সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার দিবাগত রাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার (নির্জন) ডুলহাজারা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হন, পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার (নির্জন) টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এই তরুণ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনান্তে ৮২তম
সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার দিবাগত রাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার (নির্জন) ডুলহাজারা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হন, পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার (নির্জন) টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এই তরুণ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনান্তে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে গত ০৮ জুন ২০২২ তারিখে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।
ঘটনার রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল ডুলাহাজারার মাইজপাড়া গ্রামে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায়। রাত সাড়ে ৩টায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দেখে দ্রুত আটক করতে গেলে লেফটেন্যান্ট তানজিমের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন সেনা কর্মকর্তা তানজিম। পরে তাকে কক্সবাজার নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
সেনাবাহিনীর এ অভিযানে সন্ত্রাসী দলের সদস্য জিয়াবুল ও বেলালসহ তিনজনকে আটক করা হয়। রামু ক্যান্টনমেন্টের এক সেনা অফিসারের বরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আবদুল্লাহর ফেসবুকে পোস্ট থেকে জানা যায়, রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের খোঁজে অভিযানে গিয়েছিলো সেনা বাহিনী। এ সময় সন্ত্রাসীদের সাথে গোলাগুলিতে তানজিমের শরীরে গুলি লাগে। একই সঙ্গে চোখে গুলি লেগে খুলি দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর তাকে প্রথমে ফিল্ড হাসপাতালে পরে অবস্থা বেগতিক দেখে সিএমএইচে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নেওয়ার আগেই মারা যায় তানজিম।
শহীদ সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আরেকটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তার সাবেক রুমমেট আসিফ সরকার। “ছেলেটা আমার রুমমেট ছিল চকরিয়া আর্মি ক্যাম্পে। আমার শখের বিড়াল চার্লি আর সিম্বা ওরই দেওয়া উপহার। সারাদিন রাত অফিসের কাজে ইউনিটের জুনিয়র অফিসার হিসেবে ও খুবই ব্যস্ত থাকত কিন্তু সেই লাগামছাড়া ক্লান্তিতেও ওর মুখের হাসিটা কখনো মলিন হতে দেখিনি। অফিস যাওয়ার টাইমে প্রায় দিন ও আমার বাইকটা নিয়ে অফিস চলে যেত, আমিও ভান করতাম আমি আজকে অফিসে বাইক নিব না। ও আসলেই আমার ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। রুমে এসে কখনো কী খাব জিজ্ঞেস করত, এটা সেটা বানাত, গিটার নিয়ে গান করতে করতে হঠাৎ থেমে যেত যখন দেখত আমি নামাজে দাঁড়িয়েছি। খুব মনোযোগী শ্রোতা ছিল ছেলেটা, চোখ দুটো কথা বলত ওর। আজ সেই চোখে কোনো দৃষ্টি নেই। অপারেশনে রাতের অন্ধকারে গলায় গুলি করার পর দুজন সন্ত্রাসী সেই চোখটার ভিতরেও ছুরি গেঁথে দিয়েছে। দেহখনা নিথর, কথা বলা চোখগুলো আজ শুধু নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে।”
“বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৫৭টা অফিসার মারা যাওয়ার সময় আমি ছিলাম না, সেই সময় প্রত্যেকটা অফিসারের বুকের মাঝে সেই অসহায়তা কী রকম ঝড় তুলেছিল তা আমি কল্পনা করতে পারি না। তবে এবার সেই রক্তের দাগ যেন এই ইউনিফর্মে না লাগে আল্লাহর কাছে আমি সর্বান্তঃকরণে সেই দোয়া করি। আর যদি অনেক কিছুর ভিড়ে এটাও কোনো স্রোতে হারিয়ে যায় তবেও আমরা যেন জানি, উপরে যিনি আছেন একদিন তার সামনে সব প্রকাশ হবেই। তিনি ছাড় দেন, তবে ছেড়ে দেন না।
ছেলেটা কী অবর্ণনীয় কষ্ট পেয়েছে মৃত্যুর সময় তা আমার কল্পনায় শুধু ভেসে ভেসে আসে। একটু শ্বাসের জন্য হাঁসফাঁস, বুটের আওয়াজে হয়ত চাপা পড়ে যাচ্ছিল ওর কাতরানোর আওয়াজ। যে কষ্টটা আমার ভাইটা মৃত্যুর সময় পেয়েছে, আল্লাহ যেন ওকে জান্নাতুল ফেরদৌস দিয়ে ওর সেই যন্ত্রণা লাঘব করেন।”
আরেকজন চৌকস সেনা অফিসারকে ভারতীয় সন্ত্রাসী ওসি প্রদীপ হত্যা করেছে পয়েন্ট ব্লাঙ্কে -আজও তার বিচার হয়নি। এদেরকে কাল ক্ষেপণ না করে ফাঁসি না দিলে সেনা হত্যা বন্ধ করা যাবেনা বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) জানায়, সোমবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে যায়।
পরে রাত ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭-৮ সদস্যের একটি সন্ত্রাসী দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন (২৩) সন্ত্রাসী দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন।
এ সময় সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হয় এবং এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, ঘটনাস্থল থেকে তিনজন সন্ত্রাসীকে আটকসহ ১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও ডাকাত সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানায়, দেশমাতৃকার সেবায় এই তরুণ সেনা কর্মকর্তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে এবং সেই সাথে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা শওকতের সন্ত্রাসী গ্রুপের পাতানো ফাঁদে ফেলে সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়। তদন্তে যদি তাই বের হয়ে আসে, তাহলে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নাম নিশানা মুছে দিতে বিএনপি -জামাত লাগবেনা। জনগণকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী এ মহৎ কাজ করে নিবে বলে জাতি বিশ্বাস করে।
সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশের একটি অমূল্য সম্পদ। একজন অফিসার গড়ে তুলতে বিপুল পরিমাণ অর্থ, মেধা, সময় এবং অসংখ্য ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়। তাই, এ ধরনের একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জনমনে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। যেমন:
সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের অভিযানে পাঠানোর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা ছিল? এই বিশেষ অস্ত্র অভিযানের আগে পূর্ণাঙ্গ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল কি? কে পরিচালনা করেছিল সেই ব্রিফিং? কেন লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার একা ও নির্জনে আক্রমণের শিকার হলেন—অন্যান্য সদস্যরা তখন কোথায় ছিলেন? সেনাবাহিনীর অন্য সদস্যরা আত্মরক্ষার জন্য বা প্রতিরোধ করতে গুলি চালালেন না কেন? একজন দক্ষ অফিসারের জীবন রক্ষায় বাকি সদস্যরা কি কোনও ভূমিকা রেখেছিলেন? কমিশন্ড কর্মকর্তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে; তাহলে সেনাবাহিনী কেন এত ধৈর্য দেখাচ্ছে? তারা কেন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না? অতিরিক্ত কিছু করা উচিত নয়, কিন্তু আক্রমণ ও মৃত্যুর মুখে পড়ে নির্বিকার থাকা কতটা যৌক্তিক?
জনগণের দাবি—সেনাবাহিনীর উপর যারা হামলা চালানোর সাহস দেখায়, তারা দেশদ্রোহী ও দেশের শত্রু। তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় এনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের হামলার চিন্তাও করতে না পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রয়োজনে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে , যতদিন না দেশের প্রতিটি অলি-গলি সন্ত্রাস মুক্ত হয়। আমরা একটি সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ চাই।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *