প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি!!: কাজী আবুল মনসুর

 

এক বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও ব্যাপক শিল্প উৎপাদনে (এআই) এর ব্যবহার নিয়ে ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে হইচই পড়ে গেছে। তবে নতুন ধারণার এই প্রযুক্তি মানব কল্যাণে ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও বাস্তবে সুপার পাওয়ার দেশগুলো কিন্তু একে অন্যকে ঘায়েল করতে অত্যন্ত প্রাণঘাতী ওয়েপন্স সিস্টেমে এই (এআই) টেকনোলজি ব্যবহার করতে চায়। বিশেষ করে বর্তমানে চীন, তুরস্ক, ফ্রান্স, রাশিয়া ও আমেরিকার মতো দেশগুলো এমন সব ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করছে যাতে সরাসরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অটোনোৱমাস কিলার রোবোটিক ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করা যায়।

এক্ষেত্রে দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি হাইটেক সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, মিসাইল ও কমব্যাট ড্রোন টেকনোলজিতে যুক্ত করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সমৃদ্ধ সেন্সর। আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সমৃদ্ধ ডিফেন্স সিস্টেম বা অটোনোমাস কিলার ড্রোনের মূল কাজই হচ্ছে শত্রুর সীমানায় প্রবেশ করে কিংবা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কমান্ড সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশন পরিচালনা করা। যা অদূর ভবিষ্যতে মানব জাতির জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এই জাতীয় প্রাণঘাতী হাইটেক ডিফেন্স সিস্টেম। এমনকি ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল কিংবা নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে গোপনে ব্যাপক গবেষণা করে যাচ্ছে সুপার পাওয়ার আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো। আবার কিছু সূত্রমতে, (এআই) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কিছু স্পর্শকাতর ডিফেন্স সিস্টেম নাকি চলতি ২০২৩ সালেই ইউক্রেন যুদ্ধে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণারত প্রযুক্তিবিদেরা নতুন প্রজন্মের আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অটোনোমাস কিলার ড্রোন বা রোবটকে এক বিংশ শতাব্দীর উচ্চ প্রযুক্তির ভয়ঙ্কর ওয়েপন্স বা ডিফেন্স সিস্টেমকে মানব জাতির জন্য এক অশুভ বার্তা হিসেবে মনে করছেন। জাতিসংঘ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (এআই) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিফেন্স সিস্টেম বা অটোনোমাস কিলার ড্রোনের ব্যবহার বন্ধ, নিয়ন্ত্রণ ও সীমিতকরণে বার বার প্রস্তাব আনলেও আমেরিকা, চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর অনীহা ও চরম বিরোধীতার কারণে তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং দেশগুলো তাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে এখন কিনা নিজেদের মতো করে গোপনে এই প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অটোনোমাস কিলার রোবটের কথা আসলে আমরা সাধারণত মানুষের আকৃতির কোন বড় আকারের রোবটকে মনে করে থাকি। তবে বাস্তবে অটোনোমাস কিলার রোবট একেবারে অতি ক্ষুদ্র থেকে বড় যে কোন আকারের হতে পারে। যা ড্রোন, রোবট, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান, মিসাইলেও প্রয়োগ করা সম্ভব। তাছাড়া গত তিন বছর আগে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, রাশিয়া নাকি গোপনে মানুষের শরীরে জেনেটিক পরিবর্তন এনে হাইলি এডভান্স বায়োনিক সোলজার তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এ কাজে তারা এখন সফল কিনা তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। যদিও রাশিয়ার তরফে মিডিয়ায় এ নিয়ে কোন তথ্যই এখনো পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, জাতিসংঘ ২০২১ সালের দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রথম অটোনোমাস ওয়েপন্স বা কিলার রোবটের কিংবা ড্রোনের সফল ব্যবহার হিসেবে লিবিয়ায় চলা গৃহযুদ্ধকে চিহ্নিত করেছিল। জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক তাদের উচ্চ প্রযুক্তির

ক্ষুদ্র আকারের ‘কারগু’ সুসাইডাল অটোনোমাস ড্রোন দিয়ে লিবিয়ায় বেশকিছু সামরিক স্থাপনা এবং ঘাঁটিতে সফলভাবে হামলা চালিয়েছিল। এই হামলায় তেমন একটা ক্ষয়-ক্ষতি চোখে না পড়লেও এটি ছিল আসলে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম কোন অটোনোমাস ওয়েপন্স বা কিলার রোবটের (ড্রোন) সফল ও বাস্তব প্রয়োগ। তাছাড়া বর্তমানে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, চীন, ইরান এবং তুরস্ক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির অটোনোমাস কিলার ড্রোন বা সুসাইডাল ড্রোন সার্ভিসে নিয়ে এসেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ রকমই একটি কামিকাজি সুসাইডাল ড্রোন হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সুইচব্লেড-৬০০ ম্যান পোর্টেবল ড্রোন। যা কিনা এখন ইউক্রেনের সামিরিক বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে যাচ্ছে। এদিকে পশ্চিমা অস্ত্রের বিরুদ্ধে রাশিয়াও ইরান থেকে সুসাইডাল কমব্যাট ড্রোন নিয়ে এসে এবং নিজেদেরে (এআই) প্রযুক্তি হাইটেক ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি ও ব্যবহার করে যাচ্ছে। যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকী হয়ে দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *