-ডা. ইমাম হোসাইন ইকবাল: লস অ্যাঞ্জেলেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমভাগে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাংশে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে অবস্থিত ৩.৮২১ মিলিয়ন (২০২৩) জনসংখ্যার একটি বৃহৎ নগরী। সম্প্রতি আগুনের দাবানলে সমস্ত টেকনোলজির প্রয়োগ ও প্রচেষ্টার শেষ বিন্দু সেখানে লেলিহান আগুনের দাবানল নেভাতে ব্যর্থ এবং পরাজিত হয়েছে।এতে করে পুরো দেশটি বিধ্বস্ত ও মহা বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার মহাশক্তির কাছে এভাবেই পৃথিবীর যাবতীয় শক্তি ও সামর্থ্য পরাভূত হওয়া অতি তুচ্ছ এবং নগণ্য প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত হয়েছে । আমরা জানি, মানুষের মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনে জাহান্নামে শাস্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো আগুন। তাই আগুন নিয়ে মহান আল্লাহর সতর্ক বাণী নিম্নে তুলে ধরা হলো কুরআন মাজীদ থেকে।
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করে বলেন , আমি আমার বান্দার ওপর যে কিতাব নাযিল করেছি, তার (সত্যতার) ব্যাপারে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে যাও- তার মতো (করে) একটি সূরা তোমরাও (রচনা করে) নিয়ে এসো, এক আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া তোমাদের আর যেসব বন্ধুবান্ধব রয়েছে তাদেরও (প্রয়োজনে সহযোগিতার জন্য) ডাকো, যদি তোমরা তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হও! কিন্তু তোমরা যদি তা না করতে পারো (এবং আমি জানি), তোমরা তা কখনোই করতে পারবে না, তাহলে তোমরা (দোযখের) সেই কঠিন আগুনকে ভয় করো, যার ইন্দন বা জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করে তাদের জন্যেই (এটা) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (আল-বাক্বারা:২৩,২৪)
পাশাপাশি পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর যারা (এ কিতাবের ওপর) ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, তাদের তুমি (হে নবী) সুসংবাদ দাও এমন এক জান্নাতের, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে; যখনি তাদের (এ জান্নাতের) কোনো একটি ফল দেয়া হবে তখনি তারা বলবে, এ ধরনের (ফল) তো ইতিপূর্বেও আমাদের দেয়া হয়েছিলো, তাদের (মূলত) এ ধরনের জিনিসই সেখানে দেয়া হবে; তাদের জন্যে (আরো) সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী এবং তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে। (আল-বাক্বারা:২৫)
তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি শতভাগ পরিপূর্ণ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন সেই হাশরের ময়দানে, কারুর প্রতি অনু পরিমাণ অবিচার হবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
যদি তোমরা কোনো ভালো কাজ করে থাকো তা করেছো (একান্তভাবে) তোমাদের নিজেদের জন্যে। (অপরদিকে) তোমাদের কেউ যদি কোন মন্দ কাজ করে থাকো, তার দায়িত্বও একান্তভাবে তার নিজের ওপর; অতঃপর যখন আমার দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতির সময় হাজির হলো, (তখন আমি আরেক দলকে তোমাদের মোকাবেলার জন্যে পাঠিয়েছিলাম) যেন তারা তোমাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন করে দিতে পারে, যেমন করে প্রথমবার এ ব্যক্তিরা মাসজিদে (আকসায়) প্রবেশ করেছে (এবং এর প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে, আবারও) যেন তারা মাসজিদে প্রবেশ করতে পারে এবং যে যে জিনিসের ওপর তারা অধিকার জমাতে পারে তা যেন তারা ধ্বংস করে দিতে পারে। সম্ভবত এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তােমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন, আর তোমরা যদি (আবার বিদ্রোহের দিকে) ফিরে যাও তাহলে আমিও (আমার শাস্তির) পুনরাবৃত্তি করবো আর আমি তারে কাফেরদের জন্যে জাহান্নামকে তাদের (চির) কারাগারে পরিণত করে রেখেছি।
অবশ্যই এ কোরআন এমন এক পথের দিকে নির্দেশনা দেয় যা অতি (সরল ও) মজবুত এবং যেসব ঈমানদার মানুষ নেক আমল করে, এ (কিতাব) তাদের (এ) সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে (আল্লাহর কাছে) এক মহা পুরস্কার রয়েছে।
(অপরদিকে) যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে (এক) কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি। আর মানুষ (যেভাবে নিজের জন্যে না বুঝে) অকল্যাণ কামনা করে, (তেমনি সে) তার (নিজের) জন্যে (বুঝে সুঝে) কিছু কল্যাণও (কামনা করে আসলে) মানুষ (কাঙ্ক্ষিত বস্তুর জন্যে এমনিই) তাড়াহুড়া করে।
আমি রাত ও দিনকে (আমার কুদরতের) দুটো নিদর্শন বানিয়ে রেখেছি, অতঃপর রাতের নিদর্শন আমি বিলীন করে দিয়েছি এবং দিনের নিদর্শনকে আমি করেছি আলাকময়, যাতে করে (এর আলোতে) তোমরা তোমাদের মালিকের রিযিক সংগ্রহ করতে পারে (সর্বোপরি) তোমারা (এর মাধ্যমে) বছরের গণনা ও (এর) হিসাবও জানতে পারে; আর (এর) সব কয়টি বিষয়ই আমি খুলে খুলে বর্ণনা করেছি।
প্রত্যেক মানুষের ভাগ্যলিপি আমি তার গলায় (হারের মত করে) ঝুলিয়ে রেখেছি; কেয়ামতের দিন তার জন্যে (আমলনামার) একটি গ্রন্থ আমি (তার সামনে) বের করে দেবে, সে তা (তার সামনে) খােলা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখবে।
(আমি তাকে বলবো) পড়, (এ হচ্ছে) তোমার আমলনামা; আজ নিজের হিসাবের জন্যে তুমি নিজেই যথেষ্ট; যে ব্যক্তি হেদায়াতের পথে চলবে, সে তা চলবে একান্ত ভাবে নিজের (ভালোর) জন্যে, যে ব্যক্তি গোমরাহ হবে তার গোমরাহির দায়িত্ব অবশ্যই তার ওপর; (আসল কথা হচ্ছে, সেদিন) কেউই অন্য কারো (গুনাহের) ভার বইবে না; আর আমি কখনোই (কোনো জাতিকে) আজাব দেই না, যতক্ষণ না আমি (সেখানে আজাব থেকে সতর্ককারী) কোনো রসুল না পাঠাই। আমি যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করতে চাই তখন তার বিত্তশালী লোকদের (ভালো কাজের) আদেশ করি, কিন্তু (তা না করে) সেখানে তারা গুনাহের কাজ করতে শুরু করে, অতঃপর (এ জন্যে) সেখানে আমার আযাবের ফয়সালা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত,৭-১৬)
কুরআনের অন্য সূরা যিলযালে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
যখন ঝাঁকুনি দিয়ে পৃথিবীকে তার (প্রবল) কম্পনে কম্পিত করা হবে, এবং পৃথিবী যখন তার (মানুষের কৃতকর্মের) বোঝা বের করে দেবে, তখন মানুষরা (হতভম্ব হয়ে) বলতে থাকবে, এর কী হলো (সে সব কিছু উগরে দিচ্ছে কেন)?
সেদিন সে (তার সব কিছু) খুলে খুলে বর্ণনা করবে,
মূলত তোমার রবই তাকে এ (কাজে)-র আদেশ দেবেন; সেদিন সমগ্র মানব সন্তান দলে দলে ভাগ হয়ে যাবে, যাতে করে তাদেরকে তাদের কর্মকাণ্ড দেখানো যায়; অতএব যে ব্যক্তি এক অণু পরিমাণ কোনো ভালো কাজ করবে (সেদিন) তাও সে দেখতে পাবে; (ঠিক তেমনি) কোনো মানুষ যদি অণু পরিমাণ খারাপ কাজও করে, তাও সে (তার চোখের সামনে) দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল: আয়াত,১-৮)
যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা তো তাদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে; তারা অচিরেই দোজখের জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসা: আয়াত,১০)
যারা পেছনে থেকে গেল তারা আল্লাহ্ র রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দবোধ করল আর তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহ্ র পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না।’ বল, ‘উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচণ্ডতম’, যদি তারা বুঝত! (সূরা আত তাওবা: আয়াত, ৮১)
অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝবে যে, এরা সেখানে পতিত হচ্ছে এবং এরা তা হতে কোন পরিত্রাণ স্থল পাবে না। (সূরা কাহ্ফ: আয়াত, ৫৩)
সে যখন আগুন দেখল তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, ‘তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্যে তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারিব বা আমি আগুনের নিকটে কোন পথনির্দেশ পাইব।’ (সূরা ত্বা- হা :আয়াত -১০)
এরা দুইটি বিবদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে ; যারা কুফরী করে তাদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার ওপর ঢালিয়া দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, (আল হাজ্জ্ব-১৯)
এবং এদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষ লক্ষ্য করবে। যারা এদের নিকট আমার আয়াত তিলাওয়াত করে তাদেরকে এরা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। বল, ‘তবে কি আমি তোমাদেরকে এটা অপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দিব ?-এটা আগুন। এই বিষয়ে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাফিরদেরকে এবং এটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (আল হাজ্জ্ব-৭২)
স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, ‘আমি আগুন দেখেছি, সত্বর আমি সেখান হতে তোমাদের জন্যে কোন খবর আনব বা তোমাদের জন্যে আনব জ্বলন্ত অঙ্গার, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (সূরা নমল,আয়াত:৭)
মূসা যখন তার মেয়াদ পূর্ণ করার পর সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিজনবর্গকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবত আমি সেখান হতে তোমাদের জন্যে খবর আনতে পারি বা একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’
সুতরাং সে যখন আগুনের কাছে পৌঁছল, তখন ডান উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বরকতপূর্ণ ভূমির একটি বৃক্ষ থেকে ডেকে বলা হল, হে মূসা! আমিই আল্লাহ জগতসমূহের প্রতিপালক। (আল ক্বাসাস-২৯,৩০)
কিন্তু যারা কুফরী করে তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের আগুন। এদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে, এরা মরিবে এবং এদের হতে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। এইভাবে আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (ফাত্বির-৩৬)
এদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে, ‘ফিরআওন-সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে।’ যখন এরা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন দুর্বলেরা দাম্ভিকদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কিয়দংশ নিবারণ করবে ?’(আল মু’মিন -৪৬,৪৭)
অহংকারীরা (এর জবাবে) বলবে (কিভাবে তা সম্ভব), আমরা সবাই তাে তার ভেতরেই পড়ে আছি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মাঝে (চুড়ান্ত) ফয়সালা করে দিয়েছেন।
অগ্নিবাসীরা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর তিনি যেন আমাদের হতে লাঘব করেন এক দিনের শাস্তি।’ (সূরা মুমিন, আয়াত -৪৮-৪৯)
ফুটন্ত পানিতে, এরপর এদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে ( সূরা মুমিন, আয়াত-৭২
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায়, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও এর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আশ্-শূরা-৭)
এরা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে। (আর রহমান-৪৪)
হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ৭ তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন হৃদয় ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর কোন হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়। (আত তাহরীম-৬)
আমি নিকটবর্তী আকাশকে সাজিয়েছি উজ্জ্বল প্রদীপ দ্বারা এবং সেগুলোকে শয়তানের উপর নিক্ষেপের উপকরণও বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি। (আল মুল্ক-৫)
তাদের গুনাহের কারণেই তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল , তারপর তাদেরকে দাখিল করা হয়েছে আগুনে, আর আল্লাহ ছাড়া তারা অন্য কোন সাহায্যকারী পায়নি।(নূহ-২৫)
নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে সেই কিতাবী ও মুশরিকগণ জাহান্নামের আগুনে যাবে, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। (আল বাইয়্যিনাহ-৬)
পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা একান্তভাবে কামনা করি আমাদের সবাইকে পৃথিবীতে পরকালীন পাথেয় সংগ্রহ করে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।