সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়ে, নেতা-কর্মীদের ফেলে রেখে জীবন বাঁচাতে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটামে শেখ হাসিনাকে তার জুলুমের মসনদ ছেড়ে পালাতে হয়েছে ভারতে। ১৯৬২ সালের পর উপমহাদেশে ভারতের এটি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরাজয়। ভারত তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা, সম্পদ এবং সময় দিয়ে হাসিনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এমন কোনো পথ ছিল না
সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়ে, নেতা-কর্মীদের ফেলে রেখে জীবন বাঁচাতে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটামে শেখ হাসিনাকে তার জুলুমের মসনদ ছেড়ে পালাতে হয়েছে ভারতে। ১৯৬২ সালের পর উপমহাদেশে ভারতের এটি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরাজয়। ভারত তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা, সম্পদ এবং সময় দিয়ে হাসিনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এমন কোনো পথ ছিল না যা হাসিনাকে মসনদে টিকিয়ে রাখতে পারত। ভারতের স্বার্থের কারণ, প্রায় ২৬ লক্ষ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে এবং ২০ বিলিয়ন ডলার ভারত নেয় হাসিনার বদৌলতে। দেশদ্রোহী হাসিনা ভারতের স্বার্থে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করেছে গোমূত্র পানকারীদের কাছে।
খুনি হাসিনা পালানোর খবর জনগণের কাছে পৌঁছামাত্র খুশির বন্যা বয়ে যায়। কে অপরকে ঈদ মুবারক বলে আনন্দ প্রকাশ করে। অনেকের কাছে নাকি ঈদের দিনের মতো আনন্দ লেগেছে। এলাকায় এলাকায় মিষ্টির দোকানগুলো মুহূর্তে খালি হয়ে গেলো। পরিচিত বা অপরিচিত সবাই সবাইকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে। প্রবাসের প্রায় প্রতিটি দেশেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এতেই বুঝা যায়, অসহায় মানুষ কতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছে এবং এ দিনটির অপেক্ষায় দিনাতিপাত করেছে।
শেখ হাসিনা দিল্লিতে একটি ছোট অফিস পেয়েছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে অনেকের সঙ্গে উসকানিমূলক কথা বলছেন এবং নেতাকর্মীদের দেশদ্রোহী করে তুলছেন। তার বিশ্বস্ত আমলা ও বিচারপতিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। ১০ আগস্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এক ভয়াবহ পরিকল্পনা সাজানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়া।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী সজীব ওয়াজেদ শেখ হাসিনাকে এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন। তার এই খবর ভারতীয় ও বাংলাদেশি মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ বৈঠকের ডাক দেয়। এই বৈঠকের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার কথা ছিল। এছাড়া পুলিশের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে গুলাগুলি করার পরিকল্পনা ছিল। দেশের বেশ কিছু জায়গায় সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজের ওপর হামলার কথাও বলা হয়েছিল। অন্যদিকে শাহবাগ ও চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়সহ দেশের অন্তত ২৭ জায়গায় হিন্দু মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছিল। হাসিনার নির্দেশে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও মিশে যায়।
আরো জানা গেছে, আওয়ামি লীগের চার হাজার সশস্ত্র কর্মী দ্বিতীয় ফোর্স হিসাবে প্রস্তুত ছিল। যারা প্রয়োজনে হিন্দু, পুলিশ এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা করবে। একই সময় সচিবালয়ে আমলাদের একটি অংশকে ক্যু’র সমর্থনে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।
ঢাকা থেকে পুরো ঘটনা লাইভ করতে দুই টিমে অন্তত ১৮ জন সাংবাদিক দিল্লি থেকে ঢাকা পৌঁছেছেন। শুক্রবার তাদের ভিসা নিশ্চিত করে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির প্রেস সেক্রেটারি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসা অফিসার (সাবেক এনএসআই কর্মকর্তা)।
আরেকটি নাটকের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের উত্তর গোতামারী সীমান্তে। সেখানে কিছু হিন্দুকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের পাশ থেকে ছবি তুলে বাংলাদেশ সীমান্তে হিন্দু শরণার্থীর ঢল নেমেছে বলে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সতর্কতার কারণে ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওবায়দুল হাসানকে দিয়ে ‘বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা’ করা যায়নি। ফলে লালমনিরহাট সীমান্তের নাটকের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শুধু দিল্লি নয়, গুজরাট ও কলকাতার মিডিয়াতেও এসব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। ২০২২ সালের সাম্প্রদায়িক হামলাকে সম্প্রতি ঘটেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। মাশরাফির ঘর পোড়ানোকে লিটন দাসের ঘর হিসেবে, ধানমন্ডি ৩২-এর আগুনকে হিন্দু বাড়িতে আগুন বলে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এত বড় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি বলে দাবি করা হচ্ছে। পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক এ বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার সাম্প্রতিক হাসপাতালের ভিডিও বক্তব্যের ছবি দেখিয়ে তাকে হিন্দু বিদ্বেষী পাকিস্তানপন্থী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এদিকে, দ্য মিরর এশিয়ায় সূত্রের মারফত খবর আসে, বেশিরভাগ সংবাদ ড্রাফট ঢাকা থেকে তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উচ্চপর্যায়ে বসে থাকা কিছু হলুদ সাংবাদিক এসব রিপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশের দিল্লিস্থ দূতাবাসের এক রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠাচ্ছে। তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে এসব ড্রাফট নিউজ ও ভিডিও সরবরাহ করছেন। গত সপ্তাহে ওই কর্মকর্তা দিল্লি প্রেসক্লাবে অন্তত দুই বার বৈঠক করেছেন। তার বৈঠকের পর ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আন্দোলনবিরোধী নিউজের বন্যা বয়ে যায়।
১০ আগস্টের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও ১৫ আগস্টের জন্য আরেকটি পরিকল্পনা ছিল। সেদিন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সোহেল তাজের মতো কিছু বি টিম ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শোক পালন করতে যাবেন। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজন করা হবে। এই দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একটি শোডাউনের পরিকল্পনা করছে। হাসিনাকে এই মুহূর্তে বহু আমলা ঢাকার পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। ইউনূস সরকার যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইস্যু ধামাচাপা দিতে না পারে সে ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে। হাসিনা তার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় দেশকে অস্থিতিশীল রেখে সরকারকে ব্যর্থ করতে চায় অথবা ভারতের হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। “ইউনূস কীভাবে সরকার চালায় দেখে নিব” — এই হুঁশিয়ারি হাসিনা যার সঙ্গে কথা বলছেন তাকেই শোনাচ্ছেন।
★ ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সেখানে গিয়ে অন্তত এক ডজন বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে টেলিফোনে কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাকে জানানো হয় যে, প্রধানমন্ত্রী আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নন। হা হা হা — এটাই বলিউড স্টাইল!
★ হাসিনা পরে যে কোন একজন মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, আপনি এখানে একজন শরণার্থী মাত্র। তাই সরকারের কেউ যদি আপনার সাথে দেখা করে, তা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
★ ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন নিম্ন সারির কর্মকর্তা হাসিনার সাথে দেখা করে, তাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
★ হাসিনা আরো একটি অনুরোধ করেন, যেন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো না হয় এবং গ্রেফতার করা না হয়। ভারতের সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সভায় তার এই অনুরোধ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, হাসিনাকে গ্রেফতার করা হবেনা এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবেনা।
★ হাসিনাকে একটি নিরাপদ দেশ খুঁজে নিয়ে সেখানে চলে যেতে বলা হয়েছে। এজন্য তাকে নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যদিও ভারতের তরফে এটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একই সাথে তাকে জানানো হয়েছে যে, তাকে অস্থায়ীভাবে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র পরবর্তী নিরাপদ গন্তব্যে চলে যাওয়ার জন্য।
★ বৃটেন ও বেলারুশ সরকার হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সরাসরি নাকচ করেছে। আমেরিকা সরকার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার আগেই তার ভিসা বাতিল করে দিয়েছে।
★ হাসিনা ভারতের উত্তর প্রদেশের হিনদন সামরিক বিমান ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। সেখানে তিনি অফিসারদের কাছে অনুরোধ করেছেন, যেন তাকে এমন একটি দেশে আশ্রয় নিতে সাহায্য করা হয় যেখানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা খুবই কম। এর মাধ্যমে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে সাধারণ বাংলাদেশী জনগণকে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছেন।
★ শেখ হাসিনা ভারতে অনেকটা বন্দিদশার মতো অবস্থান করছেন। তাকে কারও সাথেই দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি দিল্লীতেই বসবাসরত তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গেও না।
হায়, নিয়তি! হায়, ট্রাজেডি! শেখ হাসিনার মতো দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রীও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাধারণ বাংলাদেশী জনগণকে ভয় পাচ্ছেন! শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থায় আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাবধান ও সচেতন হওয়া উচিত, যাতে সাধারণ জনগণকে উপেক্ষা করার পরিণতি জানা থাকে। রাস্তার টোকাইর দাম আছে কিন্ত খুনি হাসিনার কোনো মূল্য কোথাও নেই। কোনো দেশে পঁচা মাল গ্রহণ করতে রাজি নয়।
★ভারত হাসিনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছে, হাসিনা মনে করেছে সারাজীবন ভারতের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে। ভারত ব্যবহার করে টয়লেটের টিস্যু পেপারের ন্যায় ছুড়ে ফেলেছে। কারণ মোদী জানে -হাসিনাকে দিয়ে এখন আর কোনো কাজে আসবে না -হাসিনা এখন শুধু অস্বস্তিকর যন্ত্রণাদায়ক বস্তু। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধাবিহীন কট্টরবাদী হাসিনা নিজের অজান্তেই চা বিক্রেতার ফাঁদে ঢুকে জালের ভিতর আটকা পড়েছে। কোথায় তার মন্ত্রীরা ? কোথায় তার পুলিশ ?কোথায় ডিজিএফআই ? কোথায় তার ছাত্রলীগ ?কোথায় তার জানোয়ারেরা ? নিভৃতে বসে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসানো ছাড়া গতি নাই। তবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধী বিনিময় চুক্তি আছে ,হয়তোবা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেয়ে সঠিক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তবেই না মজলুমের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন হবে।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *