সত্যানন্দ চৌধুরী: রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রাতিষ্ঠানিক (উচ্চ) শিক্ষা কোন অত্যাবশ্যক বিষয় বলে মনে হয়না। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যাবে অতীতে অনেক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যাঁহারা দুর্দান্ড প্রতাপ অসীম সাহস অতীব ন্যা্যপরায়নতা এবং আকাশ-ছোঁয়া সাফল্যের সাথে রাজ্য বা দেশ শাসন করে গেছেন অথচ বেশীরভাগ তাঁরা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। যেমন মোঘল সম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে
সত্যানন্দ চৌধুরী: রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রাতিষ্ঠানিক (উচ্চ) শিক্ষা কোন অত্যাবশ্যক বিষয় বলে মনে হয়না। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যাবে অতীতে অনেক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যাঁহারা দুর্দান্ড প্রতাপ অসীম সাহস অতীব ন্যা্যপরায়নতা এবং আকাশ-ছোঁয়া সাফল্যের সাথে রাজ্য বা দেশ শাসন করে গেছেন অথচ বেশীরভাগ তাঁরা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না।
যেমন মোঘল সম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে মহামতি আকবর বাদশার রাজত্বকাল। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ পূর্বক একে একে আঞ্চলিক রাজ্যসমূহ জয় করে তাঁর পিতামহ সম্রাট বাবর প্রতিষ্ঠিত মোঘল সাম্রাজ্যের সীমানা এতই বিস্তৃত করেছিলেন যা পূর্বে বার্মা থেকে পশ্চিমে আফগানিস্থান পর্যন্ত অর্থাৎ সমগ্র দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ছিল তাঁর করায়াত্ব!! অতপর সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি রাজ্য শাসন করে ‘মহামতি’ উপাধি অর্জন করেছিলেন বহুজাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অগণিত প্রজাদের মন জয় করে। অথচ শুনলে অবাক হবেন এই মহামতি আকবর বাদশা লিখতে জানতেন না এমনকি ভাল পড়তেও জানতেন না!
আর বর্তমান সময়ে ভারতের দিকে তাকালে কি দেখি? নরেন্দ্র মুদির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যোগ্যতা কিছু আছে কি? রেল স্টেশনে চা ফেরি করে বিক্রি করত বলেই ত আমরা শুনেছি। অশিক্ষিত ও চরম ইসলাম বিদ্ধেষীএই নরেন্দ্র মুদি বহু ভাষা-জাতি-ধর্ম-বর্ন মিশ্রিত ভারতের মতো বিশাল এক দেশে হিন্দুত্ববাদি রামরাজত্ব কায়েম করে তিনি একাধারে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে গদিতে আসীন !
তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা অরাজনৈতিক এক উচ্চ শিক্ষিত ও নোবেল বিজয়ী্ ড. ইউনূস সাহেবকে বেছে নিয়েছি সারা পৃথিবী ব্যাপী যার খ্যাতি ! অথচ আমাদের দেশ চালনায় ইউনূস সাহেবের মতো এত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির কোন দরকার আদৌ ছিল কি? মোটেও না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হবেন এর কোন পরীক্ষিত বা বিশ্বাসযোগ্য কারণ নেই। বেশী দূর যেতে হবে না, আমাদের প্রতিবেশী বার্মার সাবেক নেত্রী অক্সফোর্ডের স্নাতক ও নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র চালনায় ব্যর্থ হয়ে তিনি কেবল ক্ষমতাচ্যুতই হননি বরং চরম মানবতা বিরোধী গণহত্যার অপরাধে তিনি বর্তমানে হেগে অবস্থিত বিশ্ব আদালতের বিচারাধীন এক আসামীও বটে।
আমাদের সমস্যা সংকুল এই বাংলাদেশের জন্য উচ্চ শিক্ষিত নয় বরং ভারতীয় চাণক্য কূটনীতি মোকাবেলায় সক্ষম সৎ ও দেশপ্রেমিক একজন মধ্যম শিক্ষিত নেতা হলেই যথেষ্ট হতো। তাহা না হলে দেখুন না? বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া গন-বিপ্লবের জোয়ারে রাষ্ট্র চালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে ড. ইউনূস সাহেব ভারতীয় কুচক্রী মহলের চাণক্য কারসাজী বুঝতে না পেরে কি করেই না বিপ্লবের চেতনার সাথে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা কিংবা বিন্দুমাত্র ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন হবেন ত দুরের কথা বরং তাঁর উপদেষ্টা আর আমলাদের অধিকাংশই পতিত স্বৈরাচারের চরম সুবিধাভোগী ও ধূসরদের নিয়েই মূলত তিনি তাঁর সরকার এবং প্রশাসন সাজিয়েছেন! ফলে আগস্ট বিপ্লবের চেতনার সাথে খাপ খায়িয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সক্ষম হবেন বলে তা আশা করার কোন বিশ্বাসযোগ্য কারণ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। কেননা ফ্যাসিবাদী হাসিনার যাঁতাকলে সবচেয়ে বেশী অত্যাচারিত-নিপীড়িত-নির্যাতিত-পিষ্ট নির্ভীক মজলুম সাংবাদিক-সম্পাদক তথা ভারতীয় আধিপত্য বিরোধী আন্দোলনের সোচ্চার কণ্ঠ ড. মাহমুদর রহমানকে জেলে পাঠিয়ে মুদি-হাসিনা ভক্ত উপদেষ্টা পরিবেষ্টিত ড. ইউনূস সাহেবের সরকার চালনার স্টাইলে ইতিমধ্যেই তা প্রতীয়মান হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হল চলমান সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কোন বিধান হাসিনা রাখেনি। তাই দরকার ছিল বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারের যাঁতাকলে নির্যাতিত ও যোগ্য নেতাদের নিয়ে গঠিত এক বিপ্লবী সরকার। অথচ “বিপ্লবী সরকার” এর পরিবর্তে “অন্তর্বর্তী সরকার” নাম দিয়ে এর প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. ইউনূস সাহেব নিজে এবং তাঁর উপদেষ্টারা পতিত স্বৈরাচার প্রণীত সেই সংবিধান মেনে চলার শপথ নেয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে দেশের সংগ্রামী মানুষের সাথে বেঈমানী করেছেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। তাই বলি ইউনূস সাহেবের পক্ষে বিসমিল্লায় গলদ নিয়ে আগস্ট বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন করা সুদূর-পরাহত হতে পারে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখয়াত সাহেব ছিলেন ২০০৭ সালে “র”-এর প্রযোজনা ও পরিচালনায় মঞ্চায়িত নাটক বা তথাকথিত ১/১১ সরকার মনোনীত একজন নির্বাচন কমিশনার। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সাখাওয়াত সাহেবদের নির্বাচন কমিশন পূর্ব ঘোষণা দিয়েই বলেছিলেন ২০০৮ এর নির্বাচন হবে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের মতো- যার মর্মার্থ ছিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশের অধিক ভোট পেয়ে জয় লাভ করবে। এই পরিকল্পনার সত্যতা পাওয়া যায় হাসিনার নিজের মুখে বলা স্বীকারোক্তি থেকেই যাহা ইউ টিউবে এখনো আছে ইচ্ছা করলে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেনঃ- “আমরা যদি ইচ্ছা করতাম বা আরেকটু ট্রিক্স খেলতাম তাহলে খালেদাকে নির্বাচনে ৩০ টি সিট দিয়ে বিরোধী দলের আসনে না বসালেও পারতাম। আমাদের হাতে সেই সুযোগও ছিল। আমরা তা নিঃসন্দেহে করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করি নাই” এই ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত সাহেব এবার গদিতে বসেই আওয়ামী নেত্রীকে দল গুছিয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানানোর মাধ্যমে তাঁর আওয়ামী প্রেম ধরা পরে যাওয়ায় চরম সমালোচনার মুখে তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়য় খুয়িয়েছেন।
তবে এর কয়েক দিন পরই আরেক প্রভাবশালী উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাহেব তাঁর সতীর্থ সাখাওয়াত সাহেবের চেয়ে আরও বেশী আওয়ামী বন্দনা করে কথা বলেছিলেন তথাপি তিনি কোন সমালোচনার মুখে পড়েননি কিংবা তাঁর মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ ড. আসিফ নজরুল হলেন কেবল একজন বুদ্ধিমান (Intelligent) ব্যক্তিই নহেন তিনি একাধারে চতুর (Clever) বা ধূর্ত (Canning) ব্যক্তিও বটে।
ড. আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগকে একটি ঐতিহ্য বাহী ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া এক দল হিসাবে বন্দনা করার আগ মুহূর্তে বিরোধী দলের কাছে ভাল হওয়ার জন্য একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন যেমন- হাসিনা সরকার কর্তৃক অন্যায় ভাবে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত-নিষ্পেষিত-নিগৃহীত ও স্পষ্টভাষী ব্যক্তি আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদর রহমান সাহেবের উচ্চ মাত্রায় প্রশংসা করে অনেক অনেক কথামালা বলে জাতীয়তাবাদী জনতার মুখ সেই স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । তাই মানুষ তাঁর ঐ দিনের আওয়ামী বন্দনায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ।
যাহোক, পাঠকদের বলে রাখি, ব্যক্তিজীবনে ড. আসিফ নজরুল হলেন ভারতীয় সেবাদাস শাহরিয়ার কবির, জাহানারা ইমাম গং অভিনীত শাহাবাগি আন্দোলনের এক অনন্য সেনানী ও আওয়ামী ঘরানার চতুর এক ভদ্রলোক। তদুপরি “র”-এর পরামর্শে চালিত বা ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার থিংক-ট্যাংক খ্যাত আলো-স্টার গ্রুপের একজন একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষীও বটে। এই সখ্যতার জের ধরেই পতিত হাসিনার শাসনামলে প্রথম আলো পত্রিকায় কায় তাঁর লেখালেখি প্রায়ই প্রকাশিত হতো। পাঠকরা ইতিমধ্যেই দেখেছেন বিপ্লবী জনতা যেখানে হাসিনা-মুজিবের ছবি-ভাষ্কর্য কেবল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় নেই এমনকি জল বিয়োগ করতেও দেখা গেছে। অথচ অতি চতুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বলেই আসিফ নজরুল সাহেব বিপ্লবের নেতা সেজে গদিতে বসে ফ্যাসিবাদের আইকন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কবর রচনাকারী মজিবের ছবি তাঁর সরকারি অফিস ও নিজ বাসার দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখেন!
ড. আসিফ নজরুল তাঁর নিজ দল (আওয়ামী লীগ) যখন দীর্ঘদিন সরকারে ছিল তথাপি অন্যান্য আওয়ামী নেতাদের ন্যায় সরকারের পক্ষে কথা বলে তিনি “চামচা”র কাল দাগ শরীরে মাখতে চাননি বরং তীব্র সমালোচনা করে বিরোধী মতের কাছে বাহাবা কুড়িয়েছেন। এই বিষয়ে ড. আসিফ নজরুল সাহেব তার নিজের মুখে বলা কথা অনেকেই শুনে থাকতে পারেন। তিনি দেশের রাজনীতি নিয়ে বেশ সরব কথাবার্তা বলে থাকেন কেবল জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য। আর সব দলের কাছে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করার সহজ উপায় হল সরকারের সমালোচনা করা অর্থাৎ বিরোধী দলের পক্ষে বেশী-বেশী কথা বলা। তিনি এই কাজটিই বেশ যত্নের সাথে করেছেন বিগত ১৬ বছর যাবৎ বিরোধী দলের পক্ষে সোচ্চার কথা বলে। এই নীতি অবলম্বন করে তিনি সফলতা পেয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌছতে পেরেছেন বলেও ধরে নেয়া যায়। কেননা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের তীব্র সমালোচনা আর বিপ্লবী ছাত্র জনতার মিছিলে ব্যানার হাতে একাত্মতা প্রকাশ করে গণবিপ্লব পরবর্তী ইউনূস সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা হিসাবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। তবে “র”-এর আস্থাভাজনদের লিষ্টের বুদ্ধিজীবী ছিলেন বিধায় সেনাবাহিনীও তাঁকে বেছে নেন। তবে বিরোধী দলের কাছ থেকে বাহাবা পাওয়ার আসিফ নজরুল সাহেবের এই নীতি আদতে এক দ্বিমুখী বা মোনাফেকি নীতি যাহা গদিতে বসার পর এবার তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
প্রিয় পাঠক, ড. আসিফ নজরুল সাহেব যেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবের উচ্চ মাত্রায় প্রশংসায় মেতে উঠেছিলেন! আর সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন এই বলে যে, হাসিনা সরকার সম্পূর্ণ ভুয়া ও অবিশ্বাস্য মামলায় সাজা দিয়ে তাঁকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রেখে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে চরম কষ্ট দিয়েছেন। আদালতের বারান্দায় পুলিশ প্রহরায় ছাত্রলীগের গুন্ডারা তাঁকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। তাঁর সেসব কথাবার্তা বলার “ভঙ্গি বা “বডি ল্যাঙ্গুয়েজ” দেখে আমাদের বুঝার কি উপায় ছিল যে সেইসব ছিল কেবল আসিফ নজরুল সাহেবের জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য, লোক দেখানো বা স্রেফ ছলনা ছাড়া আর কিছুই না?
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের যাঁতাকলে পিষ্ঠ মজলুম সাংবাদিক মাহমুদর রহমান সাহেব নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। দীর্ঘকাল বিদেশে অবস্থান করে ফ্যাসিবাদ পতনের পর সদ্য নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সুখকর হয়নি। তবে ভালোর মধ্যে একটা হয়েছে আসিফ নজরুল সাহেবের আসল রূপ চেনা হয়ে গেছে পাশাপাশি ইউনূস সরকার যে পতিত হাসিনা সরকারের সুবিধাভূগী আমলাদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণে তাও খোলাসা হয়ে গেছে।
উচিৎ ছিল ফ্যাসিবাদ আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত মাহমুদর রহমান সাহেবের উপর চাপিয়ে দেয়া স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলার সাজা ছাত্র-জনতার বিপ্লবোত্তর সরকারে স্ব-উদ্যোগে বাতিল করে দিবেন কেবল তাই নয় বরং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাহেব নিজে বিমান বন্দর উপস্থিত থেকে সসম্মানে তাঁকে বাসায় পৌছে দিবেন। অতপর গণ বিপ্লবের অগ্রদূত বিবেচনার স্বীকৃতি সরূপ পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা মনোনীত চরম দুর্নীতিবাজ চুপ্পকে সরিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে সকল প্রকার দুর্নীতির ঊর্ধ্বে অবস্থান করা ড. মাহমুদর রহমানকে অধিষ্ঠিত করবেন। গণ বিপ্লবের জোয়ারে প্রতিষ্ঠিত সরকারে বিপ্লবী নেতাকেই তো মূল্যায়ন করা উচিৎ!
তাছাড়া আসিফ নজরুল সাহেব নিজের মুখেই ত বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অবিশ্বাস্য মামলায় মাহমুদর রহমান কে সাজা দেয়া হয়েছিল। তাই মিথ্যা ও অবিশ্বাস্য মামলার সাজা উঠিয়ে নিতে তো সরকারের কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। তাহাছাড়া সংশ্লিষ্ট আইনের সেকশন ৪০১(১) এর উপ-ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে সরকার যেকোন মেয়াদের সাজা (সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কোন আবেদন ছাড়াই) বাতিল করে দিতে পারেন। যেমন করে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনার মামলা সরকার স্ব-উদ্দোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন?
অথচ আসিফ নজরুল সাহেব তাঁদের প্রভু আধিপত্যবাদি শক্তি ভারতের ইশারায় মজলুম সাংবাদিক মাহমুদর রহমান সাহেবকে কারাগারে পাঠাবেন তা আগেই ঠিক করে রেখেছেন। তাই তিনি আইনের সহজ পথে না গিয়ে ভিন্ন এক ধারা কছলিয়ে মাহমুদর রহমানকে জেলে পাঠিয়ে ভারতীয় আধিপত্য শক্তির মুত্র সেবকদের তালিকায় নিজের নাম যে এতদিন খুদাই করে লিখা ছিল তা এবার আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি।
তবে এই বিষয়ে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির মধ্যকার ভারত প্রেমি গ্রুপের নেতা মীর্জা ফখরুল সাহেবের দায় উড়িয়ে দেয়া যায় না। মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ভারতীয় হাই কমিশনার বিএনপি কার্যালয়ে ফখরুল সাহেবের সাথে দেখা করেছিলেন। পত্রিকায় যতটুকু পড়েছি সাক্ষাতে ফখরুল সাহেব হাই কমিশনার সাহেবকে আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদিদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তবে বিনিময়ে ভারতীয় হাই কমিশনার সাহেব ফখরুল সাহেবকে কোন আশ্বাস দিয়েছেন কিনা এই ব্যাপারে কিছুই জানা যায় নাই। আর এতেই আবেগে গদ্গদ নতজানু ফখরুল সাহেবের প্যান্ট ভিজে যাওয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন – “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বরফ গলা শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু ভারত বরাবরই বিএনপির কাছে যে চাপ প্রয়োগ করে থাকে এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। ফখরুল সাহেব তা এড়িয়ে গেলেও আমাদের তা বুঝার আর বাকী রাখে না। বিএনপির কাছে ভারতের আবদার-
১. বিএনপি-কে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
২. তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে না আনা।
৩. ভারত বিরোধী কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে প্রশ্রয় বা সমর্থন না করা।
৪. বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতাদের আশ্রয় / ব্যবহার করতে না দেয়া।
ভারতীয় হাইকমিশনারের দেয়া উপরের ৩নং ক্রমিকে বর্ণিত দাবির প্রেক্ষিতে আমাদের ভারত প্রেমি মহাসচিব ফখরুল সাহেব ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদী কন্ঠ ও বীর সেনানী মাহমুদুর রহমান সাহেবকে বিমান বন্দরে রিসিপ করার জন্য বিএনপির কোন নেতাকে পাঠাননি। তদুপরি তাঁর জামিন দেয়া বা সাজা প্রত্যাহার করার জন্যও সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে আমরা দেখিনি। অথচ বিএনপি যদি সরকারের উপর জোরালো চাপ দিত তবে মাহমুদর রহমান সাহেবের কেবল জামিন নয় সরকার তাঁর মামলাই প্রত্যাহার করতে বাধ্য হতো।ভারতকে খুশী করতে গিয়ে বিএনপির এই নিরবতা ড. আসিফ নজরুল সাহেবের সাহস যুগিয়েছে মাহমুদর রহমান সাহেবকে জেলে পাঠাতে।
তাই কবিতার ভাষায় আসিফ নজরুল সাহেবের মনের কথা যদি বলি-
“প্রণয় ভার্মার নির্দেশ পেয়ে, আগেই আমি বেঁধেছি মগজে, মাহমুদর রহমান সাহেবকে দেখাব মজা, পাঠিয়ে তাঁকে জেলে !
তবে এই কাজে আরও সাহস-উল্লাস বাড়িয়াছে আমার মনে! ফখরুল সাহেবের কাছ থেকে কোন প্রতিবাদ না পেয়ে”!
ড. আসিফ নজরুল সাহেবের কথা যদি আরও বলি- শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ঐ ৫-ই আগস্টের উত্তাল দিন শেষে দেশের হাল কে ধরবেন এর জন্য একজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস সাহেবের নাম হয়তো তড়িঘড়ি করে সমন্বয়করা পেয়েছিলেন। তবে কিভাবে সরকার গঠন করা হবে তার আইনি রূপরেখা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণ সমন্মকদের ছিল না বা না থাকারই কথা। তাই এই সুযোগে ধূর্ত আইন বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল সাহেব আধিপত্য শক্তি ভারতের ইশারায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে সুপ্রিম কোর্টের এক রেফারেন্স এনে পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার মনোনীত রাষ্ট্রপতি চুপপুর অধীনেই অন্তর্বর্তী সরকার এক রূপরেখা প্রস্তুত করেন যাহা ছিল চলমান সংবিধান পরিপন্থি। এইভাবে নিজেরাই সংবিধান পরিপন্থি কাজ করে আবার পতিত হাসিনা সরকারের ঐ সংবিধান সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করে ড. ইউনূস সাহেব ও তার উপদেষ্টারা শপথ নিয়ে নেন।
অথচ সংবিধান যেখানে ভঙ্গ করা হয়েই গেছে সেখান সংবিধানের দোহাই না দিয়ে গণ বিপ্লবের চেতনাকে ধারন করে রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে সরিয়ে বিপ্লবী সরকার গঠন পূর্বক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ড. ইউনূস সাহেব শপথ নিলেই ভাল করতেন। দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। নিজ দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সাথে স্বিপাক্ষিক সমস্যাদি সুরাহা করার জন্য চাই সততা ও দেশপ্রেমে উদ্ভোদ্ধ কোন নেতা বা পেশাদার আমলার দায়িত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ভারতের সেবাদাস হাসিনা ও ১/১১ সরকারের সুবিধাভোগী মাঝা-ভাঙ্গা ভারতপ্রেমী নতজানু এক আমলা তৌফিক হোসেনকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই গদিতে বসেই পতিত হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ-“তিনি (হাসিনা) ভারতে থাকতে চাইলে থাকতেই পারেন, সেখানে বসে রাজনীতি করতে চাইলে করবেন, ইহাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাহত হওয়ার কিছু দেখি না।“ অথচ দেশের আপামর জনতা পতিত হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অপেক্ষায় সেখানে আমাদের অপদার্থ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন সেই কথা?
তাহাছাড়া খবরের পাতায় পড়ে জানা যায়, অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশনে ড. ইউনূস সাহেবের সহিত ভারতের নরেন্দ্র মুদির সাক্ষাত না হলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ নিজে ড. ইউনূস সাহেবের হোটেল কক্ষে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন এবং বাংলাদেশ-পাকিস্থান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে দুই নেতা একমত পোষণ করেন। আর তা দেখে ভারতের গাত্রজ্বালা শুরু হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের নতজানু মাজা-ভাঙ্গা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের চুলকানি শুরু হইয়া যায়। তাইতো তোতা পাখির মতো ভারতের শিখানো মুখস্থ বুলি তৌহিদ সাহেবকে আওড়াতে দেখি এই বলে –
“৭১-এর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নতি করা সহজ হবে” কি ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা? সরকার প্রধান যেখানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক জোরদার করতে কোন শর্ত আরোপ করেন নাই, অথচ তাঁর মন্ত্রী তৌহীদ সাহেব এসে শর্ত জুড়িয়ে দিলেন? তাইতো কথায় বলে না? “খুন্তির চেয়ে আছাড় বড়?”
অথচ স্বৈরাচারী ও ভারতের পদলেহী হাসিনা ভারতের সরাসরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের মানুষদের উপর সে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে, রিকশা ভেনের উপর আটার বস্থার মতো সারি সারি লাশ জড়ো করতে দেখেছি? প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্র আবু সাইদের মতো শত শত মানুষদেরকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করতে দেখেছি? পাকিস্তানি সেনারা এমন নরহত্যার মতো আচরণ করেছে কি? আর শেখ মজিবের রক্ষীবাহিনীর হত্যাকরা ৩০,০০০ জাসদ নেতা-কর্মীদের কথা?
এবার দেশের গর্বিত সেনাবাহিনীকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হল তা নিয়ে কিছু বলা যাক। কথায় বলে “কাঁক, কাঁকের মাংস খায় না”এর মর্মার্থ হল কাঁক একটি কর্কশ ও অসুন্দর নিকৃষ্ট মানের পাখি হলেও সে একটি নীতি বা ধর্ম মেনে চলে। পচা-বাসী কোন বাছ-বিচার ছাড়া সব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত হলেও সে তাঁর নিজ জাতি অর্থাৎ আরেকটি কাঁকের মাংস কক্ষনো ভক্ষণ করে না! কি মহৎ এই প্রাণীর ধর্ম? অথচ বাংলাদেশের এক সময়কার গর্বিত “সেনাবাহিনীকে’ ভারতের কুপরামর্শে অতি সুপরিকল্পিত ভাবে ১/১১ এর মাধ্যমে ‘সোনাবাহিনীতে’ রূপান্তরিত করায় তাঁরা আজ ইলিয়াস আলীদের মতো দেশের অগণিত নিরপরাধ বেসামরিক মানুষদের গুম-খুন করেই কেবল থেমে থাকেনি, এমনকি নিজ গোত্র বা পেশার অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও গুম-খুন করতে পিছপা হয়নি। যেমন বিডিআর হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করতে এগিয়ে না আসা। “আয়না ঘরে” ব্রিগেডিয়ার আজমি সহ সেনাবাহিনীর অনেক চৌকশ অফিসারদের বছরের পর বন্দি করে নির্যাতন করা? অথচ আজ দুই মাস পার হতে চলছে একমাত্র কুখ্যাত নর-খাতক জিয়াউল হাসান ছাড়া সেনাবাহিনীর আর কাহারো কেশাগ্র স্পর্শ করতে দেখি নি। এইভাবে দেশের গর্বিত সেনাবাহিনীকে কাঁকের চেয়েও আজ অধম বানিয়ে ফেলা হল? আমরা চাই মানবতা বিরোধী গুম-খুন-হত্যা ও আয়নাঘরের সাথে জড়িত সেনাবাহিনীর কুখ্যাত অফিসারদের চাকুরিচ্যুত করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সশস্ত্র বাহিনীর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার।
অনেকে বলেন, ড. ইউনূস সরকার দেশের আইন সবার জন্য সমান ভাবে প্রয়োগ করতে দেখা যায় নাই। সরকারের এই পক্ষপাত জনগণ কখনো মেনে নিবে না। কেননা রাজনৈতিক বিবেচনায় পতিত হাসিনা সরকারের দেয়া ড. ইউনূস সাহেবের মামলা বা সাজা যেভাবে সরকার নিজ উদ্যোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, ঠিক একই ভাবে তারেক জিয়া, বাবর, শফিক রেহমান, মাহমুদর রহমান ,ড. পিনাকি, কনক, ইলিয়া্স, সামি, সাকিব,নায়েব আলী সহ সকল রাজনৈতিক নেতা, ১৮৭ টি প্রবাসী গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় নাই। তাহলে কি এই অপবাদ দেয়া যায় না? “যে যায় লঙ্কা সেই হয় রাবণ”?
সবশেষে ড. ইউনূস সাহেবের কাছে আমাদের দাবি গন-বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রেখে পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের সুবিধাভূগী আমলাদের প্রশাসন থেকে অতিদ্রুত ঝাটিয়ে বিদায় করুন । সশরীরে গন আন্দোলনের মাঠে রক্ত দেয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে গন বিপ্লবে অভূতপূর্ব অবদান রাখা বুদ্ধিবৃত্তিক যোদ্ধা ও ত্যাগী সৈনিকদের ক্ষমতায় বসান। তাহা না হলে পতিত হাসিনা সরকারের সুবিধাভূগী আমলাদের দিয়ে আপনি দেশবাসীর কাছে দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পৌছে দিতে সক্ষম হবেন না বলে আমি মনে করি।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *