728 x 90

সম্পাদকীয়

আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, যিনি মূলতঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে চলচ্চিত্র নায়িকাদের নিয়ে অশ্লীল কৌতুক এবং ভাঁড়ামির কারণে জোকার হামিদ নামেই অধিক পরিচিত, তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন আগামী ২৩ এপ্রিল। বাংলাদেশী সংবিধানের বর্তমান নিয়ম, যা দ্বাদশ সংশোধনীর পর বলবৎ হয়েছে, অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে অন্য একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে

আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, যিনি মূলতঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে চলচ্চিত্র নায়িকাদের নিয়ে অশ্লীল কৌতুক এবং ভাঁড়ামির কারণে জোকার হামিদ নামেই অধিক পরিচিত, তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন আগামী ২৩ এপ্রিল। বাংলাদেশী সংবিধানের বর্তমান নিয়ম, যা দ্বাদশ সংশোধনীর পর বলবৎ হয়েছে, অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে অন্য একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে। মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দখল করা আওয়ামী লীগের এমপিদের দায়িত্ব ছিলো এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা। গায়িকা মমতাজ মার্কা এমপিরা স্বাভাবিকভাবেই এই দায় ছেড়ে দেয় তাদের মালিক, তথা মালকিনের উপর। জানুয়ারী মাসে দেশজুড়ে আওয়ামী দলদাস সাংবাদিকরা জল্পনা কল্পনা শুরু করে দেয় কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছে এ নিয়ে। তারা শিরিন, কাদের, মসিউর, মোশাররফ সহ বিভিন্ন আওয়ামী লোকজনের নাম নিয়ে এমন তুমুল আলোচনা শুরু করে দেয় যে মনে হতে পারে এটি বুঝি দেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রসঙ্গ। কিন্তু শেষপর্যন্ত সবার মুখে চপেটাঘাত করে নিজ ইচ্ছামতো শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন শাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামের এক লোকের নাম। তার পরপর আবারও স্বাভাবিকভাবেই সকল বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও বিশ্লেষকের দল তাদের মালকিনের এই সিদ্ধান্তের জয়জয়কার ঘোষণা শুরু করে।

বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী ঢলের মাঝেও যারা নিরপেক্ষভাবে সমকালীন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের চেষ্টা করেন, তাদের মতে এটি শেখ হাসিনার খেয়ালখুশিমতো কোন সিদ্ধান্ত নয়। বরং ফ্যাসিবাদের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে যে বিদেশী ও প্রতিবেশী প্রভু তাকে পরামর্শ দিয়েছে এবং সমস্ত প্রতিকূলতা পার হতে সক্রিয় সহায়তা দিয়েছে, নতুন এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন তাদের প্রেসক্রিপশনেই হয়েছে। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগ নেতা চুপ্পু ভারতীয় মেজর উবানের অধীনে গঠিত মুজিববাহিনীতে জয়েন করে। এই মুজিববাহিনীর সদস্যরা ভারতের নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের সময় এবং পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর সন্ত্রাস, গুন্ডামি ও লুটপাটে অংশ নেয়। একে খন্দকার ও এম আর আখতার মুকুলের মতো আওয়ামীপন্থী লেখকরাও মুজিববাহিনীকে গুন্ডা বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিকশিত হওয়া এই চুপ্পু গত পঞ্চাশ বছরে নিম্ন আদালতে বিচারক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তথাকথিত ‘আওয়ামী নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু নির্যাতন’ তদন্তে গঠিত আওয়ামী কমিশনের প্রধান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন। তার স্ত্রী রেবেকা ছিলেন একজন যুগ্ম সচিব, যিনি জনতার মঞ্চ নামের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের একজন হোতা ছিলেন।

আওয়ামী লীগ ও ভারতের পরীক্ষিত এ গোলামকে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ঘটনায় শেখ হাসিনার অন্তত দু’টি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথম উদ্দেশ্য হলো ২০২৩ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের সময় একজন নির্ভরযোগ্য গোলামকে প্রেসিডেন্ট পদে রাখা। যদি কোন কারণে মধ্যরাতের কিংবা জবরদখল করা নির্বাচন সম্ভব না হয়, তথাপি যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করা যায়। দ্বিতীয়ত, জোকার হামিদের মতোই আরেকটি গোলামকে এই আলংকারিক পদে রেখে নিরংকুশ আনুগত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। যে কোন অযোগ্য লোককে কোন পদে বসিয়ে দিলে সেই অযোগ্য লোক স্বাভাবিকভাবেই কোন কাজ করার পরিবর্তে মালিকের প্রতিটি কথায় জ্বি হুজুরি করে নিজের পদ-পদবী বজায় রাখবে। দেশের স্বার্থে কোন কাজের পরিবর্তে শেখ হাসিনার বরং এমন গোলামই প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দূর্ভাগ্য হলো একসময় যে প্রেসিডেন্ট পদে জিয়াউর রহমান, বিচারপতি সাত্তার, সায়েম, আহসানউদ্দিন বা শাহাবুদ্দিনের মতো মেরুদন্ডওয়ালা এবং প্রাজ্ঞ মানুষেরা আসীন হতেন, এখন সেই পদে থেকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে জোকার হামিদ কিংবা গোলাম চুপ্পুর মতো দলদাস লোকজন। সর্বোপরি ভারতের সংবিধানকে জাফর ইকবালিং মার্কা কপি পেস্ট করে ব্যারিস্টার কামাল বাংলাদেশের জন্য বাহাত্তর সালে যে খোঁড়া সংবিধান বানিয়েছিলেন, অসংখ্য পরিবর্তন ও কাঁটাছেড়ার পর বর্তমানে সেই সংবিধান পুরোপুরি পঙ্গু এবং অনুৎপাদনশীল একটি যন্ত্র মাত্র। বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ করার জন্য এবং নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করার জন্য দেশের স্বার্থবিরোধী রাজনীতিবিদদের একটি অজুহাতে পরিণত হয়েছে এই সংবিধান। এ সংবিধানের অধীনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদটি গরীব দেশের হাজার কোটি টাকা খরচের ও অপচয়ের অজুহাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। বর্তমান পৃথিবীর ডাস্টবিন ও চুরি-চামারির ভাগাড়ে পরিণত হওয়া অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের জন্য এই সংবিধানের আমূল পরিবর্তন, ক্ষমতাকাঠামোর সংস্কার, অপ্রয়োজনীয় উপনিবেশিক বাহুল্য ঝেড়ে ফেলা এবং রাজনীতির সর্বপর্যায়ে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising