প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী : কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালার কালাম বা কথা। সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত, দিকনির্দেশনা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহপাক অসংখ্য মোজেজা দান করেছেন। এর মধ্যে কুরআন হলো জীবন্ত মোজেজা যা কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। কুরআনের অনেক জায়গায় অবিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে যা কাফির মুশরিক ও আহলে কিতাবদের
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী : কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালার কালাম বা কথা। সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত, দিকনির্দেশনা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহপাক অসংখ্য মোজেজা দান করেছেন। এর মধ্যে কুরআন হলো জীবন্ত মোজেজা যা কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। কুরআনের অনেক জায়গায় অবিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে যা কাফির মুশরিক ও আহলে কিতাবদের হতভম্ব করে দিয়েছে। কুরআনে ঘোষিত এমন একটি চ্যালেঞ্জের নাম হলো মুবাহালা বা নিজের ওপর ধ্বংস কামনা করা। মুবাহালা হলো, সত্য ও মিথ্যার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হলে এবং যুক্তিতর্কে মীমাংসা না হলে, সকলে মিলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, যে পক্ষ এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী, সে যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর লানতের অধিকারী হয়। আনুমানিক ৯ম হিজরীতে নাজরান থেকে খ্রিষ্টানদের একটি প্রতিনিধিদল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দাবি করল যে ঈসা আলাইহিস সালাম (নাউজুবিল্লাহ) খোদার বেটা, তিন খোদার এক খোদা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আরো বিভ্রান্তমূলক বিতর্ক শুরু করে দিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ওপেন চ্যালেঞ্জ, মুবাহালার আহ্বান জানান। অর্থাৎ জনসম্মুখে সবার সামনে প্রমাণিত হবে তোমাদের কথা সত্য নাকি আমাদের কথা সত্য। প্রত্যেক দল আল্লাহর কাছে কামনা করবে যে আমাদের মধ্যে যাদের কথা মিথ্যা তাদেরকে তুমি ধ্বংস করে দাও। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারের নিকটতম সদস্য হযরত আলী, ফাতিমা এবং হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেন এবং খ্রিষ্টানদেরকে বললেন যে, তোমরাও তোমাদের পরিবারের লোকদের সাথে নিয়ে এসো। তারপর আমরা মিথ্যাবাদীর উপর অভিশাপ বর্ষণের দুআ করব। খ্রিষ্টানরা এতে ভয় পেয়ে গেলো, কারণ তারা জানত যে, তাদের কথা ও আক্বিদা সঠিক নয়। তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শ করে মুবাহালা করার পথ ত্যাগ করল এবং এই প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি হলো না। তারা বলল যে, আপনি আমাদের কাছে যা চাইবেন, আমরা তা-ই দিব, কিন্তু মুবাহালা করব না। এভাবে ইসলামের সত্যতা প্রমাণিত হলো।এর পরে রসূল (সাঃ) তাদের উপর জিযিয়া-কর ধার্য করে দেন। আর এই কর আদায়ের জন্য তিনি আমীনে উম্মাত আবূ উবায়দা ইবনে জাররাহ (রাঃ)-কে তিনি তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন (ইবনে কাসির)। হাদিসে এসেছে, যদি মুবাহালা করত তাহলে খ্রিষ্টান প্রতিনিধির সকলেই ধ্বংস হয়ে যেতো। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে এরশাদ করেন, অতঃপর আপনার নিকট জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্ক করে তাদেরকে বলুন, আস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে, তারপর আমরা মুবাহালা (বিনীত প্রার্থনা) করি, অতঃপর মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত বা অভিসম্পাত (সুরা আল ইমরান -৬১)। এ আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুবাহালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুখারী শরীফের হাদীসে হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাজরান এলাকার দু’জন সরদার আকিব এবং সাইয়িদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তাঁর সঙ্গে মুবাহালা করতে চেয়েছিল। বর্ণনাকারী হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, তখন তাদের একজন তার সঙ্গীকে বলল, এরূপ করো না। কারণ আল্লাহ্র কসম! তিনি যদি নবী হয়ে থাকেন আর আমরা তাঁর সঙ্গে মুবাহালা করি তাহলে আমরা এবং আমাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি (কেউ) রক্ষা পাবে না। তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, আপনি আমাদের নিকট হতে যা চাবেন আপনাকে আমরা তা-ই দেব। তবে এর জন্য আপনি আমাদের সঙ্গে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিন। আমানতদার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে আমাদের সঙ্গে পাঠাবেন না। তিন বললেন, আমি তোমাদের সঙ্গে এমন একজন আমানতদার পাঠাবো যে প্রকৃতই আমানতদার। এ পদে ভূষিত হওয়ার জন্য সাহাবীগণ আগ্রহান্বিত হলেন। তখন তিনি বললেন, যে আবূ উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্! তুমি উঠে দাঁড়াও। তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখন বললেনঃ এ হচ্ছে উম্মতের সত্যিকার আমানতদার (বুখারী)।কুরআনে আরো অনেক ওপেন চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো পরবর্তী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ আলোচনা করা হবে। (লেখক: অধ্যাপক ও মৎস্য বিজ্ঞানী, খু্লনা বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্ট ডক্টরোলার ভিজিটিং ফেলো সিডনি)
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *