তাজুল ইসলাম, প্রকৌশলী: ফ্লো ব্যাটারি! নবায়নযোগ্য শক্তির এটি একটি বিরাট ভূমিকা রাখতে চলেছে। আমরা জানি, নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে সঞ্চয় তথা ব্যাটারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে অর্থ্যৎ এ শক্তিকে প্রথমে ব্যাটারির মাধ্যমে সঞ্চয় করে পরবর্তীতে গ্রীডে প্রেরণ বা সঞ্চালন করতে হয়। এতদিন যাবৎ লিথিয়াম -আয়ন ব্যাটারি বহুলভাবে ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। এ ব্যাটারি বর্তমানে গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যে
তাজুল ইসলাম, প্রকৌশলী: ফ্লো ব্যাটারি! নবায়নযোগ্য শক্তির এটি একটি বিরাট ভূমিকা রাখতে চলেছে। আমরা জানি, নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে সঞ্চয় তথা ব্যাটারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে অর্থ্যৎ এ শক্তিকে প্রথমে ব্যাটারির মাধ্যমে সঞ্চয় করে পরবর্তীতে গ্রীডে প্রেরণ বা সঞ্চালন করতে হয়। এতদিন যাবৎ লিথিয়াম -আয়ন ব্যাটারি বহুলভাবে ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। এ ব্যাটারি বর্তমানে গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যে হর-হামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে ভ্যানাডিয়াম ফ্লো-ব্যাটারি একে প্রতিস্থাপনের জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ভ্যানাডিয়াম ফ্লো ব্যাটারি এবং অস্ট্রেলিয়া
͢͢জাপান, চীন এবং ইউরোপে বানিজ্যিকভাবে ভ্যানাডিয়াম ফ্লো-ব্যাটারি উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাটারি এবং জ্বালানী কোষ এর বাইরে এ জাতীয় ব্যাটারির কথা তেমন জানা নেই বলা যেতে পারে। ফ্লো-ব্যাটারির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তাতে বলা যেতে পারে – আগামি এক দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব বাজারে নির্মাতা হিসেবে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এটা সম্ভব হবে, যেহেতু শক্তি সঞ্চয়ের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। যে হারে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিডে সৌর ও বায়ু শক্তির প্রবেশ বাড়ছে তাতে করে নতূন সঞ্চয় প্রযুক্তির আকাঙ্খা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিভিন্নভাবে সঞ্চয়ের পদ্ধতি থাকলেও লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটিকে ক্রমান্নয়ে হটিয়ে ফ্লো-ব্যাটারি তার জায়গা দখল করার জন্য ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকে যেথায় লিথিয়াম-আয়ন মাত্র চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ফ্লো-ব্যাটারির আবিষ্কার আশির দশকে হলেও এটা বানিজ্যিকভাবে আসতে এতো বছর সময় নিয়েছে।
এ বছর অস্ট্রেলিয়া সরকার আভ্যন্তরীণভাবে ব্যাটারি উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় ব্যাটারি কৌশল’ নামক একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ৫০০ মিলিয়ন ডলারের এ কৌশলে ফোন এবং গাড়ির জন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির উন্নয়নের পাশাপাশি এতে ফ্লো-ব্যাটারির জন্যও বরাদ্দ থাকছে। বলাবাহুল্য, ব্যাটারি ক্রমেই দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাড়ি, বাড়ি এমনকি পুরো শহরের বিদ্যুৎ প্রদান করছে এ ব্যাটারি। সুতরাং, ব্যাটারি রসায়নকে কিভাবে বিদু্ৎ গ্রীডকে সবুজায়িত করা যায় এ লক্ষ্যে এটিকে উন্নততর করার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অদ্যাবধি, অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীড- উপযোগী হিসেবে লিথিয়াম-আয়ন নামক রসায়ন ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বর্তমানে যেহেতু গ্রিড ক্রমান্বয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সুতরাং দীর্ঘময়াদি সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয় দেখা দিচ্ছে। ফলে, এ ক্ষেত্রে ফ্লো ব্যাটারির উপযোগিতা ভীষনভাবে অনুভূত হচ্ছে।
প্রচলিত লিথিয়াম ব্যাটারিতে ইলেকট্রডে শক্তি সঞ্চয় করে রাখা হয়। ফ্লো-ব্যাটারিতে তরল ইলেকট্রোলাইটে শক্তি সঞ্চয় করে রাখা হয়। ইলেকট্রোলাইটে দ্রবণ বাহ্যিক ট্যাংকে জমা করা হয় এবং একে রিয়েক্টর এর মাধ্যমে পাম্প করা হয় – যেথায় রসায়ন বিক্রিয়া সংঘঠিত হয়- এরই ফলে বিদুত উৎপন্ন হয়। ফ্লো-ব্যাটারির সুবিধা হলো চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপন্ন এবং বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখা যায়। বেশি সঞ্চয় করতে চাইলে ইলেকট্টোলাইটের আয়তন বাড়াতে হবে ট্যংকে । এটির একটি সুবিধা হলো যতো সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ানো হবে ততো বিদ্যুতের দাম কমতে থাকবে। এর কারণ হলো সমস্ত উপাদান পরিবর্তন না করে শুধু তরল ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ বাড়িয়ে নিলেই হলো। তার মানে এই দাড়াচ্ছে যে, দীর্ঘস্থায়ী ( ৮ ঘন্টার উপরে ) সঞ্চয়ের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ও কম হচ্ছে। এ ব্যাটারি সহস্রাধিকবার পুন:পুন: ব্যবহারযোগ্য এবং এর ইলেকট্রোলেইটের স্থায়ীত্ব বিশাল। শুধুমাত্র ঋনাত্মক দিক হচ্ছে, এটি অত্যন্ত ভারী এবং বহনযোগ্য নয়। পরীক্ষামূলক এবং বানিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দস্তা-ব্রোমাইড এবং ভ্যানাডিয়াম বর্তমানে অগ্রবর্তী রয়েছে। কয়েক দশক ধরে ভ্যানাডিয়াম প্রযুক্তির উন্নয়নের ফসল হিসেবে বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে জাপান, চীন এবং ইউরোপে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে সর্বোচ্চ ভ্যানাডিয়াম প্রস্তুতকারী চীন ইতোমধ্যে অনেকগুলো বৃহৎ ভ্যানাডিয়াম ফ্লো-ব্যাটারি প্রকল্পে তাদের অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে। গত ডিসেম্বরে (২০২৪) চীনের একটি প্রদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যানাডিয়াম ফ্লো-ব্যাটারি চালু করেছে যার ক্ষমতা হচ্ছে ১৭৫ মেগাওয়াট এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ ৭০০ মেগাওয়াট আওয়ার। অস্ট্রেলিয়া ২০২৩ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় সর্বোচ্চ ভ্যানাডিয়াম ফ্লো ব্যাটারি স্থাপন করেছে।
মূল্য ও সরবরাহের আলোকে ভ্যানাডিয়ামের প্রাপ্তির ব্যাপারটি ইস্পাত শিল্পের চাহিদার সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে- ফলে বাণিজ্যিকিকরণে এটি একটি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এ অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, অস্ট্রেলীয় সরকার ইতোমধ্যে নতুন নতুন ভ্যানাডিয়াম খনি এবং প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ ত্বরান্নিত করেছে। আশা করা যায়, ্অদূরে ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়া ভ্যানাডিয়াম উৎপাদনে শীর্যস্থানে জায়গা দখল করে নিতে পারে। ইতোমধ্যে, টাউনসভিল শহরে ভ্যানাডিয়াম ইলেকট্টো লাইটের প্রথম কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
লৌহ এবং দস্তা
ভ্যানাডিয়াম ছাড়াও উপরোক্ত দুটো পর্দাথ থেকে ব্যাটারিতে ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সাল থেকে লোহা ব্যবহার করে ফ্লো-ব্যাটারি উৎপাদন করেছে। লৌহ সস্তা এবং বিপুল পরিমাণে পাওয়া গেলেও এর ঋনাত্মক দিক হচ্ছে লৌহের ক্ষয় যা উচ্চ-পরিশুদ্ধ আয়রন ক্লোরাইডের মাধ্যমে হৃাস করা যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানী ই এস আই এশিয়া প্যাসিফিক লৌহ ভিত্তিক ফ্লো-ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য মেরীবরোতে একটি কারখানা নির্মাণ করেছে যা ২০২৬ সালে সমাপ্ত হবার কথা রয়েছে ।
দস্তা-ব্লোমাইড ব্যাটারিতে দস্তা এবং লবণ পানি থেকে আহরিত ব্রোমিন দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এর ধনাত্মক দিক হচ্ছে, এটি বেশি বিদ্যুৎ প্রদান করতে পারে কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে কোষে ডেনড্রাইট নামক বৃদ্ধিকে থামানো। তা নাহলে সর্ট সার্কিট হতে পারে এবং উৎপাদনও কম হতে পারে।
ভবিষ্যত কি ব্যাটারি নির্ভর হবে?
একথা সত্যি, ব্যাটারি শিল্পকে বৃহত্তর পরিসরে দাড় করবার জন্য যথেষ্ট সময় এবং বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু, সামনের দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী ব্যাটারির চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে- বিদ্যুৎ এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে। পরিবহনের ক্ষেত্রে লিথিয়াম -আয়ন ব্যাটারির চাহিদা নিত্যদিন বেড়েই চলেছে যদিও অস্ট্রেলিয়া লিথিয়াম উৎপাদনে অগ্রসর কিন্তু লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনে তেমন ভূমিকা নেই। এ ব্যাপারে খুব শিগ্রই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে অভিজ্ঞজনের ধারনা।
বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য অটোমেশন ব্যবহার করতে হবে। ফ্লো ব্যাটারির সাধারণ উপাদান এদেশেই করা সম্ভব। বর্তমানে ফ্লো ব্যাটারি উৎপাদনে যে সময়-ব্যায়ী এবং ধীরগতির একত্রিকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তাকে এখন স্বয়ংক্রিয় করণ করা কঠিন ব্যাপার নয়। এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে ততোই অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদিত ব্যাটারি প্রতিযোগিতার জন্য উপযোগী হবে। এটাই বর্তমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিশেজ্ঞদের ধারনা।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *