণ-বহু সহীহ হাদীসে সালামের পর দু‘আ করার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং ঐসব হাদীসে যে নামাযের শেষে দু‘আ করার কথা আছে, তার অর্থ সালাম ফিরানোর পরে দু‘আ ও মুনাজাত। [ফাতহুল বারী, ২:৩৩৫/ফাতহুল মুলহিম, ২:১৬ পৃঃ]

১। হযরত যাহ্‌হাক (রাঃ) সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবে তখন আল্লাহর দরবারে দু‘আতে মশগুল হবে। (তাফসীরে দূররে মানছূর : ৬/৩৬৫)

২। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ), ৫১৪ পৃঃ)

৩। হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী (রাঃ) হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)

হযরত মুগীরা বিন শু’বা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী আলাইহিস সালাম স্বীয় নামাযের শেষে দু‘আ করতেন। (ইমাম বুখারী (রহ) তারীখে কাবীরঃ ৬/৮০)

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায থেকে ফারেগ হতেন তখন এ দু‘আ করতেন। হে আল্লাহ! আমার জীবনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কর শেষ জীবনকে এবং আমার আমলের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কর শেষ আমলকে এবং আমার দিন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মনোরম কর তোমার সাথে সাক্ষাতের দিনকে।(তাবারানী আউসাত: ১০/১৮৭ হাঃ নং ৯৪১১)

হযরত আবু বকরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর, অভাব অনটন এবং দোযখের আযাব থেকে মুক্তি চাই।”(নাসাঈ শরীফ : ১/১৫১ হাঃ নং ৫৪৬৫)

ফিকহে হানাফীর অন্যতম মুল কিতাব ‘মাবসুত’এর বর্ণনাঃ “যখন তুমি নামায থেকে ফারিগ হবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে। কেননা-এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।”

আবু রিমছা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমি নবী কারীম (সাঃ)-এর সাথে নামায পড়তে ছিলাম। হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) ঐ নামাযে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রথম সারিতে নবী কারীম (সাঃ)-এর ডান পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, যে উক্ত নামাযে তাকবীরে উলা হতেই উপস্থিত ছিল। (অর্থাৎ সে মাসবুক ছিল না) নবী কারীম (সাঃ) নামায শেষ করে সালাম ফিরালেন এমনভাবে যে, উভয় দিকে আমরা তাঁর গন্ডদ্বয় দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) ঘুরে বসলেন। তখন ঐ তাকবীরে উলায় উপস্থিত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়ল সুন্নাত নামায পড়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ হযরত উমর (রাঃ) লাফিয়ে উঠলেন এবং ঐ ব্যক্তির উভয় কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন-“বসে পড়! পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের (ধর্মীয়) পতন হয়েছে, যখন তারা (ফরজ ও সুন্নাত) নামাযের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করত না।” নবী কারীম (সাঃ) হযরত উমর (রাঃ)-এর এ কাজ দেখে দৃষ্টি উঠালেন এবং বললেন, “হে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পন্থী বানিয়েছেন।”(আবু দাউদ শরীফ হাঃ নং ১০০৫)

রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯}

আলা বিন হাযরামী রাঃ। মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯}

সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল সাঃ নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে?

সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল সাঃ পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন।

সহীহ হাদীসে বর্ণিত যে, একদা সাহাবাগণ আল্লাহর রসূল (ﷺ) কে কোন্‌ সময় দুআ অধিকরুপে কবুল হয় – সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, “গভীর রাতের শেষাংশে এবং সকল ফরয নামাযের পশ্চাতে।” (তিরমিযী, সুনান ৩৪৯৯, নাসাঈ, সুনান আমালুল ইয়াউমি অল্লাইলাহ্‌ ১০৮নং, মিশকাত ৯৬৮ নং) হাদীসটি অনেকের নিকট দুর্বল হলেও আসলে তা হাসান। (তিরমিযী, সুনান২৭৮২নং)

সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার নিয়ম চলে আসছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এবং ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতো অগণিত ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণ গত হয়ে গেছেন। কোনো একজন ইমামও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি।

এমনকি লা-মাজহাবিদের বড় বড় আলেমও তা সমর্থন করেছেন। যেমন সায়্যিদ নাজির হোসাইন, নাওয়াব সিদ্দিক হাসান (ভূপালি), সানাউল্লাহ, হাফেজ আব্দুল্লাহ, মাওলানা মুবারকপুরীর মতো বড় বড় আলেম নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাকে বিদ’আত বলেননি।

নামাজের পরে দোওয়া ও মুনাজাতকে সর্ব প্রথম যিনি অস্বীকার করে বিদআত আখ্যায়িত করেছেন তিনি হলেন,

#আল্লামা ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী র. ও তার ছাত্রবৃন্দ। আর এশতাব্দীর মুহাদ্দীস আলবানী র.ও বিদআত বলেছেন। তার অনুসরণ করে কিছু আহলে হাদীস ভাই অতিবাড়াবাড়ি করতেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযের পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু‘আ সর্বদা কবুল হতো । তাই হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নামাযের পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করবেন আর সাহাবাগণ তার বিরুদ্ধাচরণ করনার্থে হাত না উঠিয়ে বসে থাকবেন এটা কল্পনাই করা যায় না ।

বিধায় উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা ফরয নামাযের পরে ইমাম মুক্তাদি সকলের জন্য সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল । অতএব, সম্মিলিত মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়াই হাদীসসমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সারকথা ।

কিন্তু #আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. ফাতহুল বারীতে (১১/১১৯)ও #আল্লামা যফর আহমদ উসমানী র. ইলাউস সুনানে এবং আরও অনেকে তাদের রচিত কিতাব সমুহে অত্যন্ত শক্তভাবে ইবনে তাইমিয়া র. এর মত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যে সকল স্থানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ রয়েছে। যেমন, নামাজের পর, সূর্যগ্রহণের সময়, কবরস্থানে লাশ দাফনের পর প্রভৃতি জায়গায়; এ সকল স্থানে সম্মিলিত মুনাজাত করা জায়েজ।

হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর সাত ও আট নাম্বার আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা., ৫১৪ পৃঃ)

হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী রাঃ হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন  ‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর আল্লাহর দরবারে দু‘আয় লিপ্ত হবে’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ।তাফসীরে দূররে মানসূর : ৬/৩৬৫)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দু‘আ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি।  (তিরমিযী শরীফ : ২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯)

দু’আর সময় হাত না উঠানো এটা কখনও মুসলিমদের চরিত হতে পারে না। এটা মুনাফিকদের চরিত্র ছিল। যা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং তারা নিজ হাত বন্ধ করে রাখে।“ সুরা তাওবা আয়াত: ৬৭

দু’আর শেষে মুখমণ্ডল দুই হাত দিয়ে মাসাহ করা হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত একটি শরিয়াত সম্মত আমল। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সা. থেকে গ্রহণযোগ্য অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন থেকেও অনুরূপ আমলের দালীল-প্রমান সাব্যস্ত রয়েছে। যদ্দারা দু’আ শেষে মুখ মাসাহ করা একটি শরয়ীসম্মত আমল হিসাবে প্রতিপন্ন হয়।

হযরত উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দু’আর সময় হাত উঠাতেন তখন উভয় হাতে চেহারা মাসেহ না করা পর্যন্ত হাত নামাতেন না।

-জামে তিরমিজী হাদীস: ৩৩৮৬, মুসনাদে বাজ্জার: ১১২৯, মুসতাদরাকে হাকেম: ১৯৬৭

হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন: ‘যদি কোন দল একত্রিত হয়ে তাদের একজন দু‘আ করে থাকে আর অপররা ‘আমীন, আমীন’ বলে থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করেন।’ (মুস্তাদরাক হাকেম: ৫৪৭৮)

হযরত সালমান রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেছেন: ‘যদি কোন জামা‘আত কোন বিষয় প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে হাত তুলে আল্লাহ তা‘আলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় যে, তিনি তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে দিয়ে দিবেন ।’ (সুনানে আবূ দাউদ: হা. নং ১৪৮৮)

হযরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সা: এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সা: তার উভয় হাত উত্তোলন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সা: এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯}

 

হাদীসে সম্মিলিত মুনাজাতের গুরুত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায় । ফিকহের কিতাবসমূহেও ইমাম-মুক্তাদির সম্মিলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে । অসংখ্য হাদীস বিশারদগণের রায়ও সম্মিলিত মুনাজাতের স্বপথে স্পষ্ট বিদ্যমান । এমতাবস্থায় প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয় ।

সমাজের অনেক অংশে সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক আলেমদের প্রতি উদ্বেগ ও তাদের বিধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। তাদের দৃষ্টিতে ফরজ নামাজের পর একাকী দোয়া করার বেশী প্রাথমিক ও প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে হয়, যেটি ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে, আন্তঃসত্ত্বার প্রতি ভালো তথ্য অংশটি মানসিক সুস্থতার উন্নয়নে মূলত প্রভাবশালী। ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত দোয়ার মূল্যায়ন না করার পরিবর্তে এটির গুরুত্ব উল্লেখ করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এই বিষয়ে বিতর্ক এবং স্পষ্টতা প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে প্রয়োজনীয় স্থান রয়েছে।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising