আতিকুর রহমান (ইঞ্জিনিয়ার): আল্লাহ তা’আলা তাঁর পাক কালামে বারবার বলেছেন, হে বনী ইসরাইলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি…… স্কলারগণ বলেন কোরআনে এতো বেশী অপর কোন জাতির কথা আলোচনা করা হয়নি যেভাবে বনি ইসরাইলকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রচুর নেয়ামত দিয়েছিলেন, পাশাপাশি তাদের কঠিন পরীক্ষাও নিয়েছিলেন। বনী
আতিকুর রহমান (ইঞ্জিনিয়ার): আল্লাহ তা’আলা তাঁর পাক কালামে বারবার বলেছেন, হে বনী ইসরাইলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি……
স্কলারগণ বলেন কোরআনে এতো বেশী অপর কোন জাতির কথা আলোচনা করা হয়নি যেভাবে বনি ইসরাইলকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রচুর নেয়ামত দিয়েছিলেন, পাশাপাশি তাদের কঠিন পরীক্ষাও নিয়েছিলেন।
বনী ইসরায়েল জাতিকে মহান আল্লাহ যে স্পেশাল নেয়ামত দিয়েছেন তার বর্ণনা কোরআনে এভাবে এসেছে:
(১) হে বনী ইসরাইলগণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই। (সূরা আল বাক্বারাহ:৪০)
(২) হে বনী ইসরাইলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর। (সূরা আল বাক্বারাহ: ৪৭)
(৩) আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুত তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা। আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরআউনের লোকদিগকে অথচ তোমরা দেখছিলে। (সূরা আল বাক্বারাহ: ৪৯-৫০)
(৪) তারপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও। (সূরা আল বাক্বারাহ:৫২)
(৫) আর (স্মরণ কর) যখন আমি মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী নির্দেশ দান করেছি, যাতে তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে পার। (সূরা আল বাক্বারাহ:৫৩)
(৬) তারপর, মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও। (সূরা আল বাক্বারাহ:৫৬)
(৭) আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। সেসব পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষণ কর, যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি। বস্তুত তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি, বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে। (সূরা আল বাক্বারাহ:৫৭)
(৮) আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, স্বীয় যষ্ঠির দ্বারা আঘাত কর পাথরের উপরে। অতঃপর তা থেকে প্রবাহিত হয়ে এল বারটি প্রস্রবণ। তাদের সব গোত্রই চিনে নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাংগা-হাংগামা করে বেড়িও না। (সূরা আল বাক্বারাহ:৬০)
লক্ষ্য করে দেখুন আল্লাহ তা’আলা তাদের কতগুলো স্পেশাল নেয়ামত দান করেছিলেন।
১) ক্ষমা ও প্রতিশ্রুতি
২) ফেরআউনের নিকট থেকে বিশেষ সাহায্যের মাধ্যমে উদ্ধার
৩) তাদের শত্রুকে ডুবিয়ে হত্যা
৪) উচ্চ মর্যাদা
৫) আসমানি কিতাব যাতে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হয়
৬) প্রচণ্ড রৌদ্রে ছায়া
৭) জান্নাতি খাবার: মান্না ও সালওয়া
৮) মৃত থেকে জীবিত করে তোলা
৯) ১২ ধারায় বিভক্ত পানির প্রস্রবণ
এত এত নেয়ামতসমূহের বিপরীতেও তারা আল্লাহ তা’আলার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়েছিল এজন্য তাদের শাস্তিও হয়েছিল ভয়ংকর। বর্তমান সময়কালে তারা এতো ভয়ংকর অপরাধে জড়িত হয়েছে যা দেখে শিউরে উঠতে হয়। মানব ইতিহাসে এতো বড় অপরাধ কেউ করেছে কিনা জানা নাই। শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমদেরও হৃদয় কেঁপে উঠছে তাদের অপরাধ দেখে। পূর্ব ইতিহাস দেখলে সহজেই বোঝা যায়, প্রত্যেক অপরাধীকে আল্লাহ তা’আলা কিছু সময় অবকাশ দেন অত:পর তাদের পাকড়াও করেন।
যেমন বনি ইসরায়েলকে পাকড়াও করেছিলেন। তাদের অপরাধের সাজা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্যদ্রব্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারি, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী। (সূরা আল বাক্বারাহ:৬১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমরা জানতে পারি বনি ইসরায়েলের অপরাধের জন্য আল্লাহ তা’আলা তাদের আবার পাকড়াও করবেন যা আল্লাহ তা’আলার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
কিন্তু মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের নিজেদের ব্যাপারেও খেয়াল করা দরকার। আল্লাহ তা’আলার দেয়া নেয়ামত সম্পর্কে নিশ্চয়ই আমরা জিজ্ঞাসিত হবো। এসকল নেয়ামতের বিপরীতে আমরা কতটা দায়িত্বশীল আচরণ করছি। আমাদের দেয়া নেয়ামতসমূহের বিপরীতে আমরা যদি সঠিক আমল ও আচরণ করতে সক্ষম না হই তবে নিশ্চয়ই আমাদের উপরও শাস্তি নেমে আসবে। আশেপাশে যা হচ্ছে তা আমাদের পাকড়াও করার আলামত নয় তো?
আল্লাহুম্মা ‘আইন্নি ‘আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *