ড. ফারুক আমিন : গত ১৩ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়েস্টমিডের মোরলি সেন্টার অডিটরিয়ামে নাগরিক সংগঠন সিডনি এলায়েন্সের উদ্যোগে এক নির্বাচন-পূর্ব নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, ফেডারেল সরকারের মেয়াদ তিন বছর। ২০২২ সালের মে মাসের নির্বাচনে দীর্ঘদিনের লিবারেল শাসনের পর লেবার পার্টি সরকার গঠন করে। আসন্ন মে মাসে অনুষ্ঠেয় ৪৮তম ফেডারেল নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এ সমাবেশে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী, নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায় নিতে হয়।
এ ধারাবাহিকতাতেই নিউ সাউথ ওয়েলসের অন্যতম বৃহৎ নাগরিক সংগঠন সিডনি এলায়েন্স এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সিডনির বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ৮০০-এরও বেশি নাগরিক অংশ নেন।
সমাবেশের সূচনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি তাদের জীবনযাত্রা ও পরিবার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন এবং আবাসন সংকট, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
পরবর্তী অংশে সিডনি এলায়েন্সের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা পর্বে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়া সরকারের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন, গ্রিনস পার্টির নেতা সিনেটর মেহরিন ফারুকী, আবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নীলের প্রতিনিধি, প্যারামাটা আসনের এমপি এন্ড্রু শার্লটন এবং ওয়ারিংগা আসনের স্বতন্ত্র এমপি যালি স্টিগাল।
রাজনীতিবিদদের সামনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবির বিষয় উত্থাপন করা হয় এবং তারা নির্বাচিত হলে এসব দাবি বাস্তবায়ন করবেন কি না তা স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়।
জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে সোশ্যাল হাউজিং এনার্জি ইনিশিয়েটিভের আওতায় বিদ্যুৎ খরচের ৭৫% সরকারি সহায়তা, ভাড়াবাসায় উন্নতমানের বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সরবরাহ এবং নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
আবাসন মন্ত্রীর প্রতিনিধির কাছে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য আবাসন সহায়তা বাজেট দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ এবং রেন্টাল এসিস্ট্যান্স ৬০% বৃদ্ধি করার দাবি উপস্থাপন করা হয়।
আলোচনার পর রাজনৈতিক নেতারা বিদ্যুৎ ও আবাসন খাতে নাগরিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন, তবে কিছু দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে সীমাবদ্ধতার কথা জানান। তারা জানান, জাতীয় বাজেট ও সংসদীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে এসব দাবির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে নির্বাচিত হলে তারা এসব বিষয়ে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
সিডনি এলায়েন্সের এই গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সমাবেশে মুসলিম অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই মাগরিবের নামাজ ও ইফতারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়, যা সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি আয়োজকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটায়।