পূর্ব প্রকাশের পর- -এসব কি বলছিস তুই। তুই হাত না দিলে তো আমরা হালে পানি পাবো না। আরমান কাজলের কলার চেপে ধরে। বেরো, বেরো বলছি। শালা চোর গুন্ডার দল। আমি পলিটিক্স করতে এসেছি। তোদের মতো চুরি ডাকাতি করতে নয়। কাজল আরমানের রক্তচক্ষুকে আমলে না এনে শান্ত স্বরে বলে, অত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন। মাথা ঠান্ডা কর।
পূর্ব প্রকাশের পর-
-এসব কি বলছিস তুই। তুই হাত না দিলে তো আমরা হালে পানি পাবো না।
আরমান কাজলের কলার চেপে ধরে। বেরো, বেরো বলছি। শালা চোর গুন্ডার দল। আমি পলিটিক্স করতে এসেছি। তোদের মতো চুরি ডাকাতি করতে নয়।
কাজল আরমানের রক্তচক্ষুকে আমলে না এনে শান্ত স্বরে বলে, অত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন। মাথা ঠান্ডা কর। তা না হলে তুইও ডুববি, আমাদেরও ডোবাবি।
আরমান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। কাজলকে এক ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। আরমানের মেজাজ দেখে কাজল আর দাঁড়াতে সাহস পায় না। তরতর করে নিচে নেমে যায়। কাজল চলে যাওয়ার পরে আরমান অস্থিরভাবে ঘরময় পায়চারি করে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করে, এখন তার কি করা উচিত।
না। এখন কোনো অবস্থাতেই পুলিশের হাতে ধরা দেওয়া উচিত হবে না। কারণ,
একবার পুলিশ কাষ্টুডিতে গেলে, তাকে বের করে আনা সহজ হবে না। তার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই, যারা তার জন্য দৌড়াদৌড়ি করবে। একা রোজি কিছুই করতে পারবে না। কারণ, এইসব কেস কামারির অন্দধন্দ সে কিছুই বোঝে না।
রোজিকে একটা চিঠি লিখে রেখে তাকে এখনি বেরিয়ে পড়তে হবে। পরক্ষণই সিদ্ধান্ত পাল্টায়। না। চিঠি লেখা চলবে না। পুলিশ এসে যদি চিঠি পায় তাহলে রোজিকে হেনস্থা করবে। ফলে, রোজিকে চিঠি লেখা চলবে না। ওর সাথে দেখা করে সব খুলে বলতে হবে।
আরমান আর দেরি করেনা। ঘরে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ে। গতকালের টাকাগুলোও সাথে নেয়। চাবিটা অঞ্জনা বৌদিকে দিতে গিয়ে বলে, বৌদি। আমি একটা ঝামেলায় পড়েছি। বিপদ না কাটা পর্যন্ত বসায় ফিরতে পারবো না। রোজিকে তুমি দেখো বৌদি। আমার মা বেঁচে থাকলে এই কথাটা আমি তাকেই বলতাম।
অঞ্জনা বৌদি বোবা হয়ে যায়। আরমানের দিকে বোকা বোকা চোখে চেয়ে থাকে। কোনো কথাই সে বলতে পারে না। আরমান যেমন এসেছিল তেমনি দ্রুত বেরিয়ে যায়।
১১.
রোজির এখন অফ পৃয়ড। সে লাইব্রেরিতে বসেছিল। ওর মনটা ভালো নেই। আজ ক’দিন সে খোলস আটা শামুকের মতো নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। আড্ডার টেবিলে আসর মাত করে না। এটা তার কলিগদের সবাই কমবেশি খেয়াল করেছে। তবে রোজিকে কেউ কোনো প্রশ্ন করে বিরক্ত করেনি। কারণ, রোজির কলিগরা সবাই তাকে পছন্দ করে।
রোজি লাইব্রেরিতে বসে উদাস মনে ভাবছিল। অদূরে বসেছিল সাব্বিরও। তারও এখন ক্লাস নেই। সে আড় চোখে রোজিকে দেখছিল আর ছেলেমেয়েদের হোম টাস্ক-এর খাতা দেখছিল। একসময় নিজের গাম্ভির্যের খোলস ছিড়ে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, ক’দিন থেকে দেখছি তুমি হঠাৎ করে কেমন পাল্টে গেছ। বিষয়টা কি রোজি?
-না। তেমন কিছু না। এমনিই-
-আমাকে লুকোবার চেষ্টা করে লাভ নেই। তোমাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি।
-তোমরা পুরুষ মানুষেরা, বিশেষ করে তোমাদের মতো কমপ্লিট ব্যাচেলর যারা, তারা মেয়েদের সমস্যা কি করে বুঝবে। মেয়েদের হাজার রকম সমস্যা থাকে। সব কি সবাইকে বলা যায়।
-সব কথা কি বলে বোঝাতে হয়?
-তাই নাকি? বলে বোঝাতে হয় না তো কিভাবে বোঝা যায়? তুমি কি ইদানীং মনোবিজ্ঞানের এমন কোনো বিষয় আয়ত্ব করে ফেলেছ যে, মুখ দেখে মানুষের সব কথা জেনে ফেলতে পারো।
-তোমার বিষয় জানতে আমার মনোবিজ্ঞান পড়ার দরকার হয় না।
রোজি তেরচা নয়নে চেয়ে মুখে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে রেখে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে কি দরকার হয়?
-স্বচ্ছ আই কিউ থাকলেই যথেষ্ঠ।
-কি জানি, বুঝি না কিছু। আমার আই কিউ এত ভোতা যে সহজে কিছুই ধরতে পারে না।
-মিথ্যা বোলো না রোজি। মিথ্যা বলা মহাপাপ।
রোজি আর কথা বলে না। চুপ করে যায়। তবে একটা জিনিস ঠিক, তার এই কাজিনটা অন্যদের মতো নয়। একটু আলাদা ধরণের। অনেক টাচি। তার সাথে কথা বলতে রোজির খারাপ লাগে না। বরং ওর সাথে আলাপ করলে সহজে মনের গুমোট ভাবটা কেটে যায়। বুকের ভেতরের চাপা ভার হালকা হয়ে যায়। রোজিকে চুপ করে যেতে দেখে সাব্বিরও আর কথা বাড়ায় না। মাথা নিচু করে একমনে খাতা দেখে যায়।
এভাবে কেটে যায় বেশ কিছুক্ষণ। একসময় সাব্বির খাতা থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করে , কি হলো একবারে চুপ মেরে গেলি যে?
-তাহলে কি করবো?
-কথা বল।
-কি কথা বলবো?
-যা বলতে ইচ্ছা করে তাই বল।
-এখন কিছুই ভালো লাগছে না।
-কেন? কর্তার সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি?
-পরের ব্যাক্তিগত জীবনে নাক গলাতে নেই, তাও কি ভুলে গেছো নাকি!
-না। তা ভুলিনি। কিন্তু আমি তোর কাজিন না।
-ও! তাইতো-
-ফাজলেমি করিস না। অচিরেই বুঝতে পারবি আমার বন্ধুত্ব কত মূল্যবান।
-তাই নাকি?
সাব্বির রোজির ঘাড় বাঁকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ‘তাই নাকি’ শব্দ দুটো বেশ উপভোগ করে। এরপরে আর কোনো কথা না বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর ম্যাচ বাক্স বের করে। সিগারেটের একটা শলাকা দুই ঠোঁটের ফাঁকে গুজে দিয়ে ম্যাচের কাঠি জ্বালে। হালকা আগুনের শিখাটা সিগারেট শলাকার মাথায় ধরে। ধীরে ধীরে ধোয়া হতে শুরু করে।
রোজি আড় চোখে চেয়ে সাব্বিরের এই সিগারেট ধরানোর ভঙ্গিমাটা দেখে । ওর একটা আলাদা স্টাইল আছে। যা চোখে পড়ার মতো। সাব্বির সিগারেটা ধরিয়ে চেয়ারের পিছনে পিঠ ঠেকিয়ে আয়েস করে ধোঁয়া ছাড়ে। রোজি মুগ্ধ চোখে তার মুখের পানে চেয়ে থাকে।
সাব্বিরের ঠোঁটে ধরা সিগারেট থেকে সুতোর মতো ধোঁয়ার রেখা একে বেঁকে আকাশে উঠছে। সাব্বিরের চোখ দুটো বোজা। নাকের ওপরে কপালে তিনটে ভাজ। কালো প্যান্টের ওপরে ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবী। বুকের সব ক’টা বোতাম খোলা। গলায় সোনার চেন চিকচিক করছে। ছেলেদের গলায় হার পরা রোজি একদম পছন্দ করে না। প্রথম প্রথম সে সাব্বিরকেও দুচার কথা শুনিয়েছিল। সাব্বির তা কানে তোলেনি। এখন তা নিয়ে রোজির কোনো আফসোস নেই। বরং দেখতে দেখতে চোখ সওয়া হয়ে গেছে। এখন ওটা না থাকলেই বোধ হয় সাব্বিরকে খারাপ দেখাবে।
সাব্বিরের বাম হাতের দু’আঙ্গুলের ফাকে ধরা সিগারেট। ডান হাতে কলম। খাতার ওপরে নজর বিঁদ্ধ। মাঝে মাঝে বাম হাতটা উঠে যাচ্ছে মুখে। আবার নেমে আসছে যথানিয়মেই। ধোয়ার কুন্ডলি ঘুরছে মুখের সামনে। সাব্বিরের সেদিকে খেয়াল নেই। কিন্তু রোজি অপলক চেয়ে আছে। ওর চোখের রেটিনায় পাশাপাশি দুটো মুখ ভাসছে। একটা আরমানের আরেকটা সাব্বিরের। তবে আরমানের মুখটা অন্যদিনের মতো আজ স্পষ্ট নয়। কেন জানি বারবার ইরেজ হয়ে যাচ্ছে। ঝাপসা থেকে একবারে বিলীন।
আবার অস্পষ্ট-থেকে ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, রোজি তা ভেবে মিলাতে পারে না। চেষ্টা করছে। সমস্ত একাগ্রতা দিয়ে আরমানের মুখচ্ছবিটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে।
রোজির নিজের সাথে এই লুকোচুরি খেলা আরও কতক্ষণ চলতো বলা মুশকিল। ক্লাসের ঘন্টা পড়ার শব্দে তার সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো। এখনি অন্যান্য শিক্ষকেরা ক্লাস থেকে ফিরে আসবে। এই নির্জন একান্ত নিজস্ব মুহূর্তটা সে অন্য কারো নজরে পড়তে দিতে চায় না।
আরমান বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যায় ওদের গোপন আস্তানায়। যেখানে ওরা অবসর সময়ে নিয়মিত তাস খেলে। যে কোনো ধরনের গোপন বৈঠক করে। ওদের রাজনৈতিক ওপরওয়ালাদের সাথে এখান থেকেই টেলিফোনে যোগাযোগ করে। আরমানের বিশ্বাস ছিল এখানে এলে সে দলের কাউকে না কাউকে পাবেই। এবং বিষয়টা সম্পর্কে আরও ডিটেইলস জানতে পারবে।
কিন্তু এখানে এসে তাকে হতাশ হতে হলো। দেখলো এখানে কেউ নেই। এই বাসার কেয়ারটেকার রহম আলি বলল, ভাইজান আপনি এখানে এসেছেন? কাজটা ভালো করেননি। একটু আগে এখানে পুলিশ এসেছিল আপনাদের খোঁজে। যত তাড়াতাড়ি পারেন পালিয়ে যান। যদি পারেন এই শহর থেকে পালান। কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবেন।
আরমানের মাথায় চক্কর মারতে থাকে। তাহলে কেসটা সত্যি। পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুজছে। যে কোনো মুহূর্তে সে ধরা পড়ে যাবে। না। এত তাড়াতাড়ি ধরা দেওয়া যাবে না। রহম আলির পরামর্শই ঠিক। এই শহর ছেড়ে পালাতে হবে।
এই শহর ছাড়ার আগে রোজির সাথে দেখা করতে হবে। কিন্তু কিভাবে? রোজিকে ছেড়ে, খোকাকে ছেড়ে, সে কোথায় যাবে? এইসব ভবতে ভাবতে তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো নিউমার্কেটে চলে এলো। টুপ করে গোলাম মাওলার দোকানে ঢুকে পড়ল। গোলাম মাওলা জিজ্ঞাসা করল, দোস্ত তুই না একটু আগে বাসায় গেলি? না কি এখনো বাসায় যাসনি?
চলবে…..
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *